কঠিন শিলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''কঠিন শিলা''' (Hardrock) পাললিক শিলা থেকে পৃথক এবং সাধারণভাবে শক্ত, ঘন, কেলাসিত আগ্নেয় অথবা রূপান্তরিত শিলাকে কঠিন শিলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাংলাদেশে চার ধরনের কঠিন শিলা পাওয়া যায়: (ক) মধ্যপাড়া ভূগর্ভস্থ কঠিন শিলা (খ) ভোলাগঞ্জ-জাফলং এর কঠিন শিলার নুড়ি (গ) তেতুলিয়া-পঞ্চগড়-পাটগ্রাম কঠিন শিলা কনক্রিশন (concretion) এবং (ঘ) চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রামের কনক্রিশন নুড়ি। | '''কঠিন শিলা''' (Hardrock) পাললিক শিলা থেকে পৃথক এবং সাধারণভাবে শক্ত, ঘন, কেলাসিত আগ্নেয় অথবা রূপান্তরিত শিলাকে কঠিন শিলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাংলাদেশে চার ধরনের কঠিন শিলা পাওয়া যায়: (ক) মধ্যপাড়া ভূগর্ভস্থ কঠিন শিলা (খ) ভোলাগঞ্জ-জাফলং এর কঠিন শিলার নুড়ি (গ) তেতুলিয়া-পঞ্চগড়-পাটগ্রাম কঠিন শিলা কনক্রিশন (concretion) এবং (ঘ) চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রামের কনক্রিশন নুড়ি। | ||
'''মধ্যপাড়া ভূগর্ভস্থ কঠিন শিলা''' ১৯৭৪-৭৫ সালে [[জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ|বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর]] দিনাজপুর জেলার মধ্যপাড়া নামক স্থানে ও সংলগ্ন এলাকায় ছয়টি [[কূপ|কূপ]] খনন করে এবং ভূ-পৃষ্ঠের অতি অল্প গভীরতায় পুরাজীবীয় যুগের কেলাসিত ভিত্তিস্তরে (Precambrian Crystalline Basement) কঠিন শিলার অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। এ সকল কূপে ভূ-পৃষ্ঠের ১২৮ মিটার থেকে ১৫৪ মিটার গভীরতায় পুরাজীবীয় কঠিন শিলা পাওয়া যায়। মধ্যপাড়ার জি.ডি.এইচ-২৪ নং (Geological Drill Hole or GDH) কূপে ১২৮ মিটার গভীরতার কঠিন শিলার অবস্থানটি চিহ্নিত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনন ও উত্তোলন প্রকল্পের কারিগরি ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করার লক্ষ্যে এস.এন.সি (Surveyor Nenniger and Chenvert) নামক কানাডীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করে। ১৯৭৭ সালে সমীক্ষা শেষে এস.এন.সি মত প্রকাশ করে যে, এ প্রকল্প কারিগরি এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে নিরাপদ এবং লাভজনক হবে। ১৯৭৮ সালে সরকার কঠিন শিলা উৎপাদনের লক্ষ্যে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি প্রকল্প অনুমোদন করে। প্রকল্পটিতে অর্থায়নের জন্য ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সরকার উত্তর কোরিয়া সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে [[পেট্রোবাংলা|পেট্রোবাংলা]] এবং উত্তর কোরিয়া সরকারের পক্ষে ন্যাম ন্যাম (NAM NAM) নামক কোম্পানি চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ১৯৯৪ সালের প্রথমদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয়। | '''''মধ্যপাড়া ভূগর্ভস্থ কঠিন শিলা''''' ১৯৭৪-৭৫ সালে [[জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ|বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর]] দিনাজপুর জেলার মধ্যপাড়া নামক স্থানে ও সংলগ্ন এলাকায় ছয়টি [[কূপ|কূপ]] খনন করে এবং ভূ-পৃষ্ঠের অতি অল্প গভীরতায় পুরাজীবীয় যুগের কেলাসিত ভিত্তিস্তরে (Precambrian Crystalline Basement) কঠিন শিলার অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। এ সকল কূপে ভূ-পৃষ্ঠের ১২৮ মিটার থেকে ১৫৪ মিটার গভীরতায় পুরাজীবীয় কঠিন শিলা পাওয়া যায়। মধ্যপাড়ার জি.ডি.এইচ-২৪ নং (Geological Drill Hole or GDH) কূপে ১২৮ মিটার গভীরতার কঠিন শিলার অবস্থানটি চিহ্নিত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনন ও উত্তোলন প্রকল্পের কারিগরি ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করার লক্ষ্যে এস.এন.সি (Surveyor Nenniger and Chenvert) নামক কানাডীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করে। ১৯৭৭ সালে সমীক্ষা শেষে এস.এন.সি মত প্রকাশ করে যে, এ প্রকল্প কারিগরি এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে নিরাপদ এবং লাভজনক হবে। ১৯৭৮ সালে সরকার কঠিন শিলা উৎপাদনের লক্ষ্যে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি প্রকল্প অনুমোদন করে। প্রকল্পটিতে অর্থায়নের জন্য ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সরকার উত্তর কোরিয়া সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে [[পেট্রোবাংলা|পেট্রোবাংলা]] এবং উত্তর কোরিয়া সরকারের পক্ষে ন্যাম ন্যাম (NAM NAM) নামক কোম্পানি চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ১৯৯৪ সালের প্রথমদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয়। | ||
মধ্যপাড়া ভূগর্ভস্থ কঠিন শিলা প্রকল্পটি প্রায় ১.৪৪ বর্গ কিমি এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। কঠিন শিলা খনন করা হয় রুম অ্যান্ড পিলার এবং সাব লেভেল স্টোপিং (sub-level stoping) পদ্ধতিতে। খনি স্থাপনের জন্য ২৪০ মিটার ব্যবধানে পাঁচ মিটার ব্যাসবিশিষ্ট দুটি খাড়া সুড়ঙ্গ পথ নির্মাণ করা হয়। একটি সুড়ঙ্গ পথ মালামাল, যন্ত্রপাতি ও শ্রমিক পরিবহণের জন্য ব্যবহূত হয় যার গভীরতা ২৪৩ মিটার এবং অপর সুড়ঙ্গ পথটি ব্যবহূত হয় কঠিন শিলা পরিবহণে যার গভীরতা ২৮৭ মিটার। কেলাসিত ভিত্তিস্তরের উপর ১০০ মিটার থেকে ১৩০ মিটার পুরুত্বের [[ডুপি টিলা স্তরসমষ্টি|ডুপি টিলা স্তরসমষ্টি]] অবস্থান করায় এর মধ্য দিয়ে সুড়ঙ্গ পথ বা শ্যাফট নির্মাণ করতে গিয়ে ব্যয়সাপেক্ষ বিশেষ পদ্ধতি তথা বরফীকরণ (freezing technique) পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়েছে। ভূ-পৃষ্ঠের নিচে ১৭০ মিটার থেকে ২৩০ মিটার গভীরতা থেকে কঠিন শিলা আহরণ করা হবে। মধ্যপাড়া কঠিন শিলার প্রাক্কলিত মজুতের পরিমাণ ১৭২ মিলিয়ন টন এবং উত্তোলনযোগ্য মজুত প্রায় ৭২ মিলিয়ন টন। মধ্যপাড়ার এইসব কঠিন শিলা মূলত নাইস, গ্রানোডায়োরাইট (granodiorite) এবং কোয়ার্টজ ডায়োরাইট (quartz diorite) সহযোগে সৃষ্ট। | মধ্যপাড়া ভূগর্ভস্থ কঠিন শিলা প্রকল্পটি প্রায় ১.