ত্রিবেদী, রামেন্দ্রসুন্দর: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''ত্রিবেদী, রামেন্দ্রসুন্দর '''(১৮৬৪-১৯১৯) বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ও দর্শনবিষয়ক প্রবন্ধ রচনার পথিকৃৎ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক। ১৮৬৪ সালের ২০ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জেমোকান্দিতে তাঁর জন্ম। রামেন্দ্রসুন্দরের শিক্ষাজীবন ছিল অত্যন্ত কৃতিত্বপূর্ণ। প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি অসাধারণ ফলাফল অর্জন করেন। তিনি কান্দি ইংরেজি স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৮২) এবং কলকাতার [[প্রেসিডেন্সি কলেজ]] থেকে এফএ (১৮৮৪), পদার্থবিদ্যা ও রসায়নশাস্ত্রে অনার্সসহ বিএ (১৮৮৬) এবং পদার্থবিদ্যায় এমএ (১৮৮৭) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৮৮ সালে তিনি [[প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি]] অর্জন করেন। রামেন্দ্রসুন্দর ১৮৯২ সালে কলকাতা রিপন কলেজের বিজ্ঞান শাস্ত্রের অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং ১৯০৩ সালে কলেজের অধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত হন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ পদেই কর্মরত ছিলেন। | '''ত্রিবেদী, রামেন্দ্রসুন্দর '''(১৮৬৪-১৯১৯) বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ও দর্শনবিষয়ক প্রবন্ধ রচনার পথিকৃৎ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক। ১৮৬৪ সালের ২০ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জেমোকান্দিতে তাঁর জন্ম। রামেন্দ্রসুন্দরের শিক্ষাজীবন ছিল অত্যন্ত কৃতিত্বপূর্ণ। প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি অসাধারণ ফলাফল অর্জন করেন। তিনি কান্দি ইংরেজি স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৮২) এবং কলকাতার [[প্রেসিডেন্সি কলেজ]] থেকে এফএ (১৮৮৪), পদার্থবিদ্যা ও রসায়নশাস্ত্রে অনার্সসহ বিএ (১৮৮৬) এবং পদার্থবিদ্যায় এমএ (১৮৮৭) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৮৮ সালে তিনি [[প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি]] অর্জন করেন। রামেন্দ্রসুন্দর ১৮৯২ সালে কলকাতা রিপন কলেজের বিজ্ঞান শাস্ত্রের অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং ১৯০৩ সালে কলেজের অধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত হন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ পদেই কর্মরত ছিলেন। | ||
[[সাধনা]], | [[সাধনা]], নবজীবন ও [[ভারতী]] পত্রিকায় প্রবন্ধ প্রকাশের মধ্য দিয়ে রামেন্দ্রসুন্দরের সাহিত্যিক জীবনের সূচনা হয়। তিনি [[বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ]] (১৮৯৪) প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। ১৯০৪ থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত তিনি এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯১৯ সালে এর সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৮৯৯-১৯০৩ এবং ১৯১৭-১৮ সাল পর্যন্ত দুবার তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ভাষাতত্ত্ব, প্রাচ্য-প্রতীচ্য দর্শন, বিজ্ঞান, বেদবিদ্যা, [[লোকসাহিত্য]] প্রভৃতি বিষয়ে তাঁর অসাধারণ জ্ঞান ছিল। বিশেষ করে বিজ্ঞান ও দর্শনের জটিল তত্ত্ব প্রাঞ্জল ভাষায় তিনি বিশ্লেষণ করেছেন। মাতৃভাষার মাধ্যমে জ্ঞানচর্চাকে তিনি প্রাধান্য দিতেন। এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন অনেকটা আপোষহীন। একবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় প্রবন্ধ পাঠ করতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে অনুমতি না দেওয়ায় তিনি প্রবন্ধ-পাঠ প্রত্যাখ্যান করেন। পরে উপাচার্য স্যার দেবীপ্রসাদ সর্বাধিকারী অনুমতি দিলে তিনি বাংলায়ই প্রবন্ধ পাঠ করেন। | ||
রামেন্দ্রসুন্দর ছিলেন একজন উগ্র স্বদেশপ্রেমিক এবং জাতিভেদ প্রথার বিরোধী। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের তিনি ঘোর বিরোধী ছিলেন। বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতায় সে বছর তাঁর আহবানে একদিন সমগ্র বাংলাদেশে অরন্ধন দিবস পালিত হয়। বঙ্গভঙ্গের বিরোধী প্রতিক্রিয়ায় এ সময় তিনি রচনা করেন বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রতকথা (১৯০৬) গ্রন্থখানি। তাঁর রচনা মুক্তচিন্তার আলোকে দীপ্ত ও সাহিত্যরসে সমৃদ্ধ। তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে: প্রকৃতি (১৮৯৬), জিজ্ঞাসা (১৯০৩), কর্মকথা (১৯১৩), চরিতকথা (১৯১৩), শব্দকথা (১৯১৭), বিচিত্র জগৎ (১৯২০), নানাকথা (১৯২৪) প্রভৃতি। প্রথমটি বিজ্ঞান বিষয়ক এবং দ্বিতীয়টি দর্শনবিষয়ক প্রবন্ধের সংকলন। শব্দকথায় বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব, [[ব্যাকরণ]] ও [[পরিভাষা]] সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে। আর নানাকথায় স্থান পেয়েছে যুগ ও জীবন, ব্যক্তি ও সমাজ, শিক্ষানীতি ও সমাজধর্মের কতিপয় প্রচলিত সমস্যা সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব মতামত। | রামেন্দ্রসুন্দর ছিলেন একজন উগ্র স্বদেশপ্রেমিক এবং জাতিভেদ প্রথার বিরোধী। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের তিনি ঘোর বিরোধী ছিলেন। বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতায় সে বছর তাঁর আহবানে একদিন সমগ্র বাংলাদেশে অরন্ধন দিবস পালিত হয়। বঙ্গভঙ্গের বিরোধী প্রতিক্রিয়ায় এ সময় তিনি রচনা করেন বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রতকথা (১৯০৬) গ্রন্থখানি। তাঁর রচনা মুক্তচিন্তার আলোকে দীপ্ত ও সাহিত্যরসে সমৃদ্ধ। তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে: প্রকৃতি (১৮৯৬), জিজ্ঞাসা (১৯০৩), কর্মকথা (১৯১৩), চরিতকথা (১৯১৩), শব্দকথা (১৯১৭), বিচিত্র জগৎ (১৯২০), নানাকথা (১৯২৪) প্রভৃতি। প্রথমটি বিজ্ঞান বিষয়ক এবং দ্বিতীয়টি দর্শনবিষয়ক প্রবন্ধের সংকলন। শব্দকথায় বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব, [[ব্যাকরণ]] ও [[পরিভাষা]] সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে। আর নানাকথায় স্থান পেয়েছে যুগ ও জীবন, ব্যক্তি ও সমাজ, শিক্ষানীতি ও সমাজধর্মের কতিপয় প্রচলিত সমস্যা সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব মতামত। |
০৪:৫১, ৬ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
ত্রিবেদী, রামেন্দ্রসুন্দর (১৮৬৪-১৯১৯) বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ও দর্শনবিষয়ক প্রবন্ধ রচনার পথিকৃৎ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক। ১৮৬৪ সালের ২০ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জেমোকান্দিতে তাঁর জন্ম। রামেন্দ্রসুন্দরের শিক্ষাজীবন ছিল অত্যন্ত কৃতিত্বপূর্ণ। প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি অসাধারণ ফলাফল অর্জন করেন। তিনি কান্দি ইংরেজি স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৮২) এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফএ (১৮৮৪), পদার্থবিদ্যা ও রসায়নশাস্ত্রে অনার্সসহ বিএ (১৮৮৬) এবং পদার্থবিদ্যায় এমএ (১৮৮৭) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৮৮ সালে তিনি প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি অর্জন করেন। রামেন্দ্রসুন্দর ১৮৯২ সালে কলকাতা রিপন কলেজের বিজ্ঞান শাস্ত্রের অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং ১৯০৩ সালে কলেজের অধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত হন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ পদেই কর্মরত ছিলেন।
সাধনা, নবজীবন ও ভারতী পত্রিকায় প্রবন্ধ প্রকাশের মধ্য দিয়ে রামেন্দ্রসুন্দরের সাহিত্যিক জীবনের সূচনা হয়। তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ (১৮৯৪) প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। ১৯০৪ থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত তিনি এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯১৯ সালে এর সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৮৯৯-১৯০৩ এবং ১৯১৭-১৮ সাল পর্যন্ত দুবার তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ভাষাতত্ত্ব, প্রাচ্য-প্রতীচ্য দর্শন, বিজ্ঞান, বেদবিদ্যা, লোকসাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ে তাঁর অসাধারণ জ্ঞান ছিল। বিশেষ করে বিজ্ঞান ও দর্শনের জটিল তত্ত্ব প্রাঞ্জল ভাষায় তিনি বিশ্লেষণ করেছেন। মাতৃভাষার মাধ্যমে জ্ঞানচর্চাকে তিনি প্রাধান্য দিতেন। এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন অনেকটা আপোষহীন। একবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় প্রবন্ধ পাঠ করতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে অনুমতি না দেওয়ায় তিনি প্রবন্ধ-পাঠ প্রত্যাখ্যান করেন। পরে উপাচার্য স্যার দেবীপ্রসাদ সর্বাধিকারী অনুমতি দিলে তিনি বাংলায়ই প্রবন্ধ পাঠ করেন।
রামেন্দ্রসুন্দর ছিলেন একজন উগ্র স্বদেশপ্রেমিক এবং জাতিভেদ প্রথার বিরোধী। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের তিনি ঘোর বিরোধী ছিলেন। বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতায় সে বছর তাঁর আহবানে একদিন সমগ্র বাংলাদেশে অরন্ধন দিবস পালিত হয়। বঙ্গভঙ্গের বিরোধী প্রতিক্রিয়ায় এ সময় তিনি রচনা করেন বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রতকথা (১৯০৬) গ্রন্থখানি। তাঁর রচনা মুক্তচিন্তার আলোকে দীপ্ত ও সাহিত্যরসে সমৃদ্ধ। তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে: প্রকৃতি (১৮৯৬), জিজ্ঞাসা (১৯০৩), কর্মকথা (১৯১৩), চরিতকথা (১৯১৩), শব্দকথা (১৯১৭), বিচিত্র জগৎ (১৯২০), নানাকথা (১৯২৪) প্রভৃতি। প্রথমটি বিজ্ঞান বিষয়ক এবং দ্বিতীয়টি দর্শনবিষয়ক প্রবন্ধের সংকলন। শব্দকথায় বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব, ব্যাকরণ ও পরিভাষা সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে। আর নানাকথায় স্থান পেয়েছে যুগ ও জীবন, ব্যক্তি ও সমাজ, শিক্ষানীতি ও সমাজধর্মের কতিপয় প্রচলিত সমস্যা সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব মতামত।
বাঙালিদের মধ্যে বেদচর্চার ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করেন, যার প্রমাণ পাওয়া যায় তৎকৃত ঐতরেয় ব্রাহ্মণের বঙ্গানুবাদ (১৯১১) ও যজ্ঞকথা (১৯২০) গ্রন্থ রচনার মধ্য দিয়ে। এ ছাড়া তিনি কয়েকটি পাঠ্যপুস্তকও রচনা করেন। সেগুলির মধ্যে Aids to Natural Philosophy গ্রন্থখানি বিখ্যাত। ১৯১৯ সালের ৬ জুন তাঁর মৃত্যু হয়। [শাহীদা আখতার]