মানকালীর কুন্ডধাপ
মানকালীর কুন্ডধাপ বগুড়াস্থ মহাস্থানগড়-পুন্ড্রনগরে অবস্থিত একটি প্রত্নস্থল বা ঢিবি। এর পরিমাপ প্রায় ৫৮ মি × ৪১ মি × ২.৫ মি। ঢিবিটি ১৯৬৫-৬৬ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তত্ত্বাবধানে উৎখনিত হয়। এই খননের ফলে এখানে একটি সুলতানি যুগের মসজিদের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে, যার নিচে একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এই ধাপের পশ্চিম পার্শ্ব সংলগ্ন একটি শুষ্ক ডোবা আছে। ডোবাটি উঁচু ধাপ থেকে যথেষ্ট গভীর মনে হয় যা কুন্ড (কূপ) নামে অভিহিত। এজন্য মানকালীর ধাপকে একত্রে মানকালীর কুন্ডধাপ বলা হয়। স্থানীয় কিংবদন্তি অনুযায়ী রাজা পরশুরামের আগে রাজা মানসিংহ ও তাঁর ভাই তানসিংহ এখানে একটি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। এই কিংবদন্তির ঐতিহাসিক এবং বাস্তব কোন মূল্য নেই, কারণ মুগল যুগের রাজা মানসিংহ কোনক্রমেই মহাস্থানের কিংবদন্তির শেষ হিন্দু শাসক পরশুরামের পূর্বসূরী হতে পারেন না। অন্যমতে, সুলতানি যুগে ঘোড়ঘাট এর প্রতাপশালী মুসলমান মানখালিদের নামানুসারে এই ধাপটির নামকরণ হয়েছে। অপরপক্ষে, পি.সি সেন এখানে একটি জৈন প্রতিমা পেয়েছিলেন। জৈন ধর্মগুরু গোশাল মামখালি বা মামখালিপুত্র নামেও পরিচিত।
এখানে উত্তরাঞ্চলীয় কালো চকচকে মৃৎপাত্রের খন্ডাংশ, কিছু শূঙ্গযুগের পোড়ামাটির ফলক, কতগুলি অলঙ্কৃত ইটের ভগ্নাংশ পাওয়া গেছে। এছাড়া এখান থেকে একটি জৈন প্রতিমা, ব্রোঞ্জের গণেশ ও গরুড় মূর্তি পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত প্রত্নসম্পদ থেকে অনুমিত হয় যে এখানে সম্ভবত পাল যুগের একটি হিন্দু মন্দির ছিল।
১৯৬৫-৬৬ সালে খননের ফলে একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের উপর নির্মিত পনেরো গম্বুজ বিশিষ্ট সুলতানি যুগের মসজিদের ভিত্তি উন্মোচিত হয়েছে। [মোঃ আইয়ুব খান]