মুখোপাধ্যায়, প্রভাতকুমার
মুখোপাধ্যায়, প্রভাতকুমার (১৮৭৩-১৯৩২) কথাসাহিত্যিক। ১৮৭৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার ধাত্রী গ্রামে মাতুলালয়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস হুগলি জেলার গুরুপ গ্রামে। ১৮৮৮ সালে প্রভাতকুমার জামালপুর হাইস্কুল থেকে এন্ট্রান্স এবং ১৮৯১ সালে পাটনা কলেজ থেকে এফএ ও ১৮৯৫ সালে বিএ পাস করেন। ১৯০১ সালে তিনি আইন পড়তে বিলেত যান এবং ব্যারিস্টারি পাস করে ১৯০৩ সালে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এই বছর থেকেই ১৯১৬ সাল পর্যন্ত তিনি দার্জিলিং, রংপুর ও গয়ায় আইন ব্যবসায়ে নিযুক্ত থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কলেজে অধ্যাপক পদে বৃত হন এবং আমৃত্যু ওই পদে কর্মরত ছিলেন।
ছাত্রাবস্থায় ভারতী পত্রিকায় কবিতা রচনার মধ্য দিয়ে প্রভাতকুমারের সাহিত্যজীবনের শুরু। পরে তিনি গদ্যরচনা শুরু করেন। তিনি ‘শ্রীমতী রাধামণি দেবী’ ও ‘শ্রীজানোয়ারচন্দ্র শর্মা’ ছদ্মনামে লিখতেন। জগদিন্দ্রনাথ রায়ের সঙ্গে যৌথভাবে তিনি মানসী ও মর্মবাণী পত্রিকা সম্পাদনা করেন। রবীন্দ্রযুগে ছোটগল্প লিখে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। সরল, অনাবিল ও লঘুভঙ্গিতে গভীরতম জীবন বিশ্লেষণ তাঁর গল্পের বৈশিষ্ট্য। তিনি শতাধিক গল্প লিখেছেন। তাঁর প্রধান কয়েকটি গল্পগ্রন্থ: নবকথা (১৮৯৯), ষোড়শী (১৯০৬), গল্পাঞ্জলি (১৯১৩), গল্পবীথি (১৯১৬), পত্রপুষ্প (১৯১৭) ও নূতন বউ (১৯২৯)।
প্রভাতকুমার মোট ১৪টি উপন্যাস রচনা করেছেন। তারমধ্যে রত্নদীপ (১৯১৫) শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত। এটির নাট্যরূপ ও চিত্ররূপও জনপ্রিয় হয়েছিল। তাঁর অন্যান্য উপন্যাস: রমাসুন্দরী (১৯০৮), নবীন সন্ন্যাসী (১৯১২), জীবনের মূল্য (১৯১৭), সিঁদুর কৌটা (১৯১৯), মনের মানুষ (১৯২২), আরতি (১৯২৭), প্রতিমা (১৯২৮) ও গরীব স্বামী (১৯৩০)। তিনি অভিশাপ (১৯০০) নামে একটি ব্যঙ্গকাব্যও রচনা করেন। শ্রীজানোয়ারচন্দ্র শর্মা নামে রচিত তাঁর সূক্ষ্মলোম পরিণয় নাটকটি মর্মবাণী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সাহিত্যে অবদানের জন্য প্রভাতকুমার প্রথম ‘কুন্তলীন’ পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৩২ সালের ৫ এপ্রিল কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়। [সুশান্ত সরকার]