হলি রোজারি চার্চ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১১ নং লাইন: | ১১ নং লাইন: | ||
১৭০২ খ্রিস্টাব্দে করতলব খান (মুর্শিদকুলী খান) তাঁর [[দীউয়ানি|দীউয়ানি]] ঢাকা থেকে মকসুদাবাদে ([[মুর্শিদাবাদ|মুর্শিদাবাদ]]) স্থানান্তারিত করার প্রভাব হলি রোজারী চার্চটির উপরও পড়ে। কারণ ঢাকার অধিকাংশ বণিক শ্রেণি মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত হয়। তাছাড়া ১৭০৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ইউরোপীয় কোম্পানিসমূহ ঢাকায় তাদের প্রতিনিধি প্রেরণ বন্ধ করে দেয়। তাই তেজগাঁয়ের গির্জাটিতে জনসমাগম হ্রাস পায় এবং এর সৌন্দর্য ক্রমশ অবনতি ঘটে। ১৮৩৬ সালে কলকাতার ফাদার মুর এস জে (Moor S.J.) ঢাকা সফরকালে হলি রোজারী চার্চটিকে অবহেলিত অবস্থায় দেখতে পান। ১৮৩৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি গির্জাটির ব্যয় নির্বাহের জন্য তেজগাঁয়ের জনৈক ক্যাথলিক ফ্রান্সিস্কো (Franciscans) ব্রাহ্মুন্ডি, করকমোড়া ও অন্যান্য গ্রাম দান করেন। ১৮৫৭ সালের ২৬ মার্চ তাঁর পুত্র রড্রিকস্ (Rodrigues) একই উদ্দেশ্যে তেজকুনী পাড়ার অর্ধেকাংশ দান করেন। ১৯৩৬ সালে গির্জাটির জন্য স্থায়ী যাজক নিয়োগ করা হয়। ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত গির্জাটির চারবার সংস্কারের কথা জানা যায়। তন্মধ্যে ১৯৩৯-৪০ সালে ব্যাপক মেরামত করার ফলে গির্জাটির অধীনে খ্রিস্টানদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৫২ সালে সম্ভবত গির্জাটির অধীনে সদস্য সংখ্যা ছিল ৪৫৩ যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৭৯ সালে ৩৭৫০ জন এবং ১৯৮৫ সালে ৮০০০ জনে দাঁড়ায়। বর্তমানে (২০১১) গির্জাটিতে ৫ জন স্থায়ী যাজক রয়েছে। [গাজী মোঃ মিজানুর রহমান] | ১৭০২ খ্রিস্টাব্দে করতলব খান (মুর্শিদকুলী খান) তাঁর [[দীউয়ানি|দীউয়ানি]] ঢাকা থেকে মকসুদাবাদে ([[মুর্শিদাবাদ|মুর্শিদাবাদ]]) স্থানান্তারিত করার প্রভাব হলি রোজারী চার্চটির উপরও পড়ে। কারণ ঢাকার অধিকাংশ বণিক শ্রেণি মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত হয়। তাছাড়া ১৭০৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ইউরোপীয় কোম্পানিসমূহ ঢাকায় তাদের প্রতিনিধি প্রেরণ বন্ধ করে দেয়। তাই তেজগাঁয়ের গির্জাটিতে জনসমাগম হ্রাস পায় এবং এর সৌন্দর্য ক্রমশ অবনতি ঘটে। ১৮৩৬ সালে কলকাতার ফাদার মুর এস জে (Moor S.J.) ঢাকা সফরকালে হলি রোজারী চার্চটিকে অবহেলিত অবস্থায় দেখতে পান। ১৮৩৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি গির্জাটির ব্যয় নির্বাহের জন্য তেজগাঁয়ের জনৈক ক্যাথলিক ফ্রান্সিস্কো (Franciscans) ব্রাহ্মুন্ডি, করকমোড়া ও অন্যান্য গ্রাম দান করেন। ১৮৫৭ সালের ২৬ মার্চ তাঁর পুত্র রড্রিকস্ (Rodrigues) একই উদ্দেশ্যে তেজকুনী পাড়ার অর্ধেকাংশ দান করেন। ১৯৩৬ সালে গির্জাটির জন্য স্থায়ী যাজক নিয়োগ করা হয়। ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত গির্জাটির চারবার সংস্কারের কথা জানা যায়। তন্মধ্যে ১৯৩৯-৪০ সালে ব্যাপক মেরামত করার ফলে গির্জাটির অধীনে খ্রিস্টানদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৫২ সালে সম্ভবত গির্জাটির অধীনে সদস্য সংখ্যা ছিল ৪৫৩ যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৭৯ সালে ৩৭৫০ জন এবং ১৯৮৫ সালে ৮০০০ জনে দাঁড়ায়। বর্তমানে (২০১১) গির্জাটিতে ৫ জন স্থায়ী যাজক রয়েছে। [গাজী মোঃ মিজানুর রহমান] | ||
