আলাউদ্দীন আলী শাহ
আলাউদ্দীন আলী শাহ লখনৌতির ক্ষমতা দখল করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং ১৩৩৯ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৩৪২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তাঁর পূর্ব নাম ছিল আলী মুবারক এবং তিনি তাঁর প্রথম জীবনে মালিক ফিরুজের (পরবর্তী সময়ে সুলতান ফিরুজ শাহ তুগলক) একজন বিশ্বস্ত ভৃত্য ছিলেন। আলাউদ্দীন আলী শাহ দিল্লি থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলায় আসেন এবং লখনৌতির শাসনকর্তা কদর খানের অধীনে চাকুরি গ্রহণ করেন। ক্রমান্বয়ে তিনি আরিজ-ই-মুমালিক পদে উন্নীত হন।
কদর খানের মৃত্যুর পর আলী মুবারক উপ-শাসনকর্তাকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করেন। তিনি সুলতান মুহম্মদ বিন তুগলক এর আনুগত্য স্বীকার করেন এবং তাঁকে লখনৌতির শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ দানের জন্য মুহম্মদ বিন তুগলকের নিকট বার বার আবেদন করেন। কিন্তু মুহম্মদ বিন তুগলক মালিক ইউসুফকে লখনৌতির শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন। মালিক ইউসুফ লখনৌতি আসার সময় পথেই মৃত্যুবরণ করেন। অন্যান্য ব্যাপারে ব্যস্ত থাকার কারণে সুলতান আর লখনৌতির দিকে মনোযোগ দিতে পারেন নি। আলী মুবারক এ সুযোগ গ্রহণ করে ১৩৩৯ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং আলাউদ্দীন আলী শাহ উপাধি ধারণ করে মুদ্রা জারি করেন। তিনি নিজেকে ’বিশ্বাসীদের নেতার সাহায্যকারী’ হিসেবেও বর্ণনা করেন।
বাহরাম খানের মৃত্যুর পর ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ এবং হাজী ইলিয়াস ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে যথাক্রমে সোনারগাঁওএ স্বাধীন এবং সাতগাঁও এর সর্বময় শাসনকর্তা হন। এভাবে বাংলা তিন ভাগে বিভক্ত হয় এবং সেখানে ফখরউদ্দীন, ইলিয়াস এবং আলী শাহ যথাক্রমে সোনারগাঁও, সাতগাঁও ও লখনৌতি শাসন করতে থাকেন। যেহেতু রাজনৈতিক গুরুত্বের প্রেক্ষাপটে লখনৌতির বিশেষ মর্যাদা ছিল, সেহেতু এ তিনজনের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় যুদ্ধ শুরু হয়।
ইবনে বতুতার মতে, প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার জন্য আলী শাহ ও ফখরুদ্দীনের মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল খুবই তীব্র। কারণ, নৌবাহিনীর শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ফখরউদ্দীন বর্ষাকালে লখনৌতি আক্রমণ করতেন। অন্যদিকে স্থলবাহিনী শক্তিশালী ছিল বলে আলী শাহ শুষ্ক মৌসুমে প্রতিশোধ গ্রহণকল্পে আক্রমণ চালাতেন। কিন্তু এ যুদ্ধে কেউই কারও ওপর বিজয়ী হতে পারেন নি।
আলী শাহ ইলিয়াস শাহএর সাথেও দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষে লিপ্ত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে এ সংঘর্ষ ৭৪০ হিজরিতে (১৩৩৯ খ্রি.) শুরু হয় এবং প্রথম সংঘর্ষে ইলিয়াস শাহ সুবিধাজনক অবস্থান লাভ করেন। কিন্তু এ বিজয় চূড়ান্ত ছিল না। কারণ, আলী শাহ ৭৪১ হিজরি থেকে ৭৪৩ হিজরি পর্যন্ত সময়ে মুদ্রা জারি করেছেন। অবশ্য ১৩৪২ খ্রিস্টাব্দে ইলিয়াস কর্তৃক আলী শাহ সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হন।
আলাউদ্দীন আলী শাহ‘র ১৩৪২ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যু হয় বা তিনি নিহত হন। তাঁর প্রায় তিন বছরের শাসনকালে সম্ভবত সোনারগাঁও-এর পক্ষ থেকে বার বার আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তিনি তাঁর রাজধানী লখনৌতি হতে ফিরুজাবাদে (পান্ডুয়ায়) স্থানান্তর করেন। তিনি পান্ডুয়ায় শেখ জালালুদ্দীন তাবরিজি এর জন্য সমাধিসৌধ নির্মাণ করেন। গোলাম হোসেন সেলিম উল্লেখ করেন যে, ১৭৮৮ সালে রিয়াজ-উস-সালাতীন গ্রন্থ রচনাকালে তিনি এ সমাধিসৌধের চিহ্ন দেখতে পান। [এ.বি.এম শামসুদ্দীন আহমদ]