৪৪ বর্গ কিমি এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। কঠিন শিলা খনন করা হয় রুম অ্যান্ড পিলার এবং সাব লেভেল স্টোপিং (sub-level stoping) পদ্ধতিতে। খনি স্থাপনের জন্য ২৪০ মিটার ব্যবধানে পাঁচ মিটার ব্যাসবিশিষ্ট দুটি খাড়া সুড়ঙ্গ পথ নির্মাণ করা হয়। একটি সুড়ঙ্গ পথ মালামাল, যন্ত্রপাতি ও শ্রমিক পরিবহণের জন্য ব্যবহূত হয় যার গভীরতা ২৪৩ মিটার এবং অপর সুড়ঙ্গ পথটি ব্যবহূত হয় কঠিন শিলা পরিবহণে যার গভীরতা ২৮৭ মিটার। কেলাসিত ভিত্তিস্তরের উপর ১০০ মিটার থেকে ১৩০ মিটার পুরুত্বের [[ডুপি টিলা স্তরসমষ্টি|ডুপি টিলা স্তরসমষ্টি]] অবস্থান করায় এর মধ্য দিয়ে সুড়ঙ্গ পথ বা শ্যাফট নির্মাণ করতে গিয়ে ব্যয়সাপেক্ষ বিশেষ পদ্ধতি তথা বরফীকরণ (freezing technique) পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়েছে। ভূ-পৃষ্ঠের নিচে ১৭০ মিটার থেকে ২৩০ মিটার গভীরতা থেকে কঠিন শিলা আহরণ করা হবে। মধ্যপাড়া কঠিন শিলার প্রাক্কলিত মজুতের পরিমাণ ১৭২ মিলিয়ন টন এবং উত্তোলনযোগ্য মজুত প্রায় ৭২ মিলিয়ন টন। মধ্যপাড়ার এইসব কঠিন শিলা মূলত নাইস, গ্রানোডায়োরাইট (granodiorite) এবং কোয়ার্টজ ডায়োরাইট (quartz diorite) সহযোগে সৃষ্ট। | ||
'''সঞ্চিত নুড়িপাথরের স্তর''' বাংলাদেশের উত্তর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অংশের বিস্তৃত এলাকা নুড়িপাথর ও কাঁকড়ের স্তর দ্বারা আবৃত। উত্তরে এ নুড়িপাথরের স্তর ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয় লালমনিরহাট জেলার দহগ্রাম, আঙ্গরপোতা, পাটগ্রাম, ডালিয়া, চাপানি, কালীগঞ্জ এবং পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া, ভজনপুর, বোয়ালমারী প্রভৃতি অঞ্চলে। এ অঞ্চলে প্রাপ্ত নুড়িপাথর যথেষ্ট বড় আকৃতির (রেকর্ডকৃত পাথরের সর্বোচ্চ অনুদৈর্ঘ্য সম্প্রসারণ ৩০ সেমি) এবং পাথরগুলি অত্যন্ত মোটা থেকে মধ্যম আকারের বালির স্তরে পর্যায়ক্রমিকভাবে বিন্যস্ত থাকে। এসব পাথর মসৃণ পৃষ্ঠবিশিষ্ট, পরিষ্কার এবং সুগঠিত গোলাকৃতির। এসব নুড়িপাথরের রয়েছে উচ্চমাত্রায় গোলকাকৃতি প্রবণতা। এ নুড়িসমূহ মূলত কোয়ার্টজাইট, গ্রানাইট, নাইস (gneiss) ও সিস্ট (schist) দ্বারা গঠিত এবং গঠনের দিক থেকে হিমালয়ের দার্জিলিং পর্বতশ্রেণীর নুড়িপাথরের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। নুড়িপাথরের এ স্তরসমূহকে নবীন প্লাইসটোসিন যুগে গঠিত পঞ্চগড় বালুকাময় নুড়িপাথর স্তরের সঙ্গে একত্রে দলবদ্ধ করা যেতে পারে এবং এগুলি সবই হলোসিন সময়ের পলল অথবা মিহিবালি, পলিকণা ও কাদামাটি দ্বারা অধিশায়িত। | '''''সঞ্চিত নুড়িপাথরের স্তর''''' বাংলাদেশের উত্তর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অংশের বিস্তৃত এলাকা নুড়িপাথর ও কাঁকড়ের স্তর দ্বারা আবৃত। উত্তরে এ নুড়িপাথরের স্তর ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয় লালমনিরহাট জেলার দহগ্রাম, আঙ্গরপোতা, পাটগ্রাম, ডালিয়া, চাপানি, কালীগঞ্জ এবং পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া, ভজনপুর, বোয়ালমারী প্রভৃতি অঞ্চলে। এ অঞ্চলে প্রাপ্ত নুড়িপাথর যথেষ্ট বড় আকৃতির (রেকর্ডকৃত পাথরের সর্বোচ্চ অনুদৈর্ঘ্য সম্প্রসারণ ৩০ সেমি) এবং পাথরগুলি অত্যন্ত মোটা থেকে মধ্যম আকারের বালির স্তরে পর্যায়ক্রমিকভাবে বিন্যস্ত থাকে। এসব পাথর মসৃণ পৃষ্ঠবিশিষ্ট, পরিষ্কার এবং সুগঠিত গোলাকৃতির। এসব নুড়িপাথরের রয়েছে উচ্চমাত্রায় গোলকাকৃতি প্রবণতা। এ নুড়িসমূহ মূলত কোয়ার্টজাইট, গ্রানাইট, নাইস (gneiss) ও সিস্ট (schist) দ্বারা গঠিত এবং গঠনের দিক থেকে হিমালয়ের দার্জিলিং পর্বতশ্রেণীর নুড়িপাথরের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। নুড়িপাথরের এ স্তরসমূহকে নবীন প্লাইসটোসিন যুগে গঠিত পঞ্চগড় বালুকাময় নুড়িপাথর স্তরের সঙ্গে একত্রে দলবদ্ধ করা যেতে পারে এবং এগুলি সবই হলোসিন সময়ের পলল অথবা মিহিবালি, পলিকণা ও কাদামাটি দ্বারা অধিশায়িত। | ||
পঞ্চগড় বালুকাময় নুড়িপাথর স্তরের অবক্ষেপণের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস এবং পরিবেশ বাস্তবিকই কৌতুহল উদ্দীপক। সর্বশেষ তুষারযুগে (অর্থাৎ ১৮,০০০ বছর পূর্বে) [[হিমালয় পর্বতমালা|হিমালয় পর্বতমালা]] ছিল সুউচ্চ এবং পুরোপুরি বরফাবৃত। তখন হিমবাহসমূহ ছিল পর্বতমালার পাদদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত। সে সময়ে শুষ্ক জলবায়ুগত অবস্থার প্রভাবে বরফগলা পানি, বঙ্গীয় সমভূমির উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কিছু সংকীর্ণ ও গভীর নদীপ্রণালীর মাধ্যমে প্রবাহিত হতো। সর্বশেষ বরফযুগের অন্তিমকালে (নবীন প্লাইসটোসিনের শেষ ভাগে) বর্ষামৌসুমে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃষ্টিপাত ঘটত এবং সেসময় হিমবাহও গলতে শুরু করেছিল। এ গলিত পানি বর্ষার বর্ধিত পানি সহযোগে বঙ্গীয় সমভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হতো। সংকীর্ণ নদীপ্রণালীসমূহ অতিরিক্ত জলভারে নিমজ্জিত হতো এবং উদ্বৃত্ত পানি বরেন্দ্রভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হতো। সেসময়ে বরেন্দ্র ভূগঠনের প্রাথমিক ভূস্তর প্রবাহিত নদীপ্রণালীর দ্বারা কর্তিত হয় এবং উত্তর-দক্ষিণে প্রলম্বিত লোহিত বর্ণের মৃত্তিকা স্তরবিশিষ্ট কয়েকটি দ্বীপাকৃতির ভূখন্ড গঠিত হয় যা বর্তমানকালের বরেন্দ্রভূমির ভূসংস্থানে পরিলক্ষিত হয়। এসব নদীপ্রবাহের মাধ্যমে প্রবাহিত বিপুল জলরাশি পঞ্চগড়-দহগ্রাম-ডালিয়া অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ নুড়িপাথর বহন করে আনে এবং তা পর্বত পাদদেশীয় ভূস্তর হিসেবে সঞ্চয় করে। | পঞ্চগড় বালুকাময় নুড়িপাথর স্তরের অবক্ষেপণের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস এবং পরিবেশ বাস্তবিকই কৌতুহল উদ্দীপক। সর্বশেষ তুষারযুগে (অর্থাৎ ১৮,০০০ বছর পূর্বে) [[হিমালয় পর্বতমালা|হিমালয় পর্বতমালা]] ছিল সুউচ্চ এবং পুরোপুরি বরফাবৃত। তখন হিমবাহসমূহ ছিল পর্বতমালার পাদদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত। সে সময়ে শুষ্ক জলবায়ুগত অবস্থার প্রভাবে বরফগলা পানি, বঙ্গীয় সমভূমির উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কিছু সংকীর্ণ ও গভীর নদীপ্রণালীর মাধ্যমে প্রবাহিত হতো। সর্বশেষ বরফযুগের অন্তিমকালে (নবীন প্লাইসটোসিনের শেষ ভাগে) বর্ষামৌসুমে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃষ্টিপাত ঘটত এবং সেসময় হিমবাহও গলতে শুরু করেছিল। এ গলিত পানি বর্ষার বর্ধিত পানি সহযোগে বঙ্গীয় সমভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হতো। সংকীর্ণ নদীপ্রণালীসমূহ অতিরিক্ত জলভারে নিমজ্জিত হতো এবং উদ্বৃত্ত পানি বরেন্দ্রভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হতো। সেসময়ে বরেন্দ্র ভূগঠনের প্রাথমিক ভূস্তর প্রবাহিত নদীপ্রণালীর দ্বারা কর্তিত হয় এবং উত্তর-দক্ষিণে প্রলম্বিত লোহিত বর্ণের মৃত্তিকা স্তরবিশিষ্ট কয়েকটি দ্বীপাকৃতির ভূখন্ড গঠিত হয় যা বর্তমানকালের বরেন্দ্রভূমির ভূসংস্থানে পরিলক্ষিত হয়। এসব নদীপ্রবাহের মাধ্যমে প্রবাহিত বিপুল জলরাশি পঞ্চগড়-দহগ্রাম-ডালিয়া অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ নুড়িপাথর বহন করে আনে এবং তা পর্বত পাদদেশীয় ভূস্তর হিসেবে সঞ্চয় করে। | ||
১৬ নং লাইন: | ১৬ নং লাইন: | ||
এ ছাড়াও অসংখ্য পাহাড়ি স্রোতধারা পার্বত্য এলাকার নদীর তলদেশে এবং পাহাড়ি এলাকার কাছাকাছি সমভূমিতে নূড়িপাথরের সঞ্চয় গড়ে তুলেছে। এসব পার্বত্য ভূমির অধিকাংশই সিলেট, চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে অবস্থিত। টেকনাফ-কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকায় মাদারবুনিয়া ছড়া এবং রাজার ছড়ার মধ্যবর্তী ভূভাগে সাতটি পৃথক পৃথক নুড়িপাথর স্তরের অবস্থান রয়েছে। এসব নুড়িপাথর [[পলল|পলল]] সৃষ্ট এবং প্রধানত সুরমা এবং টিপাম শিলাদল পললের অন্তর্ভুক্ত। কঠিন শিলার এসকল মজুত থেকে যথাযথভাবে পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে দেশের সড়ক, সেতু, বাঁধ, ভেড়িবাঁধ ইত্যাদি নির্মাণে পাথরের চাহিদা আংশিকভাবে পূরণ হতে পারে। [সিফাতুল কাদের চৌধুরী] | এ ছাড়াও অসংখ্য পাহাড়ি স্রোতধারা পার্বত্য এলাকার নদীর তলদেশে এবং পাহাড়ি এলাকার কাছাকাছি সমভূমিতে নূড়িপাথরের সঞ্চয় গড়ে তুলেছে। এসব পার্বত্য ভূমির অধিকাংশই সিলেট, চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে অবস্থিত। টেকনাফ-কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকায় মাদারবুনিয়া ছড়া এবং রাজার ছড়ার মধ্যবর্তী ভূভাগে সাতটি পৃথক পৃথক নুড়িপাথর স্তরের অবস্থান রয়েছে। এসব নুড়িপাথর [[পলল|পলল]] সৃষ্ট এবং প্রধানত সুরমা এবং টিপাম শিলাদল পললের অন্তর্ভুক্ত। কঠিন শিলার এসকল মজুত থেকে যথাযথভাবে পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে দেশের সড়ক, সেতু, বাঁধ, ভেড়িবাঁধ ইত্যাদি নির্মাণে পাথরের চাহিদা আংশিকভাবে পূরণ হতে পারে। [সিফাতুল কাদের চৌধুরী] | ||
