মনসুরউদ্দীন, মুহম্মদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
'''মনসুরউদ্দীন, মুহম্মদ '''(১৯০৪-১৯৮৭) | [[Image:MansuruddinMuhammad.jpg|thumb|right|মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন]] | ||
'''মনসুরউদ্দীন, মুহম্মদ''' (১৯০৪-১৯৮৭) শিক্ষাবিদ, লোকসংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ। ১৯০৪ সালের ৩১ জানুয়ারি পাবনা জেলার সুজানগর থানার মুরারিপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। ১৯২৮ সালে তিনি [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়|কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে বাংলায় এমএ পাস করেন। পরের বছর অস্থায়ী স্কুল সাব-ইন্সপেক্টর পদে যোগদান করে তিন বছর চাকরি করার পর তিনি ১৯৫১ সাল পর্যন্ত ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (স্কুল শাখা), হাওড়া জেলা স্কুল, চট্টগ্রাম সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ এবং সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৫২ সালে ছয় মাসের জন্য তিনি ঢাকায় সরকার পরিচালিত [[মাহে নও|মাহে নও]] মাসিকপত্রের সম্পাদক ছিলেন। ওই বছরেরই শেষ দিকে সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক [[লোকসঙ্গীত|লোকসঙ্গীত]] সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে লন্ডন যান। সম্মেলনে ‘Bengali Folksong’ নামে একটি প্রবন্ধ পাঠ করে মনসুরউদ্দীন সকলের প্রশংসা অর্জন করেন। ওই সম্মেলনে ফোকলোর বিশেষজ্ঞ হিসেবে গণ্য হওয়ায় তাঁকে International Folksongs Council-এর সদস্যপদ প্রদান করা হয়। লন্ডন থেকে ফিরে ওই বছরই তিনি [[ঢাকা কলেজ|ঢাকা কলেজ]]-এ বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন এবং ১৯৫৯ সালে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পূর্বে তিনি বেশ কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের খন্ডকালীন অধ্যাপক ছিলেন। | |||
বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে শিক্ষক সুরেন্দ্রনাথ সেনের অনুপ্রেরণায় সাহিত্যসাধনায় তাঁর [[হাতেখড়ি|হাতেখড়ি]] হয়। পাবনা [[এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা|এডওয়ার্ড কলেজ]] ম্যাগাজিনে তাঁর প্রথম প্রকাশিত কবিতার নাম ‘বেদুইন মুসলমান’। পরে সাম্যবাদী, প্রাচী ইত্যাদি পত্রিকায় তাঁর আরও কিছু কবিতা প্রকাশিত হয়। দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় [[কলকাতা|কলকাতা]] থেকে প্রকাশিত [[প্রবাসী|প্রবাসী]] পত্রিকা তাঁকে লালনগীতির সঙ্গে পরিচিত করায়। গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে থাকা এসব লোকসঙ্গীত মনসুরউদ্দীনকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে। পরবর্তীকালে [[রাজশাহী কলেজ|রাজশাহী কলেজ]]-এ বিএ পড়ার সময় কলেজে অনুষ্ঠিত এক সাহিত্যসভায় তিনি ‘বাংলাদেশের পল্লীগান’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন। তাঁর প্রবন্ধে মুগ্ধ হয়ে কলেজের অধ্যক্ষ কুমুদিনীকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ফোকলোর চর্চায় উৎসাহিত করেন। | বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে শিক্ষক সুরেন্দ্রনাথ সেনের অনুপ্রেরণায় সাহিত্যসাধনায় তাঁর [[হাতেখড়ি|হাতেখড়ি]] হয়। পাবনা [[এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা|এডওয়ার্ড