ক্যানিং, লর্ড

ক্যানিং, লর্ড (১৮১২-১৮৬২)  ১৮৫৬ থেকে ১৮৬২ সাল পর্যন্ত ভারতের শেষ গভর্নর জেনারেল এবং ১৮৫৮ সালের ১ নভেম্বর থেকে ভারতে প্রথম ভাইসরয়। বিখ্যাত রাজনীতিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব জর্জ ক্যানিংয়ের তৃতীয় পুত্র চার্লস জন ক্যানিং ১৮১২ সালের ১৪ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন এবং পাটনী, ইটন ও অক্সফোর্ডের ক্রাইস্ট চার্চে শিক্ষা লাভ করেন।

তাঁর প্রশাসনের সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লব-এর শুরু। লর্ড ক্যানিং বিদ্রোহটি দমন করেন এবং এ ঘটনার পর ১৮৫৮ সালে পার্লামেন্টারি আইন পাস হয়। রানী প্রকাশ্য ঘোষণা দ্বারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এর শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতের শাসনভার নিজ হাতে গ্রহণ করেন। যারা এ অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করে তাদেরকে যদিও তিনি শাস্তি প্রদান করেন, তবুও তিনি যতদূর সম্ভব ভারতীয়দের বিরুদ্ধে বাছবিচারহীন প্রতিহিংসামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ পরিহার করেন, এবং এভাবে তিনি ‘ক্ষমাশীল ক্যানিং’ এর উপাধি অর্জন করেন।

তিনি ইঙ্গ-ভারতীয় সেনাবাহিনীকে পুনর্গঠিত করেন। আয়কর প্রবর্তন, শতকরা দশভাগ হারে সমশুল্ক আরোপ ও বিনিমেয় কাগজের মুদ্রার প্রচলন দ্বারা আর্থিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এর মাধ্যমে বাংলার চাষীদের যে দুর্দশা ছিল তার কিছুটা দূর করে প্রজাদের অধিক নিরাপত্তা প্রদানের উদ্দেশ্যে ১৮৫৯ সালে বাংলায় খাজনা আইন পাস হয়। ব্রিটিশরা চা ও কফি চাষ শুরু করে। চার্লস উড শিক্ষা বিষয়ে ১৮৫৪ সালে যে সুপরিশমালা পেশ করেন তা’ কার্যকর করা হয় এবং ১৮৫৭ সালে কলকাতা, বোম্বে ও মাদ্রাজে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ইউরোপীয় নীলকরদের বিরুদ্ধে বাংলা ও বিহারের চাষীদের যে অভিযোগের কারণ ছিল তা তদন্ত করতে তিনি একটি কমিশন গঠন করেন। এ কমিশনের সুপারিশমালার ভিত্তিতে তিনি যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তা নীলকরদের স্বেচ্ছাচারিতাকে বহুলাংশে লাঘব করে। লর্ড  মেটকাফ কর্তৃক প্রণীত ভারতীয় দন্ডবিধি প্রবর্তন করা হয় এবং ১৮৬১ সালে ফৌজদারি কার্য-পরিচালনা বিধি (criminal procedure code) প্রকাশিত হয়। পরবর্তী বছরে পুরাতন সুপ্রিম কোর্টসমূহ ও কোম্পানির ‘আদালত’-এর পরিবর্তে তিনটি প্রেসিডেন্সি শহরে হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়।

লর্ড ক্যানিং-এর প্রশাসনের শেষদিকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো ১৮৬১ সালে ভারতীয় কাউন্সিল আইন পাস যার দ্বারা বেসরকারি ভারতীয় সদস্যগণ ভাইসরয়ের আইনসভায় মনোনীত হতে পারতেন।

১৮৫৭ সালের যুদ্ধের সময়কার গুরুভার ও কঠিন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ক্লান্ত ক্যানিং অবসর গ্রহণ করে ১৮৬২ সালের ১৮ মার্চ ভগ্নস্বাস্থ্যে ভারত ত্যাগ করেন। কিন্তু তিনি অবসর গ্রহণ করার পূর্বে ভারতে তাঁর কর্তব্যপালনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৮৫৯ সালে তাঁকে ‘আর্ল’ (Earl) মর্যাদায় উন্নীত করা হয়। ইংল্যান্ডে অল্প কয়েকমাস পর ১৮৬২ সালের ১৭ জুন তিনি পরলোকগমন করেন এবং ওয়েস্ট মিনিস্টারস অ্যাবিতে তাঁকে সমাহিত করা হয়। [কে.এম মোহসীন]