দলিত সম্প্রদায়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
৪ নং লাইন: ৪ নং লাইন:
অবাঙালি দলিত বলতে আমরা বুঝি ব্রিটিশ শাসনামলের মাঝামাঝি (১৮৩৮-১৮৫০) বিভিন্ন সময়ে পূর্ববঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মী, চা-বাগানের শ্রমিক (১৮৫৩-৫৪), জঙ্গল কাটা, পয়ঃনিষ্কাশন প্রভৃতি কাজের জন্য ভারতের উত্তর প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার, উড়িষ্যা, কুচবিহার, রাচি, মাদ্রাজ ও আসাম থেকে হিন্দি, উড়িষ্যা, দেশওয়ালী ও তেলেগু ভাষাভাষী মানুষের পূর্ব-পুরুষদের নিয়ে এসেছিল। অভাবি এই অভিবাসীরা দেশের সর্বত্র পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং সিলেটে চা-শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। ভূমিহীন ও নিজস্ব বসতভিটাহীন এসকল সম্প্রদায় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় সরকার কর্তৃক প্রদত্ত জমি, রেলস্টেশনসহ সরকারি খাস জমিতে বসবাস করছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: হেলা, মুচি,  [[ডোম|ডোম]], বাল্মিকী, রবিদাস, ডোমার,  [[ডালু|ডালু]], মালা, মাদিগা, চাকালি, সাচ্চারি, কাপুলু, নায়েক, নুনিয়া, পরাধন, পাহান, বাউরি, বীন, বোনাজ, বাঁশফোর, ভূঁইয়া,  [[ভূমিজ|ভূমিজ]], লালবেগী, জনগোষ্ঠি। এসব জনগোষ্ঠি তেলেগু, ভোজপুরী, জোবালপুরী, হিন্দি, সাচ্চারী ও দেশওয়ালী ভাষায় কথা বলে। এই সম্প্রদায়গুলিই মূলত অবাঙ্গালি দলিত শ্রেণি।  
অবাঙালি দলিত বলতে আমরা বুঝি ব্রিটিশ শাসনামলের মাঝামাঝি (১৮৩৮-১৮৫০) বিভিন্ন সময়ে পূর্ববঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মী, চা-বাগানের শ্রমিক (১৮৫৩-৫৪), জঙ্গল কাটা, পয়ঃনিষ্কাশন প্রভৃতি কাজের জন্য ভারতের উত্তর প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার, উড়িষ্যা, কুচবিহার, রাচি, মাদ্রাজ ও আসাম থেকে হিন্দি, উড়িষ্যা, দেশওয়ালী ও তেলেগু ভাষাভাষী মানুষের পূর্ব-পুরুষদের নিয়ে এসেছিল। অভাবি এই অভিবাসীরা দেশের সর্বত্র পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং সিলেটে চা-শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। ভূমিহীন ও নিজস্ব বসতভিটাহীন এসকল সম্প্রদায় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় সরকার কর্তৃক প্রদত্ত জমি, রেলস্টেশনসহ সরকারি খাস জমিতে বসবাস করছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: হেলা, মুচি,  [[ডোম|ডোম]], বাল্মিকী, রবিদাস, ডোমার,  [[ডালু|ডালু]], মালা, মাদিগা, চাকালি, সাচ্চারি, কাপুলু, নায়েক, নুনিয়া, পরাধন, পাহান, বাউরি, বীন, বোনাজ, বাঁশফোর, ভূঁইয়া,  [[ভূমিজ|ভূমিজ]], লালবেগী, জনগোষ্ঠি। এসব জনগোষ্ঠি তেলেগু, ভোজপুরী, জোবালপুরী, হিন্দি, সাচ্চারী ও দেশওয়ালী ভাষায় কথা বলে। এই সম্প্রদায়গুলিই মূলত অবাঙ্গালি দলিত শ্রেণি।  


'''ঋষি'''  বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে বিশেষ করে-উত্তর বঙ্গে এরা ‘রুইদাস’ নামে পরিচিত। সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা ঋষিদের সংখ্যাগত নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না। তবে সবচেয়ে বেশি রয়েছে যশোরের ঝিকরগাছার শিমুলিয়া, মনিরামপুর, কেশবপুর; সাতক্ষীরার তালা, কাশিমনগর, আশাশুনি; বাগেরহাটের মোল্লারহাট, ফকিরহাট; ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ এবং জয়পুরহাট ও মানিকগঞ্জ জেলার প্রায় সকল উপজেলায়। ঋষিরা প্রধানত হিন্দু ধর্মালম্বী। তবে বর্তমানে অনেকে খ্রিস্টান ধর্মেও ধর্মান্তরিত হয়েছেন। ঋষিরা চামড়ার কাজ ছাড়াও বাঁশ বেতের দ্বারা বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে থাকে। ঋষিদের আদিভাষা ‘ঠার’ তবে তা এখন প্রায় বিলুপ্ত।
'''''ঋষি'''''  বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে বিশেষ করে-উত্তর বঙ্গে এরা ‘রুইদাস’ নামে পরিচিত। সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা ঋষিদের সংখ্যাগত নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না। তবে সবচেয়ে বেশি রয়েছে যশোরের ঝিকরগাছার শিমুলিয়া, মনিরামপুর, কেশবপুর; সাতক্ষীরার তালা, কাশিমনগর, আশাশুনি; বাগেরহাটের মোল্লারহাট, ফকিরহাট; ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ এবং জয়পুরহাট ও মানিকগঞ্জ জেলার প্রায় সকল উপজেলায়। ঋষিরা প্রধানত হিন্দু ধর্মালম্বী। তবে বর্তমানে অনেকে খ্রিস্টান ধর্মেও ধর্মান্তরিত হয়েছেন। ঋষিরা চামড়ার কাজ ছাড়াও বাঁশ বেতের দ্বারা বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে থাকে। ঋষিদের আদিভাষা ‘ঠার’ তবে তা এখন প্রায় বিলুপ্ত।


