চন্দ্রবর্মণ
চন্দ্রবর্মণ দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গের রাজা (আনু. চার শতক)। পুন্ড্রবর্ধন ও রাঢ় জনপদে গুপ্ত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে বাংলার স্বল্প পরিচিত রাজন্যবর্গের মধ্যে একজন। হরিসেণ তাঁর এলাহাবাদ স্তম্ভলিপিতে উল্লেখ করেছেন যে, এ রাজা সমুদ্রগুপ্ত (৩৩৬–৩৭৬ খ্রি.) কর্তৃক পরাজিত হন এবং তাঁর অধিকৃত এলাকা গুপ্ত সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। তবে চন্দ্রবর্মণ ঠিক কোন অঞ্চল শাসন করতেন লেখক স্পষ্টভাবে তা উল্লেখ করেননি।
চন্দ্রবর্মণের পরিচয় নিয়ে পন্ডিতদের মাঝে মতপার্থক্য আছে। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মেহরৌলি স্তম্ভলিপিতে উল্লিখিত রাজা চন্দ্রের সাথে চন্দ্রবর্মণকে অভিন্ন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। দীনেশচন্দ্র সরকার তাঁকে শুশুনিয়া প্রস্তরলিপিতে উল্লিখিত পুষ্করণাধিপতি সিংহবর্মণের উত্তরাধিকারী রাজা চন্দ্রবর্মণের সাথে অভিন্ন মনে করেন। এ চন্দ্রবর্মণই সম্ভবত ‘চন্দ্রবর্মণ কোটকোণঃ’ দুর্গ স্থাপন করেছিলেন। পুষ্করণকে শনাক্ত করা হয়েছে পশ্চিম বাংলায় শুশুনিয়া পাহাড়তলির ৪০.২৫ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে বাঁকুরা জেলার দামোদর নদের তীরবর্তী পোখরন (পোখরনা) নামক গ্রামের সাথে। এ থেকে অনুমান করা যায় যে, চন্দ্রবর্মণ দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার একজন স্থানীয় শাসক ছিলেন। শুশুনিয়া প্রস্তরলিপিকে পুরাতত্ত্বের বিচারে চার শতকের বলে ধরা হয়। অতএব চন্দ্রবর্মণ সম্ভবত সমুদ্রগুপ্তের সমসাময়িক এবং তাঁর শাসনকাল সমুদ্রগুপ্তের আগেই শুরু হয়ে থাকতে পারে। উল্লেখ্য যে, নামের শেষে বর্মণযুক্ত শাসকগণ বাংলার রাঢ় অঞ্চলে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
চন্দ্রবর্মণ তাঁর কর্ম (কৃতি), সম্ভবত তাঁর বিখ্যাত গুহা এবং দোষাগ্রাম, চক্রস্বামীকে (বিষ্ণু) উৎসর্গ করেছিলেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, চন্দ্রবর্মণ বৈষ্ণব ধর্মের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। [কৃষ্ণেন্দু রায়]
গ্রন্থপঞ্জি DC Sircar, Select Inscriptions Bearing on Indian History and Civilization, I, Calcutta, 1965; HC Raychaudhuri, Political History of Ancient India, Commentary by BN Mukherjee, Delhi, 1996;