খুরশীদ জাহান নুমা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''খুরশীদ জাহান নুমা'''  কালানুক্রমিক ঘটনাপঞ্জির ঐতিহ্যের ধারায় ভারতে ইতিহাসবেত্তাদের দ্বারা ফারসি ভাষায় লিখিত গ্রন্থাদির মধ্যে সর্বশেষ ইতিহাস গ্রন্থ। এর রচয়িতা হলেন সৈয়দ ইলাহি বখশ আংরেজাবাদী। তিনি গ্রন্থটির লেখা ১৮৫৫ সালে শুরু করে ১৮৬৩ সালে শেষ করেন। যদিও ১৮৯২ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত তিনি গ্রন্থটি সংশোধন ও পরিমার্জন করেছেন, তবুও দেখা যায় যে, তিনি এতে ১৮৬৩ সালের পরবর্তী কোনো ঘটনাই অন্তর্ভুক্ত করেন নি। ইলাহি বখশ আদমের সময় থেকে শুরু করে তার ইতিহাস লেখার পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি এতে উল্লেখযোগ্য এক অংশ জুড়ে বাংলার মুসলিম শাসনের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেন। তার গ্রন্থের হাজার পৃষ্ঠার মধ্যে বাংলার ইতিহাসই ছিল প্রায় অর্ধেক অংশ।
'''খুরশীদ জাহান নুমা'''  কালানুক্রমিক ঘটনাপঞ্জির ঐতিহ্যের ধারায় ভারতে ইতিহাসবেত্তাদের দ্বারা ফারসি ভাষায় লিখিত গ্রন্থাদির মধ্যে সর্বশেষ ইতিহাস গ্রন্থ। এর রচয়িতা হলেন সৈয়দ ইলাহি বখশ আংরেজাবাদী। তিনি গ্রন্থটির লেখা ১৮৫৫ সালে শুরু করে ১৮৬৩ সালে শেষ করেন। যদিও ১৮৯২ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত তিনি গ্রন্থটি সংশোধন ও পরিমার্জন করেছেন, তবুও দেখা যায় যে, তিনি এতে ১৮৬৩ সালের পরবর্তী কোনো ঘটনাই অন্তর্ভুক্ত করেন নি। ইলাহি বখশ আদমের সময় থেকে শুরু করে তার ইতিহাস লেখার পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি এতে উল্লেখযোগ্য এক অংশ জুড়ে বাংলার মুসলিম শাসনের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেন। তার গ্রন্থের হাজার পৃষ্ঠার মধ্যে বাংলার ইতিহাসই ছিল প্রায় অর্ধেক অংশ।


ইলাহি বখশ তাঁর শেষ জীবনে জেলা স্কুলের ফারসি ভাষার শিক্ষক ছিলেন এবং সে সূত্রে তিনি মেমোয়ারস অব গৌড় অ্যান্ড পান্ডুয়ার লেখক আবিদ আলী খানকে পড়াতেন। ইলাহি বখশের শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন মুন্সি আবদুল করিম (যিনি পর্যায়ক্রমে বাংলার মুসলিম শাসনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস গ্রন্থ [[রিয়াজ-উস-সালাতীন|রিয়াজ]][[রিয়াজ-উস-সালাতীন|-উস]][[রিয়াজ-উস-সালাতীন|-সালাতীন]] এর লেখক গোলাম হোসেন সলিমের ছাত্র ছিলেন)। খুরশীদ জাহান নুমা এখনও অপ্রকাশিত। [[বেভারীজ, হেনরী|হৈনরী ]][[বেভারীজ, হেনরী|বেভারীজ]] কর্তৃক এর শুধু বাংলা অংশের সংক্ষিপ্ত ইংরেজি অনুবাদ কলকাতার জার্ণাল অব দা এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল এর  এ ১৮৯৫ সালে প্রকাশিত হয়।
ইলাহি বখশ তাঁর শেষ জীবনে জেলা স্কুলের ফারসি ভাষার শিক্ষক ছিলেন এবং সে সূত্রে তিনি মেমোয়ারস অব গৌড় অ্যান্ড পান্ডুয়ার লেখক আবিদ আলী খানকে পড়াতেন। ইলাহি বখশের শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন মুন্সি আবদুল করিম (যিনি পর্যায়ক্রমে বাংলার মুসলিম শাসনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস গ্রন্থ [[রিয়াজ-উস-সালাতীন|রিয়াজ]][[রিয়াজ-উস-সালাতীন|-উস]][[রিয়াজ-উস-সালাতীন|-সালাতীন]] এর লেখক গোলাম হোসেন সলিমের ছাত্র ছিলেন)। খুরশীদ জাহান নুমা এখনও অপ্রকাশিত। [[বেভারীজ, হেনরী|হেনরী বেভারীজ]] কর্তৃক এর শুধু বাংলা অংশের সংক্ষিপ্ত ইংরেজি অনুবাদ কলকাতার জার্ণাল অব দা এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল এর  এ ১৮৯৫ সালে প্রকাশিত হয়।


খুরশীদ জাহান নুমায় প্রাপ্ত বাংলার মুসলিম সুলতানদের দুটি রাজধানী শহর [[গৌড়, নগর|গৌড়]] ও  [[পান্ডুয়া|পান্ডুয়া]] এর ইতিহাস বর্ণনায় মৌলিকত্বের দাবি রাখে। ইলাহি বখশ অন্যান্য লেখকদের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করেন নি। তিনি তাঁর বর্ণনার জন্য মুসলিম শাসকদের নিদর্শনাদিতে আরবি ও ফারসি ভাষায় লিখিত প্রাপ্ত শিলালিপির ওপরও নির্ভর করেছেন। তাঁর সময়ে লিপির প্রতিচ্ছবি নেওয়ার কৌশল অজ্ঞাত ছিল। তাই তাকে বাধ্য হয়ে শিলালিপিগুলির পাঠোদ্ধারে নিজের চোখের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। তাঁর আবিষ্কৃত ৪২টি শিলালিপির মধ্যে তিনি ৩৯টি শিলালিপির পাঠ সম্পূর্ণরূপে দিতে সক্ষম হন। বাকি ৩টির মধ্যে ১টির তারিখ ও প্রবর্তকের নাম এবং অন্য দুটির শুধু তারিখ দিতে পেরেছেন। সুতরাং ইলাহি বখশকে প্রথম স্থানীয় লিপি বিশারদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদ বলে অভিহিত করা যায়। ভারতে ১৮৬১ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হলেও ইলাহি বখশ উক্ত বিভাগ থেকে সুযোগ-সুবিধাদি গ্রহণ করতে ব্যর্থ হন। কারণ প্রত্নতত্ত্ববিদরা তখনও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলি পরিদর্শন করতে শুরু করেন নি।
খুরশীদ জাহান নুমায় প্রাপ্ত বাংলার মুসলিম সুলতানদের দুটি রাজধানী শহর [[গৌড়, নগর|গৌড়]] ও  [[পান্ডুয়া|পান্ডুয়া]] এর ইতিহাস বর্ণনায় মৌলিকত্বের দাবি রাখে। ইলাহি বখশ অন্যান্য লেখকদের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করেন নি। তিনি তাঁর বর্ণনার জন্য মুসলিম শাসকদের নিদর্শনাদিতে আরবি ও ফারসি ভাষায় লিখিত প্রাপ্ত শিলালিপির ওপরও নির্ভর করেছেন। তাঁর সময়ে লিপির প্রতিচ্ছবি নেওয়ার কৌশল অজ্ঞাত ছিল। তাই তাকে বাধ্য হয়ে শিলালিপিগুলির পাঠোদ্ধারে নিজের চোখের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। তাঁর আবিষ্কৃত ৪২টি শিলালিপির মধ্যে তিনি ৩৯টি শিলালিপির পাঠ সম্পূর্ণরূপে দিতে সক্ষম হন। বাকি ৩টির মধ্যে ১টির তারিখ ও প্রবর্তকের নাম এবং অন্য দুটির শুধু তারিখ দিতে পেরেছেন। সুতরাং ইলাহি বখশকে প্রথম স্থানীয় লিপি বিশারদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদ বলে অভিহিত করা যায়। ভারতে ১৮৬১ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হলেও ইলাহি বখশ উক্ত বিভাগ থেকে সুযোগ-সুবিধাদি গ্রহণ করতে ব্যর্থ হন। কারণ প্রত্নতত্ত্ববিদরা তখনও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলি পরিদর্শন করতে শুরু করেন নি।


