মহীপুর জমিদারি
মহীপুর জমিদারি রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার অর্ন্তগত মহীপুর একটি গ্রামে অবস্থিত। আঠারো শতকের প্রথমদিকে মুগল বাহিনী যখন কোচবিহার আক্রমণ করে তখন কাযিরহাট চাকলার (নীলফামারী জেলাধীন অঞ্চল) সাড়ে চার আনার জমিদার আরিফ মোহাম্মদ তাদের সহায়তা করে স্বীয় জমিদারি বজায় রাখেন। আরিফ মোহাম্মদের মৃত্যুর পর (১৭২২) তাঁর পুত্র খুলু মোহাম্মদ, ভাই খয়রুল্লাহ চৌধুরী, স্ত্রী আনারকলি বেগম এবং ভাই মজরউল্লাহ চৌধুরী পর পর মহীপুরের জমিদার হন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত (১৭৯৩) এর সময় মহীপুরের জমিদার ছিলেন মোহাম্মদ আমিন। তাঁর মৃত্যুর পর মহীপুর জমিদারি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খাজনাবিহীন তালুকে পরিণত হয়। ফলে জমিদারির আয় সংকুচিত হয় এবং সরকারি জমা বৃদ্ধি পায়। পরবর্তী জমিদার এনায়েতউল্লাহ চৌধুরী (১৮৩২) এবং জিয়াউল্লাহ চৌধুরীর (মৃত্যু ১৮৮৩) আমলে জমিদারির অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে।
এনায়েতউল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র খান বাহাদুর আবদুল মজিদ চৌধুরী জমিদার হন। তিনি ১৮৯২-১৯১২ সাল পর্যন্ত রংপুর জেলা বোর্ডের বিভিন্ন কমিটির সদস্য ও ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি রংপুর মাদ্রাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, জেলায় মাদ্রাসা শিক্ষা আধুনিকীকরণের প্রধান উদ্যোক্তা এবং সৈয়দ আমীর আলী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশনএর রংপুর শাখার (১৮৯৮) প্রথম সভাপতি ছিলেন। তিনি ছিলেন ১৯১১ সালে সর্বভারতীয় বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন কমিটির সদস্য। ১৮৯৮ সালে তিনি ‘খান বাহাদুর’ উপাধি লাভ করেন। তাঁর সময়ে মহীপুর জমিদারির সরকারি জমা ছিল ২৫ হাজার টাকা।
১৯১২ সালে আবদুল মজিদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আবদুল আজিজ চৌধুরী মহীপুরের জমিদার হন। ১৯৩২ সালে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর নাবালক পৌত্র শামসুর রহমান চৌধুরী (আবু মিয়া) কোর্ট অব ওয়ার্ডসের অধীনে জমিদার হন। কিন্তু তাঁর জমিদারির সময় ১৯৫০ সালে পূর্ববঙ্গ জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন অনুসারে জমিদারি ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটে। [মুহম্মদ মনিরুজ্জামান]