চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
৭ নং লাইন: ৭ নং লাইন:
মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৪৮ সালে ঢাকা বেতারে পান্ডুলিপি রচয়িতা হিসেবে। তাঁর অধ্যাপনার সূচনা ঢাকার জগন্নাথ কলেজে; নটরডেম কলেজেও তিনি খন্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন এবং ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ধ্বনিতত্ত্বে গবেষণার জন্য বিলেত যান। সেখান থেকে ফিরে ১৯৭০ সালে তিনি রীডার পদে উন্নীত হন।
মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৪৮ সালে ঢাকা বেতারে পান্ডুলিপি রচয়িতা হিসেবে। তাঁর অধ্যাপনার সূচনা ঢাকার জগন্নাথ কলেজে; নটরডেম কলেজেও তিনি খন্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন এবং ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ধ্বনিতত্ত্বে গবেষণার জন্য বিলেত যান। সেখান থেকে ফিরে ১৯৭০ সালে তিনি রীডার পদে উন্নীত হন।


ব্যক্তি জীবনে মোফাজ্জল হায়দার ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী এবং পরিশীলিত রুচির অধিকারী। সর্বক্ষেত্রে শৃঙ্খলাবোধ ও নিরন্তর সাধনা ছিল তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র। সাহিত্যের পাশাপাশি চিত্রকলায় ছিল তাঁর প্রগাঢ় অনুরাগ।  [[ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ|অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর]],  [[বসু, নন্দলাল|নন্দলাল বসু]][[বসু, নন্দলাল|,]]  [[রায়, যামিনী|যামিনী রায়]] প্রমুখ বিশ্বখ্যাত শিল্পীর সাহচর্য চিত্রকলায় তাঁর আগ্রহকে সমৃদ্ধ করেছিল। বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি ছিলেন সব সময় প্রত্যয়নিষ্ঠ। সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার প্রতি প্রবল সমবেদনা থাকলেও বহু মানুষের সংসর্গ এবং কোলাহল থেকে দূরে থাকতেই তিনি বেশি পছন্দ করতেন।
ব্যক্তি জীবনে মোফাজ্জল হায়দার ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী এবং পরিশীলিত রুচির অধিকারী। সর্বক্ষেত্রে শৃঙ্খলাবোধ ও নিরন্তর সাধনা ছিল তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র। সাহিত্যের পাশাপাশি চিত্রকলায় ছিল তাঁর প্রগাঢ় অনুরাগ।  [[ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ|অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর]],  [[বসু, নন্দলাল|নন্দলাল বসু]]  [[রায়, যামিনী|যামিনী রায়]] প্রমুখ বিশ্বখ্যাত শিল্পীর সাহচর্য চিত্রকলায় তাঁর আগ্রহকে সমৃদ্ধ করেছিল। বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি ছিলেন সব সময় প্রত্যয়নিষ্ঠ। সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার প্রতি প্রবল সমবেদনা থাকলেও বহু মানুষের সংসর্গ এবং কোলাহল থেকে দূরে থাকতেই তিনি বেশি পছন্দ করতেন।


মোফাজ্জল হায়দার ছিলেন যুগপৎ সৃজনশীল ও মননশীল প্রতিভার অধিকারী। গবেষণার পাশাপাশি তিনি রচনা করেছেন অনেক কবিতা, গল্প ও নাটক। তবে প্রবন্ধ ও সাহিত্য সমালোচনাতেই তাঁর প্রতিভা সবচেয়ে বেশি বিকশিত হয়েছে। রবীন্দ্রসাহিত্য ও রবীন্দ্রপ্রসঙ্গ ছিল তাঁর অধ্যয়ন ও চিন্তাচেতনার প্রধান অংশ। এর প্রত্যক্ষ ফসল তাঁর রবি পরিক্রমা (১৯৬৩) গ্রন্থটি। এছাড়াও তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলির মধ্যে বাংলা বানান ও লিপি সংস্কার (১৯৬২), রঙীন আখর (১৯৬৩), সাহিত্যের নব রূপায়ণ (১৯৬৯), Colloquial Bengali (১৯৫৯), Some supra-segmental Phonological Features of Bengali (১৯৫৯) ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর স্বাধীনতার প্রাক্কালে তিনি অপহূত হন এবং অদ্যাবধি তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।  [আমীনুর রহমান]
মোফাজ্জল হায়দার ছিলেন যুগপৎ সৃজনশীল ও মননশীল প্রতিভার অধিকারী। গবেষণার পাশাপাশি তিনি রচনা করেছেন অনেক কবিতা, গল্প ও নাটক। তবে প্রবন্ধ ও সাহিত্য সমালোচনাতেই তাঁর প্রতিভা সবচেয়ে বেশি বিকশিত হয়েছে। রবীন্দ্রসাহিত্য ও রবীন্দ্রপ্রসঙ্গ ছিল তাঁর অধ্যয়ন ও চিন্তাচেতনার প্রধান অংশ। এর প্রত্যক্ষ ফসল তাঁর রবি পরিক্রমা (১৯৬৩) গ্রন্থটি। এছাড়াও তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলির মধ্যে বাংলা বানান ও লিপি সংস্কার (১৯৬২), রঙীন আখর (১৯৬৩), সাহিত্যের নব রূপায়ণ (১৯৬৯), Colloquial Bengali (১৯৫৯), Some supra-segmental Phonological Features of Bengali (১৯৫৯) ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর স্বাধীনতার প্রাক্কালে তিনি অপহূত হন এবং অদ্যাবধি তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।  [আমীনুর রহমান]


[[en:Chaudhuri, Mofazzal Haider]]
[[en:Chaudhuri, Mofazzal Haider]]

১০:৩৫, ২৬ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী

চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার (১৯২৭-১৯৭১)  শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক। ১৯২৭ সালে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার খালিশপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা বজলুর রহিম চৌধুরী এবং মা মাহফুজা খাতুন উভয়ই ছিলেন শিক্ষা ও সাহিত্যের প্রতি বিশেষভাবে অনুরক্ত।

অল্প বয়সে পিতৃবিয়োগ হওয়ায় মোফাজ্জল হায়দারের বাল্য ও কৈশোর অতিবাহিত হয় তাঁর মাতুলের আশ্রয়ে। স্কুল জীবনের বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত হয় নোয়াখালীর আহমদিয়া হাইস্কুলে। কৃতী ছাত্র হিসেবে মোফাজ্জল হায়দারের বরাবরই খ্যাতি ছিল। তিনি জীবনের সকল পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। ১৯৪২ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রবেশিকা এবং ১৯৪৪ সালে  ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ১৯৪৬ সালে তিনি  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে  বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিএ অনার্স এবং ১৯৫৩ সালে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন।

মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৪৮ সালে ঢাকা বেতারে পান্ডুলিপি রচয়িতা হিসেবে। তাঁর অধ্যাপনার সূচনা ঢাকার জগন্নাথ কলেজে; নটরডেম কলেজেও তিনি খন্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন এবং ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ধ্বনিতত্ত্বে গবেষণার জন্য বিলেত যান। সেখান থেকে ফিরে ১৯৭০ সালে তিনি রীডার পদে উন্নীত হন।

ব্যক্তি জীবনে মোফাজ্জল হায়দার ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী এবং পরিশীলিত রুচির অধিকারী। সর্বক্ষেত্রে শৃঙ্খলাবোধ ও নিরন্তর সাধনা ছিল তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র। সাহিত্যের পাশাপাশি চিত্রকলায় ছিল তাঁর প্রগাঢ় অনুরাগ।  অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরনন্দলাল বসু  যামিনী রায় প্রমুখ বিশ্বখ্যাত শিল্পীর সাহচর্য চিত্রকলায় তাঁর আগ্রহকে সমৃদ্ধ করেছিল। বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি ছিলেন সব সময় প্রত্যয়নিষ্ঠ। সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার প্রতি প্রবল সমবেদনা থাকলেও বহু মানুষের সংসর্গ এবং কোলাহল থেকে দূরে থাকতেই তিনি বেশি পছন্দ করতেন।

মোফাজ্জল হায়দার ছিলেন যুগপৎ সৃজনশীল ও মননশীল প্রতিভার অধিকারী। গবেষণার পাশাপাশি তিনি রচনা করেছেন অনেক কবিতা, গল্প ও নাটক। তবে প্রবন্ধ ও সাহিত্য সমালোচনাতেই তাঁর প্রতিভা সবচেয়ে বেশি বিকশিত হয়েছে। রবীন্দ্রসাহিত্য ও রবীন্দ্রপ্রসঙ্গ ছিল তাঁর অধ্যয়ন ও চিন্তাচেতনার প্রধান অংশ। এর প্রত্যক্ষ ফসল তাঁর রবি পরিক্রমা (১৯৬৩) গ্রন্থটি। এছাড়াও তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলির মধ্যে বাংলা বানান ও লিপি সংস্কার (১৯৬২), রঙীন আখর (১৯৬৩), সাহিত্যের নব রূপায়ণ (১৯৬৯), Colloquial Bengali (১৯৫৯), Some supra-segmental Phonological Features of Bengali (১৯৫৯) ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর স্বাধীনতার প্রাক্কালে তিনি অপহূত হন এবং অদ্যাবধি তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।  [আমীনুর রহমান]