বিনিয়োগ বোর্ড
বিনিয়োগ বোর্ড সরকার কর্তৃক ১৯৮৯ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রাইভেটাইজেশন বোর্ড, যা ২০০০ সালে প্রাইভেটাইজেশন কমিশন নামে রুপান্তরিত হয় সেটিকে একত্রিত করে সরকার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA) প্রতিষ্ঠা করে। বিনিয়োগ বোর্ডের লক্ষ্য ছিল দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা, অর্থনীতিতে বিশেষ করে বেসরকারি খাত এবং বিদেশি বেসরকারি পুঁজির অংশগ্রহণ বাড়ানোর উপযোগী সরকারি নীতির বাস্তবায়ন ঘটানো। নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনার কাজ ত্বরান্বিত করতে এবং বিদ্যমান শিল্প-কারখানাসমূহকে স্ব-স্ব কার্যচালনা ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দানে বোর্ডকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেওয়া ছিল। বোর্ডের কাজ ছিল বিনিয়োগ উৎসাহিত করা, শিল্প প্রকল্পসমূহের নিবন্ধন, শিল্প-কারখানার জন্য যথাযথ অবকাঠামোগত সুযোগ সৃষ্টি, বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও শ্রমিকদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট প্রদান এবং শিল্পোদ্যোগসমূহের জন্য অর্থসংস্থানে সহায়তা দান। বোর্ড শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রয়োজনীয় আমদানি কার্যক্রমে সাহায্য করে এবং পুঁজি সংগ্রহের লক্ষ্যে তারা শেয়ার ছাড়তে চাইলে তাদেরকে আনুষ্ঠানিক অনুমতি সংগ্রহের ক্ষেত্রে এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে সহায়তা দেয়। বিদেশিদের রয়্যালটি পরিশোধ, প্রযুক্তি হস্তান্তর বা কারিগরি সহায়তার জন্য ফি প্রদান ইত্যাদির অনুমতিও বিনিয়োগ বোর্ডই দিয়ে থাকতো। এছাড়া বিনিয়োগ বোর্ড শিল্প প্রতিষ্ঠানাদির জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ ও ক্রয় কিংবা স্থাপনাসমূহে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদির সংযোগ, পয়ঃপ্রণালী, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি সুবিধা সৃষ্টি, আমদানিকৃত যন্ত্রসরঞ্জাম, খুচরা যন্ত্রাংশ ও কাঁচামালের জন্য শুল্ক বিভাগীয় ছাড়পত্র সংগ্রহ এবং পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র সংগ্রহে সাহায্য করে।
বিনিয়োগ বোর্ড প্রধানমন্ত্রীর অধীন একটি সংস্থা। এর পরিচালনায় ছিল নির্বাহী সদস্যবৃন্দ এবং নির্বাহী চেয়ারম্যান সমন্বয়ে গঠিত একটি নির্বাহী পরিষদ। বোর্ডের সিদ্ধান্তসমূহ সরকারের সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হতো বলে তা সকল সরকারি সংস্থার জন্য পালনীয় ছিল। আবার সরকার ঘোষিত সকল সুবিধার সুযোগ লাভ এবং সরকারিভাবে সৃষ্ট অবকাঠামোসমূহ ব্যবহার করতে চাইলে শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য বোর্ডের নিবন্ধন গ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিল। আমদানির জন্য নিষিদ্ধ পণ্যাদির তালিকায় নেই এমন যে কোন কাঁচামাল, প্যাকিং সামগ্রী বা যন্ত্রাংশ আমদানির জন্য বোর্ডে নিবন্ধিত কোম্পানিসমূহকে কারও নিকট কোন অনুমতি নিতে হয় না। তবে অনুমতি সাপেক্ষে আমদানি করা যায় এমন পণ্যাদির তালিকাভুক্ত কোন কিছু আমদানি করতে চাইলে আমদানিকারক কোম্পানিকে বোর্ডের নিকট আবেদন করতে হতো। বোর্ড আমদানির জন্য নির্ধারিত এ জাতীয় দ্রব্যের ধরন এবং আবেদনকারী কোম্পানির চাহিদা যথাযথভাবে যাচাই-এর পর তার নামে একটি পাসপোর্ট ইস্যু করে পাসপোর্টটি মুখ্য আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের অফিসে প্রেরণ করতো। সেখান থেকে তখন আমদানিকারকের নামে আমদানি নিবন্ধন সনদ (আইআরসি) ইস্যু করা হতো। বিদেশ থেকে ঋণ হিসেবে মূলধন সংগ্রহের ক্ষেত্রে যদি তার ঋণের সুদ ৪% এর বেশি হতো, তা পরিশোধের মেয়াদ ৭ বছরের বেশি হতো এবং প্রথম দফা পরিশোধের পরিমাণ ১০% এর বেশি না হতো তাহলে তেমন ঋণগ্রহণের জন্য বোর্ড থেকে কোন অনুমতি নিতে হতো না। তবে এসব শর্ত পূরণ না করলেও বিদেশি ঋণ গ্রহণ করা যেত এবং এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বোর্ডে আবেদন করে ঋণসংক্রান্ত একটি পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারতো। কোন কোম্পানি পূর্ববর্তী বছরের বিক্রয়ের ৬% পর্যন্ত পরিমাণে রয়্যালটি বা আমদানিকৃত যন্ত্র সরঞ্জামের ৬% পর্যন্ত মূল্য বিদেশে প্রেরণ করতে চাইলে বোর্ড একটি ন্যূনতম আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে অনুমতি দিত। পূর্ববর্তী বছরের বিক্রয়ের ১% পরিমাণের সমান বা তার কম অর্থ যদি পরামর্শদাতার ফি হিসেবে বিদেশে পাঠাতে হয় তাহলেও খুব বেশি আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন হতো না।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থাপিত শিল্প এলাকাসমূহে প্লট নিতে চাইলে একটি কোম্পানিকে তার শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবিত মানচিত্র এবং কী প্রয়োজনে কত পরিমাপ জমি প্রয়োজন তার ব্যাখ্যাসহ আবেদন করতে হতো। বোর্ড যাচাইয়ের পর সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসককে সুপারিশ পাঠাতো এবং তার ভিত্তিতে জমি বরাদ্দসংক্রান্ত আবেদন নিষ্পত্তি করা হতো। বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে বোর্ড যে সক্রিয় তৎপরতা পরিচালনা করতো তার মধ্যে ছিল দেশে বিনিয়োগ পরিবেশ, বিনিয়োগকারীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা এবং বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রচার এবং সরকারের বিনিয়োগনীতি যৌক্তিকীকরণের লক্ষ্যে নীতি প্রণয়ন ও অন্যান্য সকল প্রকার কাজে সহায়তা দান। বিনিয়োগ বোর্ড নানা সময়ে বিভিন্ন পুস্তিকা ও তথ্যগ্রন্থও প্রকাশ করতো। [এস এম মাহফুজুর রহমান]