শাড়ি

শাড়ি  ভারতীয় উপমহাদেশের নারীর পরিধেয় বস্ত্র বিশেষ। কখন কীভাবে শাড়ি উদ্ভূত হয়েছিল সে ইতিহাস খুব একটা স্পষ্ট নয়। তবে আবহমান বাংলার ইতিহাসে শাড়ির স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুগে যুগে বদলিয়েছে শাড়ির পাড়-অাঁচল, পরার ধরন আর বুনন কৌশল। ‘শাড়ি’ শব্দের উৎস সংস্কৃত ‘শাটী’ শব্দ থেকে। ‘শাটী’ অর্থ পরিধেয় বস্ত্র। ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদার প্রাচীন ভারতের পোশাক সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন যে তখন মেয়েরা আংটি, দুল, হার এসবের সঙ্গে পায়ের গোছা পর্যন্ত শাড়ি পরিধান করত, উপরে জড়ানো থাকত আধনা (আধখানা)। পাহাড়পুরের পাল আমলের কিছু ভাস্কর্য দেখেই তা অনুমান করা যায়। এই তথ্য অনুযায়ী বলা যায় যে, অষ্টম শতাব্দীতে শাড়ি ছিল প্রচলিত পোশাক।

ইতিহাসবিদ নীহাররঞ্জন রায়ের মতে, দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে সেলাই করা কাপড় পরার রেওয়াজ আদিম কালে ছিল না। এই সেলাইবিহিন অখন্ড বস্ত্র পুরুষের ক্ষেত্রে ‘ধুতি’ এবং মেয়েদের বেলায় ‘শাড়ি’ নামে অভিহিত হয়। বয়ন শিল্পের উৎপত্তির সঙ্গে শাড়ির সংযোগ রয়েছে। তখন যেহেতু সেলাই করার কৌশল জানা ছিল না তাই সেলাই ছাড়া টুকরা কাপড় পরাই ছিল শাস্ত্রীয় বিধান। এ সময়ে সেলাই ছাড়া কাপড় পরার রেওয়াজ উপমহাদেশের বাইরেও প্রচলিত ছিল। পৃথিবীর অন্যান্য সভ্যতায়, যেমন মিশর, রোম, গ্রিস-এ সেলাই ছাড়া বস্ত্র ঐতিহ্য হিসেবেই চালু ছিল। সেলাই করার জ্ঞান লাভ হওয়ার পর এই অখন্ড বস্ত্রই নানা এলাকায় বিচিত্ররূপে ও বিভিন্ন নামে রূপান্তরিত ও আদৃত হয়, যেমন ঘাগরা, সালোয়ার, কুর্তা, কামিজ প্রভৃতি। কিন্তু কয়েকটি এলাকায় ওই বসনখন্ড সেলাই ছাড়াই টিকে যায়। এসব এলাকা হচ্ছে আজকের বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, আসাম, কেরালা, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র প্রদেশ, গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, বিহার, পাঞ্জাব এবং পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ ও পাঞ্জাব। তাই বলা যায়, শাড়ি একমাত্র বাঙালি নারীর পরিধেয় নয়, যদিও বর্তমান যুগে বিশেষভাবে বাঙালি রমণীর পোশাক হিসেবেই শাড়ির অধিক পরিচিতি।

আজকের শাড়ি অখন্ড হলেও তার সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও বস্ত্র যা সেলাই করা অর্থাৎ অখন্ড নয়। শুধু শাড়ি পরার প্রথা আজ আর নেই, এর সঙ্গে অনিবার্য অনুষঙ্গ হিসেবে এসেছে ব্লাউজ এবং সেই সঙ্গে পেটিকোট বা সায়া নামের অন্তর্বাস। আদিকালে বর্তমান যুগের মতো শাড়ি পরার কায়দা ছিল না। কালিদাসের শকুন্তলার শাড়ি আর ভারতচন্দ্র-এর বিদ্যাসুন্দর কাব্যের নায়িকা বিদ্যার শাড়ি এক নয়। এ ভিন্নতা শুধু শাড়ির বৈচিত্র্যে নয়, শাড়ি পরার ধরনেও। এক কালে শাড়ি পরার দুটি ধরন ছিল, আটপৌরে ও পোশাকি। মেয়েরা শাড়ি পরত কোমর জড়িয়ে, পরার ধরন অনেকটা পুরুষের ধুতি পরার মতোই, যদিও পুরুষের মতো মেয়েদের পরিধেয়তে সাধারণত কোন কাছা থাকত না। আদিকালের বসনের মতো আজকের শাড়িও একখন্ড বস্ত্র যা দশ, এগারো কি বারো হাতের। শাড়ি পরার ধরনও সব জায়গায় এক নয়। কেরালা, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, উত্তর প্রদেশ, বাংলাদেশ ইত্যাদি জায়গায় শাড়ি পরার কায়দায় নিজ নিজ এলাকার বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত। শাড়ি পরায় পার্থক্য আছে বিভিন্ন শ্রেণি ও জীবিকাধারীর মধ্যেও। শাড়ির ইতিহাসের মতোই আছে শাড়ি পরার ধরনেরও ইতিহাস।

মূলত শাড়ি পরার আদলে আমূল পরিবর্তন ঘটে সেলাই অর্থাৎ সিয়ান শিল্প আবিষ্কারের পর থেকে। প্রাচীনকালে নারীর অধোবাসের একটু অংশ (বা বাড়তি অংশ) সামনে অথবা পেছনে ঝুলিয়ে রাখা হতো। কালক্রমে তা-ই বক্ষাবরণের উপরে স্থাপিত হতে থাকে এবং আরও পরে অবগুণ্ঠনের প্রয়োজনে মাথায় স্থান পায়। সিয়ান শিল্প আবিষ্কারের পর ব্যবহূত হয় ব্লাউজ। কিন্তু তারও আগে ছিল সেমিজ। সেমিজের দ্বিখন্ডিত রূপ-ই ব্লাউজ ও পেটিকোট। এসবই অন্তর্বাস ও অনুষঙ্গ হিসেবে সংযোজিত। দুবার জড়িয়ে অর্থাৎ দুপ্যাঁচ দিয়ে পরার ধরনটি বলতে গেলে নগরাঞ্চল থেকে উঠেই যায়। সেমিজ বা পেটিকোটের উপর শাড়িটিকে গিঠ দিয়ে প্রথমে ডানে পরে বাঁয়ে লম্বা ভাঁজ দিয়ে জড়িয়ে টেনে এনে ডান হাতের নিচ দিয়ে আলগা করে বাঁ কাঁধে অাঁচলের সামান্য অংশ রাখার যে ধরন, তার নাম ‘এক প্যাঁচ’। এ ধরন চালু ছিল সুদীর্ঘকাল। ‘এক প্যাঁচ’ ধরনের শাড়ি পরার অনেক সুবিধা ছিল একদিকে পর্দা রক্ষা, অন্যদিকে সংসারের কাজের সুবিধা। প্রয়োজনে ঢিলা অাঁচল কোমরে জড়িয়ে নেওয়া গেছে, সন্তান লালনে-পালনে ও শীত-বর্ষায় লম্বা অাঁচল মায়ের কাজে লেগেছে।

পরবর্তীকালে এ ধরনও পরিবর্তিত হয়েছে। পরার ধরনে এসেছে ‘কুচি পদ্ধতি’। এ পদ্ধতিতে শাড়িকে কোমরে পেঁচিয়ে সামনের অংশে কুচি পেটের উপর দিয়ে লতিয়ে বুক ঘিরে ছন্দোময় ভঙ্গিতে উপরে তুলে বাঁ কাঁধ ছুঁয়ে অাঁচলটিকে পিঠে ছেড়ে দেওয়া হয়। এভাবে পরা শাড়ির অাঁচল দ্বারা অবগুণ্ঠনের কাজও হয়। একালের অবগুণ্ঠনের স্টাইল আগের মতো নয়। অবগুণ্ঠন মানে আর মুড়ি ঘোমটা নয়, তা আব্রুর মাধ্যমে সৌন্দর্য পরিস্ফুট করার পন্থা। এখন অবগুণ্ঠন মানে মাথার তালুর কাছে আলতো করে অাঁচল তুলে দেওয়া। শাড়ির ‘কুচি’র প্রাথমিক চিন্তা এসেছে অবাঙালির কাছ থেকে। ঘাগরার ঘেরাও কুচির প্রভাবই লক্ষ্য করা যায় শাড়ির কুচিতে। উল্লেখ্য, ঘাগরা কুচি দিয়ে সেলাই করা অধোবাস। শাড়িকে পরিধেয় হিসেবে গ্রহণ করেছেন এমন অবাঙালিরাই প্রথমে কুচি পদ্ধতি চালু করেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধ ও বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত শাড়ির কুচির এ স্টাইল চালু ছিল। অাঁচল লম্বা করে রাখা হতো মাথায় ঘোমটা দেওয়ার জন্য। ক্রমে ক্রমে শাড়ির কুচির অংশ বাড়তে থাকে, শাড়ি গায়ের সঙ্গে টেনে পরা হতে থাকে, কমে আসতে শুরু করে শাড়ির ঢিলে-ঢালা কায়দাটি; কোমর, বুক পিঠ সর্বত্র শাড়ির অবস্থান হয়ে ওঠে টান টান, বিন্যস্ত, পরিপাটি, কুচির ধরনও পাল্টাতে থাকে। শাড়ির আদি পর্বে কুচি ছিল সামনের দিকে প্রস্ফুটিত ফুলের মতো ছড়িয়ে দেওয়া, পরে তার ভঙ্গি হয় একের পর এক ভাঁজ দিয়ে সুবিন্যস্ত করা।

এ কুচি পদ্ধতি বাঙালি সমাজে শুরুতে সমালোচিত হয়েছিল। যারা সাহস করে পরেছেন তাদের খ্রিস্টান, ব্রাহ্ম কিংবা হিন্দুস্থানি বলে কটাক্ষ করা হতো। তবে বাঙালি সমাজে শিক্ষিতা ও আধুনিকা মেয়েরাই এ পদ্ধতি আগে গ্রহণ করে। কুচি পদ্ধতিকে প্রায় আজকের রূপে প্রথম চালু করেন জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের মেয়েরা। কেবল রূপদান নয়, বাঙালি সমাজে এ প্রথাকে জনপ্রিয় করার কৃতিত্বও তাদের। তবে ‘এক প্যাঁচ’ প্রথা আজও অবলুপ্ত নয়। প্রবীণ মহিলারা এর চল অব্যাহত রেখেছেন, তরুণীরাও বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে সখ করে এভাবে শাড়ি পরে। এক প্যাঁচ ধরনটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে শহরতলি ও পল্লী এলাকা জুড়ে।

প্রাক্-শিল্পবিপ্লব যুগে বাংলাদেশ ছিল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম বস্ত্রশিল্প কেন্দ্র। খ্রিস্টাব্দ-পূর্ব কাল থেকেই এদেশে বস্ত্রশিল্পের বুনিয়াদ গড়ে ওঠে। ঢাকা, কাপাসিয়া, সোনারগাঁও, দিনাজপুর, বগুড়া, রাজশাহী, নোয়াখালী, কুষ্টিয়া, খুলনা, কুমিল্লা বস্ত্রশিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। রিয়াজুস সালাতিন গ্রন্থে (গোলাম হোসাইন সলিম, ১৭৮৮) সোনারগাঁয়ে মসলিন উৎপাদিত হতো বলে উল্লেখ আছে। আরও উল্লেখ আছে যে, সরকার ঘোড়াঘাটে (দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, রাজশাহী ও মালদা নিয়ে গঠিত) গঙ্গাজলী বস্ত্র উৎপাদনের খ্যাতির কথা। সাদুল্লাপুর, নিশ্চিন্তপুর, আমিনপুর জেলায় বিখ্যাত ‘পাবনাই পাড়’ কাপড় তৈরি হতো। নোয়াখালীর যুগদিয়া লক্ষ্মীপুর ও কলিন্দার বস্ত্রের জন্য খ্যাত ছিল। কুমারখালি ও সাতক্ষীরার শাড়িও সুনাম অর্জন করেছিল। মগ রমণীদের সুতি ও রেশমি বস্ত্রবয়নের কথা লেখা আছে হান্টারের ও বার্ডউডের গ্রন্থে।

বাংলাদেশের মসলিন ও জামদানির খ্যাতি ছিল বিশ্বজোড়া। সুতিবস্ত্রের মতোই বিখ্যাত হয়েছিল বাংলার রেশমি বস্ত্রও। এসব ছাড়াও ঢাকায় নানা ধরনের কাপড় বোনা হতো। টেলরের মতে, ১৮৪০ সালে বস্ত্রশিল্প যখন ধ্বংসের মুখে তখনও ঢাকায় ৩৬ রকমের কাপড় বোনা হতো। কালক্রমে যান্ত্রিক উৎপাদনের প্রসার ও নানা জটিলতায় তাঁতশিল্প সীমিত হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত সব পরিবারের মহিলারা শাড়ি পরেন। তবে তাদের শাড়ি পরার ধরন এবং শাড়ির মানের মধ্যে ব্যবধান অনেক। বিষয়টি পরিবারের আর্থিক সঙ্গতি, সামাজিক প্রতিপত্তি এবং ব্যক্তিগত রুচিবোধের ওপর নির্ভর করে। বাজারে এখন হরেক রকমের শাড়ির আবির্ভাব ঘটেছে, যেমন বেনারসি, জামদানি, সিল্ক, তাঁতের শাড়ি, মিলের শাড়ি, সুতি শাড়ি, জর্জেট, শিফন, টাঙ্গাইল শাড়ি, পাবনার শাড়ি, ঢাকাই শাড়ি, বিভিন্ন নামের প্রিন্ট শাড়ি ইত্যাদি। এছাড়া রয়েছে বাটিক, বুটিক, টাই-ডাই, ব্লক-প্রিন্ট, ফেব্রিক, নকশি কাঁথাসহ হাজারো রকম শাড়ি। এর মধ্যে সাধারণ ব্যবহার্য শাড়িগুলি হয় সুতির এবং জর্জেটের। সুতি শাড়ির মধ্যে অনেক মানসম্পন্ন শাড়ি এবং সাধারণ শাড়িও রয়েছে। পছন্দের শাড়ি বাজারে পাওয়া গেলেও উচ্চমূল্যের কারণে তা থাকে অনেকের নাগালের বাইরে। কাতান, জামদানি, সিল্ক, বেনারসি ইত্যাদি উৎসব/অনুষ্ঠানে পরার শাড়ি। ধনী পরিবারের মেয়েদের কাছে এসব নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হলেও মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরা তা বিয়ে বা অন্য কোন বড় অনুষ্ঠান ছাড়া পরার সুযোগ পান না। আজকাল বাংলাদেশের মেয়েরা শাড়ি ছাড়াও সালোয়ার-কামিজ, ম্যাক্সি ইত্যাদি পোশাক পরে। তবে অনুষ্ঠানাদিতে প্রায় সব পরিবারের মেয়েরাই শাড়ি পরে। সুতি শাড়ি সব মহলে সাধারণ ব্যবহার্য শাড়ি হিসেবে সমাদৃত। তবে তার মান ও আভিজাত্য নির্ভর করে উৎকৃষ্ট সুতা, বুনন এবং ডিজাইনের ওপর।

বাংলাদেশের অনেক জায়গায় বিভিন্ন মানের বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি তৈরি হয়। বাংলাদেশের তৈরি শাড়ি  জামদানি, কাতান, রাজশাহী সিল্ক, মণিপুরী শাড়ি, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, বালুচরি শাড়ি, পাবনার শাড়ি, ঢাকাই শাড়ি ইত্যাদি শুধু দেশে নয়, বিদেশেও মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কিন্তু তাঁত এবং মিলের শাড়ি উৎপাদকদের চিরকালের অভিযোগ তারা দেশে প্রস্ত্ততকৃত শাড়ির প্রকৃত মজুরি পান না। তাদের মতে, এর প্রধান কারণ প্রতিবছর বৈধ ও অবৈধ পথে ভারত থেকে প্রচুর শাড়ি বাংলাদেশে আসে। ভারতীয় সুতি এবং বিভিন্ন চটকদার শাড়ির দৌরাত্ম্যে দেশীয় শাড়ির বাজার সংকুচিত হয়ে আসছে। ফলে আমাদের দেশের প্রকৃত তাঁতিরা এবং মিলের শাড়ি প্রস্ত্ততকারকরা নায্য মূল্য পাচ্ছেন না। ভারতীয় শাড়িগুলি বাংলাদেশে তৈরি তাঁতের শাড়ি এবং মিলের শাড়ির চেয়ে দামে সস্তা ও সেগুলির ডিজাইনও চমৎকার। সাধারণত ক্রেতাসাধারণ কম দামে চটকদার শাড়ি ক্রয়ে বেশি আকৃষ্ট হয়।

বিয়ে, বৌভাত, মেহেদি অনুষ্ঠান, গায়ে হলুদ ইত্যাদি অনুষ্ঠানে শাড়িই অন্যতম পোশাক। বিয়ে এবং বৌভাত অনুষ্ঠানে বিয়ের কনেকে কারুকার্যমন্ডিত উজ্জ্বল রঙের বেনারসি, কাতান শাড়ি পরিয়ে সাজানো হয়। আবার এসব অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত অতিথিরাও যার যার সাধ্যমতো দামি শাড়ি পরেন। তবে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে ছেলে পক্ষ এবং কনে পক্ষ একই রঙের অথবা সম্ভব হলে দুই রঙের বাহারি শাড়িতে নিজেদের সাজাতে চান। মীলাদ মাহফিল, ওয়াজ মাহফিল, ঈদুল আযহা, ঈদুল ফিত্‌র, শবে বরাআত, শবে কদর প্রভৃতি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ধবধবে সাদা, হালকা এবং ধূসর রঙের শাড়ি পরা হয়। তরুণীরা ঈদের দিনে চটকদার সালোয়ার কামিজ, কুর্তা, স্কার্ট এবং রঙিন উজ্জ্বল শাড়ি পরে, কিন্তু বর্ষীয়সী মহিলারা হালকা রঙের বা সাদা শাড়ি পরেন।

সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে যেকোন ধরনের উজ্জ্বল শাড়ি পরার রেওয়াজ আছে। তবে বাংলা নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস,  বিজয় দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি ইত্যাদি দিনে বিশেষ ধরনের শাড়ি পরা হয়। বাংলা নববর্ষে লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরার রীতি দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত। অন্যান্য দিবসে উজ্জ্বল রঙের শাড়ি পরলেও একুশে ফেব্রুয়ারি কালো পাড়ের সাদা শাড়ি পরা হয়।

বর্তমানে বাংলাদেশে শাড়ির মধ্যে তাঁতের শাড়িই প্রধান, পাশাপাশি ব্যবহূত হচ্ছে মিলের শাড়িও। মসলিন এতকাল প্রায় অবলুপ্ত হয়ে গেলেও বর্তমানে নতুন আঙ্গিকে কিছু কিছু মসলিন তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়িতেও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আনা হয়েছে বৈচিত্র্য এবং নিত্যনতুন নকশা। তবে শৌখিন মহিলাদের কাছে জামদানির বুননে পুরানো ডিজাইনের কদরও রয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাতেই শাড়ি তৈরি হচ্ছে তাঁতে এবং মিলে। এর মধ্যে ঢাকা, ডেমরা, রূপগঞ্জ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁও, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, যশোর, পাবনা, রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ ইত্যাদি অঞ্চল প্রধান। বিশেষত টাঙ্গাইল ও পাবনার তাঁতের শাড়ি এবং ঢাকাই বিটি, কাতান, বেনারসি ও সিল্ক নতুন আঙ্গিকে আবির্ভূত হচ্ছে। এসব শাড়ি বাংলাদেশের বাইরেও অনেক জায়গায় সমাদৃত।  [শাওয়াল খান]