''মানচিত্রের জন্য দেখুন'' [[খনিজ সম্পদ|খনিজ সম্পদ]]। | ''মানচিত্রের জন্য দেখুন'' [[খনিজ সম্পদ|খনিজ সম্পদ]]। | ||
[[en:Hardrock]] | [[en:Hardrock]] |
০৪:৩০, ২১ জুলাই ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
কঠিন শিলা (Hardrock) পাললিক শিলা থেকে পৃথক এবং সাধারণভাবে শক্ত, ঘন, কেলাসিত আগ্নেয় অথবা রূপান্তরিত শিলাকে কঠিন শিলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাংলাদেশে চার ধরনের কঠিন শিলা পাওয়া যায়: (ক) মধ্যপাড়া ভূগর্ভস্থ কঠিন শিলা (খ) ভোলাগঞ্জ-জাফলং এর কঠিন শিলার নুড়ি (গ) তেতুলিয়া-পঞ্চগড়-পাটগ্রাম কঠিন শিলা কনক্রিশন (concretion) এবং (ঘ) চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রামের কনক্রিশন নুড়ি।
মধ্যপাড়া ভূগর্ভস্থ কঠিন শিলা ১৯৭৪-৭৫ সালে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর দিনাজপুর জেলার মধ্যপাড়া নামক স্থানে ও সংলগ্ন এলাকায় ছয়টি কূপ খনন করে এবং ভূ-পৃষ্ঠের অতি অল্প গভীরতায় পুরাজীবীয় যুগের কেলাসিত ভিত্তিস্তরে (Precambrian Crystalline Basement) কঠিন শিলার অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। এ সকল কূপে ভূ-পৃষ্ঠের ১২৮ মিটার থেকে ১৫৪ মিটার গভীরতায় পুরাজীবীয় কঠিন শিলা পাওয়া যায়। মধ্যপাড়ার জি.ডি.এইচ-২৪ নং (Geological Drill Hole or GDH) কূপে ১২৮ মিটার গভীরতার কঠিন শিলার অবস্থানটি চিহ্নিত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনন ও উত্তোলন প্রকল্পের কারিগরি ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করার লক্ষ্যে এস.এন.সি (Surveyor Nenniger and Chenvert) নামক কানাডীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করে। ১৯৭৭ সালে সমীক্ষা শেষে এস.এন.সি মত প্রকাশ করে যে, এ প্রকল্প কারিগরি এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে নিরাপদ এবং লাভজনক হবে। ১৯৭৮ সালে সরকার কঠিন শিলা উৎপাদনের লক্ষ্যে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি প্রকল্প অনুমোদন করে। প্রকল্পটিতে অর্থায়নের জন্য ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সরকার উত্তর কোরিয়া সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পেট্রোবাংলা এবং উত্তর কোরিয়া সরকারের পক্ষে ন্যাম ন্যাম (NAM NAM) নামক কোম্পানি চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ১৯৯৪ সালের প্রথমদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয়।
মধ্যপাড়া ভূগর্ভস্থ কঠিন শিলা প্রকল্পটি প্রায় ১.৪৪ বর্গ কিমি এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। কঠিন শিলা খনন করা হয় রুম অ্যান্ড পিলার এবং সাব লেভেল স্টোপিং (sub-level stoping) পদ্ধতিতে। খনি স্থাপনের জন্য ২৪০ মিটার ব্যবধানে পাঁচ মিটার ব্যাসবিশিষ্ট দুটি খাড়া সুড়ঙ্গ পথ নির্মাণ করা হয়। একটি সুড়ঙ্গ পথ মালামাল, যন্ত্রপাতি ও শ্রমিক পরিবহণের জন্য ব্যবহূত হয় যার গভীরতা ২৪৩ মিটার এবং অপর সুড়ঙ্গ পথটি ব্যবহূত হয় কঠিন শিলা পরিবহণে যার গভীরতা ২৮৭ মিটার। কেলাসিত ভিত্তিস্তরের উপর ১০০ মিটার থেকে ১৩০ মিটার পুরুত্বের ডুপি টিলা স্তরসমষ্টি অবস্থান করায় এর মধ্য দিয়ে সুড়ঙ্গ পথ বা শ্যাফট নির্মাণ করতে গিয়ে ব্যয়সাপেক্ষ বিশেষ পদ্ধতি তথা বরফীকরণ (freezing technique) পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়েছে। ভূ-পৃষ্ঠের নিচে ১৭০ মিটার থেকে ২৩০ মিটার গভীরতা থেকে কঠিন শিলা আহরণ করা হবে। মধ্যপাড়া কঠিন শিলার প্রাক্কলিত মজুতের পরিমাণ ১৭২ মিলিয়ন টন এবং উত্তোলনযোগ্য মজুত প্রায় ৭২ মিলিয়ন টন। মধ্যপাড়ার এইসব কঠিন শিলা মূলত নাইস, গ্রানোডায়োরাইট (granodiorite) এবং কোয়ার্টজ ডায়োরাইট (quartz diorite) সহযোগে সৃষ্ট।
সঞ্চিত নুড়িপাথরের স্তর বাংলাদেশের উত্তর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অংশের বিস্তৃত এলাকা নুড়িপাথর ও কাঁকড়ের স্তর দ্বারা আবৃত। উত্তরে এ নুড়িপাথরের স্তর ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয় লালমনিরহাট জেলার দহগ্রাম, আঙ্গরপোতা, পাটগ্রাম, ডালিয়া, চাপানি, কালীগঞ্জ এবং পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া, ভজনপুর, বোয়ালমারী প্রভৃতি অঞ্চলে। এ অঞ্চলে প্রাপ্ত নুড়িপাথর যথেষ্ট বড় আকৃতির (রেকর্ডকৃত পাথরের সর্বোচ্চ অনুদৈর্ঘ্য সম্প্রসারণ ৩০ সেমি) এবং পাথরগুলি অত্যন্ত মোটা থেকে মধ্যম আকারের বালির স্তরে পর্যায়ক্রমিকভাবে বিন্যস্ত থাকে। এসব পাথর মসৃণ পৃষ্ঠবিশিষ্ট, পরিষ্কার এবং সুগঠিত গোলাকৃতির। এসব নুড়িপাথরের রয়েছে উচ্চমাত্রায় গোলকাকৃতি প্রবণতা। এ নুড়িসমূহ মূলত কোয়ার্টজাইট, গ্রানাইট, নাইস (gneiss) ও সিস্ট (schist) দ্বারা গঠিত এবং গঠনের দিক থেকে হিমালয়ের দার্জিলিং পর্বতশ্রেণীর নুড়িপাথরের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। নুড়িপাথরের এ স্তরসমূহকে নবীন প্লাইসটোসিন যুগে গঠিত পঞ্চগড় বালুকাময় নুড়িপাথর স্তরের সঙ্গে একত্রে দলবদ্ধ করা যেতে পারে এবং এগুলি সবই হলোসিন সময়ের পলল অথবা মিহিবালি, পলিকণা ও কাদামাটি দ্বারা অধিশায়িত।
পঞ্চগড় বালুকাময় নুড়িপাথর স্তরের অবক্ষেপণের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস এবং পরিবেশ বাস্তবিকই কৌতুহল উদ্দীপক। সর্বশেষ তুষারযুগে (অর্থাৎ ১৮,০০০ বছর পূর্বে) হিমালয় পর্বতমালা ছিল সুউচ্চ এবং পুরোপুরি বরফাবৃত। তখন হিমবাহসমূহ ছিল পর্বতমালার পাদদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত। সে সময়ে শুষ্ক জলবায়ুগত অবস্থার প্রভাবে বরফগলা পানি, বঙ্গীয় সমভূমির উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কিছু সংকীর্ণ ও গভীর নদীপ্রণালীর মাধ্যমে প্রবাহিত হতো। সর্বশেষ বরফযুগের অন্তিমকালে (নবীন প্লাইসটোসিনের শেষ ভাগে) বর্ষামৌসুমে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃষ্টিপাত ঘটত এবং সেসময় হিমবাহও গলতে শুরু করেছিল। এ গলিত পানি বর্ষার বর্ধিত পানি সহযোগে বঙ্গীয় সমভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হতো। সংকীর্ণ নদীপ্রণালীসমূহ অতিরিক্ত জলভারে নিমজ্জিত