ময়মনসিংহ সদর উপজেলা

ময়মনসিংহ সদর উপজেলা (ময়মনসিংহ জেলা)  আয়তন: ৩৮০.৭২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩৮´ থেকে ২৪°৫৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°১১´ থেকে ৯০°৩০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নকলা ও ফুলপুর উপজেলা, দক্ষিণে ত্রিশাল ও ফুলবাড়ীয়া উপজেলা, পূর্বে ঈশ্বরগঞ্জ ও গৌরীপুর উপজেলা এবং পশ্চিমে মুক্তাগাছা ও জামালপুর সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ৭৭৫৭৩৩; পুরুষ ৩৯১১৮৭, মহিলা ৩৮৪৫৪৬। মুসলিম ৭২৭৮৩৫, হিন্দু ৪৬২২৪, বৌদ্ধ ৪৮, খ্রিস্টান ১৩৩২ এবং অন্যান্য ২৯৪। এ উপজেলায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ময়মনসিংহ সদর থানা গঠিত হয় ১৮৬৭ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৩ ১১৮ ১৭৫ ৩৮৯৯১৮ ৩৮৫৮১৫ ২০৩৭ ৬৪.০ (২০০১) ৩৫.৭
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২১.৭৩ (২০০১) ২১ ৯৪ ২৫৮০৪০ ১০৪৫৬ (২০০১) ৭৩.৯
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৪৬.৩০ (২০০১) ১৩১৮৭৮ ২২৭৯ (২০০১) ৫১.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
অষ্টধর ২৫ ৬৩৮০ ১২৬৮০ ১৩২২৮ ৩৬.২
আকুয়া ২৩ ৩৫৪৩ ২৭২২৯ ২৪৪৫৭ ৬০.৫
কুষ্টিয়া ৭৪ ৬০২২ ১৩৮৪০ ১৪৪৯৬ ৩৬.২
খাগডহর ৬৭ ৮৪৮১ ২২৩৪৮ ২২২৪৫ ৩৯.৯
ঘাগড়া ৫৪ ৮২৪৩ ২৫১৪৭ ২৫৭৪৩ ৩৫.৫
চর ঈশ্বরদিয়া ৩৩ ৭৩৫৮ ২৫২৮০ ২৪৭৬৪ ৩৯.৯
চর নিলক্ষিয়া ৪০ ৭৭১০ ২১০৪৬ ২০৯১০ ২৮.৪
দাপুনিয়া ৪৭ ৭২৬৮ ২২৪১৪ ২৩১৪৫ ৪৫.২
পরানগঞ্জ ৮৮ ৭২৫৪ ১৮৪৮৬ ১৮৮২২ ২৭.৩
বয়ড়া (কেওটখালী) ২৭ ৩১৫৫ ১৩০১৫ ১২৮৩৬ ৫২.৩
বোবারচর ৩১ ৮১৬৮ ১৪৬৬৫ ১৪৯৯৮ ২৯.২
ভাবখালী ২৯ ৭৭৭১ ২৪৫৫৯ ২৪৩৭৮ ৪০.৩
সিরতা ৯৪ ৭৩৫৭ ১৮৩৫৫ ১৮৬০৭ ৩৬.২

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মহারাজ শশীকান্তের বাড়ি, আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল, রাজ-রাজেশ্বরী ওয়াটার ট্যাঙ্ক, ময়মনসিংহ জাদুঘরে রক্ষিত মহাভারতের প্রাচীন পান্ডুলিপি, কষ্টিপাথরের বিষ্ণুমূর্তি, জয়দেবের গীতগোবিন্দের পান্ডুলিপি, চন্ডীদাসের কাব্যের পান্ডুলিপি, বিশ্বে প্রকাশিত প্রথম ডাকটিকেটের ফটোকপি, মুক্তাগাছার জমিদারদের খড়গ, পৃথিবীর মানচিত্র (১৬৪৫), কেদারনাথ মজুমদার প্রণীত বৃহত্তর ময়মনসিংহের মানচিত্র (১৭৭৯), দূর্গাবাড়ি মন্দির (১৮৬৭), গাঙ্গিনার পাড় জলাধার (১৯১১), শিবমন্দির (উনিশ শতক), শম্ভুগঞ্জ রেলসেতু ।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ খাগডহর ইপিআর ক্যাম্পে বাঙালি ও অবাঙালি সৈন্যদের মধ্যে লড়াই বাঁধে। ২৩ এপ্রিলের পর পাকবাহিনী ময়মনসিংহ শহর দখল করে নেয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দিঘারকান্দা গ্রামে পাকবাহিনী রাতে আক্রমণ করলে গ্রামবাসীরা সড়কি, বল্লম, দা, লাঠি নিয়ে তাদের প্রতিহত করে। এতে একজন পাক মেজর নিহত হয়। পরদিন ওই গ্রামে পাকবাহিনীর আক্রমণে অনেক গ্রামবাসী নিহত হন। ১০ ডিসেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় ডাকবাংলোর চর, নদীতীর এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন নদীতীরে ৩টি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে।

বিস্তারিত দেখুন ময়মনসিংহ সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৭।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৬১৪, মন্দির ২২, গির্জা ৪, মাযার ৯, তীর্থস্থান ৩। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ময়মনসিংহ বড় মসজিদ, গাঙ্গিনার পাড় মসজিদ, রেলস্টেশন জামে মসজিদ, কাচারি নূর জামে মসজিদ, শানকিপাড়া পুরাতন জামে মসজিদ, কলেজরোড জামে মসজিদ, পাটগুদাম দিলরওশন জামে মসজিদ, ভাটিকাশর গোরস্তান জামে মসজিদ, দুর্গাবাড়ি মন্দির, পণ্ডিতবাড়ি মন্দির, কোতয়ালী শিব মন্দির, মহারাজা রোডের কানাই-বলাই মন্দির, ভাটিকাশর সাধু প্যাট্রিক গির্জা, ব্যাপ্টিস্ট গীর্জা, সার্কিট হাউস অ্যাংলিংকন গীর্জা, রামকৃষ্ণ আশ্রম, জুবিলি ঘাট তীর্থ।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫১.৭%; পুরুষ ৫৩.৯%, মহিলা ৪৯.৬%। বিশ্ববিদ্যালয় ১, কলেজ ১৮, মেডিকেল কলেজ ২, হোমিও মেডিকেল কলেজ ১, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬৭, পিটিআই ১, ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ২, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৬৬, মূক ও বধির বিদ্যালয় ১, মাদ্রাসা ৬৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬০), সরকারি আনন্দমোহন কলেজ (১৯০৮), ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (১৯৬৮), ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৫৯), মুকুল নিকেতন হাইস্কুল (১৯৫৯), বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৭৩), মহাকালী গার্লস স্কুল ও কলেজ (১৯০৭), এডওয়ার্ড ইনস্টিটিউশন (১৯০৩), রাধাসুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৭), ময়মনসিংহ জেলা স্কুল (১৮৫৩), সিটি কলেজিয়েট স্কুল (১৮৮৩), মৃত্যুঞ্জয় স্কুল (১৯০১), নাসিরাবাদ কলেজিয়েট স্কুল (১৯১১), বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫), কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদ্রাসা (১৮৯০)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: জাহান, আজকের বাংলাদেশ, স্বদেশ সংবাদ, আজকের স্মৃতি, ঈশিকা, সবুজ, শিপা, স্বজন, আজকের ময়মনসিংহ, পরিচয়, বাংলার জমিন, বাংলার চাষী, ময়মনসিংহ সংবাদ, আজকের খবর, ভূ-মন্ডল, দি নিউ টাইমস; সাময়িকী: দ্বিতীয় চিন্তা, উপল, স্বতন্ত্র, শুভ্রশিখা। অবলুপ্ত: সৌরভ, সাপ্তাহিক তকবীর, বাংলার চাষি।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১৮, জাদুঘর ১, নাট্যদল ৫, নাট্যমঞ্চ ২, যাত্রাপার্টি ১, সিনেমা হল ৫, মহিলা সংগঠন ২, ক্লাব ১২, খেলার মাঠ ৩৬।

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৪.৫৭%, অকৃষি শ্রমিক ৪.০৫%, শিল্প ১.০১%, ব্যবসা ১৯.১৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৬.৬৮%, চাকরি ১৬.৫৪%, নির্মাণ ৪.০৩%, ধর্মীয় সেবা ০.২৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৮৬% এবং অন্যান্য ১২.৮৪%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৫.২৬%, ভূমিহীন ৫৪.৭৪%। শহরে ৩৭.৫৭% এবং গ্রামে ৫২.০০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি সরিষা, তিসি, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, লিচু, তরমুজ।

মৎস্য, গবাদিপশু ও  হাঁস-মুরগির খামার  মৎস্য ৬৩, গবাদিপশু ৬, হাঁস-মুরগি ৫৪, হ্যাচারি ১৭।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৬৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৪ কিমি, কাঁচারাস্তা ৯৬৮ কিমি; রেলপথ ৪৬ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা আটাকল ৩, বরফকল ৮, জুটমিল ১, ট্যানারি ১, ওয়েল্ডিং কারখানা ৩৩, বিড়ি কারখানা ২।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প ৬৭, লৌহশিল্প ৮৪, মৃৎশিল্প ১০৩, তাঁতশিল্প ৮, সূচিশিল্প ২৯৭, রেশমশিল্প ২, বাঁশের কাজ ৭৩, কাঠের কাজ ১৭৮।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৫০, মেলা ৩। বড় বাজার, নতুন বাজার, চুরখাই বাজার, দাপুনিয়া বাজার এবং অষ্টমী স্নান উপলক্ষ্যে মেলা, চৈত্র সংক্রান্তির মেলা ও বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, কলা, শাকসবজি, চামড়া।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬৭.০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮২.৭%, ট্যাপ ১২.৪% এবং অন্যান্য ৪.৯%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫৪.৯% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৪.০% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ১১.১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, হাসপাতাল ৫, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১৩, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩।

এনজিও ব্র্যাক, সোস্যাল এসোসিয়েশন ফর রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ। [আজাহার সরকার]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ময়মনসিংহ সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।