'''গ্রন্থপঞ্জি''' JJA Campos, History of the Portuguese in Bengal, Butterworth & Co., London, 1919; Sharif Uddin Ahmed (ed.), Dhaka : Past Present Future, Asiatic Society of Bangladesh, Dhaka, 1991; যেরোম ডি কস্তা, ঢাকার ঐতিহাসিক গীর্জা, সাপ্তাহিক রোববার, ৩ মে ১৯৮১, ঢাকা; ABM Husain (ed.), Architecture, Vol. 2, Asistic Society of Bangladesh, Dhaka, 2007. যতীন্দ্রমোহন রায়, ঢাকার ইতিহাস, প্রথম খন্ড, প্রথম দে’জ সংস্করণ, কলকাতা, ২০০৩। | |||
[[en:Holy Rosary Church]] | [[en:Holy Rosary Church]] |
০৫:০১, ২৯ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
হলি রোজারি চার্চ পর্তুগিজ মিশনারিদের দ্বারা নির্মিত একটি গির্জা। মুগল সম্রাট আকবর (১৫৫৬-১৬০৫) এর নিকট থেকে স্বাধীন ও উম্মুক্তভাবে বাণিজ্য, খৃস্টধর্ম প্রচার এবং গির্জা নির্মাণের ফরমান (১৫৭৯) নিয়ে টার্ভাস (Tavares) বাংলায় আসেন। ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দের দিকে ঢাকায় পর্তুগিজদের বসতি গড়ে ওঠে। পর্তুগিজরা এখানে নিজস্ব বাণিজ্যকুঠি ও উপাসনালয় নির্মাণ করেন।
ষোল শতকে পর্তুগিজ ক্যাথলিক অগাস্টিনিয়ানরা হিজলিতে (Hijili) Holy Rosary নামে দুটি গির্জা নির্মাণ করে। পর্তুগিজ অগাস্টিনিয়ানরা (St. Augustine এর মতানুসারী) একই নামে বালেশ্বর (১৬৪০), ঢাকার তেজগাঁও, হাসনাবাদ (১৭৭৭), রাঙ্গামাটি (১৬৪০), চট্টগাম (১৬০১) এবং বাকেরগঞ্জে (১৭৬৪) গির্জা নির্মাণ করে। যদিও বলা হয় তারা (Augustinians) ১৬৭৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার তেজগাঁয়ের তেজকুনী পাড়ায় বর্তমান হলিক্রস গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের পূর্বদিকে ‘হলি রোজারী চার্চ’ (স্থানীয়ভাবে চার্চটি ‘জপমালা রাণীর গির্জা’ নামে সমধিক পরিচিত) নির্মাণ করেন কিন্তু গির্জাটির প্রতিষ্ঠাকাল নিয়ে ঐতিহাসিক, ভ্রমণকারী ও ধর্মযাজকদের মধ্যে ভিন্ন মতভেদ রয়েছে।
জেমস টেলর (A Sketch of the Topography and Statistics of Dacca, Calcutta, 1840, p. 251) বলেন, ঢাকার সন্নিকটে তেজগাঁও এর গির্জাটি ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে স্থাপিত। তাঁর মতে, প্রথমে এটি ভার্থেমা (Varthema, ইটালিয়ান ভ্রমণকারী) কর্তৃক বর্ণিত নেস্টোরীয় (Nestorius এর অনুসারী) খ্রিস্টান বণিকদের দ্বারা নির্মিত হয় এবং পরবর্তীকালে রোমান ক্যাথলিক মিশনারীগণ কর্তৃক কেবল তা সংস্কার সাধিত হয় বা পুননির্মিত হয়। ১৮৪৫ সালে ক্যালকাটা রিভিউতে (Calcutta Review) প্রকাশিত History of the Cotton Manufacture of Dacca District শীর্ষক প্রবন্ধে তেজগাঁয়ের গির্জাটি নির্মাণকাল ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দ বলে উল্লেখ করা হয়। অন্যদিকে জি.জি.এ ক্যাম্পোজ (J J A Compos) গির্জাটির প্রতিষ্ঠাকাল ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দে বলে উল্লেখ করেন কিন্তু ম্যানরিক সেবাস্টিয় (১৬৪০) এবং টের্ভানিয়ার-এর (১৬৪০ ও ১৬৬৬) বর্ণনায় গির্জাটির উল্লেখ থাকায় ক্যাম্পোজের উক্ত মতামতটি গহণ করা যায় না। গয়া’র প্রধান ধর্মযাজক (Archdiocese) গির্জাটি ১৭১৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয় বলে উল্লেখ করেন।