ইলাহি বখশ আরবি ও ফারসি ভাষায় লিখিত [[শিলালিপি|শিলালিপি]], বিশেষ করে তুগরা পদ্ধতির আরবি লিপিগুলির অনুলিপি নিজ হাতে করতেন এবং সেগুলির মধ্যে অনেকটি তিনি নিজ গৃহে সংগ্রহ করে রাখেন। তাঁর ইউরোপীয় বন্ধুদের দেওয়া পুরাকীর্তির ছবিগুলি দিয়ে তিনি তাঁর কক্ষ সজ্জিত করেন। তাঁর গ্রন্থাগারে প্রায় এক হাজার ফারসি ও উর্দু বইয়ের সংগ্রহ ছিল। তিনি জনপ্রিয়ভাবে জগৎগুরু (পৃথিবীর শিক্ষক) হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এ উপাধি থেকে তার প্রতি জনগণের শ্রদ্ধাবোধ প্রকাশ পায়।  [আবদুল করিম]
ইলাহি বখশ আরবি ও ফারসি ভাষায় লিখিত [[শিলালিপি|শিলালিপি]], বিশেষ করে তুগরা পদ্ধতির আরবি লিপিগুলির অনুলিপি নিজ হাতে করতেন এবং সেগুলির মধ্যে অনেকটি তিনি নিজ গৃহে সংগ্রহ করে রাখেন। তাঁর ইউরোপীয় বন্ধুদের দেওয়া পুরাকীর্তির ছবিগুলি দিয়ে তিনি তাঁর কক্ষ সজ্জিত করেন। তাঁর গ্রন্থাগারে প্রায় এক হাজার ফারসি ও উর্দু বইয়ের সংগ্রহ ছিল। তিনি জনপ্রিয়ভাবে জগৎগুরু (পৃথিবীর শিক্ষক) হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এ উপাধি থেকে তার প্রতি জনগণের শ্রদ্ধাবোধ প্রকাশ পায়।  [আবদুল করিম]
'''গ্রন্থপঞ্জি'''  H Beveridge, 'Khurshid Jahan Numa', Journal of the Asiatic Society of Bengal, 1895; AA Khan and Stapletone, Memories of Gaur and Pandua, Calcutta, 1931; Abdul Karim, Muslim Banglar Ilihas O Aitiyya (in Bangla), Dhaka, 1994.


[[en:Khurshid Jahan Numa]]
[[en:Khurshid Jahan Numa]]

০৫:২৮, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

খুরশীদ জাহান নুমা  কালানুক্রমিক ঘটনাপঞ্জির ঐতিহ্যের ধারায় ভারতে ইতিহাসবেত্তাদের দ্বারা ফারসি ভাষায় লিখিত গ্রন্থাদির মধ্যে সর্বশেষ ইতিহাস গ্রন্থ। এর রচয়িতা হলেন সৈয়দ ইলাহি বখশ আংরেজাবাদী। তিনি গ্রন্থটির লেখা ১৮৫৫ সালে শুরু করে ১৮৬৩ সালে শেষ করেন। যদিও ১৮৯২ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত তিনি গ্রন্থটি সংশোধন ও পরিমার্জন করেছেন, তবুও দেখা যায় যে, তিনি এতে ১৮৬৩ সালের পরবর্তী কোনো ঘটনাই অন্তর্ভুক্ত করেন নি। ইলাহি বখশ আদমের সময় থেকে শুরু করে তার ইতিহাস লেখার পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি এতে উল্লেখযোগ্য এক অংশ জুড়ে বাংলার মুসলিম শাসনের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেন। তার গ্রন্থের হাজার পৃষ্ঠার মধ্যে বাংলার ইতিহাসই ছিল প্রায় অর্ধেক অংশ।

ইলাহি বখশ তাঁর শেষ জীবনে জেলা স্কুলের ফারসি ভাষার শিক্ষক ছিলেন এবং সে সূত্রে তিনি মেমোয়ারস অব গৌড় অ্যান্ড পান্ডুয়ার লেখক আবিদ আলী খানকে পড়াতেন। ইলাহি বখশের শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন মুন্সি আবদুল করিম (যিনি পর্যায়ক্রমে বাংলার মুসলিম শাসনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস গ্রন্থ রিয়াজ-উস-সালাতীন এর লেখক গোলাম হোসেন সলিমের ছাত্র ছিলেন)। খুরশীদ জাহান নুমা এখনও অপ্রকাশিত। হেনরী বেভারীজ কর্তৃক এর শুধু বাংলা অংশের সংক্ষিপ্ত ইংরেজি অনুবাদ কলকাতার জার্ণাল অব দা এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল এর  এ ১৮৯৫ সালে প্রকাশিত হয়।

খুরশীদ জাহান নুমায় প্রাপ্ত বাংলার মুসলিম সুলতানদের দুটি রাজধানী শহর গৌড় ও  পান্ডুয়া এর ইতিহাস বর্ণনায় মৌলিকত্বের দাবি রাখে। ইলাহি বখশ অন্যান্য লেখকদের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করেন নি। তিনি তাঁর বর্ণনার জন্য মুসলিম শাসকদের নিদর্শনাদিতে আরবি ও ফারসি ভাষায় লিখিত প্রাপ্ত শিলালিপির ওপরও নির্ভর করেছেন। তাঁর সময়ে লিপির প্রতিচ্ছবি নেওয়ার কৌশল অজ্ঞাত ছিল। তাই তাকে বাধ্য হয়ে শিলালিপিগুলির পাঠোদ্ধারে নিজের চোখের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। তাঁর আবিষ্কৃত ৪২টি শিলালিপির মধ্যে তিনি ৩৯টি শিলালিপির পাঠ সম্পূর্ণরূপে দিতে সক্ষম হন। বাকি ৩টির মধ্যে ১টির তারিখ ও প্রবর্তকের নাম এবং অন্য দুটির শুধু তারিখ দিতে পেরেছেন। সুতরাং ইলাহি বখশকে প্রথম স্থানীয় লিপি বিশারদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদ বলে অভিহিত করা যায়। ভারতে ১৮৬১ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হলেও ইলাহি বখশ উক্ত বিভাগ থেকে সুযোগ-সুবিধাদি গ্রহণ করতে ব্যর্থ হন। কারণ প্রত্নতত্ত্ববিদরা তখনও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলি পরিদর্শন করতে শুরু করেন নি।

ইলাহি বখশ আরবি ও ফারসি ভাষায় লিখিত শিলালিপি, বিশেষ করে তুগরা পদ্ধতির আরবি লিপিগুলির অনুলিপি নিজ হাতে করতেন এবং সেগুলির মধ্যে অনেকটি তিনি নিজ গৃহে সংগ্রহ করে রাখেন। তাঁর ইউরোপীয় বন্ধুদের দেওয়া পুরাকীর্তির ছবিগুলি দিয়ে তিনি তাঁর কক্ষ সজ্জিত করেন। তাঁর গ্রন্থাগারে প্রায় এক হাজার ফারসি ও উর্দু বইয়ের সংগ্রহ ছিল। তিনি জনপ্রিয়ভাবে জগৎগুরু (পৃথিবীর শিক্ষক) হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এ উপাধি থেকে তার প্রতি জনগণের শ্রদ্ধাবোধ প্রকাশ পায়।  [আবদুল করিম]

গ্রন্থপঞ্জি H Beveridge, 'Khurshid Jahan Numa', Journal of the Asiatic Society of Bengal, 1895; AA Khan and Stapletone, Memories of Gaur and Pandua, Calcutta, 1931; Abdul Karim, Muslim Banglar Ilihas O Aitiyya (in Bangla), Dhaka, 1994.