'''কায়পুত্র'''  শুকর পালন ও ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত জনগোষ্ঠি। এদের ‘কাওরা’ নামেও সম্বোধন করা হয়। কায়পুত্র সম্প্রদায়কে ঋষিদের একটি শাখাও বিবেচনা করা হয়। খুলনা, যশোর, গোপালগঞ্জ, গাজিপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট প্রভৃতি অঞ্চলে কায়পুত্রদের বসবাস রয়েছে। শুকরের মাংসের চাহিদা আছে এবং শুকর চরানোর জন্য পর্যাপ্ত চারণভূমি আছে এমন জেলাগুলিতে শুকরের পালসহ কায়পুত্রদের দেখা যায়। অধিকাংশই সনাতন ধর্মের অনুসারী। কায়পুত্ররা সাধারণভাবে পাঁচটি গোত্রে বিভক্ত।
'''কায়পুত্র'''  শুকর পালন ও ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত জনগোষ্ঠি। এদের ‘কাওরা’ নামেও সম্বোধন করা হয়। কায়পুত্র সম্প্রদায়কে ঋষিদের একটি শাখাও বিবেচনা করা হয়। খুলনা, যশোর, গোপালগঞ্জ, গাজিপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট প্রভৃতি অঞ্চলে কায়পুত্রদের বসবাস রয়েছে। শুকরের মাংসের চাহিদা আছে এবং শুকর চরানোর জন্য পর্যাপ্ত চারণভূমি আছে এমন জেলাগুলিতে শুকরের পালসহ কায়পুত্রদের দেখা যায়। অধিকাংশই সনাতন ধর্মের অনুসারী। কায়পুত্ররা সাধারণভাবে পাঁচটি গোত্রে বিভক্ত।


'''কুমার '''''' '''কুম্ভকার, পাল বা রুদ্রপাল নামেও পরিচিত। এ সম্প্রদায় মূলত মৃৎশিল্পী। মাটির তৈরি দৈনন্দিন ব্যবহার্য তৈজসপত্র প্রস্ত্তত ও বিক্রয়ের মাধ্যমে জীবন ধারণ করে থাকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় ৮০ হাজার পাল পরিবার রয়েছে। সনাতন ধর্মালম্বী কুমাররা নিজেদের ‘তফশিলী সম্প্রদায়’ ভুক্ত বলে থাকে। অনেকে আবার নিজেদের ক্ষত্রিয় বলেও দাবি করে।
'''''কুমার''''' কুম্ভকার, পাল বা রুদ্রপাল নামেও পরিচিত। এ সম্প্রদায় মূলত মৃৎশিল্পী। মাটির তৈরি দৈনন্দিন ব্যবহার্য তৈজসপত্র প্রস্ত্তত ও বিক্রয়ের মাধ্যমে জীবন ধারণ করে থাকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় ৮০ হাজার পাল পরিবার রয়েছে। সনাতন ধর্মালম্বী কুমাররা নিজেদের ‘তফশিলী সম্প্রদায়’ ভুক্ত বলে থাকে। অনেকে আবার নিজেদের ক্ষত্রিয় বলেও দাবি করে।


'''কামার'''  কামাররা মূলত কৃষি সমাজের বিভিন্ন উপকরণ যেমন: নিড়ানি, শাবল, কুড়াল, লাঙ্গলের ফলা, কাঁচি, দা-বটি ইত্যাদি তৈরি করে। লোহার পাশাপাশি যারা কাঁসা পিতলের কাজ করে তারা অনেক সময় ‘বসাক’ বা ‘কর্মকার’ হিসেবে পরিচিত হন। অতীতে কেবল হিন্দু ধর্মালম্বীরা এ পেশায় থাকলেও বর্তমানে মুসলমানদেরও এই পেশায় দেখা যায়। বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলে বিশেষ করে জয়পুরহাটে ‘রানা কর্মকার’ বলে আর একটি জনগোষ্ঠির সন্ধান পাওয়া যায়। এই জনগোষ্ঠি ভারত থেকে এখানে এসে বসতি স্থাপন করে। তখন তারা কর্মকার পেশায় নিযুক্ত থাকলেও এখন অন্যান্য পেশায় ছড়িয়ে গেছে। রানা কর্মকারদের নিজস্ব ভাষা থাকলেও তার কোন লিখিত রূপ নেই। সনাতন ধর্মলম্বী এই জনগোষ্ঠি উঁচু মাটির তৈরি ঘরে বাস করে এবং তারা অনেক গোত্রে বিভক্ত। তাদের সুপরিচিত একটি উৎসব হলো ‘লবান’ (নবান্ন)।
'''''কামার'''''  কামাররা মূলত কৃষি সমাজের বিভিন্ন উপকরণ যেমন: নিড়ানি, শাবল, কুড়াল, লাঙ্গলের ফলা, কাঁচি, দা-বটি ইত্যাদি তৈরি করে। লোহার পাশাপাশি যারা কাঁসা পিতলের কাজ করে তারা অনেক সময় ‘বসাক’ বা ‘কর্মকার’ হিসেবে পরিচিত হন। অতীতে কেবল হিন্দু ধর্মালম্বীরা এ পেশায় থাকলেও বর্তমানে মুসলমানদেরও এই পেশায় দেখা যায়। বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলে বিশেষ করে জয়পুরহাটে ‘রানা কর্মকার’ বলে আর একটি জনগোষ্ঠির সন্ধান পাওয়া যায়। এই জনগোষ্ঠি ভারত থেকে এখানে এসে বসতি স্থাপন করে। তখন তারা কর্মকার পেশায় নিযুক্ত থাকলেও এখন অন্যান্য পেশায় ছড়িয়ে গেছে। রানা কর্মকারদের নিজস্ব ভাষা থাকলেও তার কোন লিখিত রূপ নেই। সনাতন ধর্মলম্বী এই জনগোষ্ঠি উঁচু মাটির তৈরি ঘরে বাস করে এবং তারা অনেক গোত্রে বিভক্ত। তাদের সুপরিচিত একটি উৎসব হলো ‘লবান’ (নবান্ন)।


