বার্নিয়ার, ফ্রাঁসোয়া
বার্নিয়ার, ফ্রাঁসোয়া (১৬২৬-১৬৮৮) ফ্রান্সের একজন চিকিৎসক যিনি ১৬৫৬ ও ১৬৬৮ সালের মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। তাঁর ভ্রমণবৃত্তান্ত ভারতে মুগলদের ইতিহাস রচনায় ঐতিহাসিকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎস। গভীর উপলব্ধি ক্ষমতাসম্পন্ন পর্যবেক্ষক হিসেবে বার্নিয়ার বাংলাদেশসহ ভারতের বিভিন্ন অংশের মানুষের আচার-আচরণ, সামাজিক রীতিনীতি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অর্থনৈতিক অবস্থা সর্তকতার সঙ্গে লিপিবদ্ধ করেছেন। সম্রাট শাহজাহান এর পুত্রদের মধ্যে উত্তরাধিকার যুদ্ধে দারাকে বন্দি করে কুচকাওয়াজ সহকারে অসম্মানজনকভাবে রাস্তা দিয়ে যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, বার্নিয়ার সেই সময় দিল্লিতে অবস্থান করছিলেন। কৌতূহলী জনতার একজন হিসেবে বার্নিয়ার পর্যবেক্ষণ করেন যে, সমবেত জনতার পরাজিত যুবরাজ দারার প্রতি সহানুভূতি রয়েছে বলে মনে হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে একজনও যুবরাজ দারার পক্ষে কোন বাক্য উচ্চারণ করেন নি। বার্নিয়ার তারপর ভারতীয় জনসাধারণ ও রাজপুত্রদের রাজনৈতিক চরিত্র সম্পর্কে বর্ণনা করেন। তিনি সবচেয়ে কাছে থেকে দেখে সম্রাট দারাশিকো ও আওরঙ্গজেব (১৬৫৮-১৭০৭) সম্পর্কে তাঁর পর্যবেক্ষণ বর্ণনা করেছেন।
ভারতে অবস্থানকালে বার্নিয়ার দুবার বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, মুগল সাম্রাজ্যের সবগুলি প্রদেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছিল সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী। তাঁর মতে বাংলাদেশে উৎপাদিত তুলা ও তুলাজাত দ্রব্য, চাল, চিনি ও অন্যান্য পণ্য দ্রব্যসমূহের পরিমাণ অত্যন্ত বিস্ময়কর। তিনি দেখতে পান বাংলায় জিনিসপত্রের বাজারদাম অবিশ্বাস্যভাবে সস্তা। একই পরিসরে তিনি মর্মযাতনাসহ উল্লেখ করেন যে, বাংলার সাধারণ মানুষ অত্যন্ত দরিদ্র ও নিরাপত্তাহীন। তার মতে শাসকগণ তাঁদের নিজেদের জাঁকজমকের জন্য দেশের সম্পদ ভোগ-দখল করছে। তিনি মনোযোগসহকারে লক্ষ্য করেন যে, দেশের সাধারণ মানুষের দেয় খরচে মুগল দরবারের জাঁকজমক ও অত্যুৎকর্ষ রক্ষা করা হয়।
বার্নিয়ারের মূল ভ্রমণবৃত্তান্ত ফরাসি ভাষায় লিখিত ও প্রকাশিত। Travels in The Mogul Empire, AD 1656-68 শিরোনামে আরচিবল্ড কনস্টেবল (Archibald Constable) পুস্তকটি ১৮৯১ সালে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন ও ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশ করেন। সেই সময় থেকে বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষায় পুস্তকটি অনূদিত হয়েছে। [সিরাজুল ইসলাম]