হতো এবং উদ্বৃত্ত পানি বরেন্দ্রভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হতো। সেসময়ে বরেন্দ্র ভূগঠনের প্রাথমিক ভূস্তর প্রবাহিত নদীপ্রণালীর দ্বারা কর্তিত হয় এবং উত্তর-দক্ষিণে প্রলম্বিত লোহিত বর্ণের মৃত্তিকা স্তরবিশিষ্ট কয়েকটি দ্বীপাকৃতির ভূখন্ড গঠিত হয় যা বর্তমানকালের বরেন্দ্রভূমির ভূসংস্থানে পরিলক্ষিত হয়। এসব নদীপ্রবাহের মাধ্যমে প্রবাহিত বিপুল জলরাশি পঞ্চগড়-দহগ্রাম-ডালিয়া অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ নুড়িপাথর বহন করে আনে এবং তা পর্বত পাদদেশীয় ভূস্তর হিসেবে সঞ্চয় করে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত সিলেট জেলার জৈন্তিয়াপুর-ভোলাগঞ্জ এলাকায় যথেষ্ট নুড়িপাথরের মজুত পরিলক্ষিত হয়। এ অঞ্চলে নুড়িপাথর স্তর দুটি শিলাস্তরীয় উপ-এককে বিভক্ত: পুরাতন উপ-একক (উচ্চ সোপানভূমি) এবং নবীন উপ-একক (নিম্ন সোপানভূমি)। পুরাতন উপ-এককটি জৈন্তিয়াপুর এলাকা ও বিন্দাটিলা জুড়ে বিস্তৃত। পর্বতচূড়া বহুল এ অঞ্চলটির নামকরণ করা হয়েছে ‘সোনা টিলা নুড়িস্তর’। একইভাবে ভোলাগঞ্জ এলাকার নবীন উপ-অঞ্চল এবং বর্তমানকালের নদীপ্রণালীর নদী তলদেশে সঞ্চিত নুড়িস্তরের নামকরণ করা হয়েছে ‘ভোলাগঞ্জ নুড়িস্তর’। উভয় উপ-অঞ্চলই ডিহিং স্তরসমষ্টির অন্তর্ভুক্ত।
সোনা টিলা নুড়িস্তর প্রবীন প্লাইসটোসিন সিরিজের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ এবং মধুপুর কর্দম স্তরসমষ্টির অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে ভোলাগঞ্জ নুড়িস্তর নবীন প্লাইসটোসিন থেকে হলোসিন সিরিজের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। খাসিয়া জৈন্তিয়া পর্বতসারি এলাকা থেকে উৎপন্ন প্রথম উপ-এককের নুড়িপাথর বিবর্ণ, বিশ্লিষ্ট এবং পরবর্তী উপ-এককের নুড়িপাথর কঠিন, সুগঠিত এবং উচ্চ মান সম্বলিত। উভয় উপ-এককের নুড়িস্তর আগ্নেয় এবং রূপান্তরিত শিলা সৃষ্ট। এসব পাথরের রয়েছে উচ্চমাত্রার বর্তুল প্রবণতা যা মূলত দীর্ঘ পরিবহণ এবং দীর্ঘ সময় জুড়ে ঘর্ষণের সাক্ষ্য বহন করে। নদীবাহিত উপাদানের সঞ্চয়নের ফলে এ নুড়িস্তরের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ছাড়াও অসংখ্য পাহাড়ি স্রোতধারা পার্বত্য এলাকার নদীর তলদেশে এবং পাহাড়ি এলাকার কাছাকাছি সমভূমিতে নূড়িপাথরের সঞ্চয় গড়ে তুলেছে। এসব পার্বত্য ভূমির অধিকাংশই সিলেট, চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে অবস্থিত। টেকনাফ-কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকায় মাদারবুনিয়া ছড়া এবং রাজার ছড়ার মধ্যবর্তী ভূভাগে সাতটি পৃথক পৃথক নুড়িপাথর স্তরের অবস্থান রয়েছে। এসব নুড়িপাথর পলল সৃষ্ট এবং প্রধানত সুরমা এবং টিপাম শিলাদল পললের অন্তর্ভুক্ত। কঠিন শিলার এসকল মজুত থেকে যথাযথভাবে পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে দেশের সড়ক, সেতু, বাঁধ, ভেড়িবাঁধ ইত্যাদি নির্মাণে পাথরের চাহিদা আংশিকভাবে পূরণ হতে পারে। [সিফাতুল কাদের চৌধুরী]
মানচিত্রের জন্য দেখুন খনিজ সম্পদ।