সিদ্দিকী, মোহাম্মদ আবদুর রশিদ
সিদ্দিকী, মোহাম্মদ আবদুর রশিদ (১৮৯৪-১৯৫০) সম্পাদক, সাহিত্যিক ও গবেষক। কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার কাকারা গ্রামে জন্ম। স্বগ্রাম থেকে উচ্চ প্রাইমারি পরীক্ষা পাস করে তিনি কক্সবাজার মধ্য বাঙ্গালা বিদ্যালয়ে কিছুদিন লেখাপড়া করেন। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার এখানেই সমাপ্তি ঘটে। পরে পত্রিকা প্রকাশের বাসনা নিয়ে তিনি চট্টগ্রামে আসেন এবং ১৩২৬ বঙ্গাব্দের (১৯১৯) বৈশাখ মাসে সাধনা নামে একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেন। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ কিছুকাল এর যুগ্মসম্পাদক ছিলেন। পত্রিকাটি চার বছর টিকে ছিল। এ সময়ে রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখের রচনা এতে প্রকাশিত হয়।
১৩২৯ বঙ্গাব্দের (১৯২২) ১৬ শ্রাবণ আবদুর রশিদের সম্পাদনায় কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় মোসলেম জগৎ। এতে ‘সময় থাকিতে সাবধান, বুঝে চল বৃটিশ’ শীর্ষক সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রকাশের জন্য তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯২৬ সালে তিনি রক্তসেতু নামে আরেকটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন; কিস্ত্ত তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার ভাষাতাত্ত্বিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে চট্টগ্রামী ভাষাতত্ত্ব (১৯৪৬), চট্টগ্রামের ভাষাতত্ত্ব শীর্ষক গ্রন্থ প্রকাশ করেন। তাঁর অন্যান্য রচনা হলো: উপন্যাস উপেন্দ্রনন্দিনী (১৯১৯), জরিনা (১৯২৬), প্রণয়-প্রদীপ, নুরুন্নেহার ও মেহেরুন্নেছা; কাব্য রোস্তম সোহরাব (১৯১৬), যবনবধ কাব্য (১৯৪৪) ও পাকিস্তান বিজয় কাব্য (১৯৪৮); পঞ্জিকা মোসলেম জগৎ পঞ্জিকা (১৯৩৮)।
আবদুর রশিদ রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন। তিনি ১৯৩৮ সালে চকরিয়া থানা মুসলিম লীগের সেক্রেটারি ও কক্সবাজার মহকুমা মুসলিম লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। এছাড়াও দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি কাকারা ইউনিয়ন বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। তিনি ‘বেগম খোশ’ নামে একটি পেটেন্ট ওষুধ বের করে প্রচুর বিত্তের মালিক হন। কাকারা গ্রামে মাদ্রাসা, গ্রামরক্ষক সমিতি, পল্লীমঙ্গল সমিতি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি অনেক জনহিতকর কাজ করেন। ১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ স্বগ্রামে তাঁর মৃত্যু হয়। [শফিউল আলম]