কমলা
কমলা (Orange) লেবুজাতীয় ফল। এটি Rutaceae গোত্রের Citrus গণভুক্ত। কমলার আদি জন্মস্থান সম্ভবত চীন। প্রায় চার হাজার বছর পূর্বে চীনের লোকেরা প্রথমে কমলার চাষ শুরু করে। বর্তমানে বহুজাতের কমলা দেখা গেলেও স্বাদের ভিত্তিতে কমলা মূলত দু ধরনের, একটি মিষ্টি এবং অন্যটি টক। টক কমলার জন্মস্থান উত্তর ইউরোপে। কলম্বাসই প্রথম আমেরিকার হিসপানিওলা দ্বীপে মিষ্টি কমলার গাছ রোপণ করেন। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র কমলার চাষ হয়। বাংলাদেশের সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রাম, রংপুর, পঞ্চগড় জেলায় সীমিত পরিমাণে কমলার চাষ হয়। বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কমলা প্রজাতির মধ্যে রয়েছে সাধারণ বা চীনা কমলা C. sinensis; ম্যান্ডারিন কমলা, C. reticulata যার কয়েকটি জাত ট্যানজারিন নামে পরিচিত; এবং টক বা সেভাইল কমলা C. aurantum।
বাংলাদেশে ২০০৫-০৬ সালে ১০০০ মে টন কমলা উৎপাদিত হয়েছে। কমলাগাছ বহুবর্ষজীবী, মাঝারি আকারের, খাড়া এবং এর পাতাগুলি সুচালো ডগাবিশিষ্ট, বোঁটা সরু। চাষ মূলত অঙ্গীয় কলম ও কুঁড়িযোজনে করা হয়। চারাগাছ লাগানোর ৪-৫ বছরের মধ্যে ফলন শুরু হয়। ফুল পত্রকক্ষে একটি বা একগুচ্ছে কয়েকটি থাকে। ফল মাঝারি আকারের, পাকলে কমলা রঙের, শিথিল বাকলযুক্ত হয়। ভাল জাতের কমলা ফলের কোষগুলি (৮-১০টি) সহজেই খোলা যায়। শাঁস রসালো ও মিষ্টি বা মিঠেকড়া। প্রতি কোষে হালকা সবুজ বীজপত্রসহ কয়েকটি চোখা বীজ থাকে।
ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ তাজা ফলই খাওয়া হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম কমলাতে রয়েছে ০.৯৩ গ্রাম প্রোটিন, ০.৩ গ্রাম ফ্যাট, ১১.০২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ০.৪ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ০.০৫ গ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.০২ গ্রাম ফসফরাস এবং ০.১ গ্রাম লৌহ। প্রতি কেজি কমলায় ৪৯০ ক্যালরি শক্তি রয়েছে। জ্যাম, জেলি, স্কোয়াশ ইত্যাদি তৈরিতে কমলা কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহূত হয়। কমলার ফুল, পাতা, ফলের খোসা থেকে সুগন্ধযুক্ত তেল পাওয়া যায় যার বাণিজ্যিক মূল্য অনেক।
সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট তাদের উদ্ভাবিত বারি কমলালেবু ১ নামের একটি নতুন ভ্যারাইটি বাজারজাত করেছে। এর ফল প্রায় গোলাকার, রসালো ও মিষ্টি। পূর্ণবয়স্ক গাছ ৩০০-৪০০টি ফল উৎপাদন করতে পারে। প্রতিটি ফলের গড়পড়তা ওজন ১৯০ গ্রাম।
[এস. এম মনোয়ার হোসেন এবং মোঃ মুকবিল হোসেন]