জেসুইট ফাদার আনতাইন দা মেগালহাইস এর মতে, প্রথমদিকে এটি গির্জা ছিল না। সম্ভবত নেস্টোরীয় খ্রিস্টানগণ চ্যাপেল (উপাসনার স্থান) হিসেবে গির্জার পশ্চিম দিকের অংশটি নির্মাণ করেছিল। সুরকী দিয়ে গাঁথা এর দেয়ালের প্রশস্ততা ছিল ১.২১৯২ মি. এবং এতে উত্তর দিকে অল্প সংখ্যক খোলা প্রবেশপথ ছিল। এই আদি চ্যাপেলটি পরবর্তীকালে দুটি অংশে বিভক্ত করা হয়; প্রথম অংশ- পশ্চিমের ০.৭ মি. উচ্চতা বিশিষ্ট বেদী; দ্বিতীয় অংশ- উপাসকদের জন্য নির্ধারিত সম্মেলন কক্ষ। গির্জাটির দেয়ালের প্রশস্ততা এবং ছাদ নির্মাণের ক্ষেত্রে দুই অংশের মধ্যে পার্থক্য একথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে সম্ভবত পর্তুগিজ ক্যাথলিক অগাস্টিনিয়ানরা পরবর্তী সময়ে এর পূর্ব দিকের অংশটি নির্মাণ করেছিল। ৩.৪৭ মি প্রশস্ত বিজয় তোরণ এবং কৌণিক খিলানযুক্ত গলিপথটি গির্জাটির পূর্ব দিকের বৃহদাংশের সঙ্গে পশ্চিমের ক্ষুদ্রাংশের সেতু বন্ধন রচনা করেছে। গির্জার পূর্বদিকের বৃহৎ অংশটির দৈর্ঘ্য ২৫.৪৮ মি, প্রস্থ ৯.৮৪ মি এবং দেয়ালের প্রশস্ততা ০.৭০ মি। অন্তবর্তী ফাঁকা অংশটি ‘নেভ’ ও উভয়পার্শ্বে ০.৪৮ মি ব্যাসার্ধের বৃত্তকার‘তুসকান’ স্তম্ভের সাহায্যে দুটি আইলে বিভক্ত। এর প্রধান প্রবেশ পথ পূর্বদিকে অবস্থিত কিন্তু অপর দিকে দুটি করে অতিরিক্ত দরজা দক্ষিণ ও উত্তর দেয়ালে সরাসরি কোন পোরচ বা বারান্দা ছাড়াই নির্মিত। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালের প্রবেশপথসমূহ মূল দরজাগুলির অনুকরণে অনাড়ম্বরভাবে নির্মাণ করে আলো-বাতাস প্রবেশের সুব্যবস্থা করা হয়।
১৭০২ খ্রিস্টাব্দে করতলব খান (মুর্শিদকুলী খান) তাঁর দীউয়ানি ঢাকা থেকে মকসুদাবাদে (মুর্শিদাবাদ) স্থানান্তারিত করার প্রভাব হলি রোজারী চার্চটির উপরও পড়ে। কারণ ঢাকার অধিকাংশ বণিক শ্রেণি মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত হয়। তাছাড়া ১৭০৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ইউরোপীয় কোম্পানিসমূহ ঢাকায় তাদের প্রতিনিধি প্রেরণ বন্ধ করে দেয়। তাই তেজগাঁয়ের গির্জাটিতে জনসমাগম হ্রাস পায় এবং এর সৌন্দর্য ক্রমশ অবনতি ঘটে। ১৮৩৬ সালে কলকাতার ফাদার মুর এস জে (Moor S.J.) ঢাকা সফরকালে হলি রোজারী চার্চটিকে অবহেলিত অবস্থায় দেখতে পান। ১৮৩৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি গির্জাটির ব্যয় নির্বাহের জন্য তেজগাঁয়ের জনৈক ক্যাথলিক ফ্রান্সিস্কো (Franciscans) ব্রাহ্মুন্ডি, করকমোড়া ও অন্যান্য গ্রাম দান করেন। ১৮৫৭ সালের ২৬ মার্চ তাঁর পুত্র রড্রিকস্ (Rodrigues) একই উদ্দেশ্যে তেজকুনী পাড়ার অর্ধেকাংশ দান করেন। ১৯৩৬ সালে গির্জাটির জন্য স্থায়ী যাজক নিয়োগ করা হয়। ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত গির্জাটির চারবার সংস্কারের কথা জানা যায়। তন্মধ্যে ১৯৩৯-৪০ সালে ব্যাপক মেরামত করার ফলে গির্জাটির অধীনে খ্রিস্টানদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৫২ সালে সম্ভবত গির্জাটির অধীনে সদস্য সংখ্যা ছিল ৪৫৩ যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৭৯ সালে ৩৭৫০ জন এবং ১৯৮৫ সালে ৮০০০ জনে দাঁড়ায়। বর্তমানে (২০১১) গির্জাটিতে ৫ জন স্থায়ী যাজক রয়েছে। [গাজী মোঃ মিজানুর রহমান]
গ্রন্থপঞ্জি JJA Campos, History of the Portuguese in Bengal, Butterworth & Co., London, 1919; Sharif Uddin Ahmed (ed.), Dhaka : Past Present Future, Asiatic Society of Bangladesh, Dhaka, 1991; যেরোম ডি কস্তা, ঢাকার ঐতিহাসিক গীর্জা, সাপ্তাহিক রোববার, ৩ মে ১৯৮১, ঢাকা; ABM Husain (ed.), Architecture, Vol. 2, Asistic Society of Bangladesh, Dhaka, 2007. যতীন্দ্রমোহন রায়, ঢাকার ইতিহাস, প্রথম খন্ড, প্রথম দে’জ সংস্করণ, কলকাতা, ২০০৩।