ভেরেলেস্ট, হ্যারী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''ভেরেলেস্ট, হ্যারী '''(১৭৩৪-১৭৮৫)  ১৭৬৭ থেকে ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা [[ফোর্ট উইলিয়ম|ফোর্ট উইলিয়ম ]]এর গভর্নর। [[ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি|ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি]]র কর্মচারীরা যখন বাংলার সম্পদ লুণ্ঠনে ব্যাপৃত, তখন হ্যারী ভেরেলেস্ট ছিলেন এর ব্যতিক্রম। বাংলায় তাঁর সামগ্রিক কার্যকালে তিনি তাঁর সততা অক্ষুণ্ণ রাখেন। ব্রিটিশ শাসনাধীন বাংলার জনগণের প্রতি তাঁর সহানুভূতি ছিল সুবিদিত। তিনি ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে লক্ষ্মীপুর (বর্তমানে জেলা শহর) কুঠির কুঠিয়াল হিসেবে যোগ দেন। [[পলাশীর যুদ্ধ|পলাশীর যুদ্ধ]] এর প্রাক্কালে নওয়াবের সৈন্যরা তাঁকে বন্দি করে এবং যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তিনি বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান। ১৭৫৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি ফোর্ট উইলিয়ম কাউন্সিলের সদস্য হন। কাউন্সিল সদস্য হিসেবে তিনি নওয়াব মীরজাফরকে মসনদ থেকে অপসারণের তীব্র বিরোধিতা করেন। বস্ত্তত, ভেরেলেস্ট ছিলেন তাঁদেরই একজন যাঁরা বাংলায় কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন।
'''ভেরেলেস্ট, হ্যারী''' (১৭৩৪-১৭৮৫)  ১৭৬৭ থেকে ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা [[ফোর্ট উইলিয়ম|ফোর্ট উইলিয়ম ]]এর গভর্নর। [[ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি|ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি]]র কর্মচারীরা যখন বাংলার সম্পদ লুণ্ঠনে ব্যাপৃত, তখন হ্যারী ভেরেলেস্ট ছিলেন এর ব্যতিক্রম। বাংলায় তাঁর সামগ্রিক কার্যকালে তিনি তাঁর সততা অক্ষুণ্ণ রাখেন। ব্রিটিশ শাসনাধীন বাংলার জনগণের প্রতি তাঁর সহানুভূতি ছিল সুবিদিত। তিনি ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে লক্ষ্মীপুর (বর্তমানে জেলা শহর) কুঠির কুঠিয়াল হিসেবে যোগ দেন। [[পলাশীর যুদ্ধ|পলাশীর যুদ্ধ]] এর প্রাক্কালে নওয়াবের সৈন্যরা তাঁকে বন্দি করে এবং যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তিনি বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান। ১৭৫৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি ফোর্ট উইলিয়ম কাউন্সিলের সদস্য হন। কাউন্সিল সদস্য হিসেবে তিনি নওয়াব মীরজাফরকে মসনদ থেকে অপসারণের তীব্র বিরোধিতা করেন। বস্ত্তত, ভেরেলেস্ট ছিলেন তাঁদেরই একজন যাঁরা বাংলায় কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন।


