পাথরঘাটা
পাথরঘাটা বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার তুলসীগঙ্গা নদীর দুপাশে প্রায় ৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে পাথরঘাটা নামে যে প্রত্নস্থল, তা কোন একক প্রত্নস্থল নয়, বরং একাধিক প্রত্নঢিবি নিয়ে গঠিত একটি যৌগিক প্রত্নস্থল। উল্লেখযোগ্য প্রত্নঢিবিগুলি হলো- মিশন ঢিবি, উচাই ঢিবি, বহারামপুর ঢিবি, নিমাই শাহের মাযার, বদের ধাপ, সাঁওতাল পাড়া ঢিবি, কাশিয়া বাড়ি ঢিবি এবং কুসুম্বা, গঙ্গরিয়া ও ব্রিধিগ্রামের একাধিক ঢিবি। প্লাইস্টোসিন যুগে গঠিত বরেন্দ্রভূমির লালমাটিতে অবস্থিত ঢিবিগুলিতে স্থাপত্যিক নিদর্শনের অস্তিত্ব রয়েছে। পাথরঘাটার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মৃৎপাত্রের খন্ডাংশ, গ্লেইজড মৃৎপাত্রের টুকরা, ইট, ইটের টুকরা, পোড়ামাটির ফলক, পাথরের ভাস্কর্য এবং অন্যান্য প্রত্নবস্ত্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
ইটের স্থাপত্যিক নিদর্শন ছাড়াও গ্রানাইট, ব্যাসাল্ট এবং বেলেপাথরের চৌকাঠ, স্তম্ভ প্রভৃতি স্থাপত্যিক নিদর্শন পাওয়া যায়। তুলসীগঙ্গা নদীগর্ভের একস্থানে বেশকিছু ভারী পাথরখন্ড দেখা যায় এবং এ থেকে মনে করা হয় যে, সেখানে অতীতে একটি প্রস্তরনির্মিত সেতু বা ঘাট ছিল।
সাম্প্রতিক একটি প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের ফলে বেশ কিছু কৌতূহলোদ্দীপক প্রত্ননিদর্শন যেমন, পাথর ছোট ছোট টুকরা, স্বল্প-মূল্য পাথরের পুঁতি, লৌহপিন্ড, কাচের খন্ড, তামার চুড়ি, সুরমাদান শলাকা, পোড়ামাটির বল, মুদ্রা, ইটনির্মিত একটি পোতাশ্রয়/ঘাট আবিষ্কৃত হয়েছে। অনুমান করা যায় যে, লোহা, কাঁচ এবং পাথর ভারতবর্ষের অন্যান্য এলাকা থেকে পাথরঘাটায় এসে থাকবে। তুলসীগঙ্গা নদীটি এখনও করতোয়ার সঙ্গে সংযুক্ত। খুব সম্ভবত প্রাচীনকালে পণ্য পরিবহণে নদীটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। প্রচুর পরিমাণে পাথরের টুকরা পরিলক্ষিত হওয়ায় মনে করা যেতে পারে যে, পাথরঘাটা অঞ্চলে একটি প্রস্তরভাস্কর্য নির্মাণকেন্দ্র ছিল।
পাথরঘাটা প্রত্নস্থলের ইতিহাস কালানুক্রমে এখনও নিশ্চিতভাবে নির্ধারিত হয় নি। তবে উত্তর ভারতীয় কালো মসৃণ মৃৎপাত্রের কয়েকটি খন্ডাংশ এবং একটি কুষাণ রীতির দেবীমূর্তির উপর ভিত্তি করে পাথরঘাটাকে আদি ঐতিহাসিক যুগের বলে অভিহিত করা যায়। এখানে প্রাপ্ত কিছু প্রত্নবস্ত্ত গুপ্ত, পাল এবং সেন আমলের অন্তর্ভুক্ত ছিল। উক্ত এলাকায় ব্রাহ্মণধর্মীয় ভাস্কর্য অধিক সংখ্যায় দেখা গেলেও সেখানে অল্প সংখ্যক বৌদ্ধ মূর্তিও পাওয়া গেছে। সুলতানি যুগের একটি শিলালিপিও পাথরঘাটা থেকে পাওয়া গেছে বলে জানা যায়। [এস.এস মোস্তাফিজুর রহমান]