পান্ডুয়া

পান্ডুয়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের গৌড় থেকে প্রায় ৩২.১৮ কি.মি এবং বর্তমান মালদহ শহর থেকে ১৯.৩১ কি.মি দূরে অবিস্থত একটি শহর। এ শহরটি শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহের সময়ে (১৩৪২-১৩৫৭ খ্রি.) টাকশাল এবং রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পান্ডুয়া পান্ডুইয়া বা পান্ডুরিয়া শব্দ হতে এসেছে বলে মনে করা হয়। পান্ডুস শব্দ থেকে এ নামটি এসেছে- হিন্দু সম্প্রদায়ের এমন দাবির বিরোধিতা করেন কানিংহাম। তিনি বরং বিশ্বাস করতে চান যে, পান্ডুবিস (জলজ পাখি) হতে নামটির উৎপত্তি হয়েছে। কারণ, এক সময়ে এ জাতীয় পাখি এখানে প্রচুর পাওয়া যেত। ১৩৪২ খ্রিস্টাব্দে রাজধানীর মর্যাদা লাভের পূর্বেই পান্ডুয়া উলেখযোগ্য স্থান হিসেবে পরিচিত লাভ করেছিল। এখানে প্রাপ্ত বহু হিন্দু ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের নিদর্শন এটির প্রাচীনত্ব প্রমাণ করে। কিন্তু এটি কখনওই গৌড়ের ন্যায় প্রাচীন ও বড় শহর ছিল না। পান্ডুয়া দৈর্ঘ্যে সাড়ে ৬.৪৩ কি.মি এবং প্রস্থে ৩.২১ কি.মি ছিল। ১৩৫৩ খ্রিস্টাব্দে শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ সম্ভবত বাংলার প্রথম দিকের সুলতান শামসুদ্দীন ফিরুজ শাহ-এর (১৩০১-১৩২২ খ্রি.) নামানুসারে শহরটির নতুন নাম দেন ফিরুজাবাদ। পনেরো শতকের চৈনিক বিবরণীতে দেখা যায় যে, পান্ডুয়ার দেওয়াল ও শহরতলিগুলি ছিল খুবই মনোরম। এর বাজারসমূহ সারিবদ্ধ দোকান দ্বারা সুবিন্যস্ত ছিল এবং এ দোকানসমূহে ছিল সব রকমের পণ্যসামগ্রী। পনেরো শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত এটি প্রশাসনের কেন্দ্রস্থল ছিল। কিন্তু টাকশাল শহর হিসেবে এর মর্যাদা শেরশাহ-এর আমল (১৫৪০-৪৫ খ্রি.) পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ ছিল। এখান থেকে শেরশাহের রৌপ্য মুদ্রা জারি করা হয় এবং এ মুদ্রাগুলির তারিখ ছিল ১৫৪০-৪১ খ্রিস্টাব্দ। পান্ডুয়ার শহরতলি শেখ জালালুদ্দীন তাবরিজি (তেরো শতক) এবং নূর কুতুব আলম প্রমুখ বিখ্যাত দরবেশদের আকৃষ্ট করে। তাঁরা এখানে খানকাহ (ধর্মশালা) স্থাপন করেন। একারণে শহরটি হজরত পান্ডুয়া নামেও পরিচিত।

মহানন্দা নদীর গতি পরিবর্তন এবং ১৪৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে গৌড়ে রাজধানী স্থানান্তরকরণের কারণে পান্ডুয়ার পতন হয়। ঊনিশ শতকের প্রথম দিকে (১৮০৮ খ্রি.) বুকানন হ্যামিলটন এখানে সেতু, তোরণ, প্রাসাদ ও দুর্গসমূহের কিছু ধ্বংসাবশেষ দেখেন, যদিও বর্তমানে এগুলির কোন অস্তিত্ব নেই। মালদহ সড়কের পাশে উপরে উল্লিখিত পীর-দরবেশদের সমাধিসৌধ, আদিনা মসজিদ এবং মালদহ-দেবকোট সড়কের ডান পাশে একলাখী সমাধিসৌধ, দনুজদিঘি, সতাশগড় দিঘি প্রভৃতি বিদ্যমান পুরা নিদর্শনসমূহ আজও অতীত সাক্ষ্য বহন করে। [মোঃ আখতারুজ্জামান]

গ্রন্থপঞ্জি  A Cunningham, The Archaeological Survey of India Report, XV, Calcutta, 1882; Abid Ali Khan & HE Stapleton, Memoirs of Gaur and Pandua, Calcutta, 1931.