পরাগলপুর

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:০৪, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

পরাগলপুর চট্টগ্রাম শহরের ৬০ কিলোমিটার উত্তরে, চন্দ্রশেখর (সীতাকুন্ড) পর্বতমালার পশ্চিম প্রান্তে এবং ফেনী নদী দ্বারা উত্তর পশ্চিমে বেষ্টিত একটি ঐতিহাসিক স্থান। বর্তমানে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরওয়ারগঞ্জ ইউনিয়নের একটি মৌজা ও গ্রাম। গৌড়ের সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ (১৪৯৩-১৫১৯) ও তৎপুত্র নাসিরউদ্দীন নূসরত শাহ এর (১৫১৯-১৫৩২) শাসনামলে পরাগলপুর ছিল চট্টগ্রাম অঞ্চলের শাসনকেন্দ্র। গৌড় সুলতানের অধীন চট্টগ্রামের উত্তরাঞ্চলের শাসনকর্তা ও সেনাপতি লস্করপরাগল খান ও একই পদাধিকারী তৎপুত্র ছুটি খান এখানে তাঁদের সেনানিবাস ও শাসনকেন্দ্র গড়ে তোলেন। আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ১৫১২ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম দখল করে পরাগল খানকে সর-ই-লস্কর (সৈন্যাধ্যক্ষ) ও শাসনকর্তা নিয়োগ করেন। পরাগল খান ফেনী নদী থেকে অনধিক দুই কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এ অঞ্চলে তাঁর সেনানিবাস স্থাপন করেন। উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ত্রিপুরা সৈন্যদের আক্রমণ প্রতিহত করা এবং পশ্চিমদিকে আরাকানী  মগ জলদস্যুদের উপদ্রব থেকে চট্টগ্রামকে মুক্ত রাখতে প্রাকৃতিকভাবে সুরক্ষিত এ স্থানটিকে নির্বাচন করা হয়েছে প্রতিরক্ষা কৌশল হিসেবে। একই সঙ্গে স্থানটি শাসনকেন্দ্রের মর্যাদা লাভ করে। লস্কর বা সেনাবাহিনীর নিবাস হিসেবে এ স্থানটি লস্করপুর নামে অভিহিত হতো। পরবর্তী সময়ে পরাগল খানের নামানুসারে এর নামকরণ হয় পরাগলপুর।

লস্কর পরাগল খান ও তৎপুত্র লস্কর ছুটি খানের শাসনামলে পরাগলপুর জ্ঞানীগুণীদের মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরাগল খানের আদেশে সভাকবি কবীন্দ্র পরমেশ্বর দাস সংস্কৃত মহাভারত থেকে বাংলা ভাষায় মধ্যযুগীয় পয়্যার ও ত্রিপদী ছন্দে মহাভারত কাহিনী রচনা করেন (১৫১৫-১৫১৯)। এটি পরাগলী মহাভারত বা কবীন্দ্র মহাভারত নামে পরিচিত। এর কয়েক বছর পর ছুটি খানের আদেশে রাজ সভাকবি শ্রীকর নন্দী বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন সংস্কৃত মহাভারতের অশ্বমেধ পর্ব (১৫১৮-১৫২০)। এটি  ছুটি খানি মহাভারত নামে পরিচিত।

পরাগলপুরে পরাগল খান ও ছুটি খানের শাসনামলের কয়েকটি ঐতিহাসিক নিদর্শন অদ্যাপি টিকে আছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পরাগল খান মসজিদ ও দিঘি এবং  ছুটি খান মসজিদ। পরাগল খানের মসজিদটি বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত। দিঘির পূর্বপাড় সংলগ্ন স্থানে প্রাচীন ভবনাদির ধ্বংসাবশেষ বিক্ষিপ্ত অবস্থায় রয়েছে। দিঘির পূর্বপাড়ে একটি এবং দক্ষিণপাড়ে দুটি ইমারতের ধ্বংসাবশেষ কিছুকাল আগেও পরিদৃষ্ট হত। পূর্বপাড়ে একটি পাকা ঘাটের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। পরাগলপুর মৌজার দেওয়ানপুর গ্রামে রয়েছে ছুটি খান মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। মসজিদের খিলানের অনুরূপ বেলে পাথরের স্থাপত্য-ভগ্নাংশ নতুন একটি মসজিদের আশপাশে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় রয়েছে। পরাগল খান দিঘি ব্যতীত আশপাশে বেশ কয়েকটি দিঘি রয়েছে। সেগুলো পরাগল খান ও ছুটি খান কর্তৃক খনিত। এ ছাড়া হাটহাজারী উপজেলায় পরাগলী খাল এবং রাউজান উপজেলায় রয়েছে ছুটি খান দিঘি।  [আহমদ মমতাজ]