চুড়িহাট্টা মসজিদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''চুড়িহাট্টা মসজিদ'''  পুরনো ঢাকার চকবাজার মসজিদ থেকে পশ্চিমে চুড়িহাট্টা এলাকায় অবস্থিত। মসজিদে সংস্থাপিত ফারসি  [[শিলালিপি|শিলালিপি]] থেকে জানা যায় যে, সুবাহদার  [[শাহ সুজা|শাহ সুজা]]র সময়ে ১৬৫০ খ্রিস্টাব্দে (হিজরি ১০৬০) জনৈক মুহম্মদ বেগ এ মসজিদ নির্মাণ করেন। ২০০৮ সালে মসজিদটির প্রাচীন চিহ্নের অবশিষ্টাংশের সম্পূর্ণ ভেঙ্গে ফেলে এটি একটি বহুতল বিশিষ্ট আধুনিক ইমারতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। মসজিদটির উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব দিকে প্রশস্ত বারান্দা সংযোজন করা হয়েছে। আদিতে নির্মিত চৌচালা ছাদের পরিবর্তে বর্তমানে রয়েছে একটি সমতল ছাদ এবং এর উপরে আরও দ’ুতলা নির্মাণ করা হয়েছে।
'''চুড়িহাট্টা মসজিদ'''  পুরনো ঢাকার চকবাজার মসজিদ থেকে পশ্চিমে চুড়িহাট্টা এলাকায় অবস্থিত। মসজিদে সংস্থাপিত ফারসি  [[শিলালিপি|শিলালিপি]] থেকে জানা যায় যে, সুবাহদার  [[শাহ সুজা|শাহ সুজা]]র সময়ে ১৬৫০ খ্রিস্টাব্দে (হিজরি ১০৬০) জনৈক মুহম্মদ বেগ এ মসজিদ নির্মাণ করেন। ২০০৮ সালে মসজিদটির প্রাচীন চিহ্নের অবশিষ্টাংশের সম্পূর্ণ ভেঙ্গে ফেলে এটি একটি বহুতল বিশিষ্ট আধুনিক ইমারতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। মসজিদটির উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব দিকে প্রশস্ত বারান্দা সংযোজন করা হয়েছে। আদিতে নির্মিত চৌচালা ছাদের পরিবর্তে বর্তমানে রয়েছে একটি সমতল ছাদ এবং এর উপরে আরও দ’ুতলা নির্মাণ করা হয়েছে।


[[Image:ChurihattaMosque.jpg|thumb|400px|right|চুড়িহাট্টা মসজিদ, ঢাকা]]
অধ্যাপক [[দানী, আহমদ হাসান|আহমদ হাসান  ]][[দানী, আহমদ হাসান|দানী]] তার ঢাকা গ্রন্থে মসজিদটির মূল কাঠামোর বর্ণনা দিয়েছেন। ইমারতটির মূল ভূমি পরিকল্পনা ছিল আয়তাকার এবং এর বাইরের দিকে চার কোণে অষ্টভুজাকৃতির বুরুজ নির্মাণের মাধ্যমে ইমারতটি মজবুত করা হয়েছিল। তবে মসজিদটি সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে ফেলার আগে এ বুরুজগুলি অপসারণ করা হয়েছিল। মসজিদে প্রবেশের জন্য পূর্ব দিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে খিলানকৃত প্রবেশপথ ছিল। প্রবেশ পথের প্রত্যেকটিতে ছিল একের পর এক অনাবৃত দু’টি আর্চের মাধ্যমে খোলার ব্যবস্থ এবং সেসব আর্চ ছিল চার কেন্দ্রিক ও পত্রাকৃতির। প্যারাপেট বা বপ্র ছিদ্রহীন মারলন দ্বারা অলংকৃত করা ছাড়াও প্রত্যেক কোণে ছিল একটি করে মিনার। ভেতরের অংশে পশ্চিম দিকে ছিল তিনটি মিহরাব।
অধ্যাপক [[দানী, আহমদ হাসান|আহমদ হাসান  ]][[দানী, আহমদ হাসান|দানী]] তার ঢাকা গ্রন্থে মসজিদটির মূল কাঠামোর বর্ণনা দিয়েছেন। ইমারতটির মূল ভূমি পরিকল্পনা ছিল আয়তাকার এবং এর বাইরের দিকে চার কোণে অষ্টভুজাকৃতির বুরুজ নির্মাণের মাধ্যমে ইমারতটি মজবুত করা হয়েছিল। তবে মসজিদটি সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে ফেলার আগে এ বুরুজগুলি অপসারণ করা হয়েছিল। মসজিদে প্রবেশের জন্য পূর্ব দিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে খিলানকৃত প্রবেশপথ ছিল। প্রবেশ পথের প্রত্যেকটিতে ছিল একের পর এক অনাবৃত দু’টি আর্চের মাধ্যমে খোলার ব্যবস্থ এবং সেসব আর্চ ছিল চার কেন্দ্রিক ও পত্রাকৃতির। প্যারাপেট বা বপ্র ছিদ্রহীন মারলন দ্বারা অলংকৃত করা ছাড়াও প্রত্যেক কোণে ছিল একটি করে মিনার। ভেতরের অংশে পশ্চিম দিকে ছিল তিনটি মিহরাব।
[[Image:ChurihattaMosque.jpg|thumb|right|চুড়িহাট্টা মসজিদ, ঢাকা]]


