পুলিশ আইন, ১৮৬১
পুলিশ আইন, ১৮৬১ আইনশৃঙ্খলা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন (Police Act of 1861) ছিল বাংলায় মুগল শাসনব্যবস্থা থেকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থায় উত্তরণের পথে এক চূড়ান্ত পদক্ষেপ। আইন অনুযায়ী পুলিশ বাহিনীর ক্ষমতা, নিয়োগবিধি, পদোন্নতি ও বদলি, তদন্ত পদ্ধতি এবং সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন, গোয়েন্দা কার্যক্রম, শৃঙ্খলা রক্ষা ও পুলিশবাহিনী মোতায়েন সংক্রান্ত বিষয়গুলি সুনির্দিষ্ট করা হয়।
নব্য ঔপনিবেশিক শাসকদের উপযোগী একটি ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে এ আইন প্রণীত হয়। ১৭৯২ সালের ডিসেম্বরে প্রণীত 'Regulation for the Police of the Collectorship in Bengal, Bihar and Orissa' ছিল এ ক্ষেত্রে গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিস কর্তৃক গৃহীত বড় ধরনের প্রথম পরিবর্তন। কর্নওয়ালিস প্রবর্তিত এ ব্যবস্থাটি থানাদারী পদ্ধতি নামেই বহুল পরিচিত ছিল। এ ব্যবস্থার আওতায় কালেক্টরশিপ বা নবগঠিত জেলাগুলিকে কতিপয় থানা বা পুলিশের এখতিয়ারভুক্ত এলাকায় বিভক্ত করা হয় এবং প্রতিটি থানার দায়িত্বে একজন দারোগা বা প্রধান নিযুক্ত হন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা জজ হিসেবে জেলার সার্বিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতেন। এ ব্যবস্থা পুলিশ বিভাগে ক্রমোচ্চ শ্রেণীবিন্যাসের সূচনা করে এবং অভ্যন্তরীণ পুলিশকে ম্যাজিস্ট্রেটের সুষ্ঠু তত্ত্বাবধানে এনে তার নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করে যা এতদিন জমিদার বা ভূস্বামীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
তবে শুরুতেই এ ব্যবস্থার ত্রুটি ধরা পড়ে। কারণ একটি ছোট সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়া সত্ত্বেও একজন দারোগার অধিভুক্ত এলাকা ছিল অনেক বিস্তৃত (প্রতিটি প্রায় ৪০০ বর্গমাইল)। কিন্তু তাকে দেওয়া হয়েছিল খুবই কম সংখ্যক কর্মচারি। এ ছাড়া কর্নওয়ালিসের ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যানুযায়ী নতুন ব্যবস্থায় দেশিয় কর্মকর্তা-কর্মচারিদের এত কম বেতন দেওয়া হতো যে, কোন শিক্ষিত বা পারিবারিকভাবে মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি নতুন পুলিশবাহিনীতে যোগদান করত না। যারা এতে যোগ দিত তারা দুর্নীতি এবং উৎপীড়ন চালিয়ে অর্থ আদায়ের মাধ্যমে তাদের স্বল্প বেতনের ঘাটতি পূরণ করত। তদুপরি, দেশের অভ্যন্তরে অনুরূপ কোন বাহিনীর সঙ্গে জেলাভিত্তিক এ পুলিশবাহিনীর কোন সম্পর্ক বা সমন্বয় না থাকার কারণে অপরাধীরা সংশ্লিষ্ট জেলার সীমানা অতিক্রম করতে পারলেই শাস্তি বা গ্রেফতার এড়াতে পারত।
পুলিশী ব্যবস্থায় কিছুটা সমরূপতা আনার জন্য এবং এর ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার উদ্দেশ্যে ১৮০৮ সালে সমগ্র বাংলা প্রেসিডেন্সির জন্য সুপারিনটেন্ডেন্ট অব পুলিশের কার্যালয় স্থাপিত হয়। কিন্তু পুলিশের আওতাধীন এলাকা এত বিশাল ছিল যে, একটি মাত্র সুপারিন্টেন্ডেন্টের পদ তেমন কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারে নি। ফলে ১৮৫৩ সালে এ পদ বিলোপ করা হয় এবং বিভাগীয় কমিশনারগণকে (১৮২৯ সালে সৃষ্ট) তাদের এখতিয়ারভুক্ত এলাকায় পুলিশবাহিনীর সদস্যদের সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ১৮৫৪ সালে লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার ফ্রেডারিক হ্যালিডে এ প্রদেশকে পুলিশ ব্যবস্থার জন্য নয়টি কমিশনারের বিভাগ এবং ৩৭টি জেলায় বিভক্ত করেন।
কিন্তু এসব পরিবর্তন এবং সংস্কার প্রকৃতপক্ষে পুলিশবাহিনীর সদস্যদের মৌলিক স্বভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে নি। কার্যত তারা পূর্বের মতোই অকর্মণ্য, দুর্নীতিপরায়ণ, উৎপীড়নকারী এবং শান্তি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অদক্ষ থেকে যায়। এমনকি হ্যালিডেও স্বীকার করতে বাধ্য হন যে বাংলার পুলিশ সংগঠন ‘বাংলায় ভারতীয় প্রশাসনের এ যাবৎকালের সত্যিকারের কলঙ্ক’।
পুলিশবাহিনীর সদস্যদের দুর্নীতির প্রধান কারণ হিসেবে তাদের স্বল্প বেতনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৮৫০-এর দশকে বিষয়টি আলোচনার জন্য উত্থাপিত এবং বাংলা সরকার কয়েকটি সুপারিশ পেশ করলেও কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে দেয় এ বিবেচনায় যে, পুলিশের বিষয়টি এককভাবে শুধু বাংলার জন্য না দেখে সমগ্র ভারতের প্রেক্ষাপটে দেখা উচিত।
যাহোক, ১৮৫৭-৫৮ সালের সিপাহী বিপ্লব অদূর ভবিষ্যতে পুলিশবাহিনীর সংস্কারের সম্ভাবনাকে স্তিমিত করে দেয়। তথাপি একটি দক্ষ পুলিশবাহিনী গঠনের প্রয়োজনীয়তা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। ১৮৬০ সালের আগস্ট মাসে লর্ড ক্যানিং একটি পূর্ণাঙ্গ ও মিতব্যয়ী পুলিশবাহিনী গঠনের নিমিত্তে সুপারিশমালা প্রণয়নের জন্য এইচ.এম কোর্টকে চেয়ারম্যান করে একটি পুলিশ কমিশন গঠন করেন।
এ কমিশন বিস্তারিত অনুসন্ধানের মাধ্যমে সকল তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে অবশেষে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, দেশের পুলিশবাহিনীকে একক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অধীনে একটি সমন্বিত শক্তিতে পরিণত করা প্রয়োজন। কমিশন আইরিশ কনস্টেবুলারি পুলিশ ব্যবস্থাকে মডেল হিসেবে চিহ্নিত করে এবং ঘোষণা দেয় যে, এ ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিলিটারি পুলিশের সব গুণাবলি আত্মীভূত করে নেবে। কমিশন আরও গুরুত্ব আরোপ করে যে, পুলিশ বিভাগের প্রতিটি শাখা তার আওতাধীন গোয়েন্দা কিংবা প্রতিরোধমূলক সকল দায়িত্ব সম্পর্কে দায়ী থাকবে। প্রতিটি স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের অধীনে ও নিয়ন্ত্রণে পুলিশের একটি করে স্বতন্ত্র বিভাগ গড়ে তোলার ব্যাপারে কমিশন জোরালো মত প্রকাশ করে।
পুলিশ বিভাগকে একজন মহাপুলিশ পরিদর্শক (আই.জি বা ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ) এর নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। তিনিই পুলিশ বিভাগের প্রধান পরিদর্শক এবং নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রয়োগ করার অধিকারী। এভাবে বিভাগীয় কমিশনারদের নির্বাহী ক্ষমতা লোপ পায়। মহাপুলিশ পরিদর্শককে সহায়তা করার জন্য একজন উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শকের পদ সৃষ্টি করা হয়। জেলা পর্যায়ে থাকবেন একজন পুলিশ সুপারিনটেন্ডেন্ট যিনি অভ্যন্তরীণ আর্থিক বিষয়, পুলিশবাহিনীর সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং কর্মদক্ষতা সংক্রান্ত সকল বিষয়ে মহাপুলিশ পরিদর্শকের অধীনে থেকে কাজ করবেন। অনুরূপভাবে তিনি জেলা পুলিশ বিভাগে সার্বিক কর্মকান্ডের জন্য মহাপুলিশ পরিদর্শকের নিকট দায়বদ্ধ থাকবেন। বড় জেলার ক্ষেত্রে একজন সহকারী জেলা পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট নিযুক্ত করা হবে।
ইন্সপেক্টর, প্রধান কনস্টেবল, সার্জেন্ট এবং কনস্টেবলদের সমন্বয়ে অধঃস্তন বাহিনী গঠিত হবে। প্রধান কনস্টেবল একটি পুলিশ স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন এবং এরূপ কয়েকটি স্টেশনের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে ইন্সপেক্টরের ওপর। গ্রামপুলিশ থাকবে কিন্তু একে পুলিশ বিভাগের একটি অঙ্গ সংগঠনে পরিণত করে সাধারণ কনস্টেবুলারির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত করা হবে। কমিশনের সুপারিশ অনুসারে সকল কর্মকর্তা হবে ইউরোপীয়। তবে একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর ইউরোপীয়, ইউরেশীয় বা দেশিয় হতে পারবেন। বিভাগীয় কমিশনারদের পুলিশ সংক্রান্ত কোন দায়িত্ব থাকবে না বলে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কমিশন অত্যন্ত স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিম্ন পদের কোন ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ সংক্রান্ত কোন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। জেলার পুলিশের ওপর জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থাকবে। কারণ, তিনি এমন একজন কর্মকর্তা যার ওপর জেলার সার্বিক দায়িত্ব, বিশেষ করে আইন ও শৃঙ্খলার দায়িত্বভার ন্যস্ত থাকে।
কমিশন তাদের সুপারিশমালা সমন্বয়ে একটি খসড়া বিল প্রস্ত্তত করে, যা পরবর্তীপর্যায়ে ১৮৬১ সালের ৫নং পুলিশ আইন হিসেবে পাস হয়। এ আইনে পুলিশবাহিনীর প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও কর্মপরিধি; অপরাধীর শাস্তির মাত্রা; পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা/কর্মচারীবৃন্দের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, পদচ্যুতি ও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নিয়মাবলি; তদন্তের ধরন এবং অপরাধী অনুসন্ধান; সাধারণ ডায়েরি (জি.ডি), এজাহার বা প্রাথমিক অবহিতি (এফ.আই.আর); পুলিশবাহিনীর সদস্যদের শৃঙ্খলা বিধান ও মোতায়েন; বিভিন্ন অফিসারের ক্ষমতা ও অধিক্ষেত্র প্রভৃতি বিষয় সংজ্ঞায়িত হয়। বাংলার পুলিশ বিভাগের ব্যয় নির্বাহ বাবদ বার্ষিক ৪০ লক্ষ রূপি বরাদ্দ দেওয়া হয়। মি. কারনক বাংলার প্রথম মহাপুলিশ পরিদর্শক নিযুক্ত হন।
১৮৬১ সালের পুলিশ আইন ভারতের আধুনিক পুলিশ ব্যবস্থার মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত এবং এ আইনের অধিকাংশ বিধান এখনও পূর্ণমাত্রায় কার্যকর রয়েছে। একটি বিষয়ে এ আইন পুলিশ বিভাগকে দেশের অতি পুরানো ঐতিহ্য থেকে সম্পূর্ণরূপে সরিয়ে আনে। নতুন ব্যবস্থায় সমাজের সাথে পুলিশের কোন সম্পর্ক থাকল না। এখন তারা হলেন সরকারের বেতনভুক কর্মচারী মাত্র। অধিকন্তু এখন মুগল ফৌজদারের স্থলাভিষিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট তার সকল পুলিশী কার্যকলাপ থেকে বঞ্চিত হন। তবে একজন নির্বাহি কর্মকর্তা হিসেবে পুলিশের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ থাকে। ফৌজদারি বিচার প্রশাসনে তার বিচার বিভাগীয় ক্ষমতাও বলবৎ থাকে।
এ আইনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এটি দেশের পুলিশ বিভাগকে একটি স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র বিভাগে পরিণত করে। অধিকন্তু, এ আইন নির্বাহী এবং বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল - যে নীতি অপরাধীকে গ্রেফতার করার নির্বাহী ক্ষমতা এবং তার বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা দুটি পৃথক কর্তৃপক্ষের অধীনে ন্যস্ত থাকার বিষয়কে সমর্থন করে।
