দে, সুশীলকুমার
দে, সুশীলকুমার (১৮৯০-১৯৬৮) শিক্ষাবিদ ও গবেষক। ১৮৯০ সালের ২৯ জানুয়ারি কলকাতায় তাঁর জন্ম। পিতা সতীশচন্দ্র দে ছিলেন সিভিল সার্জন। সুশীলকুমার কটকের র্যাভেনশ কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন। পরে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফএ ও ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ (১৯০৯) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে এমএ (১৯১১) ডিগ্রি লাভ করেন। পরের বছর তিনি বিএল ডিগ্রিও লাভ করেন। কর্মজীবনে প্রবেশ করার পর তিনি সংস্কৃত অলঙ্কারশাস্ত্রের ইতিহাস বিষয়ে অভিসন্দর্ভ রচনা করে লন্ডন স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ থেকে ডিলিট ডিগ্রি (১৯২১) অর্জন করেন। তিনি কিছুকাল জার্মানের বন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্ব ও পুথি সম্পাদনা বিষয়েও শিক্ষালাভ করেন।
১৯১২ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে সুশীলকুমারের কর্মজীবন শুরু হয়। পরে প্রায় দশ বছর (১৯১৩-১৯২৩) তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি এবং ভারতীয় ভাষা ও সংস্কৃত বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯২৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়এর ইংরেজি বিভাগে রিডার পদে যোগদান করেন। পরে তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই সংস্কৃত বিভাগে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দিয়ে ১৯৪৭ সালে অবসর গ্রহণের পূর্বপর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। তিনি একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডীনের দায়িত্বও পালন করেন।
সুশীলকুমার দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুথিশালার জন্য বহু সংখ্যক পুথি সংগ্রহ করেন। সেগুলি থেকে তিনি কয়েকটি সংস্কৃত পুথি (কীচকবধ, পদ্যাবলী ইত্যাদি) সম্পাদনা করেন, যা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত হয়।
১৯১২ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে সুশীলকুমারের কর্মজীবন শুরু হয়। পরে প্রায় দশ বছর (১৯১৩-১৯২৩) তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি এবং ভারতীয় ভাষা ও সংস্কৃত বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯২৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়এর ইংরেজি বিভাগে রিডার পদে যোগদান করেন। পরে তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই সংস্কৃত বিভাগে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দিয়ে ১৯৪৭ সালে অবসর গ্রহণের পূর্বপর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। তিনি একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডীনের দায়িত্বও পালন করেন।
সুশীলকুমার দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুথিশালার জন্য বহু সংখ্যক পুথি সংগ্রহ করেন। সেগুলি থেকে তিনি কয়েকটি সংস্কৃত পুথি (কীচকবধ, পদ্যাবলী ইত্যাদি) সম্পাদনা করেন, যা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত হয়। তাঁর এই পান্ডিত্যপূর্ণ পুথি-সম্পাদনা দেশিবিদেশি পন্ডিতদের দ্বারা উচ্চ প্রশংসিত হয়।
অবসর গ্রহণের পরও সুশীলকুমার বাংলা সরকারের প্রধান গবেষক, কলকাতার সংস্কৃত কলেজএর রিসার্চ প্রফেসর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান, পুনার ডেকান রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ইতিহাসভিত্তিক সংস্কৃত অভিধান রচনায় সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর (১৯৫১) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পুনার ভান্ডারকর রিসার্চ ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য মনীষিগণের সহায়তায় মহাভারতএর যে গুরুত্বপূর্ণ সংস্করণ প্রকাশিত হয়, তিনি তার সঙ্গে যুক্ত থেকে ‘উদ্যোগপর্ব’ ও ‘দ্রোণপর্ব’ সম্পাদনা করেন। তিনি রয়েল এশিয়াটিক সোসাইটি অব গ্রেট ব্রিটেন অ্যান্ড আয়ারল্যান্ডের সম্মানিত ফেলো (১৯৫৪), দিল্লির সাহিত্য আকাদেমির সংস্কৃত উপদেষ্টা পর্ষদের সদস্য (১৯৫৫), ভারত সংস্কৃতচর্চা কমিশনের সদস্য (১৯৫৬-১৯৫৭) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো (১৯৫৬-১৯৬৪) ছিলেন। এছাড়া তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ স্কলার (১৯১৭) হিসেবেও সম্মান অর্জন করেন। তিনি দীর্ঘদিন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎএর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং দুবার (১৯৫০ ও ১৯৫৬) এর সভাপতিও হন।
সুশীলকুমার দে একজন উচ্চ পর্যায়ের গবেষক ছিলেন। বিভিন্ন ভাষায় রচিত তাঁর শতাধিক প্রবন্ধ আছে, তবে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায়ই তিনি সর্বাধিক গ্রন্থ রচনা করেন। সেগুলির মধ্যে বাংলা প্রবাদ (১৯৪৫), দীনবন্ধু মিত্র (১৯৫১), নানা নিবন্ধ (১৯৫৩), Bengali Literature in the Nineteenth Century (১৯১৯), Studies in the History of Sanskrit Poetics (দুই খন্ড, ১৯২৩, ১৯২৫), Padyavali of Rupa Goswami (১৯৩৪), Early History of the Vaisnava Faith and Movement in Bengal (১৯৪২), History of Sanskrit Literature (১৯৪৭), Meghaduta of Kalidasa (১৯৫৯) ও Sanskrit Poetics as a study of Aesthetics (১৯৬৩) প্রধান। পান্ডিত্য ও গবেষণাকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘গ্রিফিথ পুরস্কার’ (১৯১৫), পূ্র্ববঙ্গ সারস্বত সমাজ-এর ‘বিদ্যারত্ন’ (১৯৪৩), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সরোজিনী বসু স্বর্ণপদক’ (১৯৪৮) এবং নবদ্বীপের বঙ্গবিবুধজননী সভার ‘বিদ্যাসিন্ধু’ (১৯৫০) উপাধি লাভ করেন। এছাড়া ১৯১৭ সালে তিনি পি.আর.এস উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৬৮ সালের ৩১ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়। [মানস মজুমদার]