[[Image:VerelstHarry.jpg|thumb|right|400px|হ্যারী ভেরেলেস্ট]]
নওয়াব [[মীরকাসিম|মীরকাসিম]] কর্তৃক ইংরেজদের হাতে চট্টগ্রাম ন্যস্ত করার পর ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে হ্যারী ভেরেলেস্ট চট্টগ্রামের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন এবং ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই অঞ্চল শাসন করেন। চট্টগ্রামে কোম্পানির রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধিতে তাঁর সাফল্যের জন্য কাউন্সিল তাঁকে আরও দুটি অধিকৃত জেলা বর্ধমান ও মেদিনীপুরের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য অনুরূপ দায়িত্ব অর্পণ করে। রবার্ট [[ক্লাইভ, রবার্ট|ক্লাইভ ]]এর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর [[কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স|কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স]] ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মে ভেরেলেস্টকে বাংলায় ফোর্ট উইলিয়মের গভর্নর নিযুক্ত করে। ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দের শেষ নাগাদ পদত্যাগ করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ পদে নিয়োজিত থাকেন। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তাঁর সততা ও ঐকান্তিক সংকল্প সত্ত্বে্ও ভেরেলেস্ট দেশের বিপর্যয় রোধ করতে পারেন নি। দাক্ষিণাত্যে হায়দার আলী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে কোম্পানির যুদ্ধ পরিচালনার অর্থের জোগান দেওয়ার জন্য তাঁকে প্রয়োজনীয় রাজস্ব সংগ্রহ করতে হতো।
নওয়াব [[মীরকাসিম|মীরকাসিম]] কর্তৃক ইংরেজদের হাতে চট্টগ্রাম ন্যস্ত করার পর ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে হ্যারী ভেরেলেস্ট চট্টগ্রামের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন এবং ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই অঞ্চল শাসন করেন। চট্টগ্রামে কোম্পানির রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধিতে তাঁর সাফল্যের জন্য কাউন্সিল তাঁকে আরও দুটি অধিকৃত জেলা বর্ধমান ও মেদিনীপুরের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য অনুরূপ দায়িত্ব অর্পণ করে। রবার্ট [[ক্লাইভ, রবার্ট|ক্লাইভ ]]এর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর [[কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স|কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স]] ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মে ভেরেলেস্টকে বাংলায় ফোর্ট উইলিয়মের গভর্নর নিযুক্ত করে। ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দের শেষ নাগাদ পদত্যাগ করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ পদে নিয়োজিত থাকেন। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তাঁর সততা ও ঐকান্তিক সংকল্প সত্ত্বে্ও ভেরেলেস্ট দেশের বিপর্যয় রোধ করতে পারেন নি। দাক্ষিণাত্যে হায়দার আলী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে কোম্পানির যুদ্ধ পরিচালনার অর্থের জোগান দেওয়ার জন্য তাঁকে প্রয়োজনীয় রাজস্ব সংগ্রহ করতে হতো।
[[Image:VerelstHarry.jpg|thumb|right|হ্যারী ভেরেলেস্ট]]


পলাশী যুদ্ধের পর ধাতুমুদ্রার পাচার এবং ইউরোপ থেকে রৌপ্য আমদানি বন্ধ হওয়ার কারণে তাঁর শাসনামলে চরম আর্থিক সংকট দেখা দেয়। রৌপ্য-ঘাটতি ও কোম্পানির কর্মচারীদের লুণ্ঠনবৃত্তির দরুন ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্রমাবনতি ঘটে। এই সংকট মোকাবেলায় নিজের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে হ্যারী ভেরেলেস্ট ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে পদত্যাগ করেন, যদিও উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য তিনি নিজেকে দায়ী মনে করেন নি। তবে দেশের আসন্ন দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি নীরব ছিলেন।
পলাশী যুদ্ধের পর ধাতুমুদ্রার পাচার এবং ইউরোপ থেকে রৌপ্য আমদানি বন্ধ হওয়ার কারণে তাঁর শাসনামলে চরম আর্থিক সংকট দেখা দেয়। রৌপ্য-ঘাটতি ও কোম্পানির কর্মচারীদের লুণ্ঠনবৃত্তির দরুন ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্রমাবনতি ঘটে। এই সংকট মোকাবেলায় নিজের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে হ্যারী ভেরেলেস্ট ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে পদত্যাগ করেন, যদিও উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য তিনি নিজেকে দায়ী মনে করেন নি। তবে দেশের আসন্ন দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি নীরব ছিলেন।

০৫:৪২, ২ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

ভেরেলেস্ট, হ্যারী (১৭৩৪-১৭৮৫)  ১৭৬৭ থেকে ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা ফোর্ট উইলিয়ম এর গভর্নর। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীরা যখন বাংলার সম্পদ লুণ্ঠনে ব্যাপৃত, তখন হ্যারী ভেরেলেস্ট ছিলেন এর ব্যতিক্রম। বাংলায় তাঁর সামগ্রিক কার্যকালে তিনি তাঁর সততা অক্ষুণ্ণ রাখেন। ব্রিটিশ শাসনাধীন বাংলার জনগণের প্রতি তাঁর সহানুভূতি ছিল সুবিদিত। তিনি ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে লক্ষ্মীপুর (বর্তমানে জেলা শহর) কুঠির কুঠিয়াল হিসেবে যোগ দেন। পলাশীর যুদ্ধ এর প্রাক্কালে নওয়াবের সৈন্যরা তাঁকে বন্দি করে এবং যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তিনি বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান। ১৭৫৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি ফোর্ট উইলিয়ম কাউন্সিলের সদস্য হন। কাউন্সিল সদস্য হিসেবে তিনি নওয়াব মীরজাফরকে মসনদ থেকে অপসারণের তীব্র বিরোধিতা করেন। বস্ত্তত, ভেরেলেস্ট ছিলেন তাঁদেরই একজন যাঁরা বাংলায় কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন।

হ্যারী ভেরেলেস্ট

নওয়াব মীরকাসিম কর্তৃক ইংরেজদের হাতে চট্টগ্রাম ন্যস্ত করার পর ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে হ্যারী ভেরেলেস্ট চট্টগ্রামের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন এবং ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই অঞ্চল শাসন করেন। চট্টগ্রামে কোম্পানির রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধিতে তাঁর সাফল্যের জন্য কাউন্সিল তাঁকে আরও দুটি অধিকৃত জেলা বর্ধমান ও মেদিনীপুরের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য অনুরূপ দায়িত্ব অর্পণ করে। রবার্ট ক্লাইভ এর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মে ভেরেলেস্টকে বাংলায় ফোর্ট উইলিয়মের গভর্নর নিযুক্ত করে। ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দের শেষ নাগাদ পদত্যাগ করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ পদে নিয়োজিত থাকেন। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তাঁর সততা ও ঐকান্তিক সংকল্প সত্ত্বে্ও ভেরেলেস্ট দেশের বিপর্যয় রোধ করতে পারেন নি। দাক্ষিণাত্যে হায়দার আলী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে কোম্পানির যুদ্ধ পরিচালনার অর্থের জোগান দেওয়ার জন্য তাঁকে প্রয়োজনীয় রাজস্ব সংগ্রহ করতে হতো।

পলাশী যুদ্ধের পর ধাতুমুদ্রার পাচার এবং ইউরোপ থেকে রৌপ্য আমদানি বন্ধ হওয়ার কারণে তাঁর শাসনামলে চরম আর্থিক সংকট দেখা দেয়। রৌপ্য-ঘাটতি ও কোম্পানির কর্মচারীদের লুণ্ঠনবৃত্তির দরুন ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্রমাবনতি ঘটে। এই সংকট মোকাবেলায় নিজের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে হ্যারী ভেরেলেস্ট ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে পদত্যাগ করেন, যদিও উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য তিনি নিজেকে দায়ী মনে করেন নি। তবে দেশের আসন্ন দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি নীরব ছিলেন।

ভেরেলেস্ট তাঁর শাসনামলে দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মচারিদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করে বা অবৈধ ব্যবসা থেকে উচ্ছেদ করে অনেক শত্রু তৈরি করেন। ফলে ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড প্রত্যাবর্তনের অব্যবহিত পরে শত্রুরা তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেআইনী কার্যকলাপের সকল অভিযোগ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তবে তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলার কারণে তিনি আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। সহকর্মীদের এই আচরণে বীতশ্রদ্ধ ও মর্মাহত হয়ে হ্যারী ইংল্যান্ড ত্যাগ করে ফ্রান্সে অবকাশ যাপনের সিদ্ধান্ত নেন। ১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে ২৪ অক্টোবরে বুলন শহরে ভেরেলেস্ট এর মৃত্যু হয়।

হ্যারী ভেরেলেস্টের শাসনামলে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনের কঠোর ও আক্রমণাত্মক সমালোচনা করে উইলিয়ম বোল্টস Considerations on Indian Affairs; Particularly Respecting the Present State of Bengal and its Dependencies (London, 1772) শীর্ষক একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এর জবাবে ভেরেলেস্ট প্রকাশ করেন তাঁর View of the Rise, Progress, and Present State of the English Government in Bengal (London, 1772) গ্রন্থটি। তৎকালীন ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কিত তথ্য ও ব্যাখ্যার জন্য পন্ডিতগণ প্রায়শ এই অনন্য গ্রন্থের সাহায্য গ্রহণ করেন। গ্রন্থটিতে সন্নিবেশিত ঐতিহাসিক দলিল ও পরিসংখ্যান সমকালীন ঘটনাবলির উৎস হিসেবে গবেষকদের নিকট অত্যন্ত মূল্যবান বলে বিবেচিত।  [সিরাজুল ইসলাম]