মেহেরপুর সদর উপজেলা

মেহেরপুর সদর উপজেলা (মেহেরপুর জেলা)  আয়তন: ২৭৬.১৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৪০´ থেকে ২৩°৫২´  উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৩৪´ থেকে ৮৮°৪৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে গাঙ্গনী উপজেলা ও পশ্চিমবঙ্গ (ভারত), দক্ষিণে দামুরহুদা ও মুজিবনগর উপজেলা, পূর্বে গাঙ্গনী ও আলমডাঙ্গা উপজেলা, পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গ (ভারত)।

জনসংখ্যা ২৫৬৬৪২; পুরুষ ১২৭৩০০, মহিলা ১২৯৩৪২। মুসলিম ২৫২৩২৩, হিন্দু ৪১৯৯, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ১১৪ এবং অন্যান্য ৫।

জলাশয় ভৈরব ও কাজলা নদী এবং চাঁদ বিল ও ভাদগরি বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন মেহেরপুর থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে। মেহেরপুর পৌরসভা গঠিত হয় ১৯৬০ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
৬১ ১০৪ ৪৩১৩৩ ২১৩৫০৯ ৯২৯ ৬৬.৩ ৪৫.৯
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৫.১৮ ৭১ ৪৩১৩৩ ২৮৪১ ৬৬.৩
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আমঝুপি ১৯ ১৫৪৫৫ ২৬৭০০ ২৭৮৮৬ ৫৬.০
আমদহ ১৪ ৮১১৬ ১৫০৪০ ১৫৫৬০ ৩৭.৬
কুতুবপুর ৫৭ ১৬৭০৬ ২১০১৪ ২১৪৯৭ ৪২.৫
পিরোজপুর ৯৫ ১৩৯১১ ২৪৩৭৬ ২৩৯৭৮ ৪৩.২
বুড়িপোতা ৩৮ ১০১২৩ ১৮৩৮৬ ১৯০৭২ ৪৫.৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ বল্লভপুর মিশন, স্বামী নিগমানন্দের আশ্রম (কুতুবপুর), আমঝুপি কুঠিবাড়ি (আমঝুপি), মির্জাপুর দরগা, কালীতলার মন্দির, বরকত বিবির মাযার (বরকন্দাজ পাড়া)।

ঐতিহাসিক ঘটনা মেহেরপুর শহরের অদূরে নীলকরদের আমঝুপি কুঠিবাড়ি অবস্থিত একসময় ছিল নীলকরদের নির্যাতন কেন্দ্র।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল পাকবাহিনী মেহেরপুর শহরের আমঝুপিতে ৮ জন নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। ২১ এপ্রিল উপজেলার বুড়িপোতা পুকুরপাড়ে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। ১২ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা যাদবপুরে পাকসেনাদের ক্যাম্পে হামলা চালায়। মেহেরপুর কলেজের পেছনে ১টি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে।

বিস্তারিত দেখুন মেহেরপুর সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৮।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৩৩৪, মন্দির ৭, গির্জা ১, মাযার ৩। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: হীরু মোল্লার মসজিদ (পিরোজপুর), বাগু দেওয়ানের মাযার, মির্জাপুর দরগাহ, মেহেরপুর শিব মন্দির (মেহেরপুর), বলরামহাড়ির সমাধি মন্দির (মালোপাড়া), ভবনন্দপুরের মন্দির (আমদহ), কালীতলার মন্দির, আলমপুর-শ্যামপুর মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৯.৪%; পুরুষ ৫০.৩%, মহিলা ৪৮.৪%। কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৬, কারিগরি বিদ্যালয় ২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৩, মাদ্রাসা ৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মেহেরপুর সরকারি কলেজ (১৯৬২), মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৮৪), মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয় (১৮৫৪), মেহেরপুর মডেল হাইস্কুল (১৮৫৯), মেহেরপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় (১৯৪০)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: আযম; সাপ্তাহিক: পরিচয় (১৯৮৫), চুম্বক (১৯৮৬)। অবলুপ্ত:  সাপ্তাহিক: মুজিবনগর (১৯৮৮), মেহেরপুর (১৯৯২); পাক্ষিক: পশ্চিমাঞ্চল; মাসিক: সাধক (১৯১৩), পল্লী শ্রী (১৯৩৫), সীমান্ত (১৯৬২), প্রবাহ (১৯৭৯); সাময়িকী: বসুমতি, নন্দনকানন; বুলেটিন: রক্তস্বাক্ষর (অনিয়মিত), আগামী (অনিয়মিত)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৪, শিল্পকলা একাডেমি ১, শিশু একাডেমি ১, নাট্যমঞ্চ ২, নাট্যদল ১৫, সিনেমা হল ৪, ক্লাব ১৫, খেলার মাঠ ৮।

দর্শনীয় স্থান আমঝুপি কুঠিবাড়ি ও স্বামী নিগমানন্দের আশ্রম।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৫.৮০%, অকৃষি শ্রমিক ৪.০৮%, শিল্প ০.৭৬%, ব্যবসা ১৪.২১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৮৮%, চাকরি ৫.০৮%, নির্মাণ ১.১৫%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৬৬% এবং অন্যান্য ৫.২১%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৬.৬৪%, ভূমিহীন ৪৩.৩৬%। শহরে ৪০.২০% এবং গ্রামে ৫৯.৩৫% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, ভূট্টা, পাট, আখ, তামাক, পান, পিঁয়াজ, রসুন, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, সরিষা, যব, কাউন, তিসি, অড়হর, ছোলা।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৬, গবাদিপশু ১০, হাঁস-মুরগি ২৩, হ্যাচারি ১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২০৬ কিমি; আধা-পাকারাস্তা ১১৫, কাঁচারাস্তা ২৭৩ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা আটাকল, বরফকল।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, সূচিশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৬। আমঝুপি হাট, বারাদি হাট, শালিকা হাট, শ্যামপুর হাট, ট্যাংরামারী হাট ও বালিয়ারপুর হাট উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য পান, পিঁয়াজ, রসুন, কলা, আখের গুড়, আম, লিচু, কাঁঠাল।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬৩.০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯১.০%, ট্যাপ ৬.৯% এবং অন্যান্য ২.১%। এ উপজেলার ১১.৩৭% নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫২.৮% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪০.৭% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ৬.৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ৩, উপস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৪, ক্লিনিক ৫।

এনজিও ব্র্যাক, কারিতাস, আশা, নারী উন্নয়ন শক্তি, নারী মুক্তি।  [গাজী রহমান]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মেহেরপুর সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।