কোদলা মঠ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
'''কোদলা | '''কোদলা মঠ''' শিখর স্টাইলে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের সবচাইতে উল্লেখযোগ্য মঠ। বাগেরহাটে অবস্থিত এরূপ মঠের অনুরূপ মঠ রয়েছে ১৭ শতকে নির্মিত ফরিদপুরের মথুরাপুর দেউল এবং বাকেরগঞ্জের মাহিলারা মঠ। শিখর স্টাইলে বা রেখা স্টাইলে গড়ে ওঠা এ মঠসমূহ ভারতীয় নান্দনিক ডিজাইনের নাগারা স্টাইল হিসেবে পরিচিত। | ||
[[Image:KodlaMothBagerhat.jpg|thumb|400px|right|কোদলা মঠ, বাগেরহাট]] | |||
বাগেরহাটের বিশ্ব ঐতিহ্য স্থল [[ষাটগম্বুজ মসজিদ|ষাটগম্বুজ মসজিদ]] থেকে (১৫ শতক) প্রায় ১০ কি. মি. উত্তরে অযোধ্যা গ্রামে মঠটির অবস্থিতির কারণে এটি ‘অযোধ্যা মঠ’ নামেও পরিচিত। প্রায় সম্পূর্ণ মঠটিই একসময়ে পোড়ামাটির ফলকে আচ্ছাদিত ছিল। এটি একটি প্রাচীন হিন্দু মন্দির। তবে ভারতীয় উপমহাদেশীয় অঞ্চলসমূহের মন্দিরের মতো কোদলা মঠ সাধারণ হিন্দু মন্দিরের অনুরূপে নির্মিত হয়নি। কারণ [[মঠ|মঠ]]-এর কাঠামো ও স্টাইল সম্পূর্ণ ভিন্ন ও স্বতন্ত্র প্রকৃতির। কোদলা মঠের অভ্যন্তরের প্রকোষ্ঠের মাপ ৩.০৪৮ বর্গ মিটার এবং এর দেয়াল ২.৭৪ মিটার পুরু। উত্তরের দিকের দেয়াল ব্যতিত মঠের তিনদিকে রয়েছে তিনটি প্রবেশদ্বার। মঠের প্রধান ফটক দক্ষিণদিকে। ফটকের খিলানসমূহ করবেল্ট ঘরানার কিন্তু পেনডেনটিভ্স সমূহ তীক্ষ্ণ খিলান সম্বলিত যা ভেতরমুখি অর্ধগোলাকৃতি ডোমকে ধারন করে আছে বা ভারবহনের কাজ করছে। | বাগেরহাটের বিশ্ব ঐতিহ্য স্থল [[ষাটগম্বুজ মসজিদ|ষাটগম্বুজ মসজিদ]] থেকে (১৫ শতক) প্রায় ১০ কি. মি. উত্তরে অযোধ্যা গ্রামে মঠটির অবস্থিতির কারণে এটি ‘অযোধ্যা মঠ’ নামেও পরিচিত। প্রায় সম্পূর্ণ মঠটিই একসময়ে পোড়ামাটির ফলকে আচ্ছাদিত ছিল। এটি একটি প্রাচীন হিন্দু মন্দির। তবে ভারতীয় উপমহাদেশীয় অঞ্চলসমূহের মন্দিরের মতো কোদলা মঠ সাধারণ হিন্দু মন্দিরের অনুরূপে নির্মিত হয়নি। কারণ [[মঠ|মঠ]]-এর কাঠামো ও স্টাইল সম্পূর্ণ ভিন্ন ও স্বতন্ত্র প্রকৃতির। কোদলা মঠের অভ্যন্তরের প্রকোষ্ঠের মাপ ৩.০৪৮ বর্গ মিটার এবং এর দেয়াল ২.৭৪ মিটার পুরু। উত্তরের দিকের দেয়াল ব্যতিত মঠের তিনদিকে রয়েছে তিনটি প্রবেশদ্বার। মঠের প্রধান ফটক দক্ষিণদিকে। ফটকের খিলানসমূহ করবেল্ট ঘরানার কিন্তু পেনডেনটিভ্স সমূহ তীক্ষ্ণ খিলান সম্বলিত যা ভেতরমুখি অর্ধগোলাকৃতি ডোমকে ধারন করে আছে বা ভারবহনের কাজ করছে। | ||
