বদরুদ্দীন, আল্লামা
বদরুদ্দীন, আল্লামা (১৪শ শতক) সুফি মুজাহিদ ও ইসলাম প্রচারক। তিনি শাহ্ বদর, বদর আউলিয়া ও বদরপীর নামে জনপ্রিয়। শাহ্জালাল (র.) ও ৩৬০ আউলিয়ার প্রায় সকল বৃত্তান্তেই বদর শাহ্ কর্তৃক চট্টগ্রামে ইসলাম প্রচার এবং সেখানে তাঁর মাযার থাকার কথা বর্ণিত হয়েছে। বদর শাহ্সহ বারোজন আউলিয়া শাহ্জালালের নির্দেশে তরফের রাজা আচাক নারায়ণকে পরাভূত করে সেখানে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। পরে বদর শাহ্ চট্টগ্রামে ইসলাম প্রচার করেন।
চৌদ্দ শতকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে জীনপরীদের আড্ডা ছিল বলে কথিত আছে। তাদের উৎপাতে জনজীবন ছিল অতিষ্ঠ। বদর শাহ্ প্রদীপ বা চাটিতে আলো জ্বালিয়ে চট্টগ্রাম থেকে তাদের বিতাড়িত করেন। এ চাটি থেকেই চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি বলে দাবি করা হয়।
ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ্র সেনাপতি কদল খান গাজী ১৩৪০ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম অধিকার করেন। বদর শাহ্, হাজী খলীল প্রমুখ দরবেশ এ ব্যাপারে তাঁকে সাহায্য করেন। চট্টগ্রামে ইসলাম প্রচারে বদর শাহ্র অবদানই সর্বাধিক। তাঁর নামের সঙ্গে যুক্ত বদরটিলা (হাটহাজারি উপজেলা), বদরখালি (চকরিয়া উপজেলা), বদরকুয়া (কক্সবাজার) ও বদর মোকাম (আরাকানের আকিয়াব) এখনও প্রসিদ্ধ স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়।
মধ্যযুগের কবি দৌলত উজির বাহরাম খাঁ, মোহাম্মদ খাঁ ও মুহম্মদ মুকিম তাঁদের কাব্যে চট্টগ্রামের পীর বদর শাহ্র কথা উল্লেখ করেছেন। সতেরো শতকের ঐতিহাসিক শিহাবুদ্দীন তালিশ ফতিয়া-ই-ইবরিযা গ্রন্থে চট্টগ্রামে বদরের আস্তানা ও কবরের কথা উল্লেখ করেছেন। চট্টগ্রাম শহরের বদরপট্টিতে তাঁর মাযার আছে। এটি সুলতানি আমলে নির্মিত বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। প্রত্যেক বছর ২৯ রমজান তাঁর মাযারে ওরস পালিত হয়। চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বদর পীরের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। বিপদে-আপদে, নদী পারাপারে, এমনকি খেলাধুলায় সাফল্যকামনায়ও লোকে বদর পীরকে স্মরণ করে। বাংলার প্রায় সর্বত্র নৌকার মাঝিরা ‘বদর বদর’ বলে নদী পাড়ি দেয়। তিনি নদীর অভিভাবক বলে লোকবিশ্বাস আছে। [দেওয়ান নূরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরী]