বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৩ সালে গঠিত প্রাইভেটাইজেশন বোর্ড যা ২০০০ সালে প্রাইভেটাইজেশন কমশিনে রূপান্তরিত হয় এবং ১৯৮৯ সালে গঠিত বিনিয়োগ বোর্ড একীভুত করে এই নতুন প্রতিষ্ঠানটি করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে স্থানীয় ও বিদেশী উভয় উৎসের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে। এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ১৭ সদস্যের একটি গভর্নিং বডি দ্বারা পরিচালিত হয় এবং অর্থমন্ত্রী বোর্ডের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সংস্থাটি বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করার পাশাপাশি বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতাসমূহ নিরূপণ করে, শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সুযোগ সৃষ্টি করে ও সেগুলোকে সহায়তা প্রদান করে। এই সংস্থা বিনিয়োগকারীদের কারখানা প্রতিষ্ঠা-উত্তর পরামর্শ ও সেবাও দিয়ে থাকে। এছাড়া নিবন্ধিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহকে তাদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা দেয় এবং এই প্রক্রিয়া বাংলাদেশের সঠিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একটি প্রধান কাজ হচ্ছে দেশে ব্যবসায় সহজীকরণ প্রক্রিয়া ত্বরাম্বিত করা এবং বিশ্ব ব্যাংকের ২০২০ সালের ব্যবসায় পরিচালনা প্রতিবেদন (ডুইং বিজনেস রিপোর্ট) অনুযায়ী ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ব্যবসায় সহজীকরণ সূচকে পূর্বের তুলনায় আট ধাপ এগিয়ে ১৬৮তম স্থান পেয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক প্রতিবেদন উল্লেখ করেছে যে ব্যবসায় পরিবেশে প্রভাব ফেলে নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার পরিমাপক দশটি মাপকাঠির মধ্যে পাঁচটি পরমিাপকে বেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং বিশেষ করে ব্যবসা চালু করা, বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া, ঋণ প্রাপ্তি এই তিনটি মাপকাঠিতে উন্নয়নের জন্য খুব সফল সংস্কার করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ নতুন কোম্পানি প্রতিষ্ঠার জন্য নামকরণ বিষয় ছাড়পত্র গ্রহণ ফি কমিয়েছে, ডিজিটাল সনদ ফি বাতিল করা হয়েছে এবং শেয়ার মূলধন ভিত্তিক হিসাবায়ন অনুযায়ী আরোপযোগ্য নিবন্ধন ফি হ্রাস করেছে। ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কোম্পানিসমূহের জন্য নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে সিকিউরিটি হিসেবে যে জামানত দিতে হয় তাও অর্ধেক কমানো হয়েছে, সংযোগকারী প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ করা হয়েছে, বিদ্যুৎ উপদেষ্টার কার্যালয় এবং প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শকের কার্যালয় থেকে লাইসেন্স প্রদানের সময়ও কমানো হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতা বিষয়ক কার্যক্রম সহজ করে যেকোনো পরিমাণ ঋণের জন্য নথিপত্র দেখা ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য সময়ের ব্যাপ্তি পাঁচ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। এছাড়া বিশ্ব ব্যাংক প্রতিবেদন উল্লেখ করেছে যে সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন এবং নির্মাণের অনুমতি গ্রহণ বিষয়ক মাপকাঠিতেও বাংলাদেশ উন্নতি করেছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশের বিষয়ক সহজীকরণ সূচকের মান ছিল ৪৫.০ যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৩.০৩ পরিমাণ বেশি। এর আগে বিশ্ব ব্যাংক জানিয়েছিল যে এই সূচকে উন্নতি করছে এমন দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষ ২০টির মধ্যে একটি এবং আরো প্রকাশ করেছে যে ২০২১ সালে মধ্যে দেশটি ব্যাংকিং এ প্রথম ১০০-এর অর্ন্তভুক্ত হবে।
ব্যবসায় সহজীকরণ বিষয়ক সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) এর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে। আইএফসি বাংলাদেশে বাস্তবায়নের জন্য একটি সংস্কার কর্মপরকিল্পনা প্রণয়নে কারিগরি পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছে। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিবৃতি অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে যা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের আওতায় ন্যস্ত থেকে কৌশলগত অবস্থান থেকে তত্ত্বাবধান ও পরিবীক্ষণ করবে। উদ্দেশ্য হচ্ছে, বাংলাদেশকে দেশি-বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহায়ক সংস্কার কার্যক্রমে গতি আনতে সাহায্য করবে। কোম্পানি আইন, দেউলিয়া আইন, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ইত্যাদি পরিমার্জন এবং নিরাপদ আর্থিক লেনদেন আইন প্রণয়ন, বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তি আদালত প্রতিষ্ঠা বা ব্যবসা-বাণিজ্যে আন্তর্দেশীয় সীমানা সংক্রান্ত ঝুঁকি বিবেচনায় সীমান্তবিধির পরিপালন ও কার্যকর পরিদর্শন ব্যবস্থা চালু ইত্যাদিসহ সংস্কার কাজ ত্বরান্বিত করতে হবে। [এস এম মাহফুজুর রহমান]