মুক্তাগাছা উপজেলা
মুক্তাগাছা উপজেলা (ময়মনসিংহ জেলা) আয়তন: ৩১৪.৭০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩৬´ থেকে ২৪°৫২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০৪´ থেকে ৯০°২০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ময়মনসিংহ সদর ও জামালপুর সদর উপজেলা, দক্ষিণে ফুলবাড়ী উপজেলা, পূর্বে ময়মনসিংহ সদর ও ফুলবাড়ী উপজেলা, পশ্চিমে মধুপুর ও জামালপুর সদর উপজেলা।
জনসংখ্যা ৪১৫৪৭৩; পুরুষ ২০৬৬৪৭, মহিলা ২০৮৮২৬। মুসলিম ৩৯৫৯২৬, হিন্দু ১৮৭৬৬, বৌদ্ধ ৪, খ্রিস্টান ৭১৩ এবং অন্যান্য ৬৪। এ উপজেলায় গারো আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
প্রশাসন মুক্তাগাছা থানা গঠিত হয় ১৯৬১ সালে। থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে। পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৭৫ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১০ | ২৫২ | ২৮২ | ৪৯৯১৫ | ৩৬৫৫৫৮ | ১৩২০ | ৬০.২ | ৪১.২ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |||
১২.৫৭ | ৯ | ২১ | ৪৯৯১৫ | ৩৯৭১ | ৬০.২ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
কাশিমপুর ৫১ | ৭৪১৩ | ১৯২৬৭ | ১৯০৮৩ | ৪১.০৬ | ||||
কুমারঘাটা ৬৯ | ৫৯৪৭ | ১৭৪৮৯ | ১৭৪১৪ | ৪৬.৭ | ||||
খেরুয়াজানী ৬০ | ৭১০৩ | ১৭৪৭৯ | ১৮৮৯৮ | ৩৭.২ | ||||
ঘোগা ৪৩ | ৭০০৩ | ১৩৯৬৯ | ১৪১৫১ | ৩৬.৯ | ||||
তারাটি ৯৪ | ৭৮৬০ | ২১০৮০ | ২০৪৩৪ | ৪৩.৮ | ||||
দাওগাঁও ২৫ | ৭৫৭৯ | ১৯০৩২ | ১৯৭৯৮ | ৩০.৭ | ||||
দুল্লা ৩৪ | ১০৩২৮ | ১৭৮৪৭ | ১৮২০৭ | ৩৯.২ | ||||
বড়গ্রাম ১৬ | ৭২৯০ | ১৬৯৮৯ | ১৭০১২ | ৪৪.৪ | ||||
বাঁশাটি ১৭ | ৬৬২০ | ১৮৯২৯ | ১৯১৬৯ | ৪৭.৫ | ||||
মানকোন ৭৭ | ৭৪৬০ | ১৯৪৩৯ | ১৯৮৭২ | ৪২.৫ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ পাহাড় পাবইজানে বলাইশ্রুত মসজিদ, ভূঁইয়াবাড়ি মসজিদ, বালিয়াপাড়ার রাজার কোট, খাজুলিয়ার বিড়ি ঘর, আটানী জমিদার বাড়ির শিব ও গোপাল মন্দির (অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধে নির্মিত), আনন্দময়ী কালী ও শিব মন্দির, লক্ষ্মীখোলা শিবমন্দির, কুতুবপুরে কুতুব শাহের মাযার, রসুলপুরে জয়েন শাহের মাযার, কালীশাহ দেওয়ানের মাযার।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল পাকবাহিনী মুক্তাগাছায় প্রবেশ পথে মুক্তিযোদ্ধারা জলছত্রে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কমান্ডার রেফাজউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বটতলী, ভিটিবাড়ী ও মুক্তাগাছা থানা আক্রমণ করে। পাকবাহিনী বিনোদবাড়ি, মানকোন, বৌয়ারচর শশা প্রভৃতি গ্রামে নৃশংস গণহত্যা, লুটতরাজ এবং নির্যাতন চালায়। ১০ ডিসেম্বর মুক্তাগাছা শত্রুমুক্ত হয়। উপজেলা সদরে জমিদার বকুল বাবুর বাড়ি, ময়লা খানা, বিনোদবাড়ি ও মানকোনে ৪টি বধ্যভূমি এবং উপজেলা সদরের ময়লা খানা, ঈশ্বর গ্রাম মাঝিপাড়া, মানকোন ইউনিয়নে শ্রীপুর, মাঝিহাটি, তারাটি ইউনিয়নের শশায় ৫টি গণকবর রয়েছে; মাঝিহাটি ও বনবাংলায় বাইজানা ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে ২টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন মুক্তাগাছা উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৭।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৫২১, মন্দির ২২, গির্জা ৫, মাযার ৫।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৩.৫%, পুরুষ ৪৫.০%, মহিলা ৪২.