মিনারের উপরে আয়তাকার প্যানেল। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি অষ্টভুজাকার এবং একটি আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে স্থাপিত। এই ফ্রেমের উপরের অংশে ছিল বদ্ধ-শিখর নকশার (Cresting) একটি সারি। কেবল কেন্দ্রীয় মিহরাবটিই সম্পূর্ণ মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলার পূর্ব পর্যন্ত টিকে ছিল।
মিনারের উপরে আয়তাকার প্যানেল। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি অষ্টভুজাকার এবং একটি আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে স্থাপিত। এই ফ্রেমের উপরের অংশে ছিল বদ্ধ-শিখর নকশার (Cresting) একটি সারি। কেবল কেন্দ্রীয় মিহরাবটিই সম্পূর্ণ মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলার পূর্ব পর্যন্ত টিকে ছিল।

০৪:৫৭, ১৭ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

চুড়িহাট্টা মসজিদ  পুরনো ঢাকার চকবাজার মসজিদ থেকে পশ্চিমে চুড়িহাট্টা এলাকায় অবস্থিত। মসজিদে সংস্থাপিত ফারসি  শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, সুবাহদার  শাহ সুজার সময়ে ১৬৫০ খ্রিস্টাব্দে (হিজরি ১০৬০) জনৈক মুহম্মদ বেগ এ মসজিদ নির্মাণ করেন। ২০০৮ সালে মসজিদটির প্রাচীন চিহ্নের অবশিষ্টাংশের সম্পূর্ণ ভেঙ্গে ফেলে এটি একটি বহুতল বিশিষ্ট আধুনিক ইমারতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। মসজিদটির উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব দিকে প্রশস্ত বারান্দা সংযোজন করা হয়েছে। আদিতে নির্মিত চৌচালা ছাদের পরিবর্তে বর্তমানে রয়েছে একটি সমতল ছাদ এবং এর উপরে আরও দ’ুতলা নির্মাণ করা হয়েছে।

চুড়িহাট্টা মসজিদ, ঢাকা

অধ্যাপক আহমদ হাসান  দানী তার ঢাকা গ্রন্থে মসজিদটির মূল কাঠামোর বর্ণনা দিয়েছেন। ইমারতটির মূল ভূমি পরিকল্পনা ছিল আয়তাকার এবং এর বাইরের দিকে চার কোণে অষ্টভুজাকৃতির বুরুজ নির্মাণের মাধ্যমে ইমারতটি মজবুত করা হয়েছিল। তবে মসজিদটি সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে ফেলার আগে এ বুরুজগুলি অপসারণ করা হয়েছিল। মসজিদে প্রবেশের জন্য পূর্ব দিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে খিলানকৃত প্রবেশপথ ছিল। প্রবেশ পথের প্রত্যেকটিতে ছিল একের পর এক অনাবৃত দু’টি আর্চের মাধ্যমে খোলার ব্যবস্থ এবং সেসব আর্চ ছিল চার কেন্দ্রিক ও পত্রাকৃতির। প্যারাপেট বা বপ্র ছিদ্রহীন মারলন দ্বারা অলংকৃত করা ছাড়াও প্রত্যেক কোণে ছিল একটি করে মিনার। ভেতরের অংশে পশ্চিম দিকে ছিল তিনটি মিহরাব।

মিনারের উপরে আয়তাকার প্যানেল। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি অষ্টভুজাকার এবং একটি আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে স্থাপিত। এই ফ্রেমের উপরের অংশে ছিল বদ্ধ-শিখর নকশার (Cresting) একটি সারি। কেবল কেন্দ্রীয় মিহরাবটিই সম্পূর্ণ মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলার পূর্ব পর্যন্ত টিকে ছিল।

মূল মসজিদটি কুঁড়েঘরের ন্যায় চৌচালা আকৃতির ছাদে আচ্ছাদিত ছিল, তবে বর্তমানে এর ছাদ সমান। বাহারিস্তান-ই-গায়েবী গ্রন্থে মির্জা নাথান উল্লেখ করেছেন যে, মুগল আমলে বাংলায় কুঁড়েঘর সদৃশ ইমারত নির্মিত হয়েছিল এবং সেগুলিতে আচ্ছাদন হিসেবে কখনো চৌচালা কখনো দোচালা ভল্ট ব্যবহূত হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এরকম খুব কম নিদর্শনই টিকে আছে। ধারণা করা হয় সম্পূর্ণ চৌচালা ভল্টে আচ্ছাদিত এই চুড়িহাট্টা মসজিদই ছিল মুগল শাসনামলে নির্মিত বাংলায় কুঁড়েঘর সদৃশ স্বতন্ত্র ইমারতে সমূহের মধ্যে প্রথম নিদর্শন বলে ধারণা করা হয়। বাংলায় ইটের স্থাপত্যে কুঁড়েঘর সদৃশ চৌচালা ভল্টের ব্যবহার শুরু করেছিল সুলতানি যুগের নির্মাণ শিল্পিরা। বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ-এর (আনু. পনেরো শতকের শেষ ভাগ) কেন্দ্রীয় নেভ (Nave)-এ এর ব্যবহার প্রথম লক্ষ্য করা যায়। চৌচালা ভল্ট আচ্ছাদিত স্বতন্ত্র ইমারতও সুলতানি আমলেই প্রথম দেখা যায়। এর একমাত্র জ্ঞাত নিদর্শন বাগেরহাটের সাবেকডাঙ্গা ভবন, যা হোসেন শাহী আমলে নির্মিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। শিলালিপির বিশ্লেষণে এবং চৌচালা ছাদের উপস্থিতিতে ডক্টর অবদুল করিম মত প্রকাশ করেন যে, সম্ভবত মসজিদটি প্রথমে একটি মন্দির হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছিল, তারপরে এখানে মসজিদ নির্মিত হয়। ভিন্ন মতে হিন্দু বৌদ্ধ যুগে এ স্থানে নির্মিত মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের উপরে মোহাম্মদ বেগ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন বলেও ধারনা করা হয়। ১৯০৬ সালে মাটি খননের ফলে এ স্থানে হিন্দু-বৌদ্ধ যুগের বাসুদেব এর একটি মূর্তি পাওয়া গিয়েছিল (মূর্তিটি বর্তমানে কলকাতা জাদুঘরে সংরক্ষিত)। চুড়িহাট্টা মসজিদ এখন কেবল ইতিহাসের অংশ। কারন বর্তমানে এটি একটি আধুনিক মসজিদ ভবন।  [এম.এ বারি]