একটি উত্তম, দুর্নীতিমু্ক্ত এবং দক্ষ পুলিশবাহিনী গঠনের সম্ভাবনা শুরুতেই তিরোহিত হয়ে যায়। মিতব্যয়িতার নামে প্রথম থেকেই প্রয়োজনীয় বাজেটের চেয়ে কম অর্থ বাংলার পুলিশবাহিনীর জন্য বরাদ্দ করা হয় যাতে কম সংখ্যক পুলিশ নিয়োগ করা হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, স্বল্প বাজেট বরাদ্দের কারণে পুলিশবাহিনীর সদস্যদের বেতন বৃদ্ধি করা সম্ভব ছিল না। কঠোর অনুশীলন ও নিয়মানুবর্তিতার ওপর অধিক গুরত্ব আরোপ করে পুলিশবাহিনীকে সামরিক রূপ দেওয়ার কারণে নতুন পদ্ধতি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। অনুশীলন এবং নিয়মানুবর্তিতার বিষয়গুলি এত কঠোরভাবে অনুসরণ করা হতো যে উক্ত কারণে শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের যুবকগণ পুলিশবাহিনীতে যোগদানে আগ্রহী ছিল না। এর ফলে স্বল্প শিক্ষিত এবং অবাঙালি যুবকেরা পুলিশবাহিনীতে স্থান করে নেয় যা পরিণামে খারাপ ফল বয়ে আনে, অন্যদিকে পুলিশবাহিনী জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়।
এ আইনের বিধানসমূহ শুরু থেকেই পুলিশবাহিনীর ব্যবস্থাপনা ও মোতায়েন প্রশ্নে জেলা পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ সুপারিনটেন্ডেন্ট-এর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে। এ বিরোধ অচিরেই প্রশাসনের সকল স্তরকে প্রভাবিত করে। এরকম বৈরিতা স্বভাবতই নতুন পুলিশ ব্যবস্থার জন্য শুভ ছিল না। এমনকি পুলিশবাহিনীর স্বাধীন ও স্বতন্ত্র অস্তিত্ব সম্পর্কে সর্বোচচ মহল থেকেও সমালোচনা হয়। কারণ যে দেশ সবসময় একক স্বৈরশাসক কর্তৃক শাসিত হয়ে এসেছে সেখানে এ ধরনের পৃথকীকরণ ব্যবস্থা মানানসই নয় বলেই মনে করা হয়। বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর জর্জ ক্যাম্পবেল দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, এ নীতি ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূতকরণ সংক্রান্ত প্রাচ্যদেশীয় ধারণার পরিপন্থী ছিল। তিনি যুক্তি প্রদর্শন করেন যে, ম্যাজিস্ট্রেট হচ্ছে জেলার নির্বাহী প্রধান। সে হিসেবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণ যে পুলিশকে কর্তৃত্বের দৃশ্যমান প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে সেই পুলিশ যদি ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতি অনুগত থাকে তাহলে জনগণও ম্যাজিস্ট্রেটকে তাদের স্থানীয় শাসক হিসেবে ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। তিনি উপসংহারে বলেন যে, যদি পুলিশকে পৃথক রাখা হয় তবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষে জেলার নির্বাহী প্রধান এবং সরকারের স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে মর্যাদা বজায় রাখা সম্ভব হবে না।
এভাবে জর্জ ক্যাম্পবেলের সময় থেকে ম্যাজিস্ট্রেটকে অধিক পুলিশি ক্ষমতা প্রদান বিষয়ে একটি পৃথক নীতি চালু হয়। অর্থাৎ পুলিশবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ তথা পুলিশ প্রশাসনের নিয়মশৃঙ্খলা, পদোন্নতি, নিয়োগ এবং বরখাস্ত বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেটকে ক্ষমতা প্রদান করা হয়। বিষয়টি এতদূর পর্যন্ত গড়ায় যে, ১৮৭০ সালের মধ্যে মহাপুলিশ পরিদর্শক ইন্সপেক্টর নিয়োগের ব্যাপারে কেবল সম্মতি প্রদানকারী কর্তৃপক্ষে পরিণত হন।
১৯০২ সালের দিকে যখন পরবর্তী পুলিশ কমিশন গঠন করা হয়, তখন পুলিশকে আর স্বাধীন বিভাগ হিসেবে রাখা হয় নি এবং ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতি সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করা হয়। কমিশন অবশ্য পুলিশ ব্যবস্থাকে ১৮৬১ সালের আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের কারণে ক্ষমতা পৃথকীকরণের আদর্শ বাস্তবায়িত হতে পারে নি। [শরীফ উদ্দীন আহমেদ]