০%। কলেজ ১০, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৪৪, আঞ্চলিক স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১, আঞ্চলিক সমবায় ইনস্টিটিউট ১, মাদ্রাসা ৫২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: রামকিশোর উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৩), নগেন্দ্র নারায়ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৭), খেরুয়াজানী উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৯), এমএন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৭)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: আলোড়ন বার্তা; পাক্ষিক: সবার কথা; পত্রিকা: সোনালী শীষ; অবলুপ্ত পত্রিকা: প্রমোদী, সুহূদ, নির্মাল্য, দেশের খবর, মুক্তকণ্ঠ, আজকের মুক্তাগাছা।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, সিনেমা হল ৬।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৯.২৬%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৬১%, শিল্প ১.১৩%, ব্যবসা ১১.২৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৬.৩২%, চাকরি ৪.৯৬%, নির্মাণ ১.৩৫%, ধর্মীয় সেবা ০.২২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৮% এবং অন্যান্য ১০.৫৮%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৫.৪৬%, ভূমিহীন ৪৪.৫৪%। গ্রামে ৫৭.০৯% এবং শহরে ৪০.৪% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, পান, গম, আখ, সরিষা।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি স্থানীয় জাতের কলা, ডাল।
প্রধান ফল-ফলাদি আখ, কলা, জাম, তরমুজ, আম, কাঁঠাল, নারিকেল।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১০৩, গবাদিপশু ২৭, হাঁস-মুরগি ৬১।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২১৯ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২ কিমি, কাঁচারাস্তা ৯১০ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি, মহিষের গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা অয়েলমিল ১২, স’মিল ১৬, রাইস মিল ২২১, বিস্কুট ফ্যাক্টরি ১৫, বিড়ি কারখানা ২, ছাপাখানা ৩, খাদ্য গুদাম ১।
কুটিরশিল্প লৌহশিল্প ৭২, তাঁতশিল্প ১২৬, ঘৃতশিল্প ২৫, কাঠের কাজ ৪০, বাঁশের কাজ ২০, বেতের কাজ ১০।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৮, মেলা ৫। দরি চারীআনি বাজার, রঘুনাথপুর (রৌয়ারচর) হাট, চেচুয়া হাট, গাবতলী হাট ও দ্রপুর হাট এবং কুতুবপুর শিবরাত্রি মেলা, রামচন্দ্রপুর মেলা, লক্ষ্মীখোলা মেলা ও ছাপ্পান্ন প্রহরের মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য চাল, পান, পাট, বিড়ি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৫.৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯২.৪%, ট্যাপ ১.৯% এবং অন্যান্য ৫.৭% ।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪৬.১% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৫.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে । তবে ৮.৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৪, হাসপাতাল ১, কমিউনিটি ক্লিনিক ২৭, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৬, পশু চিকিৎসালয় ১।
এনজিও ব্র্যাক, কারিতাস, প্রশিকা, আশা, প্রত্যাশা। [মেজবাহ উদ্দিন তুহিন]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মুক্তাগাছা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।