ভট্টাচার্য, হরিদাস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
'''ভট্টাচার্য, হরিদাস '''(১৮৯১-১৯৫৬) দার্শনিক, শিক্ষাবিদ। ১৮৯১ সালের ৭ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের ভাটপাড়ায় তাঁর জন্ম। পিতা রামপ্রসন্ন শ্রুতিরত্ন ভট্টাচার্য ছিলেন সংস্কৃত পন্ডিত। হরিদাস ভট্টাচার্য ১৯১২ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯১৪ সালে [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়|কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে দর্শনশাস্ত্রে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তারপর ১৯১৭ সালে বিএল এবং বোর্ড অব স্যান্সক্রিট স্টাডিজ-এর কাব্য পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন। এ সময় Evolution of the Soul শীর্ষক একটি অভিসন্দর্ভ রচনা করে তিনি [[প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি| | '''ভট্টাচার্য, হরিদাস''' (১৮৯১-১৯৫৬) দার্শনিক, শিক্ষাবিদ। ১৮৯১ সালের ৭ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের ভাটপাড়ায় তাঁর জন্ম। পিতা রামপ্রসন্ন শ্রুতিরত্ন ভট্টাচার্য ছিলেন সংস্কৃত পন্ডিত। হরিদাস ভট্টাচার্য ১৯১২ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯১৪ সালে [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়|কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে দর্শনশাস্ত্রে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তারপর ১৯১৭ সালে বিএল এবং বোর্ড অব স্যান্সক্রিট স্টাডিজ-এর কাব্য পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন। এ সময় Evolution of the Soul শীর্ষক একটি অভিসন্দর্ভ রচনা করে তিনি [[প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি|প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি]] এবং মোয়াট স্বর্ণপদক লাভ করেন। | ||
১৯১৫ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে হরিদাস ভট্টাচার্য স্কটিশ চার্চ কলেজে দর্শন ও যুক্তিবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। দুবছর পর ১৯১৭ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন এবং পরীক্ষণমূলক মনোবিদ্যার লেকচারার হিসেবে যোগদান করে ১৯২১ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে উপাচার্য পি.জে হার্টগের বিশেষ অনুরোধে দর্শন বিভাগের রিডার হিসেবে যোগদান করেন। | ১৯১৫ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে হরিদাস ভট্টাচার্য স্কটিশ চার্চ কলেজে দর্শন ও যুক্তিবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। দুবছর পর ১৯১৭ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন এবং পরীক্ষণমূলক মনোবিদ্যার লেকচারার হিসেবে যোগদান করে ১৯২১ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে উপাচার্য পি.জে হার্টগের বিশেষ অনুরোধে দর্শন বিভাগের রিডার হিসেবে যোগদান করেন। | ||
১০ নং লাইন: | ১০ নং লাইন: | ||
হরিদাস ভট্টাচার্যের গবেষণার বিষয় ছিল বহুমুখী। তিনি মূলত মনোদর্শন, নীতিদর্শন, শিক্ষাদর্শন, সমাজদর্শন, ভারতীয় দর্শন, ধর্মদর্শন, বিজ্ঞানদর্শন ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ রচনা করেন। তাঁর অধিকাংশ প্রবন্ধই ছিল ইংরেজিতে লেখা এবং সেসব প্রবন্ধ Philosophical Quarterly, Review of Philosophy and Religion, Religions of the World, Dacca University Studies, Calcutta Review, Vedanta Kesari, Indian Journal of Psychology, Journal of Madras University, Cultural Heritage of India প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। | হরিদাস ভট্টাচার্যের গবেষণার বিষয় ছিল বহুমুখী। তিনি মূলত মনোদর্শন, নীতিদর্শন, শিক্ষাদর্শন, সমাজদর্শন, ভারতীয় দর্শন, ধর্মদর্শন, বিজ্ঞানদর্শন ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ রচনা করেন। তাঁর অধিকাংশ প্রবন্ধই ছিল ইংরেজিতে লেখা এবং সেসব প্রবন্ধ Philosophical Quarterly, Review of Philosophy and Religion, Religions of the World, Dacca University Studies, Calcutta Review, Vedanta Kesari, Indian Journal of Psychology, Journal of Madras University, Cultural Heritage of India প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। | ||
হরিদাস ভট্টাচার্য ভাববাদী দার্শনিক হিসেবেই পরিচিত। দর্শনশাস্ত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তৎকালীন ভারতীয় দর্শন বিশেষজ্ঞ মহামহোপাধ্যায় [[পঞ্চানন তর্করত্ন|পঞ্চানন তর্করত্ন]] তাঁকে ‘দর্শনসাগর’ উপাধিতে ভূষিত করেন। দীর্ঘ ২৬ বছর একনিষ্ঠভাবে সক্রিয় কর্মজীবন অতিবাহিত করে তিনি ১৯৪৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডোলজি বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৫৬ সালের ২০ জানুয়ারি কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়। | হরিদাস ভট্টাচার্য ভাববাদী দার্শনিক হিসেবেই পরিচিত। দর্শনশাস্ত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তৎকালীন ভারতীয় দর্শন বিশেষজ্ঞ মহামহোপাধ্যায় [[পঞ্চানন তর্করত্ন|পঞ্চানন তর্করত্ন]] তাঁকে ‘দর্শনসাগর’ উপাধিতে ভূষিত করেন। দীর্ঘ ২৬ বছর একনিষ্ঠভাবে সক্রিয় কর্মজীবন অতিবাহিত করে তিনি ১৯৪৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডোলজি বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৫৬ সালের ২০ জানুয়ারি কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়। [প্রদীপ কুমার রায়] | ||
[প্রদীপ কুমার রায়] | |||
[[en:Bhattacharya, Haridas]] | [[en:Bhattacharya, Haridas]] |
০৩:৪৩, ১ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
ভট্টাচার্য, হরিদাস (১৮৯১-১৯৫৬) দার্শনিক, শিক্ষাবিদ। ১৮৯১ সালের ৭ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের ভাটপাড়ায় তাঁর জন্ম। পিতা রামপ্রসন্ন শ্রুতিরত্ন ভট্টাচার্য ছিলেন সংস্কৃত পন্ডিত। হরিদাস ভট্টাচার্য ১৯১২ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯১৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তারপর ১৯১৭ সালে বিএল এবং বোর্ড অব স্যান্সক্রিট স্টাডিজ-এর কাব্য পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন। এ সময় Evolution of the Soul শীর্ষক একটি অভিসন্দর্ভ রচনা করে তিনি প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি এবং মোয়াট স্বর্ণপদক লাভ করেন।
১৯১৫ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে হরিদাস ভট্টাচার্য স্কটিশ চার্চ কলেজে দর্শন ও যুক্তিবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। দুবছর পর ১৯১৭ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন এবং পরীক্ষণমূলক মনোবিদ্যার লেকচারার হিসেবে যোগদান করে ১৯২১ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে উপাচার্য পি.জে হার্টগের বিশেষ অনুরোধে দর্শন বিভাগের রিডার হিসেবে যোগদান করেন।
নব প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগকে গড়ে তোলার জন্য তিনি সর্বতোভাবে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর পান্ডিত্য, প্রশাসনিক দক্ষতা এবং কর্মপ্রেরণার সুবাদে তিনি অচিরেই দর্শন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, কলা অনুষদের ডিন, মেম্বারস অব দি কোর্ট, একাডেমিক কাউন্সিল এবং এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। বিভিন্ন সময়ে তিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টাডিজ-এর সম্পাদক, ফিলসফিক্যাল কোয়াটার্লি জার্নাল-এর সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য, জার্নাল অব সাইকোলজি অ্যান্ড রিলিজিয়ন জার্নাল-এর কার্যকরী পরিষদের সদস্য ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকৃত করেন। এছাড়া তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবগঠিত ফিলসফিক্যাল সোসাইটির অন্যতম উদ্যোক্তা ও সদস্য ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং প্রথম ভারতীয় হিসেবে হরিদাস ভট্টাচার্যের কৃতিত্ব হচ্ছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে Foundations of Living Faiths শীর্ষক বিখ্যাত স্টিফোনাস নির্মলেন্দু ঘোষ লেকচার্স (১৯৩৩-৩৪) প্রদান। এছাড়া তিনি The Vicissitudes of the Karma Doctrine শীর্ষক মদনমোহন মালব্য কমোমোরেশন বক্তৃতা (১৯৩১), Individual and Social Progress শীর্ষক প্রিন্সিপাল মিলার এনডাওমেন্ট বক্তৃতা (১৯৩৯) এবং Saraswati the Goddess of Learning শীর্ষক কে.পি পাঠক কমোমোরেশন বক্তৃতাসহ (১৯৪৩) বহু সম্মানজনক বক্তৃতা প্রদান করেন।
হরিদাস ভট্টাচার্যের গবেষণার বিষয় ছিল বহুমুখী। তিনি মূলত মনোদর্শন, নীতিদর্শন, শিক্ষাদর্শন, সমাজদর্শন, ভারতীয় দর্শন, ধর্মদর্শন, বিজ্ঞানদর্শন ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ রচনা করেন। তাঁর অধিকাংশ প্রবন্ধই ছিল ইংরেজিতে লেখা এবং সেসব প্রবন্ধ Philosophical Quarterly, Review of Philosophy and Religion, Religions of the World, Dacca University Studies, Calcutta Review, Vedanta Kesari, Indian Journal of Psychology, Journal of Madras University, Cultural Heritage of India প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
হরিদাস ভট্টাচার্য ভাববাদী দার্শনিক হিসেবেই পরিচিত। দর্শনশাস্ত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তৎকালীন ভারতীয় দর্শন বিশেষজ্ঞ মহামহোপাধ্যায় পঞ্চানন তর্করত্ন তাঁকে ‘দর্শনসাগর’ উপাধিতে ভূষিত করেন। দীর্ঘ ২৬ বছর একনিষ্ঠভাবে সক্রিয় কর্মজীবন অতিবাহিত করে তিনি ১৯৪৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডোলজি বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৫৬ সালের ২০ জানুয়ারি কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়। [প্রদীপ কুমার রায়]