মুন্সিগঞ্জ জেলা

মুন্সিগঞ্জ জেলা (ঢাকা বিভাগ)  আয়তন: ১০০৪.২৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°২৩´ থেকে ২৩°৩৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°১০´ থেকে ৯০°৪৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে মাদারীপুর ও শরিয়তপুর জেলা, পূর্বে কুমিল্লা ও চাঁদপুর জেলা, পশ্চিমে ঢাকা ও ফরিদপুর জেলা।

জনসংখ্যা ১৪৪৫৬৬০; পুরুষ ৭২১৫৫২, মহিলা ৭২৪১০৮। মুসলিম ১৩২৮৮৩৮, হিন্দু ১১৪৬৫৫, বৌদ্ধ ৭১, খ্রিস্টান ২০৩৯ এবং অন্যান্য ৫৭।

জলাশয় পদ্মা, মেঘনা, ধলেশ্বরী ও ইছামতি নদী উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন মুন্সিগঞ্জ মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

জেলা
আয়তন (বর্গ কিমি) উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম
১০০৪.২৯ ৬৭ ৬১৫ ৯১৯ ১৮৬১০৬ ১২৫৯৫৫৪ ১৪৩৯ ৫৬.১
জেলার অন্যান্য তথ্য
উপজেলার নাম আয়তন(বর্গ কিমি) পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
গজারিয়া ১৩১.০০ - ১১২ ১৩৩ ১৫৭৯৮৮ ১২০৬ ৫৭.২
টঙ্গিবাড়ী ১৪০.৯১ - ১২ ১০২ ১৫১ ১৯৭১৭৩ ১৩৯৯ ৫৭.১
মুন্সিগঞ্জ সদর ২১৮.০৭ ৭৫ ১৯৬ ৩৮৩২৬৩ ১৭৫৭ ৫৫.২
লৌহজং ১৩১.১০ - ১০ ১০৫ ১১৪ ১৫৯২৪২ ১২১৫ ৫৬.২
শ্রীনগর ২০৩.০০ - ১৪ ৯৯ ১৪৭ ২৫৯৮৮৭ ১২৮০ ৫৭.৩
সিরাজদিখাঁন ১৮০.১৯ - ১৪ ১২২ ১৭৮ ২৮৮১০৭ ১৫৯৯ ৫৪.৯

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ ছাত্রজনতা সরকারি অস্ত্রাগার থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র লুট করে এবং পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ৯ মে পাকবাহিনী গজারিয়ায় অভিযান চালিয়ে চার শতাধিক নিরীহ গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করে এবং ১৪ মে কেওয়ারে হামলা করে কিছুসংখ্যক যুবককে হত্যা করে। এর আগে ৩১ মার্চ পাকবাহিনী নারায়ণগঞ্জে আক্রমণ চালালে মুন্সিগঞ্জের তরুণরা নারায়ণগঞ্জবাসীদের সঙ্গে মিলিতভাবে আক্রমণ প্রতিহত করে। জুলাই মাসে ধলাগাঁও এলাকায় শত শত যুবককে রিক্রুট করে ট্রেনিং দেওয়া হয় এবং তারা বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নেয়। ১১ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা শ্রীনগর থানা, ১৪ আগস্ট লৌহজং থানা নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে টঙ্গিবাড়ী থানা আক্রমণ করে প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ হস্তগত করে। মুক্তিযোদ্ধারা উপজেলার শিবরামপুরে আক্রমণ চালিয়ে পাকবাহিনীর তিনটি গানবোট ডুবিয়ে দেয় এবং এতে বেশসংখ্যক পাকসেনা নিহত হয়। গোয়ালিমান্দ্রায় মুক্তিযোদ্ধারা ৬ জন রাজাকারকে হত্যা করে এবং পরে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এক সম্মুখ লড়াইয়ে প্রায় ৩৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। পাকবাহিনী শেখর নগর গ্রামের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং নিরীহ লোকদের হত্যা করে। ২৭ রমজান শবে কদর রাতে ১১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা পাকসেনাদের ওপর সম্মিলিত আক্রমণ চালিয়ে মুন্সিগঞ্জ শহর দখল করে নেয়। ৪ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা টঙ্গিবাড়ী থানা দখল করে নেয় এবং ১১ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জ শত্রুমুক্ত হয়। মুন্সিগঞ্জ জেলায় ৩টি বধ্যভূমি, ৩টি স্মৃতিস্তম্ভ এবং ১টি গণকবর রয়েছে।

শিক্ষার হার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৬.১%; পুরুষ ৫৬.৪%, মহিলা ৫৫.৭%। কলেজ ১৬, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৮৮, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৪৯, মাদ্রাসা ২৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: রাড়ীখাল জে.সি বসু ইন্সটিটিউশন ও কলেজ (১৯২১), হাঁসাড়া কে.কে উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৭৯), বজ্রযোগিনী জে.কে উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৩), মুন্সিগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৫), লৌহজং পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৫), মালখানগর উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৯), এ.ভি.জে.এম. সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯২), ইছাপুরা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯২), স্বর্ণগ্রাম আর.এন উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৮), আব্দুল্লাপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৯), ভাগ্যকুল হরেন্দ্রলাল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০০), আউটশাহী রাধা নাথ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০১), ব্রাহ্মণগাঁও বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০২), পাইকপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৪), বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), রায় বাহাদুর শ্রীনাথ ইনস্টিটিউশন (১৯১৮)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৮.৬৪%, অকৃষি শ্রমিক ৩.১৭%, শিল্প ১.৬৯%, ব্যবসা ২৩.১৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৭৫%, নির্মাণ ২.২৭%, ধর্মীয় সেবা ০.১৯%, চাকরি ১০.৮৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৫.৯৫% এবং অন্যান্য ১০.৩%।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: মুন্সিগঞ্জের কাগজ; সাপ্তাহিক: সাপ্তাহিক মুন্সিগঞ্জ সংবাদ, খোলা কাগজ, কাগজের খবর, সত্য প্রকাশ; মাসিক: বিক্রমপুর; অবলুপ্ত: মাসিক পল্লীবিজ্ঞান, Hindu Intelligencer, মুক্তি, বিক্রমপুর পত্রিকা (১৯২০), গ্রামের কথা (সাপ্তাহিক, ১৯৬২), অনুসন্ধান, চেতনা, কালের ভেলা, সংশপ্তক, সরব, কবিতাপত্র, বিক্রমপুর মুখশ্রী, সাপ্তাহিক বিক্রমপুর বার্তা, বিক্রমপুর।

লোকসংস্কৃতি দুর্গাপূজা, নববর্ষ, চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে যাত্রা, পালাগান, কবিগান, কীর্তনলীলা, বাউল গানের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। শ্যামসিদ্ধির মেলা এবং ঐতিহ্যবাহী ঝুলন মেলার প্রচলন রয়েছে। এছাড়া রথ যাত্রা, নৌকাবাইচ, লাঠি খেলা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

দর্শনীয় স্থান ইদ্রাকপুর কেল্লা, রাজা বল্লাল সেন ও হরিশচন্দ্রের দীঘি, বাবা আদমের মাযার ও মসজিদ, শেখর নগর কালীবাড়ী, সোনারংয়ের জোড়া মন্দির ও শ্যামসিদ্ধির মঠ, শুলপুরের গির্জা, মেঘনা ভিলেজ টুরিস্ট গার্ডেন (গজারিয়া)।  [রতনতনু ঘোষ]

আরো দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা।

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মুন্সিগঞ্জ জেলার সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; মুন্সিগঞ্জ জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।