মিল, জেমস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
[[Image:MillJames.jpg|thumb|right|400px|জেমস মিল]] | |||
'''মিল, জেমস '''(১৭৭৩-১৮৩৬) স্কটিশ ঐতিহাসিক, অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক এবং ভারত বিষয়ক ঐতিহাসিক গ্রন্থ ‘History of British India’ এর প্রণেতা। স্কটল্যান্ডের আঙ্গাসের যাজকীয় শহর নর্থওয়াটার ব্রিজ এলাকায় ৬ এপ্রিল ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর জন্ম। জুতা প্রস্ত্ততকারক বাবার নামও ছিল জেমস মিল এবং মা ইসাবেল ফেন্টন। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার উদ্দেশে মিলকে যাজকীয় বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। পরে তিনি মন্ট্রস একাডেমীতে পড়াশুনা করেন। সতের বছর ছয় মাস বয়সে মিল এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হন এবং সেখানে একজন গ্রিক পন্ডিত হিসেবে নিজের স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেন। ১৭৯০ থেকে ১৮০২ পর্যন্ত মিল দর্শন ও ইতিহাস চর্চায় নিমগ্ন ছিলেন। স্কটল্যান্ডের পেশাগত উন্নতির সম্ভাবনা সীমাবদ্ধ ছিল বিধায় তিনি ১৮০২ সালে তৎকালীন কিনকারডায়ানশায়ারের পার্লামেন্ট মেম্বার স্যার জন স্টুয়ার্টের সঙ্গী হয়ে লন্ডনে যান এবং সেখানে লেখক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। মানুষের জ্ঞানচর্চার উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন বিভাগের উদ্দেশে নিয়ে কাজ করে ‘Literary Journal’ নামক এক প্রগতিশীল সাময়িকপত্রের সম্পাদক হিসেবে তিনি ১৮০৩ থেকে ১৮০৬ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। পাশাপাশি তিনি ‘St James's Chronicle’-এর সম্পাদনার কাজও চালিয়ে যান। ১৮০৫ সালের শেষাবধি মিল তাঁর ‘History of British India’ গ্রন্থ রচনার কাজ শুরু করেন এবং প্রায় বারো বছর পর তিনি এ বইয়ের কাজ সম্পন্ন করেন। | '''মিল, জেমস '''(১৭৭৩-১৮৩৬) স্কটিশ ঐতিহাসিক, অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক এবং ভারত বিষয়ক ঐতিহাসিক গ্রন্থ ‘History of British India’ এর প্রণেতা। স্কটল্যান্ডের আঙ্গাসের যাজকীয় শহর নর্থওয়াটার ব্রিজ এলাকায় ৬ এপ্রিল ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর জন্ম। জুতা প্রস্ত্ততকারক বাবার নামও ছিল জেমস মিল এবং মা ইসাবেল ফেন্টন। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার উদ্দেশে মিলকে যাজকীয় বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। পরে তিনি মন্ট্রস একাডেমীতে পড়াশুনা করেন। সতের বছর ছয় মাস বয়সে মিল এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হন এবং সেখানে একজন গ্রিক পন্ডিত হিসেবে নিজের স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেন। ১৭৯০ থেকে ১৮০২ পর্যন্ত মিল দর্শন ও ইতিহাস চর্চায় নিমগ্ন ছিলেন। স্কটল্যান্ডের পেশাগত উন্নতির সম্ভাবনা সীমাবদ্ধ ছিল বিধায় তিনি ১৮০২ সালে তৎকালীন কিনকারডায়ানশায়ারের পার্লামেন্ট মেম্বার স্যার জন স্টুয়ার্টের সঙ্গী হয়ে লন্ডনে যান এবং সেখানে লেখক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। মানুষের জ্ঞানচর্চার উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন বিভাগের উদ্দেশে নিয়ে কাজ করে ‘Literary Journal’ নামক এক প্রগতিশীল সাময়িকপত্রের সম্পাদক হিসেবে তিনি ১৮০৩ থেকে ১৮০৬ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। পাশাপাশি তিনি ‘St James's Chronicle’-এর সম্পাদনার কাজও চালিয়ে যান। ১৮০৫ সালের শেষাবধি মিল তাঁর ‘History of British India’ গ্রন্থ রচনার কাজ শুরু করেন এবং প্রায় বারো বছর পর তিনি এ বইয়ের কাজ সম্পন্ন করেন। | ||
৫ নং লাইন: | ৬ নং লাইন: | ||
১৮১৭ সালে ‘The History of Bristish India’ প্রকাশ হওয়ার পর জেমস মিল তাঁর পেশাগত এবং লেখক জীবনের বড় সাফল্য অর্জন করেন। একই বছর তিনি ‘India House’-এ ভারত বিষয়ক পরীক্ষা বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে তিনি একই বিভাগের প্রধান হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। মিল লন্ডনে ‘Political Economy Club’ প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেন। | ১৮১৭ সালে ‘The History of Bristish India’ প্রকাশ হওয়ার পর জেমস মিল তাঁর পেশাগত এবং লেখক জীবনের বড় সাফল্য অর্জন করেন। একই বছর তিনি ‘India House’-এ ভারত বিষয়ক পরীক্ষা বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে তিনি একই বিভাগের প্রধান হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। মিল লন্ডনে ‘Political Economy Club’ প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেন। | ||
জেমস মিল ছিলেন বেনথামের (Jeremy Bentham) দর্শনের একজন অন্ধ অনুসারী। সে কারণেই ১৮২৪ থেকে ১৮২৬ সাল পর্যন্ত দর্শনশাস্ত্রীয় কাঠামোর মূল অংশ ‘Westminister Review’ এর প্রতিষ্ঠায় তিনি সহযোগিতা করেন এবং বেনথামের মতো তিনিও বিশ্বাস করতেন যে, প্রত্যেক মানুষকে তার ব্যক্তিগত আগ্রহের ভিত্তিতেই শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। ১৮৩১-১৮৩৩ সময়ে তিনি [[কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স|কোর্ট অব ডাইরেক্টর]] এর মুখপাত্র হিসেবে তাঁর দপ্তর থেকে [[ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি|ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ]]এর ভারতে অবস্থানের সময়সীমা পুনঃনির্ধারণের বিতর্কে কার্যকর ভূমিকা রাখেন। কোম্পানির পক্ষেই তিনি তাঁর বক্তব্য প্রদান করেন। ১৮২৫ সালে তিনি ‘লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেন। | জেমস মিল ছিলেন বেনথামের (Jeremy Bentham) দর্শনের একজন অন্ধ অনুসারী। সে কারণেই ১৮২৪ থেকে ১৮২৬ সাল পর্যন্ত দর্শনশাস্ত্রীয় কাঠামোর মূল অংশ ‘Westminister Review’ এর প্রতিষ্ঠায় তিনি সহযোগিতা করেন এবং বেনথামের মতো তিনিও বিশ্বাস করতেন যে, প্রত্যেক মানুষকে তার ব্যক্তিগত আগ্রহের ভিত্তিতেই শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। ১৮৩১-১৮৩৩ সময়ে তিনি [[কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স|কোর্ট অব ডাইরেক্টর]] এর মুখপাত্র হিসেবে তাঁর দপ্তর থেকে [[ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি|ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ]]এর ভারতে অবস্থানের সময়সীমা পুনঃনির্ধারণের বিতর্কে কার্যকর ভূমিকা রাখেন। কোম্পানির পক্ষেই তিনি তাঁর বক্তব্য প্রদান করেন। ১৮২৫ সালে তিনি ‘লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেন। |
০৪:৩৩, ৫ আগস্ট ২০২১ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
মিল, জেমস (১৭৭৩-১৮৩৬) স্কটিশ ঐতিহাসিক, অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক এবং ভারত বিষয়ক ঐতিহাসিক গ্রন্থ ‘History of British India’ এর প্রণেতা। স্কটল্যান্ডের আঙ্গাসের যাজকীয় শহর নর্থওয়াটার ব্রিজ এলাকায় ৬ এপ্রিল ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর জন্ম। জুতা প্রস্ত্ততকারক বাবার নামও ছিল জেমস মিল এবং মা ইসাবেল ফেন্টন। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার উদ্দেশে মিলকে যাজকীয় বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। পরে তিনি মন্ট্রস একাডেমীতে পড়াশুনা করেন। সতের বছর ছয় মাস বয়সে মিল এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হন এবং সেখানে একজন গ্রিক পন্ডিত হিসেবে নিজের স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেন। ১৭৯০ থেকে ১৮০২ পর্যন্ত মিল দর্শন ও ইতিহাস চর্চায় নিমগ্ন ছিলেন। স্কটল্যান্ডের পেশাগত উন্নতির সম্ভাবনা সীমাবদ্ধ ছিল বিধায় তিনি ১৮০২ সালে তৎকালীন কিনকারডায়ানশায়ারের পার্লামেন্ট মেম্বার স্যার জন স্টুয়ার্টের সঙ্গী হয়ে লন্ডনে যান এবং সেখানে লেখক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। মানুষের জ্ঞানচর্চার উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন বিভাগের উদ্দেশে নিয়ে কাজ করে ‘Literary Journal’ নামক এক প্রগতিশীল সাময়িকপত্রের সম্পাদক হিসেবে তিনি ১৮০৩ থেকে ১৮০৬ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। পাশাপাশি তিনি ‘St James's Chronicle’-এর সম্পাদনার কাজও চালিয়ে যান। ১৮০৫ সালের শেষাবধি মিল তাঁর ‘History of British India’ গ্রন্থ রচনার কাজ শুরু করেন এবং প্রায় বারো বছর পর তিনি এ বইয়ের কাজ সম্পন্ন করেন।
১৮১৩ সালে মিল তাঁর গুরুত্বপূর্ণ রচনা ‘Money and Exchange’-এর কাজ শেষ করেন। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রচনা সমূহের মধ্যে রয়েছে- Spanish America, China, Francisco de Miranda, the East India Company এবং Liberty of the Press.
১৮১৭ সালে ‘The History of Bristish India’ প্রকাশ হওয়ার পর জেমস মিল তাঁর পেশাগত এবং লেখক জীবনের বড় সাফল্য অর্জন করেন। একই বছর তিনি ‘India House’-এ ভারত বিষয়ক পরীক্ষা বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে তিনি একই বিভাগের প্রধান হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। মিল লন্ডনে ‘Political Economy Club’ প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেন।
জেমস মিল ছিলেন বেনথামের (Jeremy Bentham) দর্শনের একজন অন্ধ অনুসারী। সে কারণেই ১৮২৪ থেকে ১৮২৬ সাল পর্যন্ত দর্শনশাস্ত্রীয় কাঠামোর মূল অংশ ‘Westminister Review’ এর প্রতিষ্ঠায় তিনি সহযোগিতা করেন এবং বেনথামের মতো তিনিও বিশ্বাস করতেন যে, প্রত্যেক মানুষকে তার ব্যক্তিগত আগ্রহের ভিত্তিতেই শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। ১৮৩১-১৮৩৩ সময়ে তিনি কোর্ট অব ডাইরেক্টর এর মুখপাত্র হিসেবে তাঁর দপ্তর থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এর ভারতে অবস্থানের সময়সীমা পুনঃনির্ধারণের বিতর্কে কার্যকর ভূমিকা রাখেন। কোম্পানির পক্ষেই তিনি তাঁর বক্তব্য প্রদান করেন। ১৮২৫ সালে তিনি ‘লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেন।
জেমস মিল-এর গুরুত্বপূর্ণ রচনা ‘History of British India’ (Vol-3) গ্রন্থের মাধ্যমেই তিনি ভারতের হিন্দু সভ্যতায় ব্রিটিশ উপনিবেশের প্রশাসনিক ভূমিকার ব্যাপক সমালোচনা করেন। ফলে পরবর্তী প্রায় সতেরো বছর ভারত উপনিবেশের শাসন পরিচালনায় ব্রিটিশ সরকারের ভূমিকায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। তিনি ফরাসি বিপ্লবের দার্শনিক তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন এবং মনে করতেন যে, সাধারণ মানুষ ও সরকার ব্যবস্থার ভালো দিকগুলির সমন্বয়সাধন হলেই মানুষের অধিকার ও সরকারের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। ইতিহাস, রাজনীতি, মানসিক ও নৈতিক দর্শনে তাঁর প্রজ্ঞা ছিল গভীর। জেমস মিলকে বলা হয় Philosophic Radicalism-এর ও প্রবক্তা। তাঁর প্রকাশিত শেষ গ্রন্থটির নাম; ‘Fragment on Mackintosh’, 1835। মিল-এর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ:Thomas Smith on Money and Exchange, 1808; Government, 1820; Elements of Political Economy, 1821; Liberty of the Press, 1823 ইত্যাদি। জেমস মিলের মৃত্যু ১৮৩৬ সালের ২৩ জুন। [নাসরীন আক্তার]