কলেজ]] ম্যাগাজিনে তাঁর প্রথম প্রকাশিত কবিতার নাম ‘বেদুইন মুসলমান’। পরে সাম্যবাদী, প্রাচী ইত্যাদি পত্রিকায় তাঁর আরও কিছু কবিতা প্রকাশিত হয়। দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় [[কলকাতা|কলকাতা]] থেকে প্রকাশিত [[প্রবাসী|প্রবাসী]] পত্রিকা তাঁকে লালনগীতির সঙ্গে পরিচিত করায়। গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে থাকা এসব লোকসঙ্গীত মনসুরউদ্দীনকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে। পরবর্তীকালে [[রাজশাহী কলেজ|রাজশাহী কলেজ]]-এ বিএ পড়ার সময় কলেজে অনুষ্ঠিত এক সাহিত্যসভায় তিনি ‘বাংলাদেশের পল্লীগান’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন। তাঁর প্রবন্ধে মুগ্ধ হয়ে কলেজের অধ্যক্ষ কুমুদিনীকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ফোকলোর চর্চায় উৎসাহিত করেন। | ||
মনসুরউদ্দীন মনেপ্রাণে ছিলেন [[বাংলা ভাষা|বাংলা ভাষা]] ও বাঙালি সংস্কৃতি, বিশেষত লোকসংস্কৃতির একজন একনিষ্ঠ অনুরাগী। ছাত্রজীবনে অধ্যয়নের ও পরবর্তীকালে অধ্যাপনার অবসরে তিনি পদ্মার চরাঞ্চল এবং পাবনা-ফরিদপুর-কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে গান, ছড়া, ধাঁধা, প্রবাদ, গল্প ইত্যাদি লোকসাহিত্যের অনেক উপাদান সংগ্রহ করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ফোকলোর চর্চা দেশের সুধীমহলের স্বীকৃতি লাভ করে। | মনসুরউদ্দীন মনেপ্রাণে ছিলেন [[বাংলা ভাষা|বাংলা ভাষা]] ও বাঙালি সংস্কৃতি, বিশেষত লোকসংস্কৃতির একজন একনিষ্ঠ অনুরাগী। ছাত্রজীবনে অধ্যয়নের ও পরবর্তীকালে অধ্যাপনার অবসরে তিনি পদ্মার চরাঞ্চল এবং পাবনা-ফরিদপুর-কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে গান, ছড়া, ধাঁধা, প্রবাদ, গল্প ইত্যাদি লোকসাহিত্যের অনেক উপাদান সংগ্রহ করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ফোকলোর চর্চা দেশের সুধীমহলের স্বীকৃতি লাভ করে। |
০৯:১৪, ২ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
মনসুরউদ্দীন, মুহম্মদ (১৯০৪-১৯৮৭) শিক্ষাবিদ, লোকসংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ। ১৯০৪ সালের ৩১ জানুয়ারি পাবনা জেলার সুজানগর থানার মুরারিপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। ১৯২৮ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পাস করেন। পরের বছর অস্থায়ী স্কুল সাব-ইন্সপেক্টর পদে যোগদান করে তিন বছর চাকরি করার পর তিনি ১৯৫১ সাল পর্যন্ত ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (স্কুল শাখা), হাওড়া জেলা স্কুল, চট্টগ্রাম সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ এবং সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৫২ সালে ছয় মাসের জন্য তিনি ঢাকায় সরকার পরিচালিত মাহে নও মাসিকপত্রের সম্পাদক ছিলেন। ওই বছরেরই শেষ দিকে সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে লন্ডন যান। সম্মেলনে ‘Bengali Folksong’ নামে একটি প্রবন্ধ পাঠ করে মনসুরউদ্দীন সকলের প্রশংসা অর্জন করেন। ওই সম্মেলনে ফোকলোর বিশেষজ্ঞ হিসেবে গণ্য হওয়ায় তাঁকে International Folksongs Council-এর সদস্যপদ প্রদান করা হয়। লন্ডন থেকে ফিরে ওই বছরই তিনি ঢাকা কলেজ-এ বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন এবং ১৯৫৯ সালে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পূর্বে তিনি বেশ কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের খন্ডকালীন অধ্যাপক ছিলেন।
বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে শিক্ষক সুরেন্দ্রনাথ সেনের অনুপ্রেরণায় সাহিত্যসাধনায় তাঁর হাতেখড়ি হয়। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ ম্যাগাজিনে তাঁর প্রথম প্রকাশিত কবিতার নাম ‘বেদুইন মুসলমান’। পরে সাম্যবাদী, প্রাচী ইত্যাদি পত্রিকায় তাঁর আরও কিছু কবিতা প্রকাশিত হয়। দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় কলকাতা থেকে প্রকাশিত প্রবাসী পত্রিকা তাঁকে লালনগীতির সঙ্গে পরিচিত করায়। গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে থাকা এসব লোকসঙ্গীত মনসুরউদ্দীনকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে। পরবর্তীকালে রাজশাহী কলেজ-এ বিএ পড়ার সময় কলেজে অনুষ্ঠিত এক সাহিত্যসভায় তিনি ‘বাংলাদেশের পল্লীগান’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন। তাঁর প্রবন্ধে মুগ্ধ হয়ে কলেজের অধ্যক্ষ কুমুদিনীকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ফোকলোর চর্চায় উৎসাহিত করেন।
মনসুরউদ্দীন মনেপ্রাণে ছিলেন বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতি, বিশেষত লোকসংস্কৃতির একজন একনিষ্ঠ অনুরাগী। ছাত্রজীবনে অধ্যয়নের ও পরবর্তীকালে অধ্যাপনার অবসরে তিনি পদ্মার চরাঞ্চল এবং পাবনা-ফরিদপুর-কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে গান, ছড়া, ধাঁধা, প্রবাদ, গল্প ইত্যাদি লোকসাহিত্যের অনেক উপাদান সংগ্রহ করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ফোকলোর চর্চা দেশের সুধীমহলের স্বীকৃতি লাভ করে।
বাংলাদেশ ফোকলোর পরিষদ, লালন পরিষদ (কেন্দ্রীয় সংসদ), লালন একাডেমী (কুষ্টিয়া), হরিশপুর লালন একাডেমী, পাঞ্জু শাহ সেবা সংস্কৃতি সংঘ ইত্যাদি সংস্থার উপদেষ্টা ও পৃষ্ঠপোষকরূপে মনসুরউদ্দীন আজীবন কাজ করে গেছেন। ১৯৭৮ সালের ৯ মার্চ বাংলাদেশ ফোকলোর পরিষদ মনসুরউদ্দীনকে সংবর্ধিত করে।
মনসুরউদ্দীন লোকসাহিত্যের বিভিন্ন ধারায় প্রবন্ধ রচনা করে ভারতী, প্রবাসী, ভারতবর্ষ, বঙ্গীয় সাহিত্যপরিষৎ পত্রিকা, বিচিত্রা, মোহাম্মদী প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশ করেন। তাঁর অক্ষয় কীর্তি হলো হারামণি (১৯৩০-১৯৮৯)। এর মোট ১৩ খন্ডে লোকসঙ্গীত সংকলন ও সম্পাদনা করে তিনি প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন। প্রতিটি খন্ডের সম্পাদনায় তিনি আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি ও গভীর পান্ডিত্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ: শিরনী (১৯৩১), ধানের মঞ্জরী (১৯৩৩), আগরবাতী (১৯৩৮), বাংলা সাহিত্যে মুসলিম সাধনা (৩ খন্ড: ১৯৬০-৬৬) ও ইরানের কবি (১৯৬৮)।
বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৫), শেরে বাংলা জাতীয় পুরস্কার ও স্বর্ণপদক (১৯৮০), মুক্তধারা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮২), একুশে পদক (১৯৮৩), নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক (১৯৮৩), স্বাধীনতা পদক (১৯৮৪) এবং রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডি.লিট (১৯৮৭) উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৮৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়। [ওয়াকিল আহমদ]