হুপিং কাশি
হুপিং কাশি (Whooping cough) গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া Bordetella pertussis জনিত শ্বাসতন্ত্রের রোগ। এটি পারটুসিস্ (pertussis) নামেও পরিচিত। পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও এটি একটি সাধারণ শিশুরোগ। মানব দেহের বাইরে বেশিক্ষণ না বাঁচার জন্য ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে সরাসরি সংর্স্পশের মাধ্যমেই প্রধানত রোগজীবাণুটি বিস্তার লাভ করে। নাসারন্ধ্রই সংক্রমণের পথ। একজন আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে জীবাণু ছড়ায়। জনবহুল ও বায়ু চলাচল কম এমন জায়গায় সুস্থ ব্যক্তি শ্বাসের মাধ্যমে বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়া গ্রহণ করে। শ্বাসনালী ও ক্লোমনালীতে সংক্রমণ স্থায়ী হওয়ার পর জীবাণুরা দ্রুত বিভাজনের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে এবং জীবাণুর একাংশ মারা যায়। মৃত ব্যাকটেরিয়া ভেঙে গিয়ে কোষের ভিতরে থেকে এক ধরনের অধিবিষ (toxin) অবমুক্ত করে, যা শ্বাসনালী ও ক্লোমনালীর আবরণী কলায় ব্যাপক উপদাহ সৃষ্টি করলে বিশেষ এক ধরনের তীব্র কাশির উদ্রেক ঘটে যা তীক্ষ্ম ধ্বনিযুক্ত ঘুংরিকাশিতে শেষ হয় বলেই একে হুপিং কাশি বলা হয়। শ্বাসতন্ত্রে তীব্র (acute) সংক্রমণের ক্ষেত্রে রোগীর রক্তে অক্সিজেনের অভাব ঘটলে খিঁচুনি দেখা দিতে পারে। ঘনবসতি ও বায়ুচলাচলের অভাব এই রোগের সঙ্গে জড়িত। উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় দেশেই এটি একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা।
বাংলাদেশে হুপিং কাশি একটি প্রকট আঞ্চলিক রোগ ছিল এবং প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ শিশু এতে আক্রন্ত হত। অনেক সময় এটি মহামারীর আকার ধারণ করত। রোগনির্ণয়ের পরপরই রোগীকে অ্যান্টিবায়েটিকস দিয়ে চিকিৎসা করা হত। সৌভাগ্যবশত টিকার মাধ্যমে রোগটি প্রতিরোধ করা যায়। বর্তমানে ব্যাকটেরিয়ার মৃতকোষ দিয়ে তৈরি টিকা নির্দিষ্ট বিরতির পর তিনটি ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। সাধারণভাবে DPT অর্থাৎ ডিপথেরিয়া হুপিং কাশি ও ধনুষ্টংকারের টিকা নামে পরিচিত এটি একই ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয়। শিশুদের মধ্যেও সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে হুপিং কাশি দমনে বাংলাদেশ সাফল্য অর্জন করেছে। [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]
আরও দেখুন জাতীয় টিকা দিবস; টিকাদান; সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি।