শামসুজ্জোহা, শহীদ মুহম্মদ

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৫:৫৪, ১৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
মুহম্মদ শামসুজ্জোহা

শামসুজ্জোহা, শহীদ মুহম্মদ (১৯৩৪-১৯৬৯)  শিক্ষাবিদ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম শহীদ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুরা জেলায় তাঁর জন্ম। তিনি বাঁকুরা জেলা স্কুল থেকে ১৯৪৮ সালে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫০ সালে বাঁকুরা ক্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে আই.এসসি পাস করেন। এরপর তিনি পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে ভর্তি হন। রসায়ন শাস্ত্রে তিনি ১৯৫৩ সালে বি.এসসি (সম্মান) এবং ১৯৫৪ সালে এম.এসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন শামসুজ্জোহা বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে তিনি ১৯৫৭ সালে পুনরায় বি.এসসি (সম্মান) এবং ১৯৬৪ সালে পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

মুহম্মদ শামসুজ্জোহা ১৯৬১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং একই বছর উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের লেকচারার পদে যোগদান করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি রিডার পদে উন্নীত হন। ১৯৬৫ সালে তিনি শাহ মখদুম হলের আবাসিক শিক্ষক এবং ১৯৬৬ সালে প্রাধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন। ১৯৬৮ সালের ১ মে থেকে মৃত্যুকাল পর্যন্ত তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করেন।

মুহম্মদ শামসুজ্জোহা ছিলেন ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৯-এর ভেতরে প্রথম শহীদ হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে তিনি আন্দোলনকামী জনতার বিজয় অনিবার্য করেছেন। ১৯৬৮ সালের শেষ দিক থেকে আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন দানা বাঁধে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি পাকিস্তানী বাহিনী ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামানকে হত্যা করে এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নিহত হন তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্ত সার্জেন্ট জহুরুল হক। এসব হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশি হামলায় বহু ছাত্র আহত হয়। পরদিন ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। স্থানীয় প্রশাসন ঐদিন বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কে ১৪৪ ধারা জারি করে। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা সামরিক বাঁধা উপেক্ষা করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ড. জোহা অকুস্থলে ছুটে যান এবং উত্তেজিত ছাত্রদের ডরমিটরিতে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালান। তিনি সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি না চালানোর অনুরোধ করেন। তাঁর অনুরোধ উপেক্ষা করে সেনাবাহিনী মিছিলের উপর গুলিবর্ষণ করে এবং ড. জোহা গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পূর্বে ড. জোহা তাঁর ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আমি বলছি গুলিবর্ষণ হবে না। যদি গুলি করা হয় তবে কোন ছাত্রের গায়ে লাগার আগে তা আমার গায়ে লাগবে। ড. জোহা তাঁর কথা রেখেছিলেন। তাঁকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাহিত করা হয। তাঁর মৃত্যু আইয়ুব বিরোধী গণআন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে। ড. শামসুজ্জোহার মৃত্যুতে সমগ্র দেশে বিক্ষোভের জোয়ার প্রবাহিত হয় এবং এর ফলে আইয়ুব সরকারের পতন ত্বরান্বিত হয়।  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেশের জন্য শামসুজ্জোহার সর্বোচ্চ ত্যাগের সম্মানে তাঁর নামানুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের নামকরণ করে জোহা হল।  [মোঃ মাহবুব মোর্শেদ]