ময়মনসিংহ জেলা

ময়মনসিংহ জেলা (ময়মনসিংহ বিভাগ) আয়তন: ৪০৮০.১৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°১৫´ থেকে ২৫°১২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০৪´ থেকে ৯০°৪৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে গারো পাহাড় ও ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে গাজীপুর জেলা, পূর্বে নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে শেরপুর, জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলা।

জনসংখ্যা ৪৮১২০৫২; পুরুষ ২৩৯১৩৮২, মহিলা ২৪২০৬৭০। মুসলিম ৪৬১০৫০৪, হিন্দু ১৭০৩৩০, বৌদ্ধ ১০৮, খ্রিস্টান ২৭৯৪৩ এবং অন্যান্য ৩১৬৭। এ জেলায় গারো, কোচ, ডালু, বর্মণ, হাজং প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ, ভোগাই, বাজুয়া এবং কংস নদী উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ময়মনসিংহ জেলা গঠিত হয় ১৭৮৭ সালে। ময়মনসিংহ শহরের পূর্ব নাম ছিল নাসিরাবাদ। ঢাকা বিভাগের ১৭টি জেলার মধ্যে ময়মনসিংহ জেলার অবস্থান প্রথম।

জেলা
আয়তন (বর্গ কিমি) উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম
৪০৮০.১৮ ১২ ১০ ১৩৬ ১৯৭৩ ২৫০১ ৭৯৮১২৭ ৪০১৩৯২৫ ১০২৯ ৪৩.৫
জেলা
আয়তন (বর্গ কিমি) উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
ঈশ্বরগঞ্জ ২৮০.৪৩ ১১ ২৮৪ ২৯৪ ৩৭৬৩৪৮ ১৩৪২ ৪১.০
গফরগাঁও ৩৯৮.৩০ ১৫ ১৯৯ ২১৪ ৪৩০৭৪৬ ১০৮১ ৪৯.৩
গৌরীপুর ২৭৬.৭৪ ১০ ২৪০ ২৮৯ ৩২৩০৫৭ ১১৬৭ ৪৩.৬
ত্রিশাল ৩৩৮.৪৫ ১২ ৮৯ ১৫৮ ৪১৯৩০৮ ১২৩৯ ৪০.০
ধোবাউড়া ২৫২.২৩ - ৯৯ ১৬৪ ১৯৬২৮৪ ৭৭৮ ২৯.৪
নান্দাইল ৩২৬.৩৭ ১২ ১৬২ ২৬৫ ৪০২৭২৭ ১২৩৪ ৪০.৪
ফুলপুর ৩১১.৮৮ ১০ ১৯৪ ২২০ ৩০৩৫৪৬ ৯৭৩ ৩৮.২
ফুলবাড়ীয়া ৩৯৮.৭০ ১৩ ১০৪ ১১৬ ৪৪৮৪৬৭ ১১২৫ ৪২.৩
ভালুকা ৪৪৪.০৫ ১১ ৮৭ ১১০ ৪৩০৩২০ ৯৬৯ ৪৯.১
ময়মনসিংহ সদর ৩৮০.৭২ ১৩ ১১৮ ১৭৫ ৭৭৫৭৩৩ ২০৩৭ ৫১.৭
মুক্তাগাছা ৩১৪.৭০ ১০ ২৫২ ২৮২ ৪১৫৪৭৩ ১৩২০ ৪৩.৫
হালুয়াঘাট ৩৫৭.৬১ - ১২ ১৪৫ ২১৪ ২৯০০৪৩ ৮১১ ৩৮.৯

