ঘাট

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৯:৩৯, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

ঘাট (Ghat)  নদী বা পুকুরের তীরবর্তী স্থান। প্রধানত হিন্দুদের স্নান ও অন্যান্য ধর্মীয় শৌচকর্মে এটি ব্যবহূত হয়। কোনো হিন্দু ব্যক্তির মৃত্যুতে তাঁর নিকটাত্মীয়রা  নদী বা পুকুর তীরে ক্ষৌরকর্ম ও স্নান জাতীয় শুদ্ধি ক্রিয়ানুষ্ঠান সম্পন্ন করে থাকে। বিধান অনুযায়ী এধরনের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সম্পাদনের স্থানটি ‘ঘাট’ নামে পরিচিত এবং এভাবেই সাধারণ ঘাট শব্দের উৎপত্তি। প্রকৃতপক্ষে নদী বা খালের ঘাটসমূহ স্নান ছাড়াও যোগাযোগ ও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহূত হয়। নদী,  খাল প্রভৃতির তীরে যাত্রী ও মালামাল নামানো-উঠানোর বা নোঙ্গর করার জন্য নৌকা, স্টিমার, লঞ্চ ইত্যাদি ভেড়ানোর স্থানকেও ঘাট (খেয়াঘাট, জাহাজঘাট) বলে। অবস্থানগত গুরুত্ব অনুযায়ী ঘাটের আকার-আকৃতিতে বিভিন্নতা দেখা যায়। সনাতন অর্থনীতিতে প্রধান প্রধান ঘাটসমূহ ছিল বন্দরসদৃশ্য, যেখানে পণ্যদ্রব্য ওঠা-নামা করা হতো।

ঘাট [ছবি: আমানুল হক]

মুগল আমলে প্রতিটি স্বতন্ত্র ঘাটকে বার্ষিক ইজারা দেওয়া হতো এবং ইজারাদাররা ‘ঘাটওয়াল’ নামে পরিচিত ছিল। ঘাটওয়াল তাঁর ঘাটের তদারকি করত এবং নৌকাযোগে বা অন্য উপায়ে আগত যাত্রীদের নিরাপত্তা বিধান করত। এরূপ সেবার বিনিময়ে ঘাটওয়াল ঘাট ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে মাশুল আদায় করত। কর্নওয়ালিশ কোড ১৭৯৩-এর অধীনে ইজারাদারের নিকট ঘাট ইজারা দেওয়ার প্রথা রহিত হয়। ব্রিটিশ আমলের  ঢাকা শহরের উল্লেখযোগ্য ঘাটগুলি হলো  সদরঘাট, জিঞ্জিরা ঘাট, সয়ের ঘাট (বর্তমানে সোয়ারি ঘাট), পাগলা ঘাট এবং মিরপুর ঘাট।

বৃহদাকৃতির নদী দিয়ে বিচ্ছিন্ন অঞ্চলের মানুষ, যানবাহন ও মালামাল পারাপারের জন্য উভয় তীরের সুবিধাজনক যে স্থান দুটো ব্যবহূত হয় সেগুলিকেও ঘাট বলে। আরিচা, নগরবাড়ী, দৌলতদিয়া, মাওয়া ও বাহাদুরাবাদ বাংলাদেশে এধরনের ঘাটের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। ঘাট নদী তীরে গড়ে উঠে বিধায় নদীর গতিপথ পরিবর্তীত হলে বন্দর হিসেবে ঘাটের কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু স্থানটি একটি বর্ধিষ্ণু বিকশিত এলাকায় পরিণত হয় এবং নামের সঙ্গে ‘ঘাট’ শব্দটি তার অতীত পরিচয়ের সাক্ষ্য বহন করে।  [মোহা. শামসুল আলম]