ইডেন মহিলা কলেজ
ইডেন মহিলা কলেজ শুভসাধিনী সভা নামীয় একটি সমাজসেবামূলক সংগঠন কর্তৃক ব্রাহ্ম মেয়েদের জন্য ১৮৭৩ সালে ঢাকার ফরাশগঞ্জে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭৮ সালে স্কুলটি অপর একটি মেয়েদের স্কুলের সাথে একীভূত হয়ে ঢাকা ফিমেল স্কুলে রূপান্তরিত হয়। সে বছর স্কুলটি সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় এবং গভর্নর স্যার অ্যাসলি ইডেনের নামানুসারে এর নতুন নামকরণ হয় ইডেন গার্লস স্কুল। স্কুলটি লক্ষ্মীবাজার এলাকায় কার্যক্রম শুরু করে।
ইডেন গার্লস স্কুল ছিল বাংলায় মেয়েদের প্রথম স্কুল এবং ১৮৯৬ সালে এর ছাত্রী ছিল ১৩০ জন। সরকার এটিকে পূর্ববাংলা ও আসাম প্রদেশের উচ্চমান বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে স্কুলটি সাময়িকভাবে একটি বাড়িতে এবং কিছুদিন পর সদরঘাট এলাকায় পর্তুগিজ ব্যবসায়ীদের একটি বাণিজ্যিক ভবনে স্থানান্তরিত হয়। স্কুলটিতে ১৯২৬ সালে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়। সে থেকে এটি ইডেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ নাম ধারণ করে। শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হকের উদ্যোগে কলেজটি আবদুল গণি রোডে একটি ভবনে স্থানান্তরিত হয়। ভবনটি পরবর্তীকালে ইডেন বিল্ডিং নামে পরিচিত হয়। ১৯৪৭ সালে সরকার ইডেন বিল্ডিং-এ নতুন প্রাদেশিক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিলে কলেজটি কার্জন হলের একটি অংশে স্থানান্তরিত হয়। কলেজের সাথে কামরুন্নেছা স্কুলকে একীভূত করার পরিকল্পনা অনুযায়ী কলেজটি আবার স্কুল চত্বরে স্থানান্তরিত হয়। অবশেষে ১৯৫৮ সালে ইডেন কলেজ ও কামরুন্নেছা স্কুলের কলেজ শাখা একীভূত হয়ে বকসীবাজারে ইডেন গার্লস কলেজে রূপান্তরিত হয়। প্রতিষ্ঠান দুটির স্কুল শাখা একীভূত করে কামরুন্নেসা স্কুল নামে টিকাটুলিতে চালু করা হয়।
১৯৬২ সালে আজিমপুরে ১৮ একর জমির উপর গড়ে ওঠে ইডেন কলেজ। কলেজটি নতুন প্রাঙ্গণে স্নাতক কার্যক্রম চালু করে, কিন্তু এর উচ্চ মাধ্যমিক শাখা বকসীবাজারেই অব্যাহত থাকে। পর্যায়ক্রমে কলেজটির আজিমপুর শাখায় উচ্চ মাধ্যমিক ক্লাস এবং বকসীবাজার শাখায় ডিগ্রি ক্লাস চালু হয়। পরবর্তী সময়ে বকশিবাজার শাখার নামকরণ হয় সরকারি বালিকা মহাবিদ্যালয়। এরই পরিবর্তিত নাম বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলজ। ১৯৬৩ সাল থেকে আজিমপুরের ইডেন কলেজ একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইডেন মহিলা কলেজ নামে পরিচালিত হয়।
কলেজের ১টি প্রশাসনিক ভবন, ৫টি শিক্ষা ভবন এবং ৫টি ছাত্রীনিবাস রয়েছে। এছাড়া রয়েছে গ্রন্থাগার ভবন, ক্যান্টিন, খেলার মাঠ ও পুকুর। কলেজে একটি আইসিটি ল্যাবরেটরি আছে এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড-এর সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে একটি এটিএম বুথ স্থাপিত হয়েছে। কলেজটিতে ২৩০ জন শিক্ষক রয়েছেন। ৩০,০০০ ছাত্রী এই প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত এবং প্রতিবছর পাঁচ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে। বিভিন্ন শিক্ষাসহায়ক কার্যক্রম যথা রোভার স্কাউট, বিএনসিসি, ‘থাইকোয়ানদো’ সঙ্গীত শিক্ষা ও খেলাধুলার ব্যবস্থা রয়েছে।
মিস সোরাবজি ছিলেন ইডেন মহিলা কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ। [মাহফুজা চৌধুরী]