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা আক্রান্ত হলেও পাকিস্তানি বাহিনী ময়মনসিংহ শহর দখল নেয় ২৩ এপ্রিলের পর। এই দীর্ঘ প্রায় এক মাস কাল ময়মনসিংহে চলেছে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রতিরোধ। খাগডহর ইপিআর ক্যাম্পে বাঙালি ও অবাঙালি সৈন্যদের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধে ২৭ মার্চ ১৯৭১ সালে। সে যুদ্ধে বাঙালিরা জয়ী হয়। ২১ এপ্রিল কালির বাজারে (ফাতেমা নগর রেলস্টেশন) কাদেরিয়া বাহিনী ও মেজর আফসার বাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং প্রায় দুদিন ধরে যুদ্ধ চলে। ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী দখল নেয়ার পর চলে হত্যা, নির্যাতন ও ধ্বংস যজ্ঞ। ৩ নভেম্বর রাত তিনটায় মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সৈন্য পাকিস্তানিদের বাংকার দ্বারা সুরক্ষিত তেলিখালী ঘাঁটি আক্রমন করে এবং যুদ্ধে পাকবাহিনী সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত ও পর্যুদস্ত হয়। এ যুদ্ধে পাকবাহিনীর ১ জন বাদে বাকিরা সবাই নিহত হয় এবং ৬২ জন ভারতীয় সৈন্য এবং ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ময়মনসিংহের বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১০ ডিসেম্বর এ অঞ্চল শত্রুমুক্ত হয়। ময়মনসিংহ সদরে ডাকবাংলোর চর, চকবাজার, জেলখানার চর, শম্ভুগঞ্জ নদীর তীর, বোরোর চর, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা এবং মুক্তাগাছার রসুলপুরে ৭টি বধ্যভূমি সন্ধান পাওয়া গেছে।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৪৩.৫%; পুরুষ ৪৪.৯%, মহিলা ৪২.২%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বিশ্ববিদ্যালয় ২, মেডিকেল কলেজ ৩, কলেজ ৬৩, ক্যাডেট কলেজ ১, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ৪, ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ২, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫০৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০৪৩, আর্ট স্কুল ১, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৬, স্যাটেলাইট স্কুল ২৪, এনজিও পরিচালিত স্কুল ১০৬৫, নার্সারী স্কুল ৫৯, মুক ও বধির বিদ্যালয় ১, সঙ্গীত বিদ্যালয় ৩, মৌলিক শিক্ষা একাডেমী ১, মাদ্রাসা ১২১২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬০), সরকারি আনন্দমোহন কলেজ (১৯০৮), ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (১৯৬৮), মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৫৯), ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ (১৯৬৪), মুকুল নিকেতন হাইস্কুল (১৯৫৯), বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৭৩), ফুলপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮২), রামগোপালপুর পি.জে.কে উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯০), মুক্তাগাছা রাম কিশোর উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৪), কান্দিপাড়া আস্কর আলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৬), মহাকালী গার্লস স্কুল ও কলেজ (১৯০৭), বিরই তালতলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০২), এড্ওয়ার্ড ইনস্টিটিউশন (১৯০৩), রাধাসুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৭), বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫), সেন্ট মেরিস নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (১৯২৯), ময়মনসিংহ জেলা স্কুল (১৮৫৩), সিটি কলেজিয়েট স্কুল (১৮৮৩), মৃঁত্যুঞ্জয় স্কুল (১৯০১), নাসিরাবাদ কলেজিয়েট স্কুল (১৯১১), নজরুল একাডেমী (১৯১৩), কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদ্রাসা (১৮৯০), চরগোয়াডাংগা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা (১৯১৫), পাঁচবাগ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২১), শেরপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২৭)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৪.১৪%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৬৫%, শিল্প ০.৮২%, ব্যবসা ১১.৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৫৩%, নির্মাণ ১.৩৩%, ধর্মীয় সেবা ০.২১%, চাকরি ৬.২১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৪৬% এবং অন্যান্য ৮.২৫%।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: জাহান, বাংলার জমিন, ইনসাফ, আজকের স্মৃতি, শিপা, স্বদেশ সংবাদ; সাপ্তাহিক: ময়মনসিংহ বার্তা, আজকের মুক্তাগাছা। অবলুপ্ত: কুমার, বিজ্ঞাপনী (১৮৬৬), বাঙালী (১৮৭৪), সুহূদ (১৮৭৫), প্রমোদী (১৮৭৫), ভারত মিহির (১৮৭৫), সঞ্জীবনী (১৮৭৮), বাসনা (১৮৯৯), আবৃতি (১৯০১), স্বদেশ সম্পদ (১৯০৫), শিক্ষা সৌরভ (১৯১২), হাফেজ শক্তি (১৯২৪), গণঅভিযান (১৯৩৮), সাপ্তাহিক চারুমিহির (১৯৩৯), উত্তর আকাশ (১৯৫৯), অনির্বাণ (১৯৬৩), জাগ্রত বাংলা (১৯৭১)।

লোকসংস্কৃতি ময়মনসিংহ গীতিকা, ছড়া, বাউল সঙ্গীত, পালাগীত, গারো সম্প্রদায়ের প্রবাদ, হাজং সম্প্রদায়ের শ্লোক (হিলুক), ধাঁধাঁ (থাচিকথা), গান (গাহেন) উল্লেখযোগ্য।

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা জাদুঘর, ময়মনসিংহ টাউন হল, বংলাদেম পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (ময়মনসিংহ সদর উপজেলা)।  [সমর পাল]

আরো দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা।

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ময়মনসিংহ জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।