বাজপাখি
বাজপাখি (Falcon) Ciconiiformes বর্গের Falconidae গোত্রের এক ধরনের দিবাচর শিকারি পাখি। চোখা পাখা, চৌকো লেজ, খাঁজ কাটা ঠোঁট এদের বৈশিষ্ট্য। বাজপাখি বা ফ্যালকন বলতে Falco গণের প্রজাতিদেরই বোঝায়, যাদের সংখ্যা প্রায় ৩৮। বাংলাদেশের ৯ প্রজাতির মধ্যে ৫ প্রজাতি পরিযায়ী।
ছোট পাখি ও ছোটখাটো অন্য জন্তু শিকারের জন্য অনেকে বাজপাখি পোষে। এ ধরনের শিকার প্রাচীন চীন, পারস্য ও মিশরের অধিবাসীরা জানত। পুরাকাল থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে এই চর্চা চলেছে। এটি এশিয়া থেকে পূর্ব-ইউরোপ হয়ে পশ্চিম ইউরোপে পৌঁছয়। সতেরো শতকের পর এই শিকারে ভাটা পড়ে। শিকারি বানানোর জন্য বাচ্চা অবস্থা থেকে এদের অনেক দিন কঠোর ও অবিরাম প্রশিক্ষণ দিতে হয়। ধৃত শিকার এরা স্পর্শও করে না এবং শিকারির হাতে স্থির হয়ে বসে থাকে। Falco pregrinus কাকের আকারের এক বাজপাখি। অনেক উপরে উঠে চক্কর দিতে দিতে হঠাৎ ডানা ভাঁজ করে উড়ন্ত জলপিপি বা অন্য পাখিকে ছোঁ-মেরে ধরে। এদের গতি অত্যন্ত ক্ষিপ্র, শূন্যে ঘা মেরে শিকারকে কাবু করে এবং ছোঁ-মারার সময় গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার (১১২ মাইল) পর্যন্ত পৌঁছয়, যা পাখিদের মধ্যে দ্রুততম। এ ধরনের শিকারে যতদিন রাজা-বাদশাহরা আকৃষ্ট ছিলেন ততদিন এটি ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয়। আকারে স্ত্রী পাখির এক-তৃতীয়াংশ ছোট পুরুষপাখিকে শিকারিরা tercel বলে। স্ত্রী পাখিরা আকারে বড় ও চওড়া এবং শিকারিদের বেশি পছন্দসই।
বাংলাদেশের বাজপাখির স্থায়ী প্রজাতিগুলি হচ্ছে তুরমুতি (Red-necked Falcon, Falco chicquera): ছোট আকারের, উপর নীলচে-ধূসর, নিচ সাদা। মাথা বাদামি। উড়লে লেজের ডগার সাদা ও পাশের চওড়া কালো ডোরা চোখে পড়ে; Laggar Falcon (Falco jugger): নীলচে পাখি, নিচে অাঁকাবাঁকা দাগ, সরু ও বাদামি গোঁফসদৃশ কিছু ডোরা চোখের সামনে ও নিচের দিকে ছড়ানো। কমবয়সীদের নিচের অংশ বাদামি। স্ত্রী ও পুরুষ দৃশ্যত অভিন্ন; Oriental Hobby (Falco severus): উপরে কালচে-ধূসর, কালো মাথা। উরু ও লেজের নিচ পিঙ্গল, বুক ও নিচের দিক মরচে রঙের; Pied Falconet (Microhierax melanoleucos): উপরটা কালো ও নিচের দিক ধবধবে সাদা। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি দৃশ্যত অভিন্ন। পরিযায়ী প্রজাতিগুলি হচ্ছে Lesser Kestrel (Falco naumanni); Peregrine Falcon (Falco peregrinus); Eurasian Hobby (Falco subbuteo) এবং Common Kestrel (Falco tinnunculus)। [মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম]