সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (Extended Programme on Immunisation/EPI) ডিপথেরিয়া, হুপিংকফ, ধনুষ্টংার, যক্ষ্মা, পোলিও এবং হাম- শিশুদের এই ৬টি রোগের প্রতিষেধক টিকাদান কর্মসূচি। এসব রোগ টিকাদানে প্রতিরোধ্যযোগ্য। এই রোগগুলি নির্মূল করার উদ্দেশ্যে বিশ্ব ব্যাংক ‘শিশু টিকাদান কর্মসূচি’ গ্রহণ করে। বাংলাদেশে ১৯৮৫ সালের মধ্যে ১২ থেকে ২৩ মাস বয়সী মাত্র ২ শতাংশের মতো শিশুকে এসব রোগের বিরুদ্ধে টিকাদান সম্ভব হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের উদ্যোগে ১৯৮০-র দশকের শুরুতে কার্যক্রমটি শুরু হলেও ১৯৮৫ সাল নাগাদ সেটা চালু হয়। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি নামে অভিহিত এই কার্যক্রম কয়েক বছরের মধ্যে উলেখযোগ্য সাফল্য লাভ করে। ১৯৯৩ সাল নাগাদ প্রায় ৭৪% শিশুকে টিকা দেওয়া হয় এবং ১৯৯৮ সালে কয়েকটি ক্ষেত্রে তা প্রায় ৮৫ শতাংশে পৌঁছায়। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির ছয়টি টিকার মধ্যে কেবল পোলিও টিকা মুখে খাওয়ানো হয়, বাকি সবগুলিই ইনজেকশন। পোলিও টিকার তিন ডোজের মধ্যে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি তৃতীয় ডোজটি দেয়। প্রথম দুটি ডোজ দেওয়া হয় পোলিও নির্মূল কর্মসূচির বিশেষ কার্যক্রমের অধীনে। ১৯৯৫ সালে সরকারের গৃহীত এই শেষোক্ত কর্মসূচি প্রত্যেক বছর দুই দিন জাতীয় টিকাদান দিবস হিসেবে নির্ধারিত আছে, যা ব্যাপক অংশগ্রহণের সুবিধার্থে শীতকালের শুষ্ক মাসগুলিতেই পালিত হয়। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির জন্য সার্বজনীন শিশু টিকাদানে আজ বাংলাদেশ অনন্য সাফল্য অর্জন করেছে। প্রধানত সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কল্যাণেই ১৯৯৭ থেকে ২০০২ পর্যন্ত বহু লক্ষ শিশুর মৃত্যু এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (ICDDR,B) পরিচালিত ব্যয়ের হিসাবে দেখা যায় যে, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি অনুযায়ী একটি শিশুকে সম্পূর্ণ টিকাদানের আওতায় আনতে খরচ পড়ে ১১.৭৬ ডলার, যা উন্নয়শীল দেশের শিশু প্রতি গড় খরচ ১৫ ডলার থেকে যথেষ্ট কম। বর্তমান সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির খরচ জিডিপি-র প্রায় ০.০৬%। বাংলাদেশের বাজেটে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা খাতে বর্তমান বরাদ্দ জনপ্রতি প্রায় ৩.৫ ডলার, যা সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় টিকাদানের খরচ (শিশু প্রতি ১১.৭৬ ডলার) থেকে অনেক কম, কিন্তু সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কারণে মৃত্যু হ্রাসের ফলে খরচের সাশ্রয় হয়েছে মাথাপিছু প্রায় ১৩৬ ডলার। [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]
আরও দেখুন জাতীয় টিকা দিবস; টিকাদান।