মিন্টো, লর্ড১
মিন্টো, লর্ড১ (১৭৫১-১৮১৪) ১৮০৭ থেকে ১৮১৩ সাল পর্যন্ত ভারতের গভর্নর জেনারেল। পুরো নাম গিলবার্ট ইলিয়ট, প্রথম আর্ল অব মিন্টো। তিনি ১৭৫১ সালের ২৩ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমে তিনি এডিনবরার ফনটেনব্লুস্থ পেনশন মিলিটারিতে, পরে অক্সফোর্ডের ক্রাইস্ট চার্চে শিক্ষা লাভ করেন এবং লিঙ্কনস্ ইন থেকে ১৭৭৪ সালে ব্যারিস্টারি পাস করেন। ১৭৭৬ থেকে ১৭৮৪ সাল এবং ১৭৮৬ থেকে ১৭৯০ সাল পর্যন্ত তিনি পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন। ১৭৮৭ সালে নন্দকুমারের বিচারের দায়ে কলকাতার প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এলিজা ইম্পের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে তিনি একটি নিন্দা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। কিন্তু প্রস্তাবটি অগ্রাহ্য হয়। তাঁর হাউস অব কমন্সের স্পীকার হওয়ার প্রচেষ্টাও সফল হয়নি। ১৮০৬ সালে লর্ড মিন্টো বোর্ড অব কন্ট্রোল এর প্রেসিডেন্ট হন এবং ১৮০৭ সালে তাঁকে ভারতের গভর্নর জেনারেল নিয়োগ করা হয় এবং ১৮১৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি এ পদে আসীন ছিলেন। ভারতে তাঁর শাসনকাল ও ইউরোপে নেপোলিয়নের যুদ্ধের কাল এবং ইউরোপের ঘটনাবলি ভারতে সম্মুখ নীতি নিয়ে অগ্রসর হওয়ার অনুকূলে ছিল না। অন্যদিকে ভারতে সংঘটিত ঘটনাবলিও পশ্চাদপসরণের পক্ষে ছিল না। তিনি অনেকটা হস্তক্ষেপ না করার নীতি অনুসরণ করেন এবং ভারতে বড় ধরনের কোন যুদ্ধকে এড়াতে সক্ষম হন। তিনি বেশ কিছু কূটনৈতিক বিজয় অর্জন করেছিলেন। শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে তিনি পিন্ডারীদের নেতা আমীর খানকে বেরার-এ হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত রাখেন।
পাঞ্জাবের শাসক রণজিৎ সিংয়ের সঙ্গে ১৮০৯ সালে অমৃতসর চুক্তি সম্পাদন ছিল লর্ড মিন্টোর আরও বড় এক বিজয়। রণজিৎ শতদ্রু নদীর পশ্চিমে তাঁর শাসন কায়েম করে পূর্ব দিকে দৃষ্টিপাত করেন। মিন্টো চার্লস মেটক্যাফ নামক একজন তরুণ কূটনীতিককে প্রেরণ করেন। তিনি রণজিৎ সিংকে ব্রিটিশদের মিত্র হতে রাজি করান। চুক্তি দ্বারা রণজিৎ সিং শতদ্রু নদীকে তাঁর রাজ্যের সীমানা মেনে নিতে সম্মত হন এবং আজীবন চুক্তির ধারাসমূহ বিশ্বস্ততার সঙ্গে পালন করেন। এ চুক্তির মাধ্যমে পাঞ্জাব ভূখন্ডে স্থিতিশীলতা আসে এবং পূর্ব দিকে কোম্পানির অবস্থানকে নিরাপদ করেছিল বলে চুক্তিটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
মিন্টোর উদ্বেগের প্রধান কারণ ছিল পুনরুত্থিত ফরাসি শক্তি। মিন্টো একাধিক দূতদল প্রেরণের মাধ্যমে ফরাসি প্রভাব কমানোর প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন, যাতে পারস্যের ভিতর দিয়ে ফরাসি ও রুশদের যৌথ ভারত আক্রমণকে ব্যর্থ করা যায়। জন ম্যালকমকে পারস্যে এবং মাউন্ট স্টুয়ার্ট এলফিনস্টোনকে আফগান আমীর শাহ সুজার কাছে পাঠানো হয়েছিল। উভয় শক্তিই ফরাসিদের বাধা দান করতে অঙ্গীকার করে। সিন্ধুর আমীরদের নিকটও দূত পাঠানো হয়, যারা ফরাসিদেরকে তাঁদের ভূখন্ডে প্রবেশ করতে দেবে না বলে তাঁকে আশ্বস্ত করে। ফরাসি ভীতির বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে লর্ড মিন্টো পশ্চিম দিকে ফরাসি দ্বীপ বুরঁবো ও মরিশাস দখল করেন এবং ওলন্দাজদের দখলকৃত অ্যামবয়না এবং ১৮১১ সালে জাভা দ্বীপ দখল করেন। এভাবে মিন্টো সম্ভাব্য ফরাসি বিপদ রোধ করেন।
ভারতে প্রশাসনের উন্নতি বিধানের দিকেও মিন্টো দৃষ্টি দেন এবং প্রকাশনা ও শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার প্রবর্তনের চেষ্টা করেন। ১৮১৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন এবং ঐ বছরই তাঁকে ‘আর্ল’ মর্যাদায় ভূষিত করা হয়। ১৮১৪ সালের ২১ জুন লর্ড মিন্টোর মৃত্যু হয় এবং ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে-তে তাঁকে সমাহিত করা হয়। [কে.এম মোহসীন]