ইদ্রাকপুর দুর্গ
ইদ্রাকপুর দুর্গ মুন্সিগঞ্জ সদরে অবস্থিত। শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খালের পশ্চিমপাড়ে এবং দেওভোগ গ্রামের পূর্বপ্রান্তে দুর্গটির অবস্থান। এই জল-দুর্গটি একসময় ইছামতী ও মেঘনা নদীর সংগমস্থলে সামরিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্মিত হয়েছিল। তখন দুর্গের নির্মাণস্থলের নাম ছিল ইদ্রাকপুর। এ এলাকায় পরবর্তী সময়ে যে শহরটি গড়ে উঠে একসময় তার নামকরণ হয় মুন্সিগঞ্জ। শহরের উপকণ্ঠে এখনও ইদ্রাকপুর নামে একটি গ্রাম রয়েছে। দুর্গটির চারপাশ এখন মাটিতে ভরাট হয়ে গেছে এবং কোনো কোনো স্থানে মাটির স্তর দুর্গ প্রকারের প্রায় শীর্ষে উঠে গেছে।
মুগল রাজধানী শহর ঢাকা অভিমুখে জলপথে মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের অগ্রগতি প্রতিহত করার লক্ষ্যে দুর্গটি নির্মিত হয়। এটি সম্ভবত বাংলার মুগল সুবাহদার মীরজুমলা কর্তৃক ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দের দিকে নির্মিত।
ইট নির্মিত চতুর্ভুজাকৃতির এ দুর্গটি উত্তর দক্ষিণে প্রসারিত এবং এর দৈর্ঘ্য ৮৬.৮৭ মিটার ও প্রস্থ ৫৯.৬০ মিটার। দুর্গটিতে রয়েছে দুটি অংশ। এর প্রথম অংশ হলো শীর্ষভাগ খিলানকার ফোকর বিশিষ্ট মারলন শোভিত প্রাচীর বেষ্টিত উন্মুক্ত চত্বর। বেষ্টন প্রাচীরের চারকোণে রয়েছে শীর্ষভাগ মারলন শোভিত চারটি গোলাকার সন্নিহিত বুরুজ। বুরুজের গায়ে রয়েছে বন্দুকে গুলি চালাবার উপযোগী ফোকর। দুর্গের অপেক্ষাকৃত কম পরিসরের অংশে আছে অনুরূপ প্রাচীর বেষ্টিত একটি গোলাকার বৃহদাকৃতির ড্রাম। বৃহত্তর উন্মুক্ত চত্বর থেকে ড্রামের অংশে পৌঁছার জন্য একটি পথ আছে। দুর্গটির সর্বাধিক লক্ষ্যনীয় বৈশিষ্ট্য হলো এর পূর্ব অংশে ৩২.৫ মিটার ব্যাসের একটি গোলাকার উচু বেদী। ৯.১৪ মিটার উঁচু এই বেদীতে উঠার জন্য রয়েছে একটি সিঁড়ি।
দুর্গটির অপর লক্ষ্যণীয় বৈশিষ্ট্য হলো ড্রামের পাদদেশে ভূগর্ভস্থ একটি কুঠরি এবং কুঠরিতে অবতরণের জন্য নির্মিত সিড়ি। লোকশ্রুতি মতে, এ সিড়িটি ছিল একটি গোপন সুরুঙ্গপথের অংশ যার মধ্যে দিয়ে দুর্গে অবস্থানকারীরা কোনো জরুরি অবস্থায় নিরাপদ আশ্রয়স্থলে সরে যেতে পারত। বস্ত্তত এ সিড়িটি একটি গোপন ভূগর্ভস্থ কক্ষে অবতরণের পথ এবং সে কক্ষটি ছিল অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুত রাখার গুদামঘর।
ইদ্রাকপুর দুর্গের প্রধান ফটক উত্তরদিকে। ফটকের উপরের অংশে রয়েছে শীর্ষভাগ খিলানাকার ফোকর বিশিষ্ট ও মারলন শোভিত উঁচু আয়াতাকার বুরুজ। এ অংশটি ছিল প্রহরীদের কক্ষ।
দুর্গের ড্রামের উপরিভাগে পরবর্তী সময়ে নির্মিত ভবন বর্তমানে জেলা প্রশাসকের আবাসস্থল। দুর্গটি এখন কারাগাররূপে ব্যবহূত। [মুয়ায্যম হুসায়ন খান]