'''কলু'''  এদের পেশা ঘাঁনিতে শষ্য দিয়ে তেল তৈরি করা। পরিবারের সবাই মিলে কাজটি করা হয়। তেল তৈরির কাজটিকে বলা হয় ‘গাওয়াল’ করা। বীজ থেকে তেল তৈরির নতুন প্রযুক্তি আসায় এবং সামাজিক অসম্মান থেকে মুক্তি পেতে কলুরা আদি পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়েই কলুদের দেখতে পাওয়া যায়। এই সম্প্রদায়ের হিন্দুদের তেলি বলা হয়। কলুরা নিজ ধর্মের প্রার্থনার পাশাপাশি গাছ বা ঘাঁনিকে সম্মান জানিয়েও প্রার্থনা করে। কুষ্টিয়া জেলায় কলু সম্প্রদায়ের প্রায় ছয় হাজার মানুষ রয়েছে। এছাড়াও ময়মনসিংহ, যশোর, মানিকগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাট এবং খুলনায় অনেক কলু পরিবার রয়েছে।
'''কলু'''  এদের পেশা ঘাঁনিতে শষ্য দিয়ে তেল তৈরি করা। পরিবারের সবাই মিলে কাজটি করা হয়। তেল তৈরির কাজটিকে বলা হয় ‘গাওয়াল’ করা। বীজ থেকে তেল তৈরির নতুন প্রযুক্তি আসায় এবং সামাজিক অসম্মান থেকে মুক্তি পেতে কলুরা আদি পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়েই কলুদের দেখতে পাওয়া যায়। এই সম্প্রদায়ের হিন্দুদের তেলি বলা হয়। কলুরা নিজ ধর্মের প্রার্থনার পাশাপাশি গাছ বা ঘাঁনিকে সম্মান জানিয়েও প্রার্থনা করে। কুষ্টিয়া জেলায় কলু সম্প্রদায়ের প্রায় ছয় হাজার মানুষ রয়েছে। এছাড়াও ময়মনসিংহ, যশোর, মানিকগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাট এবং খুলনায় অনেক কলু পরিবার রয়েছে।


'''জেলে'''  সমাজবিজ্ঞানীদের ধারণা প্রাচীন বাংলায় কৈবর্ত সমাজের এক অংশ চাষী এবং অপর অংশ জেলে হিসেবে পেশা বাছাই করে নিয়েছিল। জেলেরা অঞ্চলভেদে মালো, রাজবংশী, জলদাস হিসেবেও পরিচিত। এদের মধ্যে রাজবংশীরা এককালে খুবই প্রভাবশালী জনগোষ্ঠি ছিল। মালদা, দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এদের রাজত্ব ছিল। পরে তারা পাল বংশের কাছে পরাস্ত হয়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে এখনো বিপুল সংখ্যায় রাজবংশী ও মালো রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে এরা মৎস্যজীবী হলেও মাছ ধরার ক্ষেত্র কমে যাওয়ায় এরা এখন অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। মৎসজীবীদের মাঝে যারা মাছ ধরার পাশাপাশি চাষেও যুক্ত তারা ক্ষেত্র বিশেষে কৈবর্ত হিসেবে পরিচিত। মুসলিম জনগোষ্ঠির মধ্যে যারা মাছ ধরার চেয়ে কেনা-বেচায় অধিক সংশ্লিষ্ট তারা নিকারি নামে পরিচিত। যশোর, ঝিনাইদহ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে অধিকাংশ নিকারির বাস।
'''''জেলে'''''  সমাজবিজ্ঞানীদের ধারণা প্রাচীন বাংলায় কৈবর্ত সমাজের এক অংশ চাষী এবং অপর অংশ জেলে হিসেবে পেশা বাছাই করে নিয়েছিল। জেলেরা অঞ্চলভেদে মালো, রাজবংশী, জলদাস হিসেবেও পরিচিত। এদের মধ্যে রাজবংশীরা এককালে খুবই প্রভাবশালী জনগোষ্ঠি ছিল। মালদা, দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এদের রাজত্ব ছিল। পরে তারা পাল বংশের কাছে পরাস্ত হয়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে এখনো বিপুল সংখ্যায় রাজবংশী ও মালো রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে এরা মৎস্যজীবী হলেও মাছ ধরার ক্ষেত্র কমে যাওয়ায় এরা এখন অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। মৎসজীবীদের মাঝে যারা মাছ ধরার পাশাপাশি চাষেও যুক্ত তারা ক্ষেত্র বিশেষে কৈবর্ত হিসেবে পরিচিত। মুসলিম জনগোষ্ঠির মধ্যে যারা মাছ ধরার চেয়ে কেনা-বেচায় অধিক সংশ্লিষ্ট তারা নিকারি নামে পরিচিত। যশোর, ঝিনাইদহ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে অধিকাংশ নিকারির বাস।


'''শবর'''  শিকারি জাতি হিসেবে রয়েছে এদের পরিচিতি। সিলেট অঞ্চলে বিশেষত মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলিতে শবরদের বসতি রয়েছে। আলীনগর, শমসেরনগর, ভাড়াউড়া ইত্যাদি বাগানে অনেক শবর পরিবার রয়েছে। অনেক গবেষকের মতে শবরদের ভাষার সাথে বর্তমান ভারতের মুঙ্গের জেলার ভাষার মিল রয়েছে। সিলেটস্থ শবররা সাধারণত বাংলাতেই কথা বলে।
'''শবর'''  শিকারি জাতি হিসেবে রয়েছে এদের পরিচিতি। সিলেট অঞ্চলে বিশেষত মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলিতে শবরদের বসতি রয়েছে। আলীনগর, শমসেরনগর, ভাড়াউড়া ইত্যাদি বাগানে অনেক শবর পরিবার রয়েছে। অনেক গবেষকের মতে শবরদের ভাষার সাথে বর্তমান ভারতের মুঙ্গের জেলার ভাষার মিল রয়েছে। সিলেটস্থ শবররা সাধারণত বাংলাতেই কথা বলে।
২০ নং লাইন: ২০ নং লাইন:
'''শব্দকর'''  এদের পেশা বাড়িবাড়ি ঘুরে বা হাটবাজারে গানবাজনা করে দাক্ষিণা নেওয়া। এই সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের বাস মৌলভীবাজার জেলায়। এই জেলায় বিভিন্ন থানায় প্রায় তিন শত ‘শব্দকর’ পরিবার রয়েছে। নামের শেষে এরা ‘শব্দকর’ পদবী ব্যবহার করে। মূলত হিন্দু ধর্মালম্বী, তবে এই ধর্মের সংকর জনগোষ্ঠিভূক্ত। শিব পূজা, চড়ক পূজা ইত্যাদির প্রচলন আছে শব্দকরদের মধ্যে। মুসলিম পীর ও দরগা সংস্কৃতির প্রতিও শব্দকরদের অনুরাগ দেখা যায়। ৭০ শতাংশ শব্দকর ভূমিহীন।
'''শব্দকর'''  এদের পেশা বাড়িবাড়ি ঘুরে বা হাটবাজারে গানবাজনা করে দাক্ষিণা নেওয়া। এই সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের বাস মৌলভীবাজার জেলায়। এই জেলায় বিভিন্ন থানায় প্রায় তিন শত ‘শব্দকর’ পরিবার রয়েছে। নামের শেষে এরা ‘শব্দকর’ পদবী ব্যবহার করে। মূলত হিন্দু ধর্মালম্বী, তবে এই ধর্মের সংকর জনগোষ্ঠিভূক্ত। শিব পূজা, চড়ক পূজা ইত্যাদির প্রচলন আছে শব্দকরদের মধ্যে। মুসলিম পীর ও দরগা সংস্কৃতির প্রতিও শব্দকরদের অনুরাগ দেখা যায়। ৭০ শতাংশ শব্দকর ভূমিহীন।


'''পাটনি'''  প্রাচীনকালে যোগাগোগ ব্যবস্থায় এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে ধারণা করা হয়। আদি পেশা ছিল খেয়া পারাপার করানো। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এরা পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। আদিতে এরা সহযোগী পেশা হিসেবে মাছ ধরার সরঞ্জামও তৈরি করতো। বর্তমানে দেখা যায় চালুন, চাল রাখার ঢোল, কুলা, মাছ ধরার চাই ইত্যাদি বুনে থাকে। পাটনিরা হিন্দু হয়েও ভিন্ন ধাঁচে পুজা-পার্বন করে থাকে। সমগ্র বালাদেশে এদের বসবাস রয়েছে।
'''''পাটনি'''''  প্রাচীনকালে যোগাগোগ ব্যবস্থায় এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে ধারণা করা হয়। আদি পেশা ছিল খেয়া পারাপার করানো। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এরা পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। আদিতে এরা সহযোগী পেশা হিসেবে মাছ ধরার সরঞ্জামও তৈরি করতো। বর্তমানে দেখা যায় চালুন, চাল রাখার ঢোল, কুলা, মাছ ধরার চাই ইত্যাদি বুনে থাকে। পাটনিরা হিন্দু হয়েও ভিন্ন ধাঁচে পুজা-পার্বন করে থাকে। সমগ্র বালাদেশে এদের বসবাস রয়েছে।


'''ভগবানীয়া''' ‘ভগমেনে’ ও ‘ভগবেনে’ নামেও পরিচিত। লোকায়ত ঔষধি জ্ঞানের জন্য বিখ্যাত সম্প্রদায়। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিশেষ করে সাতক্ষীরা, খুলনা ও যশোর ছাড়াও ঝিনাইদহের কালিগঞ্জে এ সম্প্রদায়ের কয়েক’শ পরিবার রয়েছে। নিজেদের তারা ‘কর্তাভজা’ ধর্মের অনুসারি হিসাবে পরিচয় দিয়ে থাকে। এই ধর্মীয় জীবনাচারের উদ্ভব ভারতের নদীয়ায়। জীবন যাপনে এই জনগোষ্ঠির বড় বৈশিষ্ট্য হলো ‘আধুনিক চিকিৎসা’ বা ‘আধুনিক ওষুধ’ গ্রহণ ধর্মীয়ভাবে তাদের নিষিদ্ধ। ছয়টি বিধি অনুসারে তারা জীবন ধারণ করে থাকে। যথা-মদ না খাওয়া, মংস না খাওয়া, এঁটো না খাওয়া, মিথ্যা কথা না বলা, চুরি না করা এবং পরস্ত্রী হরণ না করা। পরিবারে প্রত্যেকে আলাদা থালা-গ্লাস ব্যবহার করে। সকল চামড়াজাত দ্রব্য ব্যবহারে অনিহা এবং চামড়ার জুতা ব্যবহার করে না। নারী-পুরুষ একসাথে বসে প্রার্থনা করে তারা। সাধারণত মাটির ঘরে থাকে তারা।
'''''ভগবানীয়া'''''  ‘ভগমেনে’ ও ‘ভগবেনে’ নামেও পরিচিত। লোকায়ত ঔষধি জ্ঞানের জন্য বিখ্যাত সম্প্রদায়। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিশেষ করে সাতক্ষীরা, খুলনা ও যশোর ছাড়াও ঝিনাইদহের কালিগঞ্জে এ সম্প্রদায়ের কয়েক’শ পরিবার রয়েছে। নিজেদের তারা ‘কর্তাভজা’ ধর্মের অনুসারি হিসাবে পরিচয় দিয়ে থাকে। এই ধর্মীয় জীবনাচারের উদ্ভব ভারতের নদীয়ায়। জীবন যাপনে এই জনগোষ্ঠির বড় বৈশিষ্ট্য হলো ‘আধুনিক চিকিৎসা’ বা ‘আধুনিক ওষুধ’ গ্রহণ ধর্মীয়ভাবে তাদের নিষিদ্ধ। ছয়টি বিধি অনুসারে তারা জীবন ধারণ করে থাকে। যথা-মদ না খাওয়া, মংস না খাওয়া, এঁটো না খাওয়া, মিথ্যা কথা না বলা, চুরি না করা এবং পরস্ত্রী হরণ না করা। পরিবারে প্রত্যেকে আলাদা থালা-গ্লাস ব্যবহার করে। সকল চামড়াজাত দ্রব্য ব্যবহারে অনিহা এবং চামড়ার জুতা ব্যবহার করে না। নারী-পুরুষ একসাথে বসে প্রার্থনা করে তারা। সাধারণত মাটির ঘরে থাকে তারা।


'''তেলেগু'''  এরা মূলত ভাষাভিত্তিক জনগোষ্ঠি। তেলেগু ভাষীদের মধ্যে রয়েছে মালা, মাদিগা, চাকালি, সাচ্চারি, কাপুলু প্রভৃতি গোত্রের মানুষ। এমনও দাবি করা হয় যে, ৫৬টি তেলেগু ভাষী জনগোষ্ঠি রয়েছে বাংলাদেশে। তারা ‘মাদ্রাজি’ নামেও পরিচিত। তবে বাংলাদেশের তেলেগু ভাষীদের পূর্ব প্রজন্ম প্রধানত ব্রিটিশদের মাধ্যমে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপট্টাম, তেলেঙ্গনা, হায়দ্রাবাদ, ওয়ারেঙ্গল প্রভৃতি এলাকা থেকে আগত। বর্তমানে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ঈশ্বরদী, পাবনা, কুষ্টিয়া, সিলেট চা বাগানে তেলেগু ভাষাভাষী মানুষ রয়েছে। ঢাকাতে ৩৫ হাজার তেলেগু জনগোষ্ঠি রয়েছে বলে অনুমান করা হয়। চা বাগানে তেলেগুদের একটি অংশ আবার নিজেদের ‘আলমিক’ নামে পরিচয় দেয়। সেখানে সাধারণ তেলেগুরা (যারা আবার অনেক সময় ‘তেলেঙ্গা’ নামে অভিহিত) থাকে শমসেরনগর, ইটা, করিমপুর, লংলা প্রভৃতি চা বাগানে। বালমিকরা ধর্মবিশ্বাসে অন্যান্য চা শ্রমিকদের চেয়ে রক্ষণশীল। শিক্ষায়ও তারা অপেক্ষাকৃত অনগ্রসর। একই ভাষী এবং সমধর্মী পেশাজীবী হলেও তেলেগুদের মাঝে এক গোত্রের সাথে অপর গোত্রের আত্মীয়তা নেই বললেই চলে। জীবন যাপনের বহু বিষয়ে গোত্রভেদ প্রবল। পূর্বে সবাই হিন্দু ধর্মালম্বী হলেও বর্তমানে খ্রিস্টান ধর্মে অনেকে আবার মুসলিম ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছেন। পেশাগতভাবে তেলেগু জনগোষ্ঠি সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে পেশাজীবীদের ‘সেবক’ নামেও অভিহিত করা হয়। নিজস্ব ভূসম্পদ বলতে তেঁলেগুদের তেমন কিছু নেই। তেলেগুদের মাঝে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা রয়েছে।
'''তেলেগু'''  এরা মূলত ভাষাভিত্তিক জনগোষ্ঠি। তেলেগু ভাষীদের মধ্যে রয়েছে মালা, মাদিগা, চাকালি, সাচ্চারি, কাপুলু প্রভৃতি গোত্রের মানুষ। এমনও দাবি করা হয় যে, ৫৬টি তেলেগু ভাষী জনগোষ্ঠি রয়েছে বাংলাদেশে। তারা ‘মাদ্রাজি’ নামেও পরিচিত। তবে বাংলাদেশের তেলেগু ভাষীদের পূর্ব প্রজন্ম প্রধানত ব্রিটিশদের মাধ্যমে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপট্টাম, তেলেঙ্গনা, হায়দ্রাবাদ, ওয়ারেঙ্গল প্রভৃতি এলাকা থেকে আগত। বর্তমানে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ঈশ্বরদী, পাবনা, কুষ্টিয়া, সিলেট চা বাগানে তেলেগু ভাষাভাষী মানুষ রয়েছে। ঢাকাতে ৩৫ হাজার তেলেগু জনগোষ্ঠি রয়েছে বলে অনুমান করা হয়। চা বাগানে তেলেগুদের একটি অংশ আবার নিজেদের ‘আলমিক’ নামে পরিচয় দেয়। সেখানে সাধারণ তেলেগুরা (যারা আবার অনেক সময় ‘তেলেঙ্গা’ নামে অভিহিত) থাকে শমসেরনগর, ইটা, করিমপুর, লংলা প্রভৃতি চা বাগানে। বালমিকরা ধর্মবিশ্বাসে অন্যান্য চা শ্রমিকদের চেয়ে রক্ষণশীল। শিক্ষায়ও তারা অপেক্ষাকৃত অনগ্রসর। একই ভাষী এবং সমধর্মী পেশাজীবী হলেও তেলেগুদের মাঝে এক গোত্রের সাথে অপর গোত্রের আত্মীয়তা নেই বললেই চলে। জীবন যাপনের বহু বিষয়ে গোত্রভেদ প্রবল। পূর্বে সবাই হিন্দু ধর্মালম্বী হলেও বর্তমানে খ্রিস্টান ধর্মে অনেকে আবার মুসলিম ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছেন। পেশাগতভাবে তেলেগু জনগোষ্ঠি সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে পেশাজীবীদের ‘সেবক’ নামেও অভিহিত করা হয়। নিজস্ব ভূসম্পদ বলতে তেঁলেগুদের তেমন কিছু নেই। তেলেগুদের মাঝে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা রয়েছে।


'''কানপুরী'''  কানপুরী হিসেবে পরিচিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে হেলা, মুচি, বাঁশফোরি, বাল্মিকী, রবিদাস, ডোম, ডোমার প্রভৃতি গোত্রের মানুষ রয়েছে। যদিও এই জনগোষ্ঠি কানপুরের পাশাপাশি এলাহাবাদ, নাগপুর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছে তবুও এদেশে তারা ‘কানপুরী’ নামে পরিচিত। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অধিকাংশ জেলা শহরে এবং প্রতিটি রেলওয়ে স্টেশন ও পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজে এই সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছে। হিন্দু ধর্মালম্বী হলেও সাধারণ হিন্দুদের সাথে পুজা-অর্চনায় অনেক পার্থক্য কয়েছে। আবার কাজের ধরণ ও ধর্মীয় আচার একই হওয়া সত্ত্বেও সম্প্রদায়গুলির নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ বিদ্যমান। কানপুরীরা সংখ্যায় প্রায় ৭ লাখ। মূলত সরকারি বিভিন্ন কলোনিকেন্দ্রীক বসবাস এদের। নিজস্ব সমাজের বিচার-আচার নিজস্ব পঞ্চায়েত দ্বারা করে থাকে। তারা হিন্দি ভাষায় কথা বললেও অনেকে ভোজপুরী ও জোবালপুরী ভাষায় কথা বলে। কানপুরীরা নিজেদের হরিজন পরিচয় দিতে বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করে থাকে। ‘হরিজন ঐক্য পরিষদ’ বলে তাদের একটি সংগঠন রয়েছে। [বনানী বিশ্বাস]  
'''''কানপুরী'''''  কানপুরী হিসেবে পরিচিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে হেলা, মুচি, বাঁশফোরি, বাল্মিকী, রবিদাস, ডোম, ডোমার প্রভৃতি গোত্রের মানুষ রয়েছে। যদিও এই জনগোষ্ঠি কানপুরের পাশাপাশি এলাহাবাদ, নাগপুর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছে তবুও এদেশে তারা ‘কানপুরী’ নামে পরিচিত। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অধিকাংশ জেলা শহরে এবং প্রতিটি রেলওয়ে স্টেশন ও পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজে এই সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছে। হিন্দু ধর্মালম্বী হলেও সাধারণ হিন্দুদের সাথে পুজা-অর্চনায় অনেক পার্থক্য কয়েছে। আবার কাজের ধরণ ও ধর্মীয় আচার একই হওয়া সত্ত্বেও সম্প্রদায়গুলির নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ বিদ্যমান। কানপুরীরা সংখ্যায় প্রায় ৭ লাখ। মূলত সরকারি বিভিন্ন কলোনিকেন্দ্রীক বসবাস এদের। নিজস্ব সমাজের বিচার-আচার নিজস্ব পঞ্চায়েত দ্বারা করে থাকে। তারা হিন্দি ভাষায় কথা বললেও অনেকে ভোজপুরী ও জোবালপুরী ভাষায় কথা বলে। কানপুরীরা নিজেদের হরিজন পরিচয় দিতে বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করে থাকে। ‘হরিজন ঐক্য পরিষদ’ বলে তাদের একটি সংগঠন রয়েছে। [বনানী বিশ্বাস]  
 
<!-- imported from file: দলিত সম্প্রদায়.html-->


[[en:Dalit Community]]
[[en:Dalit Community]]

০৭:২২, ৭ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

দলিত সম্প্রদায়  জন্ম ও পেশাগত কারণে বৈষম্য এবং বঞ্চনার শিকার মানুষরা আন্তর্জাতিক পরিসরে বিশেষ করে পন্ডিতদের কাছে ‘দলিত’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশে দুই ধরণের দলিত জনগোষ্ঠি রয়েছে (১) বাঙালি দলিত (২) অবাঙালি দলিত। বাংলাদেশে বসবাসরত দলিতদের সংখ্যা বর্তমানে ৩.৫ মিলিয়ন। বাঙালি দলিত বলতে সমাজে যারা অস্পৃশ্য তাদের বোঝায়, যেমন: চর্মকার, মালাকার, কামার, কুমার, জেলে, পাটনী, কায়পুত্র, কৈবর্ত, কলু, কোল, কাহার, ক্ষৌরকার, নিকারী, পাত্র, বাউলিয়া, ভগবানীয়া, মানতা, মালো, মৌয়াল, মাহাতো, রজদাস, রাজবংশী, রানা কর্মকার, রায়, শব্দকর, শবর, সন্ন্যাসী, কর্তাভজা, হাজরা প্রভৃতি সম্প্রদায় সমাজে অস্পৃশ্যতার শিকার। এই সব সম্প্রদায় আবার বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত। ইসলাম ধর্ম জাতিভেদকে অস্বীকার করলেও এই ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে অনেকে পেশার কারণে সমাজে পদদলিত হয়ে রয়েছে, যেমন: জোলা, হাজাম, বেদে, বাওয়ালী।

অবাঙালি দলিত বলতে আমরা বুঝি ব্রিটিশ শাসনামলের মাঝামাঝি (১৮৩৮-১৮৫০) বিভিন্ন সময়ে পূর্ববঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মী, চা-বাগানের শ্রমিক (১৮৫৩-৫৪), জঙ্গল কাটা, পয়ঃনিষ্কাশন প্রভৃতি কাজের জন্য ভারতের উত্তর প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার, উড়িষ্যা, কুচবিহার, রাচি, মাদ্রাজ ও আসাম থেকে হিন্দি, উড়িষ্যা, দেশওয়ালী ও তেলেগু ভাষাভাষী মানুষের পূর্ব-পুরুষদের নিয়ে এসেছিল। অভাবি এই অভিবাসীরা দেশের সর্বত্র পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং সিলেটে চা-শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। ভূমিহীন ও নিজস্ব বসতভিটাহীন এসকল সম্প্রদায় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় সরকার কর্তৃক প্রদত্ত জমি, রেলস্টেশনসহ সরকারি খাস জমিতে বসবাস করছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: হেলা, মুচি,  ডোম, বাল্মিকী, রবিদাস, ডোমার,  ডালু, মালা, মাদিগা, চাকালি, সাচ্চারি, কাপুলু, নায়েক, নুনিয়া, পরাধন, পাহান, বাউরি, বীন, বোনাজ, বাঁশফোর, ভূঁইয়া,  ভূমিজ, লালবেগী, জনগোষ্ঠি। এসব জনগোষ্ঠি তেলেগু, ভোজপুরী, জোবালপুরী, হিন্দি, সাচ্চারী ও দেশওয়ালী ভাষায় কথা বলে। এই সম্প্রদায়গুলিই মূলত অবাঙ্গালি দলিত শ্রেণি।

ঋষি  বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে বিশেষ করে-উত্তর বঙ্গে এরা ‘রুইদাস’ নামে পরিচিত। সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা ঋষিদের সংখ্যাগত নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না। তবে সবচেয়ে বেশি রয়েছে যশোরের ঝিকরগাছার শিমুলিয়া, মনিরামপুর, কেশবপুর; সাতক্ষীরার তালা, কাশিমনগর, আশাশুনি; বাগেরহাটের মোল্লারহাট, ফকিরহাট; ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ এবং জয়পুরহাট ও মানিকগঞ্জ জেলার প্রায় সকল উপজেলায়। ঋষিরা প্রধানত হিন্দু ধর্মালম্বী। তবে বর্তমানে অনেকে খ্রিস্টান ধর্মেও ধর্মান্তরিত হয়েছেন। ঋষিরা চামড়ার কাজ ছাড়াও বাঁশ বেতের দ্বারা বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে থাকে। ঋষিদের আদিভাষা ‘ঠার’ তবে তা এখন প্রায় বিলুপ্ত।

কায়পুত্র  শুকর পালন ও ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত জনগোষ্ঠি। এদের ‘কাওরা’ নামেও সম্বোধন করা হয়। কায়পুত্র সম্প্রদায়কে ঋষিদের একটি শাখাও বিবেচনা করা হয়। খুলনা, যশোর, গোপালগঞ্জ, গাজিপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট প্রভৃতি অঞ্চলে কায়পুত্রদের বসবাস রয়েছে। শুকরের মাংসের চাহিদা আছে এবং শুকর চরানোর জন্য পর্যাপ্ত চারণভূমি আছে এমন জেলাগুলিতে শুকরের পালসহ কায়পুত্রদের দেখা যায়। অধিকাংশই সনাতন ধর্মের অনুসারী। কায়পুত্ররা সাধারণভাবে পাঁচটি গোত্রে বিভক্ত।

কুমার কুম্ভকার, পাল বা রুদ্রপাল নামেও পরিচিত। এ সম্প্রদায় মূলত মৃৎশিল্পী। মাটির তৈরি দৈনন্দিন ব্যবহার্য তৈজসপত্র প্রস্ত্তত ও বিক্রয়ের মাধ্যমে জীবন ধারণ করে থাকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় ৮০ হাজার পাল পরিবার রয়েছে। সনাতন ধর্মালম্বী কুমাররা নিজেদের ‘তফশিলী সম্প্রদায়’ ভুক্ত বলে থাকে। অনেকে আবার নিজেদের ক্ষত্রিয় বলেও দাবি করে।

কামার  কামাররা মূলত কৃষি সমাজের বিভিন্ন উপকরণ যেমন: নিড়ানি, শাবল, কুড়াল, লাঙ্গলের ফলা, কাঁচি, দা-বটি ইত্যাদি তৈরি করে। লোহার পাশাপাশি যারা কাঁসা পিতলের কাজ করে তারা অনেক সময় ‘বসাক’ বা ‘কর্মকার’ হিসেবে পরিচিত হন। অতীতে কেবল হিন্দু ধর্মালম্বীরা এ পেশায় থাকলেও বর্তমানে মুসলমানদেরও এই পেশায় দেখা যায়। বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলে বিশেষ করে জয়পুরহাটে ‘রানা কর্মকার’ বলে আর একটি জনগোষ্ঠির সন্ধান পাওয়া যায়। এই জনগোষ্ঠি ভারত থেকে এখানে এসে বসতি স্থাপন করে। তখন তারা কর্মকার পেশায় নিযুক্ত থাকলেও এখন অন্যান্য পেশায় ছড়িয়ে গেছে। রানা কর্মকারদের নিজস্ব ভাষা থাকলেও তার কোন লিখিত রূপ নেই। সনাতন ধর্মলম্বী এই জনগোষ্ঠি উঁচু মাটির তৈরি ঘরে বাস করে এবং তারা অনেক গোত্রে বিভক্ত। তাদের সুপরিচিত একটি উৎসব হলো ‘লবান’ (নবান্ন)।

কলু  এদের পেশা ঘাঁনিতে শষ্য দিয়ে তেল তৈরি করা। পরিবারের সবাই মিলে কাজটি করা হয়। তেল তৈরির কাজটিকে বলা হয় ‘গাওয়াল’ করা। বীজ থেকে তেল তৈরির নতুন প্রযুক্তি আসায় এবং সামাজিক অসম্মান থেকে মুক্তি পেতে কলুরা আদি পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়েই কলুদের দেখতে পাওয়া যায়। এই সম্প্রদায়ের হিন্দুদের তেলি বলা হয়। কলুরা নিজ ধর্মের প্রার্থনার পাশাপাশি গাছ বা ঘাঁনিকে সম্মান জানিয়েও প্রার্থনা করে। কুষ্টিয়া জেলায় কলু সম্প্রদায়ের প্রায় ছয় হাজার মানুষ রয়েছে। এছাড়াও ময়মনসিংহ, যশোর, মানিকগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাট এবং খুলনায় অনেক কলু পরিবার রয়েছে।

জেলে  সমাজবিজ্ঞানীদের ধারণা প্রাচীন বাংলায় কৈবর্ত সমাজের এক অংশ চাষী এবং অপর অংশ জেলে হিসেবে পেশা বাছাই করে নিয়েছিল। জেলেরা অঞ্চলভেদে মালো, রাজবংশী, জলদাস হিসেবেও পরিচিত। এদের মধ্যে রাজবংশীরা এককালে খুবই প্রভাবশালী জনগোষ্ঠি ছিল। মালদা, দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এদের রাজত্ব ছিল। পরে তারা পাল বংশের কাছে পরাস্ত হয়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে এখনো বিপুল সংখ্যায় রাজবংশী ও মালো রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে এরা মৎস্যজীবী হলেও মাছ ধরার ক্ষেত্র কমে যাওয়ায় এরা এখন অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। মৎসজীবীদের মাঝে যারা মাছ ধরার পাশাপাশি চাষেও যুক্ত তারা ক্ষেত্র বিশেষে কৈবর্ত হিসেবে পরিচিত। মুসলিম জনগোষ্ঠির মধ্যে যারা মাছ ধরার চেয়ে কেনা-বেচায় অধিক সংশ্লিষ্ট তারা নিকারি নামে পরিচিত। যশোর, ঝিনাইদহ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে অধিকাংশ নিকারির বাস।

শবর  শিকারি জাতি হিসেবে রয়েছে এদের পরিচিতি। সিলেট অঞ্চলে বিশেষত মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলিতে শবরদের বসতি রয়েছে। আলীনগর, শমসেরনগর, ভাড়াউড়া ইত্যাদি বাগানে অনেক শবর পরিবার রয়েছে। অনেক গবেষকের মতে শবরদের ভাষার সাথে বর্তমান ভারতের মুঙ্গের জেলার ভাষার মিল রয়েছে। সিলেটস্থ শবররা সাধারণত বাংলাতেই কথা বলে।

শব্দকর  এদের পেশা বাড়িবাড়ি ঘুরে বা হাটবাজারে গানবাজনা করে দাক্ষিণা নেওয়া। এই সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের বাস মৌলভীবাজার জেলায়। এই জেলায় বিভিন্ন থানায় প্রায় তিন শত ‘শব্দকর’ পরিবার রয়েছে। নামের শেষে এরা ‘শব্দকর’ পদবী ব্যবহার করে। মূলত হিন্দু ধর্মালম্বী, তবে এই ধর্মের সংকর জনগোষ্ঠিভূক্ত। শিব পূজা, চড়ক পূজা ইত্যাদির প্রচলন আছে শব্দকরদের মধ্যে। মুসলিম পীর ও দরগা সংস্কৃতির প্রতিও শব্দকরদের অনুরাগ দেখা যায়। ৭০ শতাংশ শব্দকর ভূমিহীন।