মঠের বাইরের দিকের প্রত্যেক পার্শ্ব দেয়াল বহুভূজ এবং পাঁচটি করে কুলুঙ্গি রয়েছে। বাইরের দিকের সম্মুখ ভাগের প্রত্যেক অংশে ছয়টি সমতল এবং এগারোটি কুলুঙ্গি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে বহুভূজ আকৃতির এই পাঁচটি কুলুঙ্গি। বাইরের দেয়ালের ডিজাইনে নিচ থেকে উপরের দিকে ক্রমান্বয়ে চক্রাকারে বলয় তৈরি করে প্রায় ১৮.২৮৮ মিটার উঁচুতে সরল অনুভূমিক রেখা সৃষ্টি করে উঠে গিয়েছে। তার মধ্যে ধারাবাহিকভাবে অভিক্ষিত বক্রাকার উলম্ব রেখা দ্বারা আড়াআড়িভাবে প্রায় ১৪ ইঞ্চি ব্যবধানে ধারাবাহিক রেখা সৃষ্টি করেছে। কোদলা মঠের বহির্ভাগের এ অলংকরণই মন্দিরের প্রধান আকর্ষণীয় স্থান। পিরামিডের অনুরূপ উঁচু স্থাপত্যিক গঠনই একে শিখর স্টাইলের সঙ্গে অঙ্গীভূত করেছে। মঠের কার্ণিশের উপরে বাংলায় অঙ্কিত একটি লিপি সংস্থাপিত ছিল। লিপির বক্তব্য সাক্ষ্য দেয় যে, সম্ভবত ১৭ শতের প্রথমাংশে দেবতা তরকা ব্রহ্মাহ্কে নিবেদন করে তাঁর অনুগ্রহ প্রাপ্তির আশায় কোন এক ব্রাহ্মণ কর্তৃক মঠটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। | মঠের বাইরের দিকের প্রত্যেক পার্শ্ব দেয়াল বহুভূজ এবং পাঁচটি করে কুলুঙ্গি রয়েছে। বাইরের দিকের সম্মুখ ভাগের প্রত্যেক অংশে ছয়টি সমতল এবং এগারোটি কুলুঙ্গি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে বহুভূজ আকৃতির এই পাঁচটি কুলুঙ্গি। বাইরের দেয়ালের ডিজাইনে নিচ থেকে উপরের দিকে ক্রমান্বয়ে চক্রাকারে বলয় তৈরি করে প্রায় ১৮.২৮৮ মিটার উঁচুতে সরল অনুভূমিক রেখা সৃষ্টি করে উঠে গিয়েছে। তার মধ্যে ধারাবাহিকভাবে অভিক্ষিত বক্রাকার উলম্ব রেখা দ্বারা আড়াআড়িভাবে প্রায় ১৪ ইঞ্চি ব্যবধানে ধারাবাহিক রেখা সৃষ্টি করেছে। কোদলা মঠের বহির্ভাগের এ অলংকরণই মন্দিরের প্রধান আকর্ষণীয় স্থান। পিরামিডের অনুরূপ উঁচু স্থাপত্যিক গঠনই একে শিখর স্টাইলের সঙ্গে অঙ্গীভূত করেছে। মঠের কার্ণিশের উপরে বাংলায় অঙ্কিত একটি লিপি সংস্থাপিত ছিল। লিপির বক্তব্য সাক্ষ্য দেয় যে, সম্ভবত ১৭ শতের প্রথমাংশে দেবতা তরকা ব্রহ্মাহ্কে নিবেদন করে তাঁর অনুগ্রহ প্রাপ্তির আশায় কোন এক ব্রাহ্মণ কর্তৃক মঠটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। | ||
অন্যান্য টিকে থাকা প্রাচীন অবকাঠামোর মতো কোদলা মঠও তার ক্ষয়িষ্ণু সৌন্দর্য ও রাজকীয় গুরুত্ব নিয়ে এখনো টিকে আছে। মঠের উত্তরের দিকের বহির্ভাগের প্রবেশদ্বারের অনুরূপ দেয়ালের কেন্দ্রীয় অংশে সূক্ষ্ণ ফুল লতাপাতার নকশা বর্তমানে সবচাইতে ভালো অবস্থায় সুরক্ষিত রয়েছে। [নাসরীন আক্তার] | অন্যান্য টিকে থাকা প্রাচীন অবকাঠামোর মতো কোদলা মঠও তার ক্ষয়িষ্ণু সৌন্দর্য ও রাজকীয় গুরুত্ব নিয়ে এখনো টিকে আছে। মঠের উত্তরের দিকের বহির্ভাগের প্রবেশদ্বারের অনুরূপ দেয়ালের কেন্দ্রীয় অংশে সূক্ষ্ণ ফুল লতাপাতার নকশা বর্তমানে সবচাইতে ভালো অবস্থায় সুরক্ষিত রয়েছে। [নাসরীন আক্তার] | ||
''আরও দেখুন'' [[মঠ|মঠ]]। | |||
[[en:Kodla Matha]] | [[en:Kodla Matha]] |
০৭:০১, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
