বাংলাদেশ
বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
সংক্ষিপ্ত তথ্য
সরকারি নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।
রাজধানী ঢাকা।
সরকার সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা; রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন এবং প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।
ভৌগোলিক অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার অন্তর্ভুক্ত, ২০°৩৪´ থেকে ২৬°৩৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°০১´ থেকে ৯২°৪১´ দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। পূর্ব-পশ্চিমে সর্বোচ্চ বিস্তৃতি ৪৪০ কিলোমিটার এবং উত্তর-উত্তরপশ্চিম থেকে দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত সর্বোচ্চ বিস্তৃতি ৭৬০ কিলোমিটার।
সময় +৬.০০ ঘণ্টা গ্রীনিচ প্রমাণ সময়।
আয়তন ও সীমা' আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার। পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ; উত্তরে ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয়; পূর্বে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম এবং সেই সঙ্গে মায়ানমার; এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। আন্তর্জাতিক স্থলসীমার দৈর্ঘ্য প্রায় ২,৪০০ কিমি; এর মধ্যে ৯২ শতাংশ ভারতের সঙ্গে এবং বাকি ৮ শতাংশ মায়ানমারের সঙ্গে। উপকূলীয় সীমারেখার দৈর্ঘ্য ৪৮৩ কিলোমিটারের অধিক। ভূখন্ডগত সমুদ্রসীমা ১২ নটিক্যাল মাইল (২২.২২ কিমি) এবং অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল (৩৭০.৪০ কিমি) পর্যন্ত বিস্তৃত।
প্রশাসনিক একক বিভাগ ৭: ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট এবং রংপুর; জেলা ৬৪টি; উপজেলা ৪৮৩ ও থানা ৫৯৯ (২০০৮); ইউনিয়ন ৪,৪৯৮ (২০০৮); মৌজা ৫৯,৯৯০; গ্রাম ৮৭,৩৬২; সিটি কর্পোরেশন ৬ (ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল); পৌরসভা ৩০৯ (২০০৮)।
ভূ-প্রকৃতি বাংলদেশ পলল গঠিত একটি আর্দ্র আঞ্চল। বাংলাদেশের ভূখন্ড মূলত গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীগঠিত সুবৃহৎ বদ্বীপের সমন্বয়ে সৃষ্ট। বঙ্গীয় বদ্বীপ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বদ্বীপগুলোর একটি। এই বিস্তৃত সমতল ভূমির মধ্যে বৈচিত্র্য সৃষ্টি করেছে দেশের মধ্য-অঞ্চলের মধুপুর গড়, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বরেন্দ্রভূমি এবং উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত কিছু পর্বতসারি। দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ ভূমিই সমুদ্র সমতল থেকে মাত্র তিন মিটারের চাইতেও কম উঁচু এবং প্রতিনিয়ত বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হয়। সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ‘বিজয়’ (তাজিং ডং)-এর উচ্চতা ১,২৮০ মিটার এবং এটি রাঙ্গামাটি জেলার সাইচল পর্বতসারির অন্তর্ভূক্ত।
নদীমালা প্রধান নদীগুলোর শাখা ও উপনদীসহ মোট প্রায় ৭০০ নদী রয়েছে। এই নদীগুলো আবার তিনটি বৃহৎ নদীপ্রণালীর অন্তর্ভুক্ত: গঙ্গা-পদ্মা নদীপ্রণালী, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীপ্রণালী ও সুরমা-মেঘনা নদীপ্রণালী। দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশের পাহাড়ী এলাকার নদীগুলো সামগ্রিকভাবে চট্টগ্রাম অঞ্চলের নদীপ্রণালী হিসেবে চিহ্নিত। গঙ্গা, পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, সুরমা, কুশিয়ারা, মেঘনা, কর্ণফুলি, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, আড়িয়াল খাঁ, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তিস্তা, আত্রাই, গড়াই, মধুমতি, কপোতাক্ষ, রূপসা-পসুর, ফেনী ইত্যাদি অন্যতম প্রধান নদী।
জলবায়ু বাংলাদেশের জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমি ধরনের। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা শীতকালে যথাক্রমে ২৯°সে ও ১১°সে এবং গ্রীষ্মকালে যথাক্রমে ৩৪°সে ও ২১°সে। বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১,১৯৪ থেকে ৩,৪৫৪ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৮০ থেকে ১০০% (আগস্ট-সেপ্টেম্বর) এবং সর্বনিম্ন আর্দ্রতা ৩৬% (ফেব্রুয়ারি ও মার্চ)।
প্রত্নস্থান পাহাড়পুর: জয়পুরহাট জেলার জামালগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। এলাকাটি নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার অন্তর্গত; মহাস্থান: বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তরে বগুড়া সদর ও শিবগঞ্জ উভয় উপজেলায় আংশিকভাবে অন্তর্ভুক্ত; ভাসু বিহার: বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত বিহার গ্রামের উত্তর দিকে, মহাস্থান থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং নাগর নদী থেকে ৫০০ মিটার পশ্চিমে অবস্থিত; ময়নামতি: কুমিল্লা শহরের প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত; হলুদ বিহার: পাহাড়পুর বৌদ্ধমঠ থেকে ১৪.৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, মহাস্থান থেকে পঞ্চাশ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে এবং নওগাঁ জেলাশহর থেকে ১৮ কিলোমিটার উত্তরে বদলগাছি থানার বিলাসবাড়ি ইউনিয়নে তুলসীগঙ্গা এবং যমুনা নদীর মাঝখানে অবস্থিত; সীতাকোট বিহার: দিনাজপুর জেলার নওয়াবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত; ওয়ারী-বটেশ্বর: নরসিংদী জেলার বেলাব থানা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত।
পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী), সুন্দরবন (খুলনা)। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উভয় দৃশ্যই অবলোকন করা যায়।
জনসংখ্যা (২০০৮) মোট জনসংখ্যা ১৪৬.৬ মিলিয়ন; প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৯৯৩ জন, বাৎসরিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৯, পুরুষ ও নারীর সংখ্যা অনুপাত ১০৪:১০০, শহুরে জনসংখ্যা ৩৭.৪ মিলিয়ন, গ্রামীণ ১০৯.২ মিলিয়ন। জন্মের সময় প্রত্যাশিত আয়ু ৬৬.৯ বৎসর (২০০৮)। নৃতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের মানুষ দ্রাবিড়, প্রোটো-অস্ট্রালয়েড, মঙ্গোলীয় এবং আর্যদের সংকর। প্রধানত খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটিসহ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, রাজশাহী, নওগাঁ, রংপুর, বগুড়া, নবাবগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলায় মোট ১২ লক্ষের কিছু বেশি উপজাতি বসবাস করে। বাংলাদেশে সব মিলিয়ে প্রায় ৪৫টি উপজাতীয় সম্প্রদায় রয়েছে; এদের মধ্যে চাকমা, গারো, হাজং, খাসিয়া, মগ, সাঁওতাল, রাখাইন, মণিপুরী, মুরং ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
ধর্ম মুসলমান ৮৮.৩%, হিন্দু ১০.৫%, বৌদ্ধ ০.৬%, খ্রিস্টান ০.৫%, অন্যান্য ০.১%।
ভাষা রাষ্ট্রীয় ভাষা ‘বাংলা’; প্রায় ৯৯.৫০ শতাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। ইংরেজি দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ভাষা।
সাক্ষরতা সাত বৎসর ও তার বেশি বয়সের জনসংখ্যার ৬৫.৫ শতাংশ (২০০১)।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৩১টি (২০০৮), বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৫১টি (২০০৮), সরকারি মেডিকেল কলেজ ১৮টি (২০০৮), বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ৪১টি (২০০৮), প্রকৌশল মহাবিদ্যালয় ৮টি, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ২০টি, মহাবিদ্যালয় (সাধারণ শিক্ষা) ৩,২৭৭টি (২০০৮), মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৮,৭৫৬টি এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮২,২১৮টি (২০০৮)।
স্বাস্থ্য সুবিধা হাসপাতাল ২,৮৬০টি; হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৭৪,৪১৫টি; নিবন্ধিত চিকিৎসক ৪৯,৯৯৪ জন, প্রতি ২,৮৬০ জনের জন্য একজন চিকিৎসক (২০০৮)।
কর্মসংস্থান ও পেশা (শ্রমশক্তি জরিপ ২০০২-০৩) মোট কর্মরত জনসংখ্যার কারিগরি পেশায় নিয়োজিত (tech. prof.) ৩.৮ শতাংশ; প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা (admin. and managerial) ০.২ শতাংশ; করণিক (clerical works) ৩.৪ শতাংশ; বিপণন (sales works) ১৪.৮ শতাংশ; সেবামূলক কর্মকান্ড (service works) ৪.৫ শতাংশ; কৃষি, বন ও মৎসচাষ সংক্রান্ত কর্মকান্ড ৫১.৪ শতাংশ; শিল্প উৎপাদন ও পরিবহণ (produc. and trans.) ২১.৯ শতাংশ।
পেশাজীবী কারিগর (artisans) কামার, কুমার, তাঁতি, দর্জি, ময়রা, সূত্রধর (সুতার), কলু (তেলী), কাঁসারু, শাঁখারি, স্বর্ণকার, ঘরামি, করাতি, পাটিয়াল।
খনিজ সম্পদ প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, পিট, চুনাপাথর, কঠিন শিলা, সৈকত বালি ভারি মণিক (জিরকন, ইলমেনাইট, রুটাইল, ম্যাগনেটাইট, গারনেট, মোনাজাইট, লিউককসেন, কায়ানাইট ইত্যাদি), কাঁচবালি, চীনামাটি, ইটের মাটি এবং ধাতব খনিজ।
পানি সম্পদ প্রাকৃতিকভাবেই বাংলাদেশের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভূ-পৃষ্ঠস্থ ও ভূগর্ভস্থ পানি সম্পদ। দেশের বাইরে থেকে ভূ-পৃষ্ঠস্থ জলপ্রবাহ অনুপ্রবেশের পরিমাণ বৎসরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হয়ে থাকে। সারা বৎসরের সর্বোচ্চ প্রবাহ থাকে আগস্ট মাসে প্রায় ১,৪০,০০০ কিউমেক এবং সবচাইতে কম থাকে ফেব্রুয়ারি মাসে ৭,০০০ কিউমেক। বাংলাদেশের পাললিক ভূগর্ভস্থ জলস্তরগুলো পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট ভূগর্ভস্থ জলাধারগুলোর অন্যতম। এখানকার প্লাবনভূমি এলাকায় অত্যল্প গভীরতাতেই ভূগর্ভস্থ পানি পাওয়া যায়। তুলনামূলক উঁচু সোপান এলাকা অর্থাৎ বরেন্দ্রভূমি ও মধুপুরগড় এলাকায় প্লাইসটোসিন ডুপি টিলা বালুকাস্তর ভূগর্ভস্থ জলস্তরের ভূমিকা পালন করে। পার্বত্য এলাকায় ভূগর্ভস্থ জলস্তরের ভূমিকা পালন করে প্লাইসটোসিন টিপাম বালুকাস্তর। বাংলাদেশের অধিকাংশ স্থানেই ভূ-জল পৃষ্ঠ ভূ-পৃষ্ঠের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে এবং বৎসরের বিভিন্ন সময় এর গভীরতা উঠানামা করে।
শক্তির উৎস কাঠ (খড়ি বা লাকড়ি), প্রাকৃতিক গ্যাস, পেট্রোলিয়াম, কয়লা, জলবিদ্যুৎ, সৌরশক্তি, বায়োগ্যাস ইত্যাদি।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১টি (বাংলাদেশ ব্যাংক); ৪৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংক - এর মধ্যে ৪টি রাষ্ট্রীয় মালিকানায়, ৩১টি দেশী বেসরকারি ব্যাংক, ১৩টি বিদেশী ব্যাংক। রাষ্ট্রীয় মালিকানার ৫টি বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো উন্নয়ন অর্থসংস্থান প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও রয়েছে ২৩টি অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ২৭টি মার্চেন্ট ব্যাংকার, ৫৫৬টি মানি চেঞ্জার, ২টি স্টক এক্সচেঞ্জ (ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ), ২টি সরকারি ও ৩৯টি বেসরকারি বীমা কোম্পানি, প্রায় ১০টি ইজারা অর্থসংস্থান প্রতিষ্ঠান (leasing companies), ডাকঘর সঞ্চয়ী ব্যাংক এবং ডাক বিভাগের জীবন বীমা প্রকল্প। দেশের অর্থসংস্থান কাঠামোর অধিকাংশই বাণিজ্যিক ব্যাংক কেন্দ্রিক। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং উন্নয়ন কর্মকান্ডে নিয়োজিত বিশেষ ধরনের ব্যাংকগুলোই মূলত দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বাংলাদেশে প্রায় ১,৪৫,০০০ সমবায় সমিতি রয়েছে। ১৯৯৯ সালে ঋণ দানকারী সমবায় সমিতির সংখ্যা ছিল ২০টি এবং এগুলোর মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৬.৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক সকল ধরনের সমবায় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ সমন্বয়কারী ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। এছাড়াও প্রায় ১,২০০ এনজিও ক্ষুদ্র্ ঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠান মাঠপর্যায়ে উন্নয়ন কর্মকান্ডে নিয়োজিত রয়েছে।
শিল্প পাট, চা, টেক্সটাইল, তৈরি পোশাক, কাগজ, সার, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, সিমেন্ট, চিনি, মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ, ঔষধ ও রাসায়নিক দ্রব্য ইত্যাদি।
রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রামে একটি করে মোট ২টি ইপিজেড রয়েছে। গাজীপুর, মংলা, ঈশ্বরদী, কুমিল্লা, সৈয়দপুর ও সিরাজগঞ্জে একটি করে ইপিজেড প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে। চট্টগ্রামে একটি কোরিয়ান ইপিজেড প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ও কোরিয়ার মধ্যে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
রপ্তানি তৈরি পোশাক, কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য, চা, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, চিংড়ি ও অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত মাছ, নিউজপ্রিন্ট কাগজ, হস্তশিল্প।
আমদানি গম, তৈলবীজ, অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম ও পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ, তুলা, ভোজ্যতেল, সার, সিমেন্ট, সুতা।
বৈদেশিক বাণিজ্য (২০০৯-১০) রপ্তানি: ১৬.২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; আমদানি: ২৩.৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
মুদ্রা টাকা; ১০০ পয়সায় ১ টাকা (৬৮.৯৪ টাকা = ১ মার্কিন ডলার, জুন ২০০৯)।
মাথাপিছু আয় ৭৫০ মার্কিন ডলার (২০০৯-১০)।
পরিবহণ ও যোগাযোগ পাকা সড়কপথ ১০,০০০ কিলোমিটার; রেলপথ ২,৮৯১ কিমি; নৌপথ ৮,৯০০ কিমি।
সড়ক সেতু ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দেশের দীর্ঘতম বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতু ১৯৯৮ সালের জুন মাসে উদ্বোধন করা হয়েছে; অন্যান্য বৃহৎ সড়ক সেতু হচ্ছে: জাপান-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু (মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলায় মেঘনা নদীর উপর); মেঘনা-গোমতী সেতু (কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় মেঘনা নদীর উপর); বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য মৈত্রী সেতু (কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলায় মেঘনা নদীর উপর); ত্বরা সেতু (মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলায় ধলেশ্বরী নদীর উপর); চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু ১ (ঢাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর উপর); চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু ২ (ঢাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর উপর); শীতলক্ষ্যা সেতু (কাঁচপুর ব্রিজ নামে অধিক পরিচিত এবং নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলায় শীতলক্ষ্যা নদীর উপর); কর্ণফুলি সেতু (চট্টগ্রামের চান্দগাঁও উপজেলায় কর্ণফুলি নদীর উপর) ইত্যাদি।
রেল সেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ (পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় গঙ্গা নদীর উপর); ভৈরব সেতু (কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলায় মেঘনা নদীর উপর); তিস্তা সেতু (রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় তিস্তা নদীর উপর) ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ নৌবন্দর ঢাকা, চাঁদপুর, বরিশাল, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ, ভৈরব বাজার, আশুগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ।
সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম এবং মংলা সমুদ্রবন্দর।
বিমান বন্দর জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, ঢাকা; আমানত শাহ্ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, চট্টগ্রাম; ওসমানী বিমান বন্দর, সিলেট; কক্সবাজার বিমান বন্দর; যশোর বিমান বন্দর; বরিশাল বিমান বন্দর; রাজশাহী বিমান বন্দর; সৈয়দপুর বিমান বন্দর, নিলফামারী; ঈশ্বরদী বিমান বন্দর, পাবনা; তেজগাঁও স্টল পোর্ট, ঢাকা; শমসেরনগর স্টল পোর্ট, মৌলভীবাজার; কুমিল্লা স্টল পোর্ট; লালমনিরহাট স্টল পোর্ট; ঠাকুরগাঁও স্টল পোর্ট।
বেতার সম্প্রচার কেন্দ্র ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা এবং ঠাকুরগাঁও।
টিভি স্টেশন সম্প্রচার কেন্দ্র: ঢাকা ও চট্টগ্রাম। রিলে সেন্টার: চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, নাটোর, ময়মনসিংহ, রংপুর, নোয়াখালী, সাতক্ষীরা, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি এবং ঠাকুরগাঁও।
উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র চট্টগ্রামের বেতবুনিয়া; ঢাকার সাভার উপজেলায় তালিবাবাদ এবং ঢাকা মহানগরীর মহাখালীতে মোট তিনটি উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র।
প্রধান খাদ্য চাল, গম, সবজি, ডাল, মাছ এবং মাংস।
প্রধান শস্য ধান, পাট, গম, আলু, চা, তামাক, ইক্ষু।
প্রধান ফল আম, কাঁঠাল, জাম, আনারস, কলা, লিচু, লেবু, পেয়ারা, পেঁপে, তেঁতুল, তরমুজ, জামরুল, বরই বা কুল।
প্রধান মাছ স্বাদুপানির মাছ: রুই, কাতল, মৃগেল, কালবাউস, সরপুঁটি, বোয়াল, শোল, গজার, টাকি, পাবদা, আইড়, রিঠা, পাঙ্গাস, শিং, মাগুর, কৈ। লোনাপানির মাছ: রূপচাঁদা, ছুরি, ভেটকি, লইট্ট, পোয়া ইত্যাদি। জতীয় মাছ ইলিশকে বলা হয় অ্যানাড্রোমাস মাছ, এটি লবণাক্ত ও স্বাদু উভয় ধরনের পানিতেই বসবাস করে।
উদ্ভিদ মোট প্রায় ৬০০০ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে, এর মধ্যে প্রায় ৫০০০ প্রজাতি সপুষ্পক।
প্রাণী মেরুদন্ডী প্রাণী প্রায় ১৬০০ প্রজাতির; ২২৬ প্রজাতি স্বাদু পানির এবং ৪৪২ প্রজাতি সামুদ্রিক মাছ; ২২ প্রজাতির উভচর প্রাণী; ১২৬ প্রজাতির সরীসৃপ (১০৯ ভূ-ভাগ বা স্বাদুপানির, ১৭ সামুদ্রিক); ৬২৮ প্রজাতির পাখি (৩৮৮ দেশী বা আবাসিক এবং ২৪০ অতিথি বা পরিযায়ী পাখি); স্তন্যপায়ী প্রাণী ১১৩ প্রজাতির (ভূ-ভাগের ১১০ প্রজাতি ও সামুদ্রিক ৩ প্রজাতি)।
বন সম্পদ মোট বনাঞ্চল ২১,৪০৩ বর্গ কিলোমিটার; সুন্দরবনের আয়তন ৪,১১০ বর্গ কিলোমিটার এবং পার্বত্য বনভূমির পরিমাণ ১৩,৬১৭ বর্গ কিলোমিটার।
জাতীয় দিবস ২১শে ফেব্রুয়ারি ‘শহীদ দিবস’, এই দিনটি এখন ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে এটি পালিত হয়; ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস; পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ; ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস।
প্রধান উৎসব সর্বজনীন: নবান্ন ও বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ। ধর্মীয়: ঈদুল ফিত্র, ঈদুল আযহা, শবে বরআত, শবে কদর, ঈদে-মীলাদুননবী, মুহররম ইত্যাদি মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। দুর্গাপূজা, কালীপূজা, লক্ষ্মীপূজা, সরস্বতীপূজা, দোলযাত্রা, হোলি ইত্যাদি হিন্দুদের; বড়দিন খ্রিস্টানদের এবং বৌদ্ধপূর্ণিমা বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব।
ক্রীড়া কাবাডি (জাতীয় ক্রীড়া) এবং ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, টেনিস, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, হ্যান্ডবল, দাবা, ক্যারম ইত্যাদি।
জাতীয় ফুল শাপলা।
জাতীয় ফল কাঁঠাল।
জাতীয় পাখি দোয়েল।
জাতীয় মাছ ইলিশ।
জাতীয় গাছ আম।
জাতীয় প্রাণী বাঘ বা বেঙ্গল টাইগার বা রয়েল বেঙ্গল টাইগার। [মাসুদ হাসান চৌধুরী]