পাটনি  প্রাচীনকালে যোগাগোগ ব্যবস্থায় এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে ধারণা করা হয়। আদি পেশা ছিল খেয়া পারাপার করানো। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এরা পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। আদিতে এরা সহযোগী পেশা হিসেবে মাছ ধরার সরঞ্জামও তৈরি করতো। বর্তমানে দেখা যায় চালুন, চাল রাখার ঢোল, কুলা, মাছ ধরার চাই ইত্যাদি বুনে থাকে। পাটনিরা হিন্দু হয়েও ভিন্ন ধাঁচে পুজা-পার্বন করে থাকে। সমগ্র বালাদেশে এদের বসবাস রয়েছে।

ভগবানীয়া ‘ভগমেনে’ ও ‘ভগবেনে’ নামেও পরিচিত। লোকায়ত ঔষধি জ্ঞানের জন্য বিখ্যাত সম্প্রদায়। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিশেষ করে সাতক্ষীরা, খুলনা ও যশোর ছাড়াও ঝিনাইদহের কালিগঞ্জে এ সম্প্রদায়ের কয়েক’শ পরিবার রয়েছে। নিজেদের তারা ‘কর্তাভজা’ ধর্মের অনুসারি হিসাবে পরিচয় দিয়ে থাকে। এই ধর্মীয় জীবনাচারের উদ্ভব ভারতের নদীয়ায়। জীবন যাপনে এই জনগোষ্ঠির বড় বৈশিষ্ট্য হলো ‘আধুনিক চিকিৎসা’ বা ‘আধুনিক ওষুধ’ গ্রহণ ধর্মীয়ভাবে তাদের নিষিদ্ধ। ছয়টি বিধি অনুসারে তারা জীবন ধারণ করে থাকে। যথা-মদ না খাওয়া, মংস না খাওয়া, এঁটো না খাওয়া, মিথ্যা কথা না বলা, চুরি না করা এবং পরস্ত্রী হরণ না করা। পরিবারে প্রত্যেকে আলাদা থালা-গ্লাস ব্যবহার করে। সকল চামড়াজাত দ্রব্য ব্যবহারে অনিহা এবং চামড়ার জুতা ব্যবহার করে না। নারী-পুরুষ একসাথে বসে প্রার্থনা করে তারা। সাধারণত মাটির ঘরে থাকে তারা।

তেলেগু  এরা মূলত ভাষাভিত্তিক জনগোষ্ঠি। তেলেগু ভাষীদের মধ্যে রয়েছে মালা, মাদিগা, চাকালি, সাচ্চারি, কাপুলু প্রভৃতি গোত্রের মানুষ। এমনও দাবি করা হয় যে, ৫৬টি তেলেগু ভাষী জনগোষ্ঠি রয়েছে বাংলাদেশে। তারা ‘মাদ্রাজি’ নামেও পরিচিত। তবে বাংলাদেশের তেলেগু ভাষীদের পূর্ব প্রজন্ম প্রধানত ব্রিটিশদের মাধ্যমে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপট্টাম, তেলেঙ্গনা, হায়দ্রাবাদ, ওয়ারেঙ্গল প্রভৃতি এলাকা থেকে আগত। বর্তমানে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ঈশ্বরদী, পাবনা, কুষ্টিয়া, সিলেট চা বাগানে তেলেগু ভাষাভাষী মানুষ রয়েছে। ঢাকাতে ৩৫ হাজার তেলেগু জনগোষ্ঠি রয়েছে বলে অনুমান করা হয়। চা বাগানে তেলেগুদের একটি অংশ আবার নিজেদের ‘আলমিক’ নামে পরিচয় দেয়। সেখানে সাধারণ তেলেগুরা (যারা আবার অনেক সময় ‘তেলেঙ্গা’ নামে অভিহিত) থাকে শমসেরনগর, ইটা, করিমপুর, লংলা প্রভৃতি চা বাগানে। বালমিকরা ধর্মবিশ্বাসে অন্যান্য চা শ্রমিকদের চেয়ে রক্ষণশীল। শিক্ষায়ও তারা অপেক্ষাকৃত অনগ্রসর। একই ভাষী এবং সমধর্মী পেশাজীবী হলেও তেলেগুদের মাঝে এক গোত্রের সাথে অপর গোত্রের আত্মীয়তা নেই বললেই চলে। জীবন যাপনের বহু বিষয়ে গোত্রভেদ প্রবল। পূর্বে সবাই হিন্দু ধর্মালম্বী হলেও বর্তমানে খ্রিস্টান ধর্মে অনেকে আবার মুসলিম ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছেন। পেশাগতভাবে তেলেগু জনগোষ্ঠি সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে পেশাজীবীদের ‘সেবক’ নামেও অভিহিত করা হয়। নিজস্ব ভূসম্পদ বলতে তেঁলেগুদের তেমন কিছু নেই। তেলেগুদের মাঝে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা রয়েছে।

কানপুরী  কানপুরী হিসেবে পরিচিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে হেলা, মুচি, বাঁশফোরি, বাল্মিকী, রবিদাস, ডোম, ডোমার প্রভৃতি গোত্রের মানুষ রয়েছে। যদিও এই জনগোষ্ঠি কানপুরের পাশাপাশি এলাহাবাদ, নাগপুর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছে তবুও এদেশে তারা ‘কানপুরী’ নামে পরিচিত। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অধিকাংশ জেলা শহরে এবং প্রতিটি রেলওয়ে স্টেশন ও পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজে এই সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছে। হিন্দু ধর্মালম্বী হলেও সাধারণ হিন্দুদের সাথে পুজা-অর্চনায় অনেক পার্থক্য কয়েছে। আবার কাজের ধরণ ও ধর্মীয় আচার একই হওয়া সত্ত্বেও সম্প্রদায়গুলির নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ বিদ্যমান। কানপুরীরা সংখ্যায় প্রায় ৭ লাখ। মূলত সরকারি বিভিন্ন কলোনিকেন্দ্রীক বসবাস এদের। নিজস্ব সমাজের বিচার-আচার নিজস্ব পঞ্চায়েত দ্বারা করে থাকে। তারা হিন্দি ভাষায় কথা বললেও অনেকে ভোজপুরী ও জোবালপুরী ভাষায় কথা বলে। কানপুরীরা নিজেদের হরিজন পরিচয় দিতে বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করে থাকে। ‘হরিজন ঐক্য পরিষদ’ বলে তাদের একটি সংগঠন রয়েছে। [বনানী বিশ্বাস]