শায়েস্তা খান মসজিদ
শায়েস্তা খান মসজিদ বর্তমানে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে মিটফোর্ড হাসপাতালের পেছনে বাবুবাজার এলাকায় অবস্থিত। পূর্বে এ এলাকাকে কাটরা পুকুরতলী বলা হতো। সম্ভবত মসজিদটি সুবাহদার শায়েস্তা খানের প্রাসাদ এলাকার ভেতরে অবস্থিত ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে এক অগ্নিকান্ডে মসজিদটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং পরে তা পুনর্নির্মাণ করা হয়। ওই সময় পূর্বদিকে একটি বারান্দা সংযুক্ত করা হয়।
ইট, চুন-সুরকি নির্মিত আয়তাকার (১৪.১৩ মি × ৭.৬২ মি) মসজিদের বাইরের চারকোণে চারটি অষ্টভুজাকৃতির পার্শ্ব বুরুজ আছে। এগুলি মসজিদের সমান্তরাল বপ্র (Parapet) ছাড়িয়ে উপরে উঠে গেছে এবং এর শীর্ষে রয়েছে কলস নকশা শোভিত ছত্রী। মসজিদটিতে প্রবেশের জন্য পূর্বদিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণে রয়েছে একটি করে খিলানযুক্ত প্রবেশপথ। যথারীতি কেন্দ্রীয় খিলানপথটি প্রশস্ত এবং একটি আয়তাকার প্রক্ষিপ্ত অংশের মধ্যে স্থাপিত। প্রক্ষেপণের দুইপ্রান্তে আলংকারিক মিনার আছে।
পূর্বদিকের তিনটি প্রবেশ পথের প্রত্যেকটিতে আছে দুটি করে খিলান। বাইরের খিলানটি ভেতরেরটি অপেক্ষা উঁচু, প্রশস্ত এবং অর্ধগম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত। কিবলা দেওয়ালে তিনটি অবতল মিহরাব আছে। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি বড় ও অর্ধ-অষ্টভুজাকৃতির এবং এর বাইরের দিকে প্রক্ষিপ্ত অংশ রয়েছে। কেন্দ্রীয় খিলান পথের প্রক্ষেপণে দু’পাশে আলঙ্কারিক মিনারের অনুরূপ মিনার এখানেও এক সময়ে ছিল। প্রচলিত রীতিতে মসজিদের অভ্যন্তর ভাগকে তিনটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয়টি বর্গাকার এবং পার্শ্ববর্তী দুটি আয়তাকার অংশের চেয়ে বড়। অষ্টভুজী ড্রামের উপর নির্মিত তিনটি গম্বুজ দ্বারা মসজিদটি আচ্ছাদিত। সম্ভবত গম্বুজগুলির শীর্ষদেশ পদ্ম এবং কলস নকশা শোভিত ছিল, যা এখন দেখা যায় না। কেন্দ্রীয় গম্বুজটি তুলনামূলকভাবে বড়। দুটি প্রশস্ত খিলান এবং ত্রিভুজাকৃতির পেন্ডেন্টিভ গম্বুজটির ভার বহন করছে।
মসজিদের আদি অলংকরণের চিহ্ন এখন আর অবশিষ্ট নেই। মসজিদটি অভ্যন্তর এবং বাইরে প্লাস্টার দ্বারা আবৃত এবং চুনকাম করা। ভেতরের দেওয়ালে রঙিন প্রলেপ দেওয়া। মিহরাব এবং তার আশেপাশের এলাকা বিভিন্ন ধরনের রঙিন চীনা মাটির টালির টুকরো দিয়ে আধুনিকভাবে সজ্জিত। বপ্র এবং গম্বুজের ড্রামের নিচের অংশে পদ্ম পাপড়ি নকশার একটি সারি ধ্বংসোন্মুখ অবস্থায় এখনও টিকে আছে।
কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথের উপরে একটি ফারসি শিলালিপি দেখা যায়। শিলালিপি অনুযায়ী সুবাহদার শায়েস্তা খান মসজিদটি নির্মাণ করেন। নির্মাণ তারিখ এবং শিলালিপির অন্য শব্দগুলির পাঠোদ্ধার সম্ভব হয় নি। তা সত্ত্বেও শায়েস্তা খানের প্রথম সুবাহদারিকালে (১৬৬৩-১৬৭৮) মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
বাংলায় মুসলিম স্থাপত্যে এ মসজিদ একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য সংযোজন করেছে। এতদিন পর্যন্ত কোন ইমারতের পার্শ্ববুরুজ দেওয়ালের বাইরে প্রক্ষিপ্ত করে নির্মিত হতো। কিন্তু এখানে এগুলিকে দেওয়ালের মধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে। এরপর থেকে বাংলার মুসলিম স্থাপত্যে সীমিতভাবে হলেও এই বৈশিষ্ট্যের প্রয়োগ দেখা যায়, যেমন- নারায়ণগঞ্জের বিবি মরিয়ম মসজিদ (আনুমানিক সতেরো শতক), চট্রগ্রামের বকশী হামিদ মসজিদ (আনুমানিক ১৬৯২) এবং ঢাকার আজিমপুর মসজিদ (১৭৪৬)। [এম.এ বারি]