খাঁ, ওস্তাদ আয়েত আলী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Image:KhanUstadAyetAli.jpg|thumb|right|আয়েত আলী খাঁ]]
'''খাঁ, ওস্তাদ আয়েত আলী''' (১৮৮৪-১৯৬৭)   [[উচ্চাঙ্গসঙ্গীত|উচ্চাঙ্গসঙ্গীত]] শিল্পী। ১৮৮৪ সালের ২৬ এপ্রিল  ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার শিবপুর গ্রামে এক বিখ্যাত সঙ্গীত পরিবারে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা সবদর হোসেন খাঁও (সদু খাঁ) একজন সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। দশ বছর বয়সে আয়েত আলী অগ্রজ ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁর নিকট সঙ্গীতশিক্ষা শুরু করেন। দীর্ঘ সাত বছর সরগম সাধনা আর রাগ-রাগিণী রেওয়াজ করার পর তিনি ভারতের মাইহারে গিয়ে অপর অগ্রজ আলাউদ্দিন খাঁর নিকট সঙ্গীতে তালিম নেন। প্রথম পর্বে তিনি  [[সেতার|সেতার]] এবং দ্বিতীয় পর্বে সুরবাহার শেখেন।  [[খাঁ, ওস্তাদ আলাউদ্দিন|আলাউদ্দিন খাঁ]] কনিষ্ঠ ভ্রাতার মধ্যে রাগ-আলাপে আকর্ষণ ও নিষ্ঠা দেখে যত্নের সঙ্গে তাঁকে সুরবাহার শেখান। আয়েত আলীও অগ্রজের নির্দেশ অনুযায়ী এর বাদনকৌশল ও রাগ রূপায়ণের সূক্ষ্ম বিষয়গুলি নিষ্ঠার সঙ্গে আয়ত্ত করেন। পরে আলাউদ্দিন খাঁ তাঁকে নিজগুরু ওস্তাদ ওয়াজির খাঁর নিকট রামপুরে পাঠিয়ে দেন। ঐকান্তিক নিষ্ঠা ও একাগ্রতার ফলে আয়েত আলী ওস্তাদের মন জয় করতে সক্ষম হন এবং তাঁর নিকট দীর্ঘ তেরো বছর শিক্ষাগ্রহণ করেন।
'''খাঁ, ওস্তাদ আয়েত আলী''' (১৮৮৪-১৯৬৭)   [[উচ্চাঙ্গসঙ্গীত|উচ্চাঙ্গসঙ্গীত]] শিল্পী। ১৮৮৪ সালের ২৬ এপ্রিল  ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার শিবপুর গ্রামে এক বিখ্যাত সঙ্গীত পরিবারে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা সবদর হোসেন খাঁও (সদু খাঁ) একজন সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। দশ বছর বয়সে আয়েত আলী অগ্রজ ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁর নিকট সঙ্গীতশিক্ষা শুরু করেন। দীর্ঘ সাত বছর সরগম সাধনা আর রাগ-রাগিণী রেওয়াজ করার পর তিনি ভারতের মাইহারে গিয়ে অপর অগ্রজ আলাউদ্দিন খাঁর নিকট সঙ্গীতে তালিম নেন। প্রথম পর্বে তিনি  [[সেতার|সেতার]] এবং দ্বিতীয় পর্বে সুরবাহার শেখেন।  [[খাঁ, ওস্তাদ আলাউদ্দিন|আলাউদ্দিন খাঁ]] কনিষ্ঠ ভ্রাতার মধ্যে রাগ-আলাপে আকর্ষণ ও নিষ্ঠা দেখে যত্নের সঙ্গে তাঁকে সুরবাহার শেখান। আয়েত আলীও অগ্রজের নির্দেশ অনুযায়ী এর বাদনকৌশল ও রাগ রূপায়ণের সূক্ষ্ম বিষয়গুলি নিষ্ঠার সঙ্গে আয়ত্ত করেন। পরে আলাউদ্দিন খাঁ তাঁকে নিজগুরু ওস্তাদ ওয়াজির খাঁর নিকট রামপুরে পাঠিয়ে দেন। ঐকান্তিক নিষ্ঠা ও একাগ্রতার ফলে আয়েত আলী ওস্তাদের মন জয় করতে সক্ষম হন এবং তাঁর নিকট দীর্ঘ তেরো বছর শিক্ষাগ্রহণ করেন।


শিক্ষা সমাপনান্তে আয়েত আলী মাইহার রাজ্যের সভাবাদকরূপে কর্মজীবন শুরু করেন। মহারাজ তাঁর আসন নির্দিষ্ট করেন অগ্রজ আলাউদ্দিন খাঁর পাশেই। এ সময় দু ভাই প্রাচ্যদেশীয় যন্ত্রসমন্বয়ে একটা  [[অর্কেস্ট্রা|অর্কেস্ট্রা]] দল গঠন করে প্রমাণ করেন যে, এ দেশের বাদ্যযন্ত্রের কনসার্ট পাশ্চাত্যের অর্কেস্ট্রার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। আয়েত আলী পরে রামপুরের রাজদরবারও অলঙ্কৃত করেন। ১৯৩৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমন্ত্রণে তিনি  [[শান্তিনিকেতন|শান্তিনিকেতন]] যান এবং বিশ্বভারতীর  [[যন্ত্রসঙ্গীত|যন্ত্রসঙ্গীত]] বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন; কিন্তু কয়েক মাস অধ্যাপনা করার পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে চাকরি ছেড়ে তিনি স্বগ্রামে চলে আসেন। এরপর থেকে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি এখানেই সঙ্গীতের সাধনা ও প্রসারে অতিবাহিত করেন।
শিক্ষা সমাপনান্তে আয়েত আলী মাইহার রাজ্যের সভাবাদকরূপে কর্মজীবন শুরু করেন। মহারাজ তাঁর আসন নির্দিষ্ট করেন অগ্রজ আলাউদ্দিন খাঁর পাশেই। এ সময় দু ভাই প্রাচ্যদেশীয় যন্ত্রসমন্বয়ে একটা  [[অর্কেস্ট্রা|অর্কেস্ট্রা]] দল গঠন করে প্রমাণ করেন যে, এ দেশের বাদ্যযন্ত্রের কনসার্ট পাশ্চাত্যের অর্কেস্ট্রার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। আয়েত আলী পরে রামপুরের রাজদরবারও অলঙ্কৃত করেন। ১৯৩৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমন্ত্রণে তিনি  [[শান্তিনিকেতন|শান্তিনিকেতন]] যান এবং বিশ্বভারতীর  [[যন্ত্রসঙ্গীত|যন্ত্রসঙ্গীত]] বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন; কিন্তু কয়েক মাস অধ্যাপনা করার পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে চাকরি ছেড়ে তিনি স্বগ্রামে চলে আসেন। এরপর থেকে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি এখানেই সঙ্গীতের সাধনা ও প্রসারে অতিবাহিত করেন।
[[Image:KhanUstadAyetAli.jpg|thumb|right|আয়েত আলী খাঁ]]


উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের ঐতিহ্যবাহী ধারাকে সচল রাখা, নতুনদের এর প্রতি আকৃষ্ট করা এবং বিশেষভাবে যন্ত্রবাদনের ক্ষেত্রে আয়েত আলীর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘আলম ব্রাদার্স’ নামে একটি  [[বাদ্যযন্ত্র|বাদ্যযন্ত্র]] তৈরির কারখানা খুলে গবেষণার মাধ্যমে কয়েকটি নতুন বাদ্যযন্ত্রও উদ্ভাবন করেন। মনোহরা ও মন্দ্রনাদ বাদ্যযন্ত্রদুটি তাঁর সৃষ্টি। তিনি সুরবাহার ও সরোদ যন্ত্রেরও নতুন রূপ দেন। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর পরামর্শে তিনি চন্দ্রসারং যন্ত্রটিও তৈরি করেন। তিনি বারিষ, হেমন্তিকা, আওল-বসন্ত, ওমর-সোহাগ, শিব-বেহাগ, বসন্ত-ভৈরোঁ, মিশ্র সারং প্রভৃতি রাগেরও স্রষ্টা।
উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের ঐতিহ্যবাহী ধারাকে সচল রাখা, নতুনদের এর প্রতি আকৃষ্ট করা এবং বিশেষভাবে যন্ত্রবাদনের ক্ষেত্রে আয়েত আলীর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘আলম ব্রাদার্স’ নামে একটি  [[বাদ্যযন্ত্র|বাদ্যযন্ত্র]] তৈরির কারখানা খুলে গবেষণার মাধ্যমে কয়েকটি নতুন বাদ্যযন্ত্রও উদ্ভাবন করেন। মনোহরা ও মন্দ্রনাদ বাদ্যযন্ত্রদুটি তাঁর সৃষ্টি। তিনি সুরবাহার ও সরোদ যন্ত্রেরও নতুন রূপ দেন। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর পরামর্শে তিনি চন্দ্রসারং যন্ত্রটিও তৈরি করেন। তিনি বারিষ, হেমন্তিকা, আওল-বসন্ত, ওমর-সোহাগ, শিব-বেহাগ, বসন্ত-ভৈরোঁ, মিশ্র সারং প্রভৃতি রাগেরও স্রষ্টা।

০৬:০১, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

আয়েত আলী খাঁ

খাঁ, ওস্তাদ আয়েত আলী (১৮৮৪-১৯৬৭)   উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিল্পী। ১৮৮৪ সালের ২৬ এপ্রিল  ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার শিবপুর গ্রামে এক বিখ্যাত সঙ্গীত পরিবারে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা সবদর হোসেন খাঁও (সদু খাঁ) একজন সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। দশ বছর বয়সে আয়েত আলী অগ্রজ ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁর নিকট সঙ্গীতশিক্ষা শুরু করেন। দীর্ঘ সাত বছর সরগম সাধনা আর রাগ-রাগিণী রেওয়াজ করার পর তিনি ভারতের মাইহারে গিয়ে অপর অগ্রজ আলাউদ্দিন খাঁর নিকট সঙ্গীতে তালিম নেন। প্রথম পর্বে তিনি  সেতার এবং দ্বিতীয় পর্বে সুরবাহার শেখেন।  আলাউদ্দিন খাঁ কনিষ্ঠ ভ্রাতার মধ্যে রাগ-আলাপে আকর্ষণ ও নিষ্ঠা দেখে যত্নের সঙ্গে তাঁকে সুরবাহার শেখান। আয়েত আলীও অগ্রজের নির্দেশ অনুযায়ী এর বাদনকৌশল ও রাগ রূপায়ণের সূক্ষ্ম বিষয়গুলি নিষ্ঠার সঙ্গে আয়ত্ত করেন। পরে আলাউদ্দিন খাঁ তাঁকে নিজগুরু ওস্তাদ ওয়াজির খাঁর নিকট রামপুরে পাঠিয়ে দেন। ঐকান্তিক নিষ্ঠা ও একাগ্রতার ফলে আয়েত আলী ওস্তাদের মন জয় করতে সক্ষম হন এবং তাঁর নিকট দীর্ঘ তেরো বছর শিক্ষাগ্রহণ করেন।

শিক্ষা সমাপনান্তে আয়েত আলী মাইহার রাজ্যের সভাবাদকরূপে কর্মজীবন শুরু করেন। মহারাজ তাঁর আসন নির্দিষ্ট করেন অগ্রজ আলাউদ্দিন খাঁর পাশেই। এ সময় দু ভাই প্রাচ্যদেশীয় যন্ত্রসমন্বয়ে একটা  অর্কেস্ট্রা দল গঠন করে প্রমাণ করেন যে, এ দেশের বাদ্যযন্ত্রের কনসার্ট পাশ্চাত্যের অর্কেস্ট্রার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। আয়েত আলী পরে রামপুরের রাজদরবারও অলঙ্কৃত করেন। ১৯৩৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমন্ত্রণে তিনি  শান্তিনিকেতন যান এবং বিশ্বভারতীর  যন্ত্রসঙ্গীত বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন; কিন্তু কয়েক মাস অধ্যাপনা করার পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে চাকরি ছেড়ে তিনি স্বগ্রামে চলে আসেন। এরপর থেকে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি এখানেই সঙ্গীতের সাধনা ও প্রসারে অতিবাহিত করেন।

উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের ঐতিহ্যবাহী ধারাকে সচল রাখা, নতুনদের এর প্রতি আকৃষ্ট করা এবং বিশেষভাবে যন্ত্রবাদনের ক্ষেত্রে আয়েত আলীর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘আলম ব্রাদার্স’ নামে একটি  বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারখানা খুলে গবেষণার মাধ্যমে কয়েকটি নতুন বাদ্যযন্ত্রও উদ্ভাবন করেন। মনোহরা ও মন্দ্রনাদ বাদ্যযন্ত্রদুটি তাঁর সৃষ্টি। তিনি সুরবাহার ও সরোদ যন্ত্রেরও নতুন রূপ দেন। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর পরামর্শে তিনি চন্দ্রসারং যন্ত্রটিও তৈরি করেন। তিনি বারিষ, হেমন্তিকা, আওল-বসন্ত, ওমর-সোহাগ, শিব-বেহাগ, বসন্ত-ভৈরোঁ, মিশ্র সারং প্রভৃতি রাগেরও স্রষ্টা।

বিশুদ্ধ রাগসঙ্গীতের চর্চা, সংরক্ষণ ও প্রসারের জন্য আয়েত আলী খাঁ ১৯৪৮ সালে কুমিল্লায় এবং ১৯৫৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আলাউদ্দিন মিউজিক কলেজ নামে দুটি সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। ১৯৫১ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান রেডিওতে নিয়মিত সুরবাহার পরিবেশন করেন। সঙ্গীতে অসাধারণ কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি গভর্নর পদক (১৯৬০), পাকিস্তান সরকারের তমঘা-ই-ইমতিয়াজ খেতাব (১৯৬১), রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাইড অব পারফরম্যান্স (১৯৬৬), বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী (মরণোত্তর, ১৯৭৬) এবং স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (মরণোত্তর, ১৯৮৪) লাভ করেন। ১৯৬৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।  [মোবারক হোসেন খান]