কোদলা মঠ শিখর স্টাইলে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের সবচাইতে উল্লেখযোগ্য মঠ। বাগেরহাটে অবস্থিত এরূপ মঠের অনুরূপ মঠ রয়েছে ১৭ শতকে নির্মিত ফরিদপুরের মথুরাপুর দেউল এবং বাকেরগঞ্জের মাহিলারা মঠ। শিখর স্টাইলে বা রেখা স্টাইলে গড়ে ওঠা এ মঠসমূহ ভারতীয় নান্দনিক ডিজাইনের নাগারা স্টাইল হিসেবে পরিচিত।
বাগেরহাটের বিশ্ব ঐতিহ্য স্থল ষাটগম্বুজ মসজিদ থেকে (১৫ শতক) প্রায় ১০ কি. মি. উত্তরে অযোধ্যা গ্রামে মঠটির অবস্থিতির কারণে এটি ‘অযোধ্যা মঠ’ নামেও পরিচিত। প্রায় সম্পূর্ণ মঠটিই একসময়ে পোড়ামাটির ফলকে আচ্ছাদিত ছিল। এটি একটি প্রাচীন হিন্দু মন্দির। তবে ভারতীয় উপমহাদেশীয় অঞ্চলসমূহের মন্দিরের মতো কোদলা মঠ সাধারণ হিন্দু মন্দিরের অনুরূপে নির্মিত হয়নি। কারণ মঠ-এর কাঠামো ও স্টাইল সম্পূর্ণ ভিন্ন ও স্বতন্ত্র প্রকৃতির। কোদলা মঠের অভ্যন্তরের প্রকোষ্ঠের মাপ ৩.০৪৮ বর্গ মিটার এবং এর দেয়াল ২.৭৪ মিটার পুরু। উত্তরের দিকের দেয়াল ব্যতিত মঠের তিনদিকে রয়েছে তিনটি প্রবেশদ্বার। মঠের প্রধান ফটক দক্ষিণদিকে। ফটকের খিলানসমূহ করবেল্ট ঘরানার কিন্তু পেনডেনটিভ্স সমূহ তীক্ষ্ণ খিলান সম্বলিত যা ভেতরমুখি অর্ধগোলাকৃতি ডোমকে ধারন করে আছে বা ভারবহনের কাজ করছে।
মঠের বাইরের দিকের প্রত্যেক পার্শ্ব দেয়াল বহুভূজ এবং পাঁচটি করে কুলুঙ্গি রয়েছে। বাইরের দিকের সম্মুখ ভাগের প্রত্যেক অংশে ছয়টি সমতল এবং এগারোটি কুলুঙ্গি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে বহুভূজ আকৃতির এই পাঁচটি কুলুঙ্গি। বাইরের দেয়ালের ডিজাইনে নিচ থেকে উপরের দিকে ক্রমান্বয়ে চক্রাকারে বলয় তৈরি করে প্রায় ১৮.২৮৮ মিটার উঁচুতে সরল অনুভূমিক রেখা সৃষ্টি করে উঠে গিয়েছে। তার মধ্যে ধারাবাহিকভাবে অভিক্ষিত বক্রাকার উলম্ব রেখা দ্বারা আড়াআড়িভাবে প্রায় ১৪ ইঞ্চি ব্যবধানে ধারাবাহিক রেখা সৃষ্টি করেছে। কোদলা মঠের বহির্ভাগের এ অলংকরণই মন্দিরের প্রধান আকর্ষণীয় স্থান। পিরামিডের অনুরূপ উঁচু স্থাপত্যিক গঠনই একে শিখর স্টাইলের সঙ্গে অঙ্গীভূত করেছে। মঠের কার্ণিশের উপরে বাংলায় অঙ্কিত একটি লিপি সংস্থাপিত ছিল। লিপির বক্তব্য সাক্ষ্য দেয় যে, সম্ভবত ১৭ শতের প্রথমাংশে দেবতা তরকা ব্রহ্মাহ্কে নিবেদন করে তাঁর অনুগ্রহ প্রাপ্তির আশায় কোন এক ব্রাহ্মণ কর্তৃক মঠটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
অন্যান্য টিকে থাকা প্রাচীন অবকাঠামোর মতো কোদলা মঠও তার ক্ষয়িষ্ণু সৌন্দর্য ও রাজকীয় গুরুত্ব নিয়ে এখনো টিকে আছে। মঠের উত্তরের দিকের বহির্ভাগের প্রবেশদ্বারের অনুরূপ দেয়ালের কেন্দ্রীয় অংশে সূক্ষ্ণ ফুল লতাপাতার নকশা বর্তমানে সবচাইতে ভালো অবস্থায় সুরক্ষিত রয়েছে। [নাসরীন আক্তার]
আরও দেখুন মঠ।