বোর্ড অব কন্ট্রোল
বোর্ড অব কন্ট্রোল ১৭৮৪ সাল থেকে ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন নিয়ন্ত্রণকারী সর্বোচ্চ সংস্থা। পার্লামেন্টের কোন আনুষ্ঠানিক আদেশ বা অনুমোদন ব্যতিরেকেই কোম্পানির বাংলা রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭৭৩ সালের রেগুলেটিং অ্যাক্ট পাস না হওয়া পর্যন্ত এই রাজ্যের শাসনব্যবস্থাও পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে ছিল। ১৭৬৯-৭০ সালের মহা দুর্ভিক্ষের আঘাতে ব্যাপক প্রাণহানি, কোম্পানির কর্মচারীদের অন্তহীন দুর্নীতি, সামাজিক সংস্থাসমূহের ব্যর্থতা, বাংলার অর্থনীতির পঙ্গুত্ব এবং সর্বোপরি রাজ্য দখলের পর কোম্পানির প্রায় দেউলিয়াত্ব প্রভৃতি সমস্যার পটভূমিতে বৃটিশ পার্লামেন্ট কোম্পানির কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়। এরই প্রেক্ষাপটে বৃটিশ পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত হয় রেগুলেটিং অ্যাক্ট, ১৭৭৩।
কিন্তু এই আইনের ফলে,কোম্পানির অবস্থার লক্ষণীয় কোন উন্নতি হয় নি। পার্লামেন্ট তাই পুনরায় হস্তক্ষেপ করে এবং ১৭৮৪ সালে পীটের ভারত শাসন আইন পাস হয়। এই আইনের মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং এর অধিকৃত অঞ্চলসমূহ ব্রিটিশ সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণে আসে। এই আইনের আওতায় ‘কোর্ট অব কমিশনারস’ নামক একটি স্বায়ত্তশাসিত বোর্ড কর্তৃক পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ পরিচালিত হওয়ার ব্যবস্থা গৃহীত হয়। এই কোর্ট অব কমিশনারসই সাধারণত বোর্ড অব কন্ট্রোল নামে পরিচিত, কেননা এই বোর্ডের মাধ্যমে বৃটিশ সরকার ভারতে কোম্পানির কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রন করত। বৃটিশ সরকারের অর্থসচিব, প্রধান সচিব (তিনি বোর্ডের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন) এবং চারজন প্রিভিকাউন্সিলরসহ মোট ছয়জন পদাধিকারবলে বোর্ডের সদস্য হতেন। ভারতে ব্রিটিশ এলাকাসমূহের সামরিক বেসামরিক শাসন বা রাজস্ব সম্পর্কিত সকল কার্যকলাপ তত্ত্বাবধান ছিল বোর্ড অব কন্ট্রোলের প্রধান কাজ। বোর্ড ১৭৮৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর এর প্রথম সভার মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু করে। ১৮৫৮ সালে কোম্পানি অবলুপ্ত না হওয়া এবং ব্রিটিশ ভারতের শাসন সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের অধীনে না নেওয়া পর্যন্ত বোর্ড অব কন্ট্রোল উপনিবেশিক ভারত রাষ্ট্রের শাসন নিয়ন্ত্রণ করে। [সিরাজুল ইসলাম]