বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কৃষি মন্ত্রণালয়াধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান যা ধান, পাট, ইক্ষু ও চা (এসব শস্যের জন্য পৃথক পৃথক গবেষণা ইনস্টিটিউট রয়েছে) ব্যতীত সকল শস্যের ওপর গবেষণার দায়িত্বে রয়েছে। ঢাকায় ১৯০৮ সালে কৃষি গবেষণাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি ছিল তৎকালীন বেঙ্গল কৃষি বিভাগের (১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত) অধীন। ১৯৪৭ সালে ভারত-বিভক্তির পর বেঙ্গল কৃষি বিভাগ হয়ে যায় পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিভাগ। দুটি বিভাগ নিয়ে গঠিত এই সংস্থার একটি ছিল গবেষণা অন্যটি সম্প্রসারণ। ১৯৬৮ সালে কৃষি বিভাগকে দুটি পৃথক পরিদপ্তরে বিভক্ত করা হয়, একটি কৃষি পরিদপ্তর (সম্প্রসারণ ও ব্যবস্থাপনা) এবং অন্যটি কৃষি পরিদপ্তর (গবেষণা ও শিক্ষা)। ১৯৭৬ সালে সংস্থাটি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে রূপান্তরিত হয়। গবেষণা অবকাঠামো পুনর্নির্মাণের জন্য ষাটের দশকের প্রথম দিকে এ গবেষণাগার জয়দেবপুরে স্থানান্তরিত হয় এবং ১৯৮০ সালে এ স্থানান্তর সম্পন্ন হয়। ফার্মগেটের কাছে খামার বাড়িতে অবস্থিত ১৯০৮ সালে নির্মিত মূল গবেষণাগার ভবনসমূহ বর্তমানে অন্যান্য কয়েকটি অফিসের কাজে ব্যবহূত হচ্ছে। মূল গবেষণাগারের গবেষণা খামারটি ছিল ১৮২ হেক্টরের।
জয়দেবপুরের কেন্দ্রীয় স্টেশন (১৬৫ হেক্টরের) ছাড়াও কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৬টি আঞ্চলিক কেন্দ্র এবং ২৪টি উপকেন্দ্র আছে। বহুবিষয়ক কার্যক্রম নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইনস্টিটিউটের ৬টি ফসলভিত্তিক গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে (কন্দ-ফসল গবেষণা কেন্দ্র, গম গবেষণা কেন্দ্র, উদ্যান গবেষণা কেন্দ্র, ডাল গবেষণা কেন্দ্র, তৈলশস্য গবেষণা কেন্দ্র, মসলা গবেষণা কেন্দ্র)। এসব কেন্দ্রে বিধিবদ্ধভাবে গবেষণাধীন শস্যের সংখ্যা ১০০ অতিক্রম করেছে এবং শস্যের জাত উন্নয়ন ও উৎপাদন অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গম, আলু, সরিষা ও শাকসবজি উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে এবং বিভিন্ন ফসলের ১৭২টি উন্নত ভ্যারাইটি অবমুক্ত করেছে। এর গবেষণা বিভাগগুলি হলো কৃষিতত্ত্ব, মৃত্তিকাবিজ্ঞান, কীটতত্ত্ব, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব, কৃষি অর্থনীতি, খামার যন্ত্রপাতি ও প্রক্রিয়াকরণ প্রকৌশল, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, উদ্ভিদ প্রজনন, শস্য-সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি এবং সরেজমিন খামার গবেষণা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধানে ৩টি কৃষি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজগুলি হলো- বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট (বর্তমানে শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়), পটুয়াখালী কৃষি কলেজ (বর্তমানে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) এবং হাজী মোহাম্মদ দানেশ কৃষি কলেজ, (বর্তমানে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) দিনাজপুর। ইনস্টিটিউটের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ১২ সদস্যের ব্যবস্থাপনা বোর্ডের ওপর অর্পিত। ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী হচ্ছেন মহাপরিচালক, যাঁকে ৭১৫ জন বিজ্ঞানী ও ৩,৫৪৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী সহযোগিতা করে থাকেন। তিনজন পরিচালক মহাপরিচালককে সহায়তা দেন যাঁরা কার্যক্রমের প্রধান তিনটি ক্ষেত্রললল গবেষণা, সহায়তাসেবা এবং প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগের জন্য বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত। কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সক্রিয় গবেষণা সহযোগিতা রয়েছে। [মামুন-উর-রশিদ]