শ্রাদ্ধ

শ্রাদ্ধ  হিন্দুশাস্ত্রানুযায়ী পিতৃপুরুষের উদ্দেশে দান-ধ্যান ও অতিথিভোজন অনুষ্ঠান। সাধারণত মৃত ব্যক্তির সন্তান বা আত্মীয়-স্বজনরা এ অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। অবশ্য ব্যক্তি নিজেও মৃত্যুর পূর্বে এ কাজ করে যেতে পারে।

শ্রাদ্ধ প্রধানত তিন প্রকার: আদ্যশ্রাদ্ধ, আভ্যুদয়িক বা বৃদ্ধিশ্রাদ্ধ ও সপিন্ডীকরণ। আদ্যশ্রাদ্ধ অশৌচান্তে মৃত ব্যক্তির উদ্দেশে করণীয়। বর্ণভেদে ব্যক্তির মৃত্যুদিবসের ১১, ১৫ বা ৩০ দিন পরে এটি অনুষ্ঠিত হয়। মৃত ব্যক্তির পরিবারের লোকজন এ-কদিন ফলমূল, নিরামিষ এবং লবণ ছাড়া আতপ চালের ভাত খায়। শ্রাদ্ধের আগের দিন মৃত ব্যক্তির পুত্ররা মাথার চুল ফেলে দেয় এবং শাস্ত্রীয় নিয়ম-কানুনসমূহ পালন করে। শ্রাদ্ধের দিন সামর্থ্য অনুযায়ী আত্মীয়-স্বজনসহ পাড়া-প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ায়। নিকট অতীতে ধনী ব্যক্তিরা কয়েক হাজার পর্যন্ত লোককে খাওয়াত; বর্তমানে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের কারণে সেই মানসিকতার পরিবর্তন ঘটেছে। শ্রাদ্ধ উপলক্ষে  ব্রাহ্মণ ও আত্মীয়-স্বজনদের নানারকম দান-ধ্যানও করা হয়।

উপনয়ন,  বিবাহ ইত্যাদি শুভকাজের পূর্বে পিতৃপুরুষের আশীর্বাদ কামনায় যে শ্রাদ্ধ করা হয়, তার নাম আভ্যুদয়িক বা বৃদ্ধিশ্রাদ্ধ। আর সপিন্ডীকরণ শ্রাদ্ধ হলো যা ব্যক্তির মৃত্যুর এক বছর পরে করা হয়। এ তিনটি ছাড়া আরও কয়েক প্রকার শ্রাদ্ধ আছে। যেমন, মহালয়া প্রভৃতি বিশেষ পর্বোপলক্ষে এবং বিশেষ তিথিতে কারও মৃত্যু হলে তার উদ্দেশে যে শ্রাদ্ধ করা হয় তার নাম পার্বণশ্রাদ্ধ। পার্বণশ্রাদ্ধে সাধারণত পিতৃপক্ষের তিন পুরুষ ও মাতৃপক্ষের তিন পুরুষের উদ্দেশ্যে পিন্ড দান করা হয়। এক সঙ্গে একজন মৃত ব্যক্তির উদ্দেশে যে শ্রাদ্ধ করা হয় তার নাম একোদ্দিষ্ট শ্রাদ্ধ। অন্বষ্টকা নামেও এক প্রকার শ্রাদ্ধ আছে; তবে এর প্রচলন কম।

হিন্দুদের অন্যতম প্রধান তীর্থস্থান গয়ায় বিষ্ণুপাদপদ্মে শ্রাদ্ধ করা প্রশস্ত। অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি পিতা-মাতার শ্রাদ্ধ গয়াধামে গিয়ে করে থাকেন। শ্রাদ্ধ বিষয়ে শূলপাণির শ্রাদ্ধবিবেক ও রঘুনন্দনের শ্রাদ্ধতত্ত্ব বঙ্গদেশে অতি প্রামাণ্য গ্রন্থরূপে বিবেচিত হয়।  [সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়]