শবে কদর
শবে কদর ইসলাম ধর্মমতে বছরের সর্বাধিক বরকতময় রাত। কুরআন ও হাদিসে এর নাম ‘লায়লাতুল কাদ্র’; বাংলাদেশে শবে কদর হিসেবেই পরিচিত। শব ফারসি শব্দ, অর্থ রাত, কদর আরবি, অর্থ মর্যাদা, ক্ষমতা। শবে কদর অর্থ ‘মর্যাদার রাত’। এই পবিত্র রাতে হেরা গুহায় নবী করীম (স.)-এর নিকট আল-কুরআনের প্রথম সূরার (‘আলাক) পাঁচটি আয়াত নাযিল হয়।
শবে কদর সম্পর্কে আল-কুরআনে বলা হয়েছে: ‘নিশ্চয়ই আমি কুরআন অবতীর্ণ করিয়াছি মহিমান্বিত রজনীতে; আর মহিমান্বিত রজনী সম্বন্ধে তুমি কী জান? মহিমান্বিত রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ; সেই রাত্রিতে ফিরিশতাগণ ও রূহ্ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাহাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে; শান্তি, শান্তি, সেই রজনীর উষার আবির্ভাব পর্যন্ত’ (৯৭ঃ ১-৫)। এই মহিমান্বিত রাতটি মুসলমানদের জন্য আল্লাহর এক বিরাট রহমত, কারণ এই একটি মাত্র রাতে ইবাদত করে তারা হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা অধিক সওয়াব পেতে পারে।
শবে কদরের তারিখ সম্পর্কে মতভেদ আছে। কুরআনে রমজান মাসের উল্লেখ আছে, তবে কোনো নির্দিষ্ট তারিখের কথা নেই। হাদিসে এর তারিখ সম্পর্কে মহানবীর (স.) বিভিন্ন উক্তি আছে: ‘রমজানের শেষ দশকের মধ্যে একটি বে-জোড় রাত, শেষ সাত দিনের মধ্যে একটি বে-জোড় রাত, ২১তম, ২৩তম ও ২৫তম রাতের বা ২৫তম, ২৭তম ও ২৯তম রাতের মধ্যে একটি।’ মহানবী (স.) মুমিনগণকে এই রাতে অত্যধিক ইবাদত করার আদেশ দিয়েছেন। অধিকাংশ আলিম মনে করেন যে, রমজানের ২৭তম রাতই শবে কদর। বাংলাদেশেও এই মত প্রচলিত। শবে কদরের রাত জেগে কেউ ইবাদত করলে তার অতীতের সমুদয় পাপ মার্জনা করা হয়।
বাংলাদেশে গভীর ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে শবে কদর উদ্যাপিত হয়। ইশার নামাযের সময় মুসল্লিগণ মসজিদে একত্রিত হন এবং অনেকে শেষরাত পর্যন্ত নফল ইবাদত করেন। শবে কদরের পরদিন (২৭তম রমজান) বাংলাদেশে সরকারি ছুটি থাকে। রেডিও-টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে ও পত্র-পত্রিকায় বিশেষ বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সারাদেশে একটি ভাবগাম্ভীর্যময় ধর্মীয় অবস্থা বিরাজ